![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পেশায় সাহিত্যের শিক্ষক। মতাদর্শে মার্কসবাদী। কোলকাতার বাসিন্দা
ভারতের উনত্রিশতম রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে তেলেঙ্গানা। দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও রাজনৈতিক টালবাহানার পর্ব পেরিয়ে সংযুক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের অংশ নিয়ে এই আত্মপ্রকাশের রাজনৈতিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কথা সামনে আসার পর থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে আলোড়ন। গোটা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েক দশক ধরে সক্রিয় পৃথক রাজ্যের দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা ও আন্দোলন নতুন করে সামনে এসেছে। এর মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছে অধুনা আসামের অংশ নিয়ে একদিকে বড়োল্যাণ্ড ও অন্যদিকে কার্বি আংলং, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও সংলগ্ন অঞ্চল নিয়ে গোর্খাল্যাণ্ড, মহারাষ্ট্রের অংশ নিয়ে বিদর্ভ, উত্তরপ্রদেশের অংশ নিয়ে বুন্দেলখণ্ড গঠনের প্রসঙ্গ। কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার সমূহ তথা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ প্রসঙ্গে রকমারী অবস্থান নেওয়াও শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে তেলেঙ্গানা ও সেই সূত্রে নতুন রাজ্যের দাবি ভারতীয় রাজনীতির আবহে এই মুহূর্তে অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। লোকসভা নির্বাচন সামনে থাকায় ভোট ও জোট রাজনীতির জটিল নানা অঙ্কও এই পরিপ্রেক্ষিতে সজীব হয়ে উঠেছে। অনুমান করা যায় পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের সমীকরণ নির্ণয়ে পৃথক রাজ্যের প্রসঙ্গ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে ভালোরকম ভূমিকা পালন করবে। সে প্রসঙ্গে যাবার আগে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রেক্ষাপটটি লক্ষ্য করা যাক।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বরাবরই তার নিজস্ব ভূমিখণ্ডের ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের দাবিতে উতরোল থাকা তেলেঙ্গানার অতীতের দিকে ফিরলে আমরা লক্ষ্য করব মৌর্য পরবর্তী সময় থেকেই এই অঞ্চলের নিজস্ব অস্তিত্ব ও সংস্কৃতির ইতিহাস রয়েছে। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতক পর্যন্ত সাতবাহনরা এই অঞ্চলে তাদের শাসন কায়েম করেছিল। একাদশ শতাব্দীর শেষ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম দিক অবধি কাকাতিয় শাসনের সময়কাল ছিল এই অঞ্চলের অন্যতম গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়। চতুর্দশ শতকে এই এলাকা দিল্লি সুলতানীর শাসনাধীনে আসে। তারপর বাহমনী এবং কুতুব শাহী শাসকরা এখানে তাদের শাসন কায়েম করেন। একবছর প্রতিরোধের পর গোলকুণ্ডা দুর্গ ও এই অঞ্চল ১৬৮৭ সালে ঔরঙ্গজেব অধিকার করে নেন ও তা মুঘল শাসনাধীনে আসে। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় মুঘল শাসন দুর্বল হয়ে পড়ার সুযোগে নিজাম এর স্বাধীন নিয়ন্ত্রণভুক্ত হয়ে এখানকার শাসন চলতে থাকে। নিজাম ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশদের সাথে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে আবদ্ধ হন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই পর্বে রাজধানীর নাম অনুসারে নিজাম শাসিত গোটা এলাকা হায়দ্রাবাদ নামে পরিচিত ছিল।
ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে নিজাম শাসিত এই অঞ্চল নিয়ে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর নিজাম ভারত পাকিস্থান কোথাও অন্তর্ভুক্ত হতে চান নি। অপারেশন পোলো অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৯৪৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার হায়দ্রাবাদের দখল নেয়। এইসময়ে নিজাম রাজের সামন্তী শাসনের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে তেলেঙ্গানা জুড়ে চলছিল উত্তুঙ্গ কৃষক আন্দোলন। ভারতীয় সেনা নির্মম আগ্রাসন চালিয়ে সে আন্দোলনও দমন করে। ভারতের