নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌভিকের চিন্তাচর্চা

চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি

সৌভিক ঘোষাল

পেশায় সাহিত্যের শিক্ষক। মতাদর্শে মার্কসবাদী। কোলকাতার বাসিন্দা

সৌভিক ঘোষাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ শয্যায় শায়িত কবি নবারুণ ভট্টাচার্য

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৭

কবি তখন শায়িত পিস হেভেন এর মেঝেতে। একটু পরেই বরফ কফিনে তিনি আচ্ছাদিত হবেন। তারপর কাল শেষ যাত্রা। আমরা দাঁড়িয়ে আছি কবিকে ঘিরে। নিমীলিত তাঁর চোখ। মুখখানি শান্ত। দীর্ঘ রোগভোগের ক্লান্তির সব চিহ্ন তখন উধাও সেখান থেকে। যে মৃত্যু উপত্যকা তার দেশ ছিল না, আপাতত সেখানেই তিনি। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছিল তাঁকে পড়ার কথা, তাঁর ঋজু স্বল্প স্পষ্ট কথাগুলিতে আন্দোলিত হবার কথা। মনে পড়ে যাচ্ছিল নিজের লেখা সম্পর্কে তাঁর সেই অমোঘ উক্তি, " আমি লেখার ব্যাপারটা যেভাবে বুঝি সেটা নিছক আনন্দ দেওয়া বা নেওয়া নয়। আরো গভীর এক অ্যালকেমি যেখানে বিস্ফোরণের ঝুঁকি রয়েছে।" একটা বিকল্প রণনীতি ছিল তাঁর সুখপাঠ্য আখ্যান থেকে নিজের লেখাকে পৃথক করার। একটা গভীর বিশ্বাস থেকে সেই রণনীতি তৈরি হয়েছিল। "পৃথিবীর শেষ কমিউনিস্টের মৃত্যু হলেও ... সারা দুনিয়া জুড়ে কমিউনিস্টরা ফিরে আসবে। হ্যাঁ আসবে। তবে তার জন্যে আগামী সতেরো বছর বা তারও বেশি সময়ের প্রত্যেকটি ঘণ্টা ও প্রত্যেকটা মিনিট কাজে লাগাতে হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে কমিউনিস্টরা ফিরে আসবে। আসবেই। আর দশ নয়, দশ হাজার দিন ধরে দুনিয়া কাঁপবে।" সাহিত্যের কোন ভূমিকা পালনের জন্য কবি কলম ধরেছিলেন তা জানিয়ে একটি গল্প সংকলনের ভূমিকায় তিনি বলেছিলেন, " মানুষের এগিয়ে চলার, শোষণমুক্তি ও সমাজব্যবস্থা পাল্টানোর মডেল, পুঁজি ও প্রতিক্রিয়ার আঘাতে ও বামপন্থীদের আবশ্যিক আত্মসমীক্ষার অভাবের কারণে অনেকটাই তছনছ হয়ে গেছে। যে শতক সবচেয়ে আশা জাগিয়েছিল সেই শতক শেষ হচ্ছে অবসাদে বিষাদে যন্ত্রণাজর্জর অবস্থায়। আমি দৈনন্দিনতায়, প্রত্যহ নিকটে ও দূরে, নিয়ত যা দেখতে পাই তা হল পরতে পরতে স্তরে স্তরে সমাজের ভিন্ন ভিন্ন বর্গের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শোষণ, নতুনতর ঔপনিবেশিকতা ও সংস্কৃতি সাম্রাজ্যবাদের অমানুষীকরণের দেখা না দেখা হাতকড়া ও চোখভুলোনো ঠুলির ভার। সামন্ততন্ত্র বা পুঁজিবাদের বালক বয়সের প্রত্যক্ষ নিষ্ঠুরতার চেয়েও এ যেন অধিকতর মারাত্মক, জঘন্য ও অপমানজনক। এই দলিত মথিত মানুষ ও তাদের জীবনের এক বিচিত্র ক্যালেইডোস্কোপের মধ্যে আমার জীবন কাটছে। চারপাশে তাই আমি দেখি। কিন্তু চূড়ান্ত নিরিখে এই বাস্তবকে আমি চিরস্থায়ী বলে মানি না। বাস্তবকে পাল্টাতে হবে। হবেই। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চেতনা তৈরি করার ক্ষেত্রে সাহিত্যের অবশ্যই একটি বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে।"

এই ভূমিকা পালন করে আমাদের সামনে উড়ে যাচ্ছে একের পর এক পাতা। কোনটা উড়ে এসেছে হারবার্ট, ভোগী, যুদ্ধ পরিস্থিতি, খেলনা নগর, কাঙাল মালসাট, লুব্ধক অটো বা মসোলিয়ম এর মতো উপন্যাস থেকে কোনটা বা হালাল ঝাণ্ডা, অন্ধবেড়াল, ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক বা কুম্ভীপাক এর মতো গল্পের বইগুলো থেকে। পুলিশ করে মানুষ শিকার, মুখে মেঘের রুমাল বাঁধা, রাতের সার্কাস এর মত কবিতার বইগুলিতে যিনি বলতে চেয়েছেন বারবার "এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়" - সেই কবি নবারুণ ভট্টাচার্যই কি এখন আমাদের সামনে শেষ শয্যায় শায়িত পিস হেভেনের মেঝেতে ?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৩৮

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
নবারুণ