নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌভিকের চিন্তাচর্চা

চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি

সৌভিক ঘোষাল

পেশায় সাহিত্যের শিক্ষক। মতাদর্শে মার্কসবাদী। কোলকাতার বাসিন্দা

সৌভিক ঘোষাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৩ জন শিশুর মৃত্যু : মিড ডে মিল ট্রাজেডি ও আশঙ্কার নানা মাত্রা

২২ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:০৫

১৬ জুলাই মিড ডে মিল খেয়ে বিহারে বাইশ জন শিশু মারা গেল সারান জেলায়। খাদ্যে তীব্র বিষক্রিয়ার কারণ নিয়ে প্রাথমিক অনুমান কোনও কীটনাশক খাদ্যে মিশেছিল। এই লেখার সময় খাদ্যের নমুনা নিয়ে কোলকাতার ফরেন্সিক ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। তদন্তেই জানা সম্ভব ঠিক কী কী ধরণের গাফিলতি এই মারাত্মক ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াল। সারানের ঘটনার পরদিন আরো পনেরোজন শিশু মিড ডে মিল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল বিহারের আর এক জেলা মধুবনিতে। একইদিনে মহারাষ্ট্র থেকেও একই রকম আতঙ্কজনক খবর এলো। খবরের কাগজে, টিভি চ্যানেল আর ইন্টারনেট এ এই খবরগুলো দেখতে দেখতে পড়তে একটা আতঙ্কের স্রোত বয়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে। শুধু সামাজিক জীব হিসেবেই নয়, একেবারে ব্যক্তিগত স্তরেও। জীবিকার সুত্রে আমি যে স্কুলে পড়াই সেখানে ঘটনাচক্রে মিড ডে মিল কার্যক্রমের সঙ্গে প্রথম থেকে যুক্ত থাকার সুবাদে জানি দুর্ভাগ্য সমস্ত সতর্কতার অতীত, এ কথা মনে রেখেও বলা যায়, মিড ডে মিল ব্যাপারটা যেভাবে চলে, সেটা বেশ দুর্ঘটনা প্রবণ। অনেক বেশি করেই হয়ত ঘটে যেতে পারে এরকম মারাত্মক ঘটনা, ঘটে না যে সেটাই আমাদের সৌভাগ্য। বিশ্বাসী কেউ কেউ এমনকী দৈবও বলতে পারেন।

কেন বলছি এরকম কথা সেটা পরিস্কার করতে গেলে এই প্রকল্প কীভাবে চলে তার দৈন্যন্দিনতায়, সেটা স্পষ্ট করতে হবে। তবে তার আগে প্রথমেই এটা বলে রাখা ভালো সাধারণ বিচারে ‘মিড ডে মিল স্কিম’ সামাজিক দিক থেকে অত্যন্ত উপযোগী একটি প্রকল্প। এই প্রকল্প চালুর আগে আমাদের স্কুলে দেখতাম অনেক ছাত্রছাত্রই মাঝপর্বে বা শেষপর্বে বেশ নেতিয়ে পড়েছে। কারো মাথা ঘুরছে, কারো বমি পাচ্ছে। প্রশ্ন করে জানা যেত তারা অনেকে বাড়ি থেকে খেয়ে আসে নি, হয়ত মুড়ি বাতাসা বা সামান্য কিছু খেয়েছে। স্কুলে পেটভরা/ পুষ্টিকর টিফিন খাওয়ার প্রশ্ন নেই, কারণ মারাত্মক দারিদ্র। তার চেয়েও বড় কথা বাবা সকালে কাজে বেরিয়ে যান, মা লোকের বাড়ি রান্না করতে বা বাসন মাজতে। কিম্বা হয়ত রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজে বা অন্য কিছু। ছেলেমেয়ের সাথে দেখাই হয় না সে সময়, তো টিফিন বানিয়ে দেওয়া। আর এই হতভাগ্যদের সংখ্যা খুব কম ছিল না। মিড ডে মিল প্রকল্প এই সঙ্কটটা প্রায় কাটিয়ে দিতে পেরেছে। উপরন্তু স্কুলে প্রায় আসতই না, এরকম অনেককেই নিয়মিত খাবার টুকু পাওয়া যাবে, এই টান বিদ্যালয়মুখী করেছে। স্কুলে আর পড়াশুনো হবে না, রান্না, খাওয়া দাওয়া – এসব করেই দিন কেটে যাবে, এরকমটাই অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন। মিড ডে মিল চালু হলে পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাবে কিনা, এরকম আশঙ্কা আমাদের অনেকের মধ্যেও ছিল। অভিজ্ঞতা বলছে, লাভের দিকে পাল্লাটা খুব বেশিই হেলে আছে।

কিন্তু এমন সম্ভাবনাময় একটি প্রকল্পর পরতে পরতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা জড়িয়ে থাকার ব্যাপারটা বেশ পীড়াদায়ক। আশঙ্কার জায়গাগুলো কোথায় ? না এত অল্প সংখ্যক কর্মী দিয়ে মিড ডে মিল প্রকল্প চালানো হয় যে তাদের পক্ষে সময় মেনে কাজ সামলে ওঠা মুশকিল। অভিজ্ঞতা বলে দারিদ্র অধ্যুষিত পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলি আর যাই হোক জনসংখ্যায় পিছিয়ে নেই। ফলে বিদ্যালয়গুলি প্রচুর ছাত্রসংখ্যার চাপ নিয়ে হাসফাঁস করে। পাঁচজন কর্মীর পক্ষে বাজার ইত্যাদি সামলে রান্না শুরু করে বেলা একটা দেড়টার মধ্যে ছয়, সাতশো বা তারও বেশি ছেলেমেয়ের ভাত, ডাল তরকারি করে ফেলা বেশ দুরূহ কাজ। প্রতিদিন এই দুরূহ কাজ দৈনিক একশো টাকার মত মজুরীতে করে যেতে হয় অসম্ভব দ্রুততায়। ফলে তৈরি হয় বিপদের আশঙ্কা। চূড়ান্ত তাড়াহুড়োর বাস্তব প্রয়োজন যেভাবে অসতর্ক হওয়ার পথ তৈরি করে দেয়, সেটা মারাত্মক। কাজের অনুপাতে কর্মী নিয়োগ না করার যে প্রবণতা ভারতীয় রেল এর মত বড় ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে অনেক সময় দেখা দিচ্ছে, ছোট ছোট শিশুদের মিড ডে মিল প্রকল্পেও তাই সক্রিয় হয়ে উঠছে/উঠতে চলেছে কিনা তার সতর্ক বিচার প্রয়োজন।

এর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে আরো কয়েকটি প্রসঙ্গ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রান্নাঘর, খাবার পরিবেশনের জায়গা, জলের উৎস প্রভৃতি মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। মিড ডে মিল প্রকল্পে ছাত্রছাত্রী পিছু, রান্নাঘর, বাসনপত্র পিছু বরাদ্দ ভালই (ব্যতিক্রম নিশ্চিত আছে), কিন্তু তার ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ হয় না। প্রকল্পের অর্থ চুরি হয়ে যায়, এমনটা না হলেও বহু ক্ষেত্রে মিড ডে মিল প্রকল্পের অর্থ সাইফন হয়ে চলে যায় স্কুলের নানা কাজে। বিদ্যালয় স্তরের বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, সেটা বিদ্যালয় নিযুক্ত আংশিক শিক্ষকদের বেতন যা সরকার দেন না, সেটা হোক বা বাড়তি নানা খরচ – যোগাড় করার জন্য মিড ডে মিল প্রকল্প থেকে অর্থ সরবরাহ করা বিদ্যালয়গুলির মধ্যে বেশ জনপ্রিয় একটি প্রক্রিয়া। মিড ডে মিল প্রকল্পর পরিচ্ছন্নতাগত দিকটি এতে নিশ্চিতভাবেই বেশ খানিকটা ব্যাহত হয়। ওয়াকিবহল মহলে এটা একটা ‘ওপেন সিক্রেট’, কিন্তু বিপদের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিব্য রমরমিয়ে চলছে তথাকথিত এই ‘প্র্যাগমাটিজম’।

কাগজে কলমে নিরাপত্তা বিধি বলবৎ থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে তার চূড়ান্ত অভাব। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, আপদকালীন সময়ে তার ব্যবহার জ্ঞান ইত্যাদি খুব অল্প জায়গাতেই উপলব্ধ। সবথেকে বড় কথা নানা দিক থেকে সুরক্ষার প্রশ্নে এত স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে তদারকি ব্যবস্থা নামমাত্র ও নহাৎ আনুষ্ঠানিক। সরকার ও বিভিন্ন স্তরের প্রশাসন প্রকল্পটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, অর্থ বরাদ্দ, চাল ইত্যাদি পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা পালন করলেও তদারকির ব্যাপারে উদাসীনতার জন্য ঘটা বিপদের দায় এড়াতে পারেন না। অভিভাবক সমিতি তৈরি ও সরকার প্রশাসনের তরফে নিয়ম করে মিড ডে মিল প্রকল্পের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ কতটা জরুরী বিহার বা মহারাষ্ট্রের ট্র্যাজিক ঘটনাগুলোই তা তুলে ধরছে। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে তা মারাত্মক সব সম্ভাবনার হিমশৈলের চূড়া মাত্র। সঙ্কটের সামান্যই প্রকাশিত, বেশিরভাগ এখনো অগোচরেই আছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১২

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বড়ই দুঃখের বিষয়
এ বিষয়ে এখনই কার্যকর ভুমিকা না নিলে আরও প্রান হানির আশংকা থাকবে

২| ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

:( :( :( দুঃখজনক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.