![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ। নিজের সম্পর্কে বলবার মত তেমন কিছুই আমার নেই। আমি সর্বদা সত্যের সন্ধানে সময় কাটাতে ভালবাসি। আর ভালবাসি স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে। প্রয়োজনে মানুষের পাশে থাকার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করি। অন্যকে ঠকানোর কথা ভাবতেই পারিনা। এ কালটাই যে সবকিছুর শেষ নয় তা বিশ্বাস করি।
আমার জানা মতে "আল-কোরআনকে" কখনো "বিজ্ঞানের বই" অর্থাৎ “Book of science” হিসেবে দাবি করা হয় না। তবে এই গ্রন্থের মাঝে স্রষ্টা প্রদ্ত্ত নিদর্শনসমূহ বিবৃত হয়েছে বিধায় এটিকে সহজ ভাষায় “Book of signs” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
আল-কোরআন নিঃসন্দেহে স্রষ্টা প্রেরিত "জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ"-
সূরা লুকমান-
(৩১:০২) অর্থ- এগুলো জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থের আয়াত/ নিদর্শন
Shakir: These are verses of the Book of Wisdom
সূরা ইয়াসীন-
(৩৬:০২) অর্থ- জ্ঞানগর্ভ কুরআনের শপথ,-
Yusuf Ali: By the Qur'an, full of Wisdom,-
সূরা যুখরুফ-
(৪৩:০৪) অর্থ- আর নিঃসন্দেহে এটি রয়েছে আমাদের কাছে আদিগ্রন্থে, মহোচ্চ এবং জ্ঞানসমৃদ্ধ।
Sahih International: And indeed it is, in the Mother of the Book with Us, exalted and full of wisdom.
কিন্তু কেউ যদি প্রশ্ন করেন- "আল-কোরআন" কি বিজ্ঞানময় গ্রন্থ?
বিষযটি সম্পর্কে কিছু বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি-
...................................
বিজ্ঞান= [Noun] Science; comprehensive knowledge.
Science= সুশৃঙ্খল, সুবিন্যস্ত, বিশেষত পর্যবেক্ষণজাত ও পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা যাচাইকৃত জ্ঞান, বিজ্ঞান
Comprehensive= বিস্তৃত, ব্যাপক, সর্বাঙ্গীণ, প্রভূত বোধশক্তিসম্পন্ন
Knowledge= জ্ঞান, অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণা বা পরিচিতি, বোধ, বিদ্যাবত্তা, অধীত জ্ঞান, জ্ঞাতব্য বিষয়
বিজ্ঞানময়= [adjective] = Scientific; intellectual
Scientific= বৈজ্ঞানিক (Adj), বিজ্ঞানসম্মত (Adj), বিজ্ঞানসংক্রান্ত (Adj.)
Intellectual= ধীশক্তিসম্বন্ধী,বৌদ্ধিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক
...................................
"আল-কোরআন" নিঃসন্দেহে একটি intellectual অর্থাৎ ধীশক্তিসম্বন্ধী, বৌদ্ধিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ঐশী গ্রন্থ।
আল-কোরআনে অনেক বিজ্ঞানসংক্রান্ত বাণী রয়েছে। এর মধ্য থেকে বিশেষ কিছু আয়াত তুলে ধরলাম-
সূরা আল- ইমরান (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৩:১৯০) অর্থ- নিঃসন্দেহে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে অন্তর্দর্শি/ বোধশক্তি/ ধীশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্যে-
(০৩:১৯১) অর্থ- যাঁরা স্মরণ করে আল্লাহকে দাঁড়িয়ে, বসে ও পার্শ্বদেশে শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা গবেষণা করে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির বিষয়ে। (তারা বলে) আমাদের রব! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি, সকল মহিমা তোমারই, অতঃপর আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।
সূরা ইউনুস (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১০:০৫) অর্থ- তিনিই তো সূর্যকে (দিয়া) তেজোদ্দীপ্ত বা জলন্ত প্রদীপের আলো ও চাঁদকে (নূর) আলো (অন্যের আলোয় আলোকিত হওয়ার কারণে যে আলো বা উজ্জ্বলতা প্রকাশ পায়) করে বানিয়েছেন এবং তার জন্য অবস্থানগুলো নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যেন তোমরা বছরের গণনা ও সময়ের হিসাব ঠিকমত জানতে পার; আল্লাহ এসব অনর্থক সৃষ্টি করেন নি। যারা জানতে চায় তাদেরকে তিনি এই নিদর্শন বা আয়াতগুলোর বিশদ বিবরণ জানিয়ে দেন।
(১০:০৬) অর্থ- নিঃসন্দেহে দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মাঝে আল্লাহতায়ালা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেই সমস্ত আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনগুলো তাদের জন্য যারা (আল্লাহকে) ভয় করে।
(১০:১০১) অর্থ- বল, "আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার প্রতি লক্ষ্য কর।" কিন্তু যারা বিশ্বাস করে না তাদের জন্য এসব আয়াত অর্থাৎ নিদর্শনগুলো ও সতর্ককারীরা কোন কাজেই আসে না।
সূরা রাদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১৩:০২) অর্থ- আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা সেগুলো দেখছ। অতঃপর তিনি আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন ও নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।
(১৩:০৩) অর্থ- তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বিস্তৃত এবং তাতে স্থাপন করেছেন পাহাড় ও নদনদী। আর যে সব ফল বানিয়েছেন তাদের দুটিতে মিলে এক জোড়া। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আবৃত করেন। নিঃসন্দেহে এসবের মধ্যে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে।
সূরা আম্বিয়া (মক্কায় অবতীর্ণ)
(২১:৩০) অর্থ- যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে, তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?
