![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের স্বপ্নের কোন সীমা নেই...অনেক স্বপ্ন দেখে তারা...কিন্তু কারো স্বপ্ন পুরন হয়...কারো হয়না...আমি তাদের দলে যাদের স্বপ্ন পুরন হয় না...নিজের স্বপ্নগুলোকে নিজের হাতেই শেষ করি আমি...কখন কিছুতেই স্থির হইনি আমি...সেটা আমার সৃষ্টি হোক...বা আমার সাধনা...কখন কিছুই বেধে রাখতে পারেনি আমায়...এখন যে মনের আনন্দে যা সৃষ্টি করছি তার প্রতিও আস্তে আস্তে ইচ্ছে উঠে যাচ্ছে...জানিনা আর কতদিন এই হাত দিয়ে জীবনের বাস্তবতা গুলো লিখব...শুধু জানি এই হাতটা যেকোনো মুহূর্তে থেমে যাবে...তখন হয়তো আর সৃষ্টি আসবেনা...আমাকে খুজে পাবেনা কেউ...কিছু সময়ের অতিথির মতো সবার মন থেকে হারিয়ে যাব...তখন আর কারো মনে থাকবে না আমায়...সেটাই যে আমার চির চেনা জায়গা...সবার কাছে চির অজানা...এই হলাম আমি...আর এই হল এক অজানা ভুবনের পথিকের গল্প :)
এই তুমি এমন কেন ?
আমি কেমন ?
সারাক্ষণ আমাকে জ্বালাও । আমার কথা শুনো না । এরকম করলে কিন্তু আমি চলে যাব অনেক দূরে । সরাসরি বললেই তো পারো যে আমার সাথে কথা বলতে চাও না । আমি আর কথা বলবো না তোমার সাথে । আর কখনো ফোন দিব না ।
এতদিনে আমাকে এই চিনলে । আসলেই আমাকে তুমি বুঝতে পারলে না । না হলে বুঝতে আমি কেন এমন করি তোমার সাথে । তোমার সাথে করবো নাতো আর কার সাথে করবো । আমি যে তোমাকে কতোটা ভালোবাসি তা তুমি আজো বুঝতে পারলে না । একদিন সবি বুঝবে । কিন্তু দেখবে সেদিন আমি থাকব না । অনেক দেরি হয়ে যাবে ।
বলছে তোমাকে । মাইর চিনো ? তোমাকে ধরে মারবো বুঝলা ।
তুমি যদি মারো তাহলে আমি তা হাসি মুখে গ্রহন করবো । কিন্তু তুমি তো কখনোই তা করবে না আমি জানি ।
দেখ একদিন সত্যি মারবো ।
আমিতো সেই দিনটার অপেক্ষায় । কবে তুমি আমাকে মন থেকে ভালোবেসে আমার কাছে এসে আমার হাত দুটি ধরবে । আমি তারই অপেক্ষায় ।
বুঝলাম সোনার চাঁদ পিতলা ঘুঘু । যাও এখন এইসব কথা ছেড়ে লক্ষ্মী ছেলের মতো ঘুমাতে যাও ।
আমার ঘুম আসবে না আজ । প্লিজ ঘুমাতে বল না ।
এই তুমি আমাকে ভালোবাসো । আসলে তুমি আমাকে ভালোবাসো না । যদি বাসতে তাহলে এখন ঠিকই ঘুমাতে যেতে । সব তোমার মুখে মুখে । আসলে ভিতরে কিছু নাই । হু যাও । আর কখনোই কথা বলবো না তোমার সাথে ।
আচ্ছা যাচ্ছি ঘুমাতে । এতো রাগ করো কেন ? আর রাগ করতে হবে না । আমি ঘুমাতে গেলাম ।
এইতো লক্ষ্মী ছেলের মতো কথা । যাও ঘুমাতে । আমিও ঘুমাতে গেলাম । বাই ।
এই বলে লিরা রাজের কলটা কেটে দিলো । তারপর ভাবতে লাগলো অতীতের কথা গুলো । কোথা থেকে যে কি হয়ে গেলো নিজেও আজ বলতে পারবে না । ছেলেটার সাথে তার পরিচয়ের দিনটি থেকে আজ পর্যন্ত কখনোই রাজ তার কথার অবাধ্য হয় নি । সব সময় তার কথা মেনে নিত । আসলেই ছেলেটা আমাকে মন থেকে ভালোবাসে । না হলে এতো কষ্ট দেওয়া সত্ত্বেও সে কখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি । ও যে ওর ভালোবাসা আমাকে সব দিক থেকে বুঝাতে চায় তা আমি জানি । কিন্তু কি করবো আমি । আগের মতো আর আঘাত পেতে চাই না আমি । কিন্তু ওর ভালোবাসাকেও আমি হারাতে চাই না । তাহলে কি করার আছে আমার ।
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে লিরা ঘুমিয়ে পড়লো তা সে নিজেও বুঝতে পারে নি । যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখলো অনেক সকাল হয়ে গেছে । মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক গুলো মিস কল । সব গুলো রাজের দেওয়া । আসলেই ছেলেটা একটা পাগল । না পাগল টাকে একটা ফোন দিয়ে দেখি কি করছে ।
হ্যালো , কি করছো ?
তোমার ফোনের অপেক্ষা করছি । এতোগুলি ফোন দিলাম ধরনি কেন ?
ঘুমিয়ে ছিলাম । কেন কি ভাবছিলা তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি আমি ?
