নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুধুই সত্যের পথে...

সত্য শিকারী

শুধুই সত্যের পথ

সত্য শিকারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: বোন এবং একটি হত্যাকাণ্ড

০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১৩

M1804

এখনো আশরাফের হৃদপিন্ডের লাফালাফিটা কমেনি। হাতের স্কেলটা থেকে এখনো রক্ত ঝরছে। চারপাশে শুনশান, পাশের বিল্ডিংগুলোর বারান্দা দিয়ে হয়তো কেও একটু উঁকি দিচ্ছে। কারন সামনে দুইটি মৃতদেহের একটির মৃত্যুর জন্যে তার এই স্কেলটাই দায়ী।

সেদিন সকালে;
-আপু তুমি আজকে আন্দোলনে যাবা?
কলমের ব্যাগটা, স্কেল আর জ্যামিতি বক্সটা ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে তন্বীর সামনে এসে দাড়াল আশরাফ।
-হ্যাঁ যাবই তো, দেখছিস না আমদের আন্দোলনের দাবীগুলো এখনো মানা হচ্ছে না, এই নয় দফা দাবী তো আমরা অহেতুক কোন দাবি করিনি। তাহলে আমাদের দাবী মানা হচ্ছে না কেন? দেখ ভাই নিরাপদ সড়কের এ আন্দোলনে যতদিন আমাদের দাবী মানা না হবে ততদিন আন্দোলন শেষ হবে না।
-আপু আমাকে নিবা তোমার সাথে? সবাই দেখলাম তোমাদের নিয়ে খুব প্রশংসা করছে। আমাকেও অংশীদার করো!
-আচ্ছা যাবি? চল তাহলে। ইউনিফর্ম পড়ে আইডি টা নে৷

তন্বীর সাথে বেড়িয়ে পড়ল আশরাফ। সাইন্সল্যাব এর দিকে এগিয়ে গেল তারা। আশরাম দেখল তাদের স্কুলের বেশ কিছু ছেলেও যুক্ত হয়েছে তাদের সাথে। দেখতে দেখতে " উই ওয়ান্ট জাস্টিস " স্লোগানে ভরে উঠল সাইন্সল্যাব এরিয়া৷ বেশকিছু স্কুল কলেজের পোলাপান এসে জড়ো হয়েছে। তন্বী তাদের কলেজের মেয়েদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল মুহুর্মুহু শ্লোগানে৷ আশরাফের গা বারবার শিউরে উঠছে প্রতি শ্লোগানের উত্তেজনায়!

এমন সময় একটা, না না একটা না, পরপর দুইটা গুলির আওয়াজে হঠাৎ হুড়ুহুড়ি শুরু হয়ে গেল ছাত্রছাত্রী দের মাঝে৷ ছাত্ররা দ্রুত সামনে এসে দাড়াল। আর এমন সময় একটা দল এসে লাঠি নিয়ে পিটানো শুরু করলো ছাত্রছাত্রীদের।

আশরাফ বারবার তন্বীকে অনুসরন করার চেষ্টা করছে। আস্তে আস্তে সরে গেল তন্বীর দিকে। ছেলেরা এগিয়ে গেল সামনের দিকে ধাওয়া করে। মেয়েদের একটি দল একা পড়ে গেল। আশরাফ দ্রুত সেদিকে এগিয়ে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পুলিশের একটি গাড়ি ছাড়া আর কেও নাই। সবাই বিভিন্নদিকে সরে গেছে।

কিছুক্ষণ পরপরই গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। কার গুলি কার গায়ে লাগছে বুঝার উপায় নাই৷ আশরাফ তন্বীর পাশে গিয়ে দাড়াতেই দেখল পাশের গলি থেকে ৫/৬জন লাঠি আর লোহার রড হাতে ধাওয়া শুরু করছে৷ সাথের মেয়েরা যে যেদিকে পারে দৌড় দিল। আর শয়তানগুলোও তাদের পিছু নিল। তন্বী আর আশরাফ দৌড় দিতেই একজন এসে তাদের ধরে ফেলে। আশরাফের পায়ে লোহার রডের আঘাত করে ফেলে দিল। তন্বী ছুটে এসে তাকে ধরতেই তন্বীর জামা ধরে টান দিল শয়তানটা। এপ্রোনের একপাশ ছিড়ে যেতেই আশরাফের হাতে উঠে এলো স্কেল। ব্যাগ থেকে বের করে কবে যে হাতে নিয়েছে সে নিজেও জানে না। হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল তন্বী। কপালের বাম পাশটায় ভালমতো একটা ফুটো। আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে কাল পীচের রাস্তাটা। আর মাথা কাজ করল না আশরাফের। চোখ বন্ধ করে এলোপাথাড়ি আঘাত কর‍তে লাগল শয়তানটা কে। রক্তের ছিটা এসে পড়ছে স্কুলশার্টটায়। সেদিকে খেয়াল নাই আশরাফের। হাতের স্কেলটা শুধু উঠানামা করছে শয়তানটার উপর। একসময় শয়তানটা লুটিয়ে পড়ল রাস্তার উপর।

আর আশরাফ দাঁড়িয়ে আছে রক্তাক্ত স্কেল হাতে। রক্ত ঝরছে সেটা থেকে। তাজা রক্ত।

পুলিশের সাইরেন বেজে উঠল পাশের কোন গলি থেকে।

০৮/০৮/১৮

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৪০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এরকম শত শত গল্প আজো অপ্রকাশীত!

গেষ্টাপোরা নিরব হলে, গোয়েবলস থেমে গেলে
সুবোধ ফিরে এলে হয়তো জানা যাবে অপ্রকাশীত করুন সত্য!

গল্পে ভাললাগা

+++

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:২৩

এম এ কাশেম বলেছেন: গল্পের চেয়ে বাস্তব আরও হৃদয়বিদারক।

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:২০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: কত তন্বীর রক্তে ভেসে গেছে রাজপথ কে জানে?
ছোট্ট কিন্তু মর্মস্পর্শী বর্ণনায় চোখ ভিজে যায় ।
যারা হারিয়ে গেছে চিরতরে, কেউ কেউ তাদের জন্য দু'ফোটা অশ্রু না ফেললে বড়ই অন্যায় হবে ।
গল্পে +++ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.