নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখক হবার উচ্চাভিলাসী, মানব চরিত্র গবেষক, অতি ক্ষুদ্র একজন

আমি ভাল নই,অতটা খারাপও বলার উপায় নেই।আমার মাঝে মনুষত্ব এবং পশুত্ব দুটোই বিরাজমান।এরা প্রতিনিয়ত যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে।আজ অবধি মনুষত্বই বিজয় লাভ করেছে।কিন্তু ,অদূর ভবিষ্যতেও যে মনুষত্ব তার জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে,তার নিশ্চয়তা নেই।সুতরাং, সাবধান!

স্বপ্নবাজ (অতি ক্ষুদ্র একজন)

স্বপ্নবাজ (অতি ক্ষুদ্র একজন) › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ভিক্ষুক" (সত্য ঘটনাবলী অবল্বনে)

১২ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৪৭





-------------------------------------------------------------------

একবার এক বিত্তবান ব্যাক্তি বলেছিলেন, “বাংলাদেশ হচ্ছে একটি ফকিন্নীর দেশ। এদেশ ফকিরে ভরপুর।” সেসময় কথাটা খুব গায়ে লেগেছিল। আরে,তুই নিজে পয়সা ওয়ালা হয়েছিস বলে কি অন্যদেরকে ফকিন্নী

ভাববি? মেজজটাই বিগড়ে গিয়েছিল। কিন্তু যখন পবিত্র শবে বরাত-শবে কদর রাতে ও দুই ঈদের নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হই, লোকটির মন্তব্যের সত্যতা প্রমাণ পাই। শত শত ভিক্ষুকের সবল হাত ভিক্ষার থালা পেতে দেয় আমার সামনে। বিশেষ করে শবে বরাতে শুধুমাত্র ঢাকাতে নাকি সারা দেশের লাখ লাখ ভিক্ষুক এসে জড়ো হয়। আর রাতভর চলে ভিক্ষা বানিজ্য!



আমার এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম, ওদের কলেজের সামনে এক মধ্যবয়স্ক লোক প্রতিদিন টয়োটা’য় চড়ে সকাল সাড়ে ছটার দিকে এসে নামত। তারপর পাশের একটি দোকানে ঢুকে ভাল পোষাক পাল্টে ছেড়া-ফাটা জামা পড়ে ভিক্ষায় বসে যেত। আমার সেই বন্ধুটি শিক্ষা-যুদ্ধের সচেতন যোদ্ধা বিধায় সকাল থেকেই কোচিং ক্লাস করত। যার ফলে বিষয়টি তার নজরে আসে। বেশ কয়েকদিন এমনটি দেখার পর সে তার বন্ধু-বাহিনী সাথে নিয়ে লোকটাকে আচ্ছামত ধোলাই দিয়েছিল। সেদিনের পর থেকে নাকি তাকে আর দেখা যায়নি।



আমাদের দেশের অলিতে-গলিতে ভিক্ষুকের অভাব নেই। এদের কয়েকজনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট তো খুবই মজার। তেমনই এক ভিক্ষুককে এখনও ভুলিনি।বছর তিনেক আগের কথা। আমি আর আমার বন্ধু রাস্তায় হাঁটছিলাম। আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে দুজনের পকেটে গুগল-মার্কা সার্চ দিয়েও ফুটো পয়সাটি বের হবে না। সেই কর্পদহীন অবস্থায় এক ভিক্ষুক আমাদের কাছে ভিক্ষা চাইল। বন্ধুটি মজা করে বলল,

-“চাচা, আপনারে কি ভিক্ষা দিমু? আমাগোরেই তো ভিক্ষা দেওন লাগব।”

ভিক্ষুকটি আমাদের অবাক করে ততক্ষনাৎ পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার একটি নোট বের করে বলল,

-“এই নেন, আফনেগোরেই আমি ভিক্ষা দিলাম।”

আমার বন্ধুটি টাকা ফেরত দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিল।পরে আমাকে বলল,