সেটা যদি হতো তাহলে এতখনে আমি শেষ হয়ে যেতাম ।
হয়েছে । আর বানাতে হবে না । সকালে খেয়েছো ?
হ্যাঁ । তুমি ?
না । মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম । একটু পর করবো ।
ওকে নাস্তা করে আমাকে কল দিও ।
আচ্ছা । রাখি ।
সকালটা আজ সত্যি অনেক ভালো লাগছে আমার । কোন এক অজানা কারনে আজ মনটা অনেক ভালো । আসলেই রাজের সাথে কথা বললে এমন হয় । ছেলেটা যে কিভাবে আমাকে এতোটা সাপোর্ট দেয় তাই আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না । না আমি আজ বুঝতে পারছি ওকে ছাড়া আমার পথ চলা অসম্পূর্ণ । সারাজীবনের পথচলার সাথী হিসেবে ও আমার । পাগলটা এতদিন ধরে ওর হাতটা ধরার জন্য বলতো আমাকে । এবার আমি ওকে বলবো । কিন্তু আজ না । আজ শেষ বারের মতো ওকে একটু রাগাবো আমি । ওকে রাগিয়ে তাগিয়ে যখন কাল ওর হাত ধরতে চাইবো তখন ওর অবস্থা কি হবে সেটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আমার ।
এইসব ভাবতে ভাবতে লিরা আপন মনে অনেক হাসতে লাগলো । যেই ভাবা সেই কাজ । সারাদিন ধরে রাজের সাথে অনেক কথা বললো । ওকে রাগালো । শেষ পর্যন্ত রাতের বেলা রাজ রাগ করে ফোন টা কেটেই দিলো । আর ওর এই সব দেখে লিরার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ হতে লাগলো । আর অপেক্ষা করতে লাগলো পরের দিনের সূর্যোদয়ের । যার সাথে ওর জীবনের নতুন দিগন্তের শুরু হবে ভালোবাসার মানুষটির সাথে ।
সকালে ঘুম থেকে লিরা আজ মোবাইলে তাকিয়ে দেখে অনেক মিস কল । ওই সব দেখে বুঝতে পারে যে এগুলো রাজের কাজ । কিন্তু যখন চেক করলো তখন দেখলো একটাও রাজের না । অন্যান্য মানুষের । তাই ও নিজেই কিছুটা অবাক হয়ে গেলো ।
কিছুটা রাগ কিছুটা অভিমান নিয়ে ও রাজকে ফোন দিলো । কিন্তু কেউ ফোনটা ধরছে না । আস্তে আস্তে লিরার দুশ্চিন্তা শুরু হল । সে ফোনের পর ফোন দিয়ে যেতে লাগলো । অনেক ক্ষণ পর কেউ ফোনটা ধরল । লিরা ও পাশের থেকে কোন কিছু না শুনেই ঝাড়ি দিয়ে বসলো । কিন্তু পরে শুনতে পারলো একজন মহিলার কান্না জরিত কণ্ঠ । আর তা ছিল রাজের মায়ের । উনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন রাজ আর বেঁচে নেই । সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখেন রাজ ঘুম থেকে উঠেনি । তাই তিনি ডাকতে গিয়ে দেখেন রাজের কানে হেড ফোন লাগানো আর ওর কান বেয়ে রক্ত বের হচ্ছে । যা ডাক্তাররা ওকে বারন করেছিল করতে । তাই ওর মা ওকে তাড়াতাড়ি ওর কান থেকে হেড ফোন সরিয়ে দিয়ে যখন ওর শরীরে হাত দেন তখন দেখে ওর পুরো শরীর ঠাণ্ডা । রাজ ততক্ষণে সবাইকে ছেড়ে দূর এক অজানা দেশে পারি দিয়েছে । যেখান থেকে কেউ কখনো ফিরে আসে না । এই সব বলে তিনি কাঁদতে লাগলেন ।
এই সব শুনে লিরা তখনই বাসা থেকে বের হয়ে রাজের বাসায় গেলো । গিয়ে দেখে রাজকে শেষ সজ্জায় শুয়ে দেওয়া হয়েছে । এটা দেখে লিরা নিজেকে ঠিক রাখতে পারলনা । সে রাজের গায়ের ওপর আছড়ে গিয়ে পড়লো । ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগলো আর ওকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো ......
এই রাজ ওঠো । এতো ঘুমাচ্ছ কেন তুমি ? আমি তোমাকে আর কখনোই ঘুমাতে বলবো না । প্লিজ লক্ষ্মীটি তুমি ওঠো । তুমি না চাইতে আমি তোমার হাত দুটি ভালোবেসে ধরি । এই দেখ আজ তো আমি তোমার হাত দুটি ধরতে এসেছি । তাহলে কেন তোমার হাত দুটি বাড়িয়ে দিচ্ছ না । এমন তো কথা ছিল না । বলেছিলে সারাজীবন তুমি আমার পাশে থাকবে । তাহলে কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে ? কেন ? কেন আমাকে আবার ভালবাসতে শিখালে ? এভাবে কাঁদানোর জন্য ? এই রাজ একটু কথা বলনা । একটু কথা বল ..................
এই বলে লিরা কাঁদতে লাগলো । আর তখন দূরে কোথায় যেন করুন সুরে বাজতে লাগলো............
“যেতে যেতে পথে হল দেরি......তাইতো যেতে পারিনি.........যেতে পারিনি......... যেতে পারিনি”
©somewhere in net ltd.