সূরা আনকাবুত (মক্কায় অবতীর্ণ)
(২৯:১৯) অর্থ- তারা কি লক্ষ্য করে না, কিভাবে আল্লাহ মখলুক বা সৃষ্টিকে আরম্ভ করেন অর্থাৎ অস্তিত্বে আনেন, অতঃপর তিনি এর পূণরাবৃত্তি করেন? এটা তো আল্লাহর জন্য সহজ।
(২৯:২০) অর্থ- বল, পৃথিবীতে পরিভ্রমন কর এবং অনুধাবন কর, কিভাবে মাখলুক অর্থাৎ সৃষ্টি প্রকাশিত হলো, অতঃপর আল্লাহ বানাতে আরম্ভ করবেন পরবর্তী বিশ্ব বা পরকাল, আল্লাহ্ তো সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
সূরা ইয়াসীন (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩৬:৩৮) অর্থ- এবং সূর্যটা ছুটে চলেছে তার জন্য নির্ধারিত গন্তব্যের অভিমুখে; এটা হচ্ছে মহাপরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ (আল্লাহতায়ালা) কর্তৃক ঘোষিত এবং আইনের মর্যাদাসম্পন্ন আদেশ/ নিয়ন্ত্রণী ব্যবস্থাপনা।
(৩৬:৩৯) অর্থ- চাঁদের জন্যে আমি ক্রম/ অবস্থা/ মনজিল/ পর্যায় সমূহ নির্ধারিত করে দিয়েছি; যতক্ষণ না এটা পুরাতন শুষ্ক বাঁকা খেজুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।
(৩৬:৪০) অর্থ- সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; এবং এরা প্রত্যেকে এক একটি কক্ষপথে সঞ্চালমান।
সূরা স্বাদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৩৮:২৯) অর্থ- একটি কিতাব, আমি (আমরা- আল্লাহ- সম্মানসূচক) তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি- যা বরকতময়, যেন তারা (মানুষ) এর আয়াতসমূহ অনুধাবন/ চিন্তা-ভাবনা করে, আর জ্ঞানীরা/ বুদ্ধিমানেরা/ মেধাবীরা/ ধীশক্তিসম্পন্নরা যেন উপদেশ গ্রহণ করে/ বিবেচনা করে/ স্মরণ করে।
সূরা জাসিয়া (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৪৫:০৩) অর্থ- নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে মুমিনদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।
বিজ্ঞানসংক্রান্ত সবগুলো বাণী এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান অর্থাৎ বিশেষত পর্যবেক্ষণজাত ও পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা যাচাই করা সম্ভব না হলেও, এ পর্যন্ত এই বাণীগুলোর প্রায় ৮০ - ৯০%-ই সর্বাধুনিক সুপ্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর বাকীগুলোকে যাচাই করার মত সামর্থ এখনও বিজ্ঞান অর্জন করতে পারে নাই। কাজেই বাকী ১০-২০% বাণীগুলোর সাথে যে বিজ্ঞানের সরাসরি অসঙ্গতি বা বিরোধ রয়েছে, এমনটি দাবি করা ঠিক হবে না। এখন যেমন "আল-কোরআনকে" সরাসরি "বিজ্ঞানের বই" হিসেবে দাবি করা হয়না। তেমনি এই মহাগ্রন্থের বিজ্ঞানসংক্রান্ত সবগুলো বাণী যদি কখনো বিজ্ঞান অর্থাৎ বিশেষত পর্যবেক্ষণজাত ও পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা যাচাই করার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে সঠিক প্রমাণিত হয়, তারপরও "আল-কোরআনকে" শুধুমাত্র "বিজ্ঞানের বই"- “Book of science” হিসেবে আখ্যায়িত করা ঠিক হবে না। কারণ এই মহাগ্রন্থে শুধু বিজ্ঞান নয়, বরং জীবন ঘনিষ্ট নানা মুখি জ্ঞানের সমাহার ঘটেছে। আল-কোরআনে নামাজ, রোজা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ইত্যাদি জীবন ঘনিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে যে মৌল নিদর্শন ও তথ্যসমূহ রয়েছে, এখন পর্যন্ত সেগুলোর কোন একটিও বিশেষত পর্যবেক্ষণজাত ও পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা যাচাই কোরে অনর্থক বা অকল্যাণকর বলে প্রতীয়মান হয়নি, বরং ধীশক্তিসম্বন্ধী, বৌদ্ধিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান হিসেবে অত্যন্ত বাস্তব সম্মত ও কল্যাণকর হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছে। আর চিন্তাশীল, বোধসম্পন্ন ও বিশ্বাসী মানুষ মাত্রই যা অনুধাবন করতে সক্ষম।