-“দেখেছিস? ভিক্ষুকটার কি আত্নসম্মানবোধ? কখনো ভিক্ষুকদের সরাসরি ভিক্ষুক বলবি না।”

বিজ্ঞ বন্ধুটির কথা শুনে হেসে বললাম,

-“ব্যাটা’র যদি আত্নসম্মানবোধ থাকত, তবে ভিক্ষা করত না।আর যেখানে আমাদের কাছে একটি টাকাও নেই, অথচ সে কিভাবে পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার কড়কড়ে নোট বের করে দিল? নিশ্চয়, ভিক্ষা করে তার সেরকমই আয় হয়।



আমার বাসা একটি হাউজিং এলাকায়, যেখানে ভিক্ষুক ঢোকা নিষেধ। তাই ঘরে থেকে ভিক্ষুকের কান্না জড়ানো আবেদন আমার কাছে পৌছায় না। কিন্তু হাউজিংয়ের বাইরে চলতে ফিরতে অহরহই ভিক্ষুক দেখি। তাদের কথা মনে থাকার কথা না। কিন্তু শত ভিক্ষুকের মাঝে একজনের চেহারা আমার স্পষ্ট মনে আছে।



তবে, আমি তাকে ভিক্ষুক বলতে নারাজ! কারন সে আর দশটা ভিক্ষুকের মত বেসুরে গলার অশুদ্ধ উচ্চারনে আল্লাহকে ডাকত না!জীর্ণ-শীর্ণ হাতটি কারও সামনে পেতে ধরত না। সে শুধু বসে থাকত। রাস্তার একপাশে,জবথুবু হয়ে। মাঝে মাঝে আঁচলে দিয়ে চোখ মুছত। তাকে প্রতিদিনই দেখতাম,স্কুলের যাবার পথে।মাঝে মাঝে কিছু দেওয়ার ইচ্ছে হত। কিন্তু পকেটে থাকত মাত্র দশ টাকা! দুপুরে টিফিনে আমারও যে ক্ষুধা লাগবে। তার ক্ষুধার চেয়ে আমার ক্ষুধাটাই প্রাধান্য পেত। তবে হ্যাঁ, মাঝে মাঝে দিতাম। যখন পরীক্ষা দিতে যেতাম, তার আগে। কারন পরীক্ষা উপলক্ষে বাসা থেকে টাকা একটু বেশি দিয়ে দিত। যেদিন পরীক্ষার রেজার্ল্ট বের হবে, সেদিন কষ্ট করে হলেও দিতাম। যেন এই ক্ষুদ্র দানের ফলে রেজার্ল্টটা ভাল আসে!তবে প্রতিবার যখনই আমি তাকে টাকা দিতাম, তার মাথায় হাত বুলিয়ে যেতাম।



একদিন খুব ভোরে বাসা থেকে বের হয়েছি। দেখি একটি অল্প বয়স্ক মেয়ে সেই বৃদ্ধা মহিলাটিকে রাস্তার পাশে বসিয়ে রেখে চলে যাচ্ছে। আমি বৃদ্ধার কাছে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলাম। সে তার কম্পিত গলায় যা বলল তাতে জানতে পারলাম, তার মেয়ে পাশের গার্মেস্টসে চাকরি করে। প্রতিদিন সকালে তাকে এখানে দিয়ে যায় আর রাতে কাজ থেকে ফেরার পথে আবার সাথে করে নিয়ে যায়। তার দুটো ছেলেও আছে। কিন্তু তারা কেউই বৃদ্ধ মায়ের খোজঁটি পযর্ন্ত নেয় না। রিক্সা চালক স্বামীর সংসারে থেকে একমাত্র মেয়ে নিজের মাকে আর কতটুকু সাহায্য করবে?তাই নিজের অন্নের জোগান নিজেই করছেন।

বৃদ্ধার কথা শুনে খুবই কষ্ট লেগেছিল। ঠিক করলাম, মাকে বলে সামনের রোজার ঈদে ওনাকে জাকাতের কাপড় ও কিছু টাকা দেব।



রোজার পরেই টেস্ট পরীক্ষা। তাই সে সময় পড়ালেখা নিয়ে ভীষন ব্যাস্ত সময় কাটাতে হল। ঈদের পরের সময়টাও ব্যস্ততার মধ্যেই কাটালাম। দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষাও এসে পড়ল। প্রথম পরীক্ষা দিন যখন বাসা থেকে বের হলাম, হঠাৎ সেই বৃদ্ধা মহিলার কথা মনে পড়ে গেল। কিন্তু বৃদ্ধা মহিলাটিকে খুঁজে পেলাম না। এরপর প্রতিটি পরীক্ষার সময় বাসা থেকে বের হয়েই ওনাকে খুজঁতাম, পেতাম না।এরপর তাকে আর কখনও দেখিনি।



সেই জায়গাটিতে এখন এক পাগলী বসে।পথ চলতে চলতে তার আকুল আবেদন আমার কানে বাজে- “ও বাই, কিছু খাইতে দেন।” মনটা খচখচ করে ওঠে। পকেট থেকে দশ টাকার নোট বের করে দেই। আর মনে পড়ে যায় সেই বৃদ্ধা মহিলার কথা,যাকে কিছু দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু দেয়া হল না। ওনার অনেক বয়স হয়েছিল। হয়তো মারা গেছেন। মাথা থেকে চিন্তাটা দূর করে সামনে এগিয়ে যাই। আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে এসব ছোটখাটো ব্যাপারগুলো মনে রাখলে চলবে না

--------------------------------------------------------------------

।।মাস ছয়েক পূর্বের আমার পুরোনো স্টাইলে লেখা গল্প। শব্দের কোররূপ সম্পাদনা ছাড়াই পোস্ট দিলাম।।

---------------------------------------------------------

--- সোহেল মাহামুদ(অতি ক্ষুদ্র একজন)

--------------------------------------------------------------------

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:০৩

পংবাড়ী বলেছেন: অজানা ভিক্ষুকের জন্য আমার মন খারাপ হলো; লেখা ভালো হয়নি।

১২ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:১৪

স্বপ্নবাজ (অতি ক্ষুদ্র একজন) বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পংবাড়ি... :-)

তবে লেখা কিরূপ হলে ভাল হত জানালে উপকৃত হতাম। ভবিষ্যতে সংশোধন করতে পারতাম...(যদিও গল্প অনেক আগে লিখেছিলাম...) :-)

২| ১২ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:১৬

গাজী আলআমিন বলেছেন: এক মধ্যবয়স্ক লোক প্রতিদিন টয়োটা’য় চড়ে সকাল সাড়ে ছটার দিকে এসে নামত। তারপর পাশের একটি দোকানে ঢুকে ভাল পোষাক পাল্টে ছেড়া-ফাটা জামা পড়ে ভিক্ষায় বসে যেত !!!!!!!!!!!

১৩ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৬

স্বপ্নবাজ (অতি ক্ষুদ্র একজন) বলেছেন: হুম ।

৩| ১৩ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬

শায়মা বলেছেন: মন খারাপ হলো!!:(

১৩ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:১৭

স্বপ্নবাজ (অতি ক্ষুদ্র একজন) বলেছেন: ধন্যবাদ আপি... গল্পটি পড়ার জন্যে.... :-)

৪| ১৩ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৪১

রওনক বলেছেন: "সেই জায়গাটিতে এখন এক পাগলী বসে।"
কেন সন্দেহজনক না?

১৩ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

স্বপ্নবাজ (অতি ক্ষুদ্র একজন) বলেছেন: সন্দেহজনক কথাটার মানে বুঝলাম না ভাই.।

ধন্যবাদ, গল্পটি পড়ার জন্য.।

৫| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৩

রওনক বলেছেন: সন্দেহজনক মানে একই জা্য়গায় পাগলি বসল কেন?

১৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:১০

স্বপ্নবাজ (অতি ক্ষুদ্র একজন) বলেছেন: এটা সন্দেহজনক নয়.. রহস্য..। সেই বৃদ্ধা কি বেচে আছেন না মারা গেছেন...। আজও জানি না ভাই.. :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.