স্বাধীনতার সময়ে তেলেগুভাষী জনগণের অধিকাংশ যে ২২ টি জেলায় বাস করতেন তার মধ্যে ৯টি ছিল নিজাম শাসিত হায়দ্রাবাদে, ১২ টি ছিল মাদ্রাজ প্রদেশে আর ১ টি ছিল ফরাসী নিয়ন্ত্রণাধীন ইয়ানাম। উত্তর সিরকাস ও রায়লসীমা অঞ্চলের তেলেগুভাষী অঞ্চলগুলি নিয়ে ১৯৫৩ সালে গঠিত হয় অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য, এর রাজধানী হয় কুরনুল। এই ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসেই তৈরি হয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন, যার সুপারিশ পরবর্তীকালে ভারতের রাজ্য বিভাজন নীতির মূল মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে। রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন মূলত ভাষার ভিত্তিতে ভারতীয় রাজ্যের বিভাজন ও পুনঃর্বিন্যাসের নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু এতদ স্বত্ত্বেও কমিশন তার রিপোর্টে তেলেগুভাষী তৎকালীন দুটি পৃথক রাজ্য হায়দ্রাবাদ (বর্তমান প্রস্তাবিত তেলেঙ্গানা রাজ্যের এলাকার সঙ্গে যা মোটামুটি মেলে) ও অন্ধ্রপ্রদেশ (তেলেঙ্গানা ব্যতীত বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশের অংশের সঙ্গে যার এলাকাগত মিল আছে) কে সংযুক্ত করে খুব দ্রুত একটি অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশ গড়ে তোলার কথা বলে নি।
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন প্রদত্ত রিপোর্ট এর ৩৮২ নং অধ্যায়টি এই সংক্রান্ত প্রশ্নে বিশেষ গুরূত্বপূর্ণ, যেখানে কমিশন জানায়, “অন্ধ্রে সংযুক্ত রাজ্য নির্মাণের জন্য আগ্রহ খুবই প্রবল, কিন্তু তেলেঙ্গানায় জনমত এখনো এর স্বপক্ষে গড়ে ওঠে নি। অন্দ্রের গুরূত্বপূর্ণ নেতা ও জনমত এর ওপর প্রভাব সঞ্চারকারীরা তেলেঙ্গানা ও অন্দ্রের সংযুক্তির পক্ষে থেকেও এটা মনে করেন শেষপর্যন্ত তেলেঙ্গানার মানুষের স্ব ইচ্ছার ভিত্তিতেই এই সংযুক্তি হওয়া উচিৎ। প্রাথমিকভাবে তেলেঙ্গানার মানুষই ঠিক করবেন তারা কি চান”।
তেলেঙ্গানার মানুষদের সংযুক্তি সম্পর্কে আপত্তির কিছু বাস্তবসম্মত কারণ ছিল। বেশি রাজস্বর জোগান তেলেঙ্গানা থেকে এলেও অর্থনৈতিকভাবে এটি ছিল অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া। তেলেঙ্গানাবাসীর আশঙ্কা ছিল তাদের রাজস্বর অতিরিক্ত ভাগটা তাদের কল্যাণে ব্যয় না হয়ে অন্যত্র চলে যাবে। কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর পরিকল্পিত সেচ প্রকল্পর সাহায্যও তারা কম পাবে বলে আশঙ্কা করেছিল। ব্রিটিশ শাসনাধীন সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকায় তেলেঙ্গানার বাইরের তেলেগুভাষী মানুষেরাই প্রশাসনিক ও অন্যত্র কাজে বেশি সুযোগ পেয়ে যাবে, এমন মনোভঙ্গীও তাদের তাড়িত করেছিল। তেলেঙ্গানাবাসীদের অখণ্ড তেলেগু রাজ্যের প্রতি সন্দিগ্ধ আপত্তির কথা বিবেচনা করে কমিশনের প্রস্তাব ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হবার সুযোগ নিয়ে তেলেঙ্গানা আলাদা রাজ্য হিসেবে কিছুদিন থাক। পরবর্তী নির্বাচনে (১৯৬১ র নির্বাচন) তেলেঙ্গানা বিধানসভায় যদি দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংযুক্তির সিদ্ধান্ত হয়, তবেই তেলেঙ্গানা বাকি অন্ধ্রের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। কিন্তু এই অভিমতের বিরুদ্ধে গিয়ে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তেলেঙ্গানাকে অন্ধ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। হায়দ্রাবাদ বা তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রামকৃষ্ণ রাও ব্যক্তিগত আপত্তি স্বত্ত্বেও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মেনে নেন। ১লা নভেম্বর ১৯৫৬ সালে অখণ্ড অন্ধ্র রাজ্য গঠিত হয়। তবে এর সম্পর্কে সেই লগ্নেই সংশয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু বলেন এই সংযুক্তিকরণের মধ্যে সম্প্রসারণবাদ সাম্রাজ্যবাদের ছায়া আছে। বিবাহের সঙ্গে তুলনা করে তিনি জানান বিচ্ছিন্নতার অধিকার নিয়েই এই সংযুক্তিকরণ হচ্ছে।
বাস্তবতা, স্থানীয় আবেগ ও ইতিহাসের সূত্র ধরে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন যে সুপারিশ করেছিল তাকে জোর করে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় সরকার তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব যে অবিমৃশ্যকারিতা ও স্বৈরতান্ত্রিক ঔদ্ধত্য সেদিন প্রকাশ করেছিল, পরবর্তীকালে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক জটিলতার মধ্য দিয়ে জনগণকে তার মাশুল দিতে হয়েছে। জনমত গঠনের আগে জোর করে সংযুক্তির ফলে তেলেঙ্গানায় বিচ্ছিন্নতার দাবী ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় থেকেছে। প্রায়ই আন্দোলন, দমন ও পালটা বিক্ষোভ স্বাভাবিক জনজীবনকে ব্যাহত করেছে। দেশীয় রাজনীতির এক ভিন্ন পরিমণ্ডলে, আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান ও শক্তিবৃদ্ধির নতুন পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস নির্বাচনী সাফল্যের নিরিখ থেকে তেলেঙ্গানা বিভাজনের নীতি নিচ্ছে। কিন্তু পৃথক রাজ্যের দাবি শুধু তেলেঙ্গানাতেই সীমাবদ্ধ নেই। স্বাভাবিকভাবেই তেলেঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্তে সে সব দাবি নিয়ে আন্দোলনকারীদের বঞ্চনার বোধ ও ক্রোধ আরো তীব্র হওয়া স্বাভাবিক। এই রাজনৈতিক বাস্তবতাকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউ পি এ এড়িয়ে যেতে বা উপেক্ষা করতে বা ভোটবাক্সের স্বার্থে ব্যবহার করে নিতে সচেষ্ট, কিন্তু কোনও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে আগ্রহী নয়। ২০০১ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি একটি আবেদনে তৎকালীন বিজেপি শাসিত এন ডি এ সরকারকে অনুরোধ করেছিল বিভিন্ন রাজ্যের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরি করতে। ২০০৪ থেকে টানা দশবছর কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় এরপর তারা নিজেরা থাকলেও সমস্যা সমাধানে এই কমিশন গঠনে তাদের কোনও আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় নি। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও তাদের শাসকদলগুলিও মূলত প্রাদেশিকতার অস্মিতাকে সামনে রেখেই এই সমস্ত আন্দোলনের নিজস্ব পরিচিতির লড়াই ও যুক্তিকাঠামোকে দমন করতে উদ্যত, যা প্রকৃত গণতান্ত্রিক আবহের পক্ষে ধ্বংসাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করছে। ভারতীয় গণতন্ত্রকে প্রসারিত ও মজবুত করার জন্য দমন ও উপেক্ষার পরিবর্তে নতুন এক রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরি করার মধ্য দিয়ে খোলা মনে এই সমস্ত নতুন রাজ্যের দাবির পর্যালোচনা ও গণতান্ত্রিক সমাধান বিশেষ প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৩১
মেদভেদ বলেছেন: দাদা তুমি ভূল জাগায় লেখাটি পোস্ট করেছ। তোমাদের হিন্দুস্থানি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশীদের মোটেও আগ্রহ নেই।
১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫৪
সৌভিক ঘোষাল বলেছেন: সবাই কূপমণ্ডুক নাও হতে পারে। আপনার দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়াশোনা হয় না ?
৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৬
কুন্তল_এ বলেছেন: তথ্যবহুল পোষ্ট। খবরের কাগজে দেখলাম দার্জিলিং এ ব্যাপক গোলমাল চলছে। সম্ভবত নতুন রাজ্য হিসাবে দার্জিলিং এর আত্মপ্রকাশ সময়ের ব্যাপার - তাই কি?
বিদর্ভ নামটা বেশ কাব্যিক লাগলো।
ভাল থাকুন।
৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫
বিশালবাংলা বলেছেন: দাদা,তেলেঙ্গানা যদি পশ্চিমবঙ্গের অধীনে থাকতো তাহলে নতুন রাজ্য তো দূরের কথা,ছাড়া জীবন কাঁদলেও কিছু পেত না।
তাই এত কিছু না করে পশ্চিমবঙ্গের অধীনে যে সব রাজ্য আছে ওদের কে মুক্তি দিন যেমনঃ দার্জিলিং ,গোর্খাল্যাণ্ড,ত্রিপুরা ইত্যাদি ।
৫| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১০
সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে আমার আগ্রহ আছে, ভাল পোষ্ট।
৬| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২০
রাজীব নুর বলেছেন: পুরো তামিল নাড়ু টা আমার ঘুরে বেড়ানোর শখ আছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১
েবনিটগ বলেছেন: এই লোটা ভর্তি কোটা নিয়ে যারা মোটা কথা বলে তাদের বোটাসহ মূলৎপাটন করলে গোটা দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটা এখন সময়ের দাবি।