মূলত "আল-কোরআন" মানুষের জন্য মহান স্রষ্টা প্রেরিত "জীবন বিধান"। সেইসাথে জ্ঞানসমৃদ্ধ গ্রন্থ হিসেবে এটি ধীশক্তিসম্বন্ধী, বৌদ্ধিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় এবং এর মাঝে স্রষ্টা প্রদত্ত বিজ্ঞানসংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান তথা নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান থাকায় এটিকে "বিজ্ঞানময় গ্রন্থ" হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতেই পারে। যেহেতু এই ঐশী গ্রন্থে আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস, পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সকল প্রাণীজগৎ তথা মানব সৃষ্টি এবং পরকালীন জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নানাবিধ বিজ্ঞানময় জ্ঞান ও তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে। তাই "আল-কোরআনকে" মূলত একটি "জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ"। পাশাপাশি এটিকে "মৌল বিজ্ঞানের উৎস" হিসেবে উল্লেখ করা হলেও খুব একটা ভুল হবেনা।
আল-কোরআনের আলোকে জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ হলে মানুষ ধীরে ধীরে অলীক কল্পনা ও মিথ্যার মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসে। সত্যের স্বচ্ছ জ্যোতিতে তার জ্ঞানচক্ষু হয় শাণিত ও উন্মোচিত। সুদূরপ্রসারী চিন্তাশক্তির সহায়তায় প্রচলিত সকল মতবাদের মধ্য থেকে প্রকৃত সত্যটি সে সহজেই খুঁজে ও বুঝে নিতে পারে। এটি নিছক কোন বিজ্ঞানের বই নয়। তাই এতে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও ত্বত্ত্বগুলোর বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে ঐশী ইংগিত দেয়া হয়েছে মাত্র। মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে একজন ইমানদার মানুষ যখন গভীর চিন্তা-গবেষণায় রত হয়, তখন পরম শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে জগৎসমূহের স্রষ্টা সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান এক আল্লাহর সামনে মাথা নত করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না। জ্ঞানী মানুষেরা যেন আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি বৈচিত্র সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে সেজন্য বার বার তাগিদ দেয়া হযেছে।
খাঁটি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি পার্থিব জ্ঞান অর্জন করলে বোধের উন্মেষ ঘটে। অন্তর হয় আলোকিত। এই শাণিত অন্তর্চক্ষুর সহায়তায় ভাল ও মন্দের মধ্য থেকে ভালকে চিনে নেয়া ও গ্রহণ করা সহজ হয়। মহান স্রষ্টা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতিকে শান্তি ও কল্যাণ দানের জন্যই আলোকবর্তিকা স্বরূপ ‘পবিত্র কোরআন’ প্রেরণ করেছেন। এই মহাগ্রন্থে উল্লেখিত তথ্যসমূহের বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কল্যাণে সময় উপযোগী যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা ফলপ্রসূ হতে বাধ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা অর্থাৎ মুসলিমদের মধ্যে বেশির ভাগ অংশই আজ এই জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থখানা বুঝে পড়ার পরিবর্তে না বুঝে পড়ার দিকেই ঝুকে পড়েছি। আবার অনেকে খন্ডিতভাবে এর কিছু অংশ বোঝার চেষ্টা করে এবং বাকী অংশটুকু এড়িয়ে যাওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রই বিভ্রান্ত হচ্ছে। ফলে মহান স্রষ্টা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির জন্য যে মহামূল্যবান সংবাদ প্রেরণ করেছেন তা প্রকৃত অর্থে অজানাই থেকে যাচ্ছে। তাই একজন মুসলিমকে সর্বপ্রথমে অবশ্যই ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। আল-কোরআনের আলোকে জীবন পরিচালনার প্রতিটি বিষয়ের উপর স্বচ্ছ-ধারণা নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপনের জন্য স্বচেষ্ট হতে হবে। একজন মুসলিমের প্রতিটি পদক্ষেপই যে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত তা প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণ রাখতে হবে। এরপর যদি কেউ মনমত কোন বিষয়কে বেছে নিয়ে সেটার উপর গবেষণা ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে চান তবে সেই বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত আল-কোরআনের তথ্যগুলোকে সত্যের মাপকাঠি হিসেবে ধরে নিয়েই তাকে সামনে এগোতে হবে। তাহলেই কেবল সঠিক শিক্ষা অর্জিত হবে এবং সার্বজনীন কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেয়া এবং দিকনির্দেশনা দেয়া সম্ভব হবে। মানুষ যত বেশী জ্ঞান অর্জন করবে, তার জ্ঞানের পরিধি হবে তত বিস্তৃত ও স্বচ্ছ এবং মহামান্বিত প্রতিপালকের মহত্ব অনুধাবনের সাথে সাথে ইমানও হবে সুদৃঢ়। খাঁটি ইমান ও স্বচ্ছ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষেরা একদিকে যেমন এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছেই মাথানত করবে না। অপরদিকে তেমনি ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানব তথা সৃষ্টিকুলের কল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসবে।
৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৭
সত্য৭৮৬ বলেছেন: জী ভাই, ঠিক বলেছেন- "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর"
মূলত "আল-কোরআন" মানুষের জন্য মহান স্রষ্টা প্রেরিত "জীবন বিধান"। সেইসাথে জ্ঞানসমৃদ্ধ গ্রন্থ হিসেবে এটি ধীশক্তিসম্বন্ধী, বৌদ্ধিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় এবং এর মাঝে স্রষ্টা প্রদত্ত বিজ্ঞানসংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞান তথা নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান থাকায় এটিকে "বিজ্ঞানময় গ্রন্থ" হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতেই পারে। যেহেতু এই ঐশী গ্রন্থে আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস, পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সকল প্রাণীজগৎ তথা মানব সৃষ্টি এবং পরকালীন জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নানাবিধ বিজ্ঞানময় জ্ঞান ও তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে। তাই "আল-কোরআনকে" মূলত একটি "জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ", পাশাপাশি এটিকে "মৌল বিজ্ঞানের উৎস" হিসেবে উল্লেখ করা হলেও খুব একটা ভুল হবেনা।
২| ৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
নিশাত তাসনিম বলেছেন: হ্যাঁ কোরান বিজ্ঞানময় কিন্তু কোরান বিজ্ঞানের ধার ধারেনা। কারণ কোরান সেই মহান সত্তার গ্রন্থ যা নির্ভুল ও বিশুদ্ধ। বরং বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। কোরান যদি আল্লাহর বানী না হতো তবে এতে অনেক ভুল থাকতো ।
পবিত্র কোরাণের সুরা বাকারার আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহ বলছেন " আল্লাহর জ্ঞানের কোন কিছুই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারেনা যতটুকু না তিনি ইচ্ছা করেন"
তাই আল্লাহ এতো জ্ঞানী যে বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানী এবং জগতের সকল বিজ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের কাছে মাথা নত করে সিজদা।
ফেরাউনের সময় হযরত মুসা আঃ এর মোজেজা দেখে তখনের সেরা সব যাদুকররা আল্লাহর শক্তির কাছে মাথা নত করে তওবা করে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই তা মেনে নিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুকেও হাসি মুখে গ্রহণ করেছিলো।
তাই বলা যায় কোরান ও কোরানের মালিকের জ্ঞান ছাড়া বিজ্ঞান ভিত্তিহীন।
৩০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৫
সত্য৭৮৬ বলেছেন: জী, ঠিক বলেছেন। "আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই" তা মেনে নিয়েই আমাদেরকে সামনে এগুতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করতে হবে।
আল-কোরআনের আলোকে জীবন পরিচালনার প্রতিটি বিষয়ের উপর স্বচ্ছ-ধারণা নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপনের জন্য স্বচেষ্ট হতে হবে। একজন মুসলিমের প্রতিটি পদক্ষেপই যে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত তা প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণ রাখতে হবে। এরপর যদি কেউ মনমত কোন বিষয়কে বেছে নিয়ে সেটার উপর গবেষণা ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে চান তবে সেই বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত আল-কোরআনের তথ্যগুলোকে সত্যের মাপকাঠি হিসেবে ধরে নিয়েই তাকে সামনে এগোতে হবে। তাহলেই কেবল সঠিক শিক্ষা অর্জিত হবে এবং সার্বজনীন কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেয়া এবং দিকনির্দেশনা দেয়া সম্ভব হবে। মানুষ যত বেশী জ্ঞান অর্জন করবে, তার জ্ঞানের পরিধি হবে তত বিস্তৃত ও স্বচ্ছ এবং মহামান্বিত প্রতিপালকের মহত্ব অনুধাবনের সাথে সাথে ইমানও হবে সুদৃঢ়। খাঁটি ইমান ও স্বচ্ছ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষেরা একদিকে যেমন এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছেই মাথানত করবে না। অপরদিকে তেমনি ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানব তথা সৃষ্টিকুলের কল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসবে।
৩| ৩১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৫
আরিফিন ইসলাম বলেছেন: সুন্দর পোস্ট
৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:০৭
সত্য৭৮৬ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৪| ০২ রা জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০২
মাইরালা বলেছেন: সহি বুখারি শরিফের ১২৫৩ নাম্বার হাদিসটি পড়তে গিয়ে দেখলাম এক জায়গায় লেখা আছে , " সৃষ্টির প্রথম থেখেই আল্লাহ্র অস্তিত্ত বিরাজমান ছিল । তিনি ছাড়া আর কিছুরই অস্তিত্ত ছিলনা । তখন তার আরশ ছিল পানির উপর । " প্রশ্ন হল যেখানে তার অস্তিত্ত ছাড়া আর কিছুই নাই সেখানে আরশ আর পানি আসল কোত্থেকে ? এ ছারাও আরও একটা ব্যাপার এই হাদিস থেকে বেড়িয়ে আসছে যে , যখনও মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়নি তার আগে থেকেই পানির অস্তিত্ত বিরাজমান ছিল । এটা কি বিগ ব্যাং থিওরির সাথে মিলে ? অথছ যেখানে মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং থিওরিকে কোরআনের আবিস্কার হিসেবে দেখাতে চায় । এখন মুসলিম বিজ্ঞানীরা এই হাদিসকে , কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ৩০ নাম্বার আয়াতকে আর বিগ ব্যাং থিওরির মধ্যে সমন্বয় সাধন করবেন কি ভাবে
০২ রা জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩
সত্য৭৮৬ বলেছেন: ভাই, আল-কোরআনের কোন আয়াত কিংবা হাদিছ উপস্থাপন করার সময় যথাযথভাবে উল্লেখ করাই শ্রেয়। একে তো হাদিছ বর্ণনার সময় তা বর্ণনাকরীর নিজের মত বর্ণনা করার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তার উপরে সেই বর্ণনাও আবার যদি হেরফের হয়, তাহলে তো মূল বক্তব্য আর খুজে পাওয়াই দুষ্কর হয়ে যেতে পারে। তাই আমি যে হাদিছগুলো কোরআনের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, সেগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলি।
আপনি হাদিছটি আংশিকভাবে দিয়েছেন। তারপরও এই হাদিছের মূল বিষয় যেহেতু পবিত্র কোরআনের সাথে সম্পর্কযুক্ত, তাই এ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত এবং বিজ্ঞানের আলোকে তার ব্যাখ্যা আমি তুলে ধরছি। সর্বজ্ঞ স্রষ্টাই আসল খবর রাখেন, তাঁর প্রেরিত বাণী অবশ্যই সত্য এবং তিনি আমাদেরকে যখন যতটুকু জানাতে চান ততটুকুই আমরা জানতে পারি-
সূরা বাকারা-
(০২ : ১১৭) অর্থ- যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্বে আনায়ন করেন এবং যখন তিনি কিছু করবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শুধু বলেন হও, আর তা হয়ে যায়।
সূরা হূদ-
(১১ : ৭) অর্থ- আল্লাহ্ ছয় দিবসে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, তখন তাঁর আরশ (নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা) পানির ( তরলিত অবস্থার ) উপর (নিবদ্ধ ) ছিল।
.........................
বিজ্ঞানের গবেষণায় জানা গেছে-
Quarks are bound extraordinarily tightly together by gluons. However, in the first ten- millionths of a second after the Big Bang, the universe was hot enough to keep quarks apart. The result would have been a hot dense mix of quarks and gluons known as a quark-gluon plasma.
A soup of ultra-hot elementary particles could be the key to understanding what the universe was like just after its formation, scientists say.
The result is a plasma scientists call an "almost-perfect liquid," with almost zero friction.
Soon after this phase of the universe, quarks and gluons would have combined to form protons and neutrons, which would have grouped with electrons a while later to form atoms. These eventually built the galaxies, stars and planets that we know today.
To better understand how this happened, scientists aim to experiment on this primordial soup to study its properties, such as its viscosity, which is a measure of its internal friction, or resistance to flow. Compared with everyday liquids such as honey or even water, quark-gluon plasma has very little viscosity.
That pushes the existence of water in the universe 1 billion years closer to the Big Bang than any previous find, and it indicates that water has been prevalent in the cosmos almost from the beginning.
{স্টিফেন ডব্লু হকিং-এর গবেষণা-ধর্মী পুস্তক (Baby Universes And Other Essays) - শত্রুজিত দাশগুপ্ত- কর্তৃক বাংলায় অনুবাদকৃত (কৃষ্ণগহ্বর ও শিশু-মহাবিশ্ব এবং অন্যান্য রচনা) - অধ্যায়- ৯ - (মহাবিশ্বের উৎপত্তি)} - সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব যখন উত্তর মেরুর মতো একক বিন্দু ছিল তখন এর কোন অন্তর্বস্তু ছিল না। আক্ষরিক অর্থে সৃষ্টির শুরু হয়েছিল শুন্যতা থেকে। কিন্তু এখন মহাবিশ্বের যে অংশ আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাতে রয়েছে অন্তত 1080 (১০ কে ১০ দিয়ে ৮০ বার গুণ করলে যত হয় তত) সংখ্যক কনিকা। এই সমস্ত কনিকা এল কোথা থেকে ? উত্তরটা হল:- অপেক্ষবাদ এবং কণাবাদী বলবিদ্যা শক্তি থেকে বস্তু সৃষ্টি অনুমোদন করে।
{স্টিফেন ডব্লু হকিং-এর গবেষণা-ধর্মী পুস্তক (A Brief History of Time)- শত্রুজিত দাশগুপ্ত কর্তৃক বাংলায় অনুবাদকৃত- (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস) - অধ্যায়- ৫- (মৌলকণা ও প্রাকৃতিক বল)}- *পৃথিবী যদি অপবর্জন নীতি (Poulis exclusion principle) ছাড়া সৃষ্টি হত তা হলে কার্কগুলি বিচ্ছিন্ন ও সুসংজ্ঞিত পরমাণু গঠন করতে পারত না। তারা সবাই চুপসে মোটামুটি একরকম ঘন একটি সুপ (Soup) তৈরী করত। *বলবাহী মৌল কণিকাগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হল, তারা অপবর্জন নীতি (Exclusion principle) মানে না।
.......................................................
সুতরাং বিজ্ঞানের গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দেখা যায় যে, সৃষ্টির শুরুতে এই মহাবিশ্ব ক্ষুদ্র একক বিন্দুর মত ছিল এবং কোন অন্তর্বস্তু ছিল না, অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু হয়েছিল শুন্যতা বা অনস্তিত্ব থেকে। (২:১১৬), (২:১১৭) ও (২১:৩০) ইত্যাদি আয়াতগুলো পর্যালোচনা করলে এই ইংগিত পাওয়া যায় যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এর মাঝে যা কিছু আছে সবই সর্বশক্তিমান আল্লহতায়ালার অসীম শক্তির মাঝে বিলীন ছিল এবং তাঁরই একান্ত অনুগত ছিল। (৫১:৪৭) নং আয়াতে দেয়া তথ্য অনুসারে যেহেতু সকল শক্তির আধার আল্লাহ মহান স্রষ্টা, সুতরাং শক্তি থেকেই যে সৃষ্টির শুরু হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর বিজ্ঞানও অর্থাৎ অপেক্ষবাদ এবং কণাবাদী বলবিদ্যা শক্তি থেকে বস্তু সৃষ্টি অনুমোদন করে।
মহান আল্লহতায়ালা যখন সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তখন থেকেই অর্থাৎ সেই অসীম শুন্যতা বা অনস্তিত্ব (২:১১৭) বা বস্তুহীন পরিবেশে কোন এক অজ্ঞাত ক্ষণে সৃষ্টিকালীন সময়ের (১ম ইয়াওম বা দিনের) সূচনা ঘটে। (৫১:৪৭) নং আয়াতে 'সামা- আ' বলতে সম্ভবত এমন এক আকাশকে বোঝান হয়েছে যে আকাশ শুধুমাত্র বলবাহী মৌল-কণিকা দ্বারা ভরপুর ছিল এবং ডাইমেনশন বা মাত্রাগত পার্থক্য না থাকায় সেই আদি একক আকাশে কোন স্তর-ভেদ ছিল না। ফলে বর্তমানের এই বাস্তব সপ্ত-আকাশ ও পৃথিবী- মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি পর্যায়ে শক্তিতে ভরপূর 'একক আকাশ রূপে' একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। পরবর্তীতে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর অসীম ক্ষমতাবলে সেই একক আকাশকে মহাসমপ্রসারীত করেন এবং ডাইমেনশন বা মাত্রাগত ছকে সাজিয়ে বর্তমানের এই বাস্তব পৃথিবী ও সপ্ত-আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেন। আমরা হয়ত সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনার ক্ষণটি অর্থাৎ ভরবাহী মৌল কণিকা গঠনের ক্ষণটিকে সঠিকভাবে খুঁজে পাবার সামর্থ রাখি। কিন্তু মহাবিশ্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে বস্তুহীনতা বা অনস্তিত্ব বা চরম শুন্যতার একটা পর্যায় ছিল এবং সেই অসীম শুন্যতায় শুধু অসীম শক্তি বিরাজমান ছিল। এভাবে যে কতটা সময় অতিবাহিত হয়েছে তা সঠিকভাবে নিরুপণ করা কখনই সম্ভব নয়। কারন আমাদের জীবন ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা স্থান ও কালের যে মাত্রা বা ডাইমেনশনের বেড়াজালে আবদ্ধ, সৃষ্টিকালীন আদি বা প্রাথমিক পর্যায়টি ছিল সেই মাত্রা বা ডাইমেনশন বহির্ভূত ঘটনা। কারণ তখন স্থানের কোন অস্তিত্ব ছিল না। সুতরাং মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি পর্যায়ের ঘটনাচক্র ও আদি কাল বা সৃষ্টি শুরুর সময় সম্পর্কে আমরা অনুভবের আলোকে কিছুটা ব্যাখ্যা করতে পারলেও পূংখ্যাণুপূংখভাবে বিশ্লেষণ করা সত্যিই অসম্ভব।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝে নেয়া যায় যে, সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনার ইচ্ছা থেকে কোন এক অজ্ঞাত সময়ে সৃষ্টিকালীন ১ম-ইয়াওম বা দিনের সূচনা ঘটে এবং তখন আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মহাশক্তি অর্থাৎ (২৪:৩৫) জ্যোতির উপর জ্যোতি সম্ভবত প্রচন্ডতম তাপশক্তি একটি নির্দিষ্ট সময়কাল ব্যাপী প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন পরিবর্তন ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বলবাহি মৌল কণিকাগুলো (গ্লুয়ন, ফোটন ইত্যাদি) (২:১১৬) সম্মিলিতভাবে ঘনিভূত ও তরলিত শক্তিরূপে বিরাজ করছিল। বিজ্ঞানের বর্ণনায় আমরা দেখেছি যে, বলবাহী মৌল কণিকাগুলো অপবর্জন নীতি (Exclusion principle) মানে না। আর যে কণিকাগুলো অপবর্জন নীতি মানে না তারা সবাই চুপসে মোটামুটি একরকম ঘন একটি স্যুপ (Soup = hot, dense plasma) তৈরী করে। সুতরাং সৃষ্টিকালীন প্রাথমিক পর্যায়ে কল্পিত বলবাহী মৌল কণিকাগুলো অপবর্জন নীতি বিবর্জিত অবস্থায় উত্তপ্ত, ঘনিভূত ও তরলিত (hot, dense plasma) শক্তিরূপে একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ ছিল এবং তখন (১১:০৭) সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (আরশ) সেই স্যুপ অর্থাৎ উত্তপ্ত, ঘনিভূত ও তরলিত গন্ডিবদ্ধ শক্তির (পানির) উপর নিবদ্ধ ছিল। সুতরাং সৃষ্টির শুরুতে (০২:২৫৫) যেমন আল্লাহতায়ালার আরোশ অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একত্রিত মহাবিশ্বের উপর নিবদ্ধ ছিল। তেমনি মহাবিশ্ব (৫১:৪৭) সম্প্রসারিত হওয়ার পরও আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সব কিছু মহান স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে ও থাকবে। প্রতিপালক হিসেবে তাঁর এই সক্ষমতা নিরঙ্কুশ।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি অবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ তথ্যের সাথে আল-কোরআনে প্রদত্ত সৃষ্টি বিষয়ক মৌল বিজ্ঞান সম্পর্কিত বাণীর মিল দেখলে সত্যি বিস্মিত হতে হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় তথাকথিত 'বিগ-ব্যাং তত্ত্ব' অনুসারে মহাবিস্ফোরণ ঘটুক বা না ঘটুক, মহাবিশ্বের যে একটা শুরু ছিল, বিজ্ঞানের গবেষণা ও আল-কোরআনের নির্দেশনায় তার ইংগিত মেলে। সুতরাং সহজ কথায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থায় প্রথম সেকেণ্ডের এক কোটি ভাগের অতি ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে এবং অতি উত্তপ্ত (সূর্যের কেন্দ্র অপেক্ষা ১,২৫,০০০ গুণ অধিক) পরিবেশে 'কার্ক- গ্লুয়োন- প্লাজমা' গঠিত হয়। এটি একটি তরলীভূত অবস্থা এবং বিজ্ঞানীরা এই 'কার্ক-গ্লুয়োন-প্লাজমা' এর সান্দ্রতার (viscosity) তুলনা করতে গিয়ে মধু এবং পানির উদাহরণ দিয়েছেন। আমরা জানি যে, কোন বস্তুর সান্দ্রতা শূন্যের চেয়ে কম হলে সেই বস্তুটি কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হয় এবং তা কেবলমাত্র খুবই নিম্ন তাপমাত্রা বিশিষ্ট অবস্থাতেই ঘটা সম্ভব। তাই সৃষ্টির আদিতে সৃষ্ট সেই তরলীভূত অবস্থার সান্দ্রতা যে ঋণাত্মক নয় বরং শূণ্য বা ধনাত্মক অর্থাৎ অন্তত শূন্যের চেয়ে বেশি ছিল এবং সেই সময়কার পরিবেশের উষ্ণতা যে নিম্ন নয় বরং উচ্চ তাপমাত্রা বিশিষ্ট ছিল, তা বিজ্ঞানীরা এই সহজ উদাহরণ দিয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। সুতরাং মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদিতে সৃষ্ট 'কার্ক-গ্লুয়োন-প্লাজমা' নামক তরলীকৃত এই পর্যায় সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য সঙ্গত কারণেই আল-কোরআনে কোন কঠিন পদার্থ তো নয়ই, বরং সকলের জ্ঞাতার্থে স্বাভাবিক অবস্থা ও তাপমাত্রায় তরল পদার্থ হিসেবে 'পানির' কথা উল্লেখ করাটাই যথার্থ হয়েছে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আল-কোরআনের এই বৈজ্ঞানিক মৌল ইংগিতটি অত্যন্ত গভীর তাৎপর্য বহন করে। কারণ পৃথিবীতে কোন তরল পদার্থের সান্দ্রতা পানির চেয়ে বেশি হলে বা শূন্যের চেযে কম হলে তা আর (mobile) নিয়তপরিবর্তনীয়, চলিষ্ণু, গতিময় অবস্থায় থাকতে পারেনা। তাই পানির উদাহরণ দিয়ে এখানে একটি সীমানা নির্ধারণ কোরে দেয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে ইংগিত দেয়া হয়েছে যে, আদি পদার্থ কণিকাগুলো যখন 'কার্ক-গ্লুয়োন-প্লাজমা' নামক তরলীভূত অবস্থায় ছিল, তখন তার সান্দ্রতা পানির চেয়ে বেশি ছিল না, বরং পানির চাইতে কম ছিল (quark-gluon plasma has very little viscosity) এবং প্রকৃত তরল পদার্থের মতই আ্চরণ করছিল অর্থাৎ নিয়তপরিবর্তী, চলিষ্ণু, গতিময় বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ছিল। আর তাই সর্বাধুনিক গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরাও স্বল্প সান্দ্রতা বিশিষ্ট এই অবস্থাকে "almost-perfect liquid" হিসেবেই বিবৃত করেছেন। যারা বিজ্ঞানের গভীর জ্ঞান রাখেন না তারাও এই আয়াতটি বুঝে পাঠ করার চেষ্টা করলে সৃষ্টিকালীন আদি অবস্থা সম্পর্কে সাধারণভাবে একটা ধারনা পেয়ে যাবেন। অন্তত এই ধারণা পাবেন যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদিতে পানি সদৃশ বা অনেকটা এর কাছাকাছি তরলীভূত বা তরলীকৃত অবস্থা বিরাজ করছিল।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ-
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫১
মুদ্দাকির বলেছেন: বিজ্ঞানের বই না হলেও এমন অনেক কিছু আছে যা বিজ্ঞানীদের সরাসরি সাহায্য করতে পারে , কিন্তু সেই রকম মন আর বিশ্বাস থাকতে হবে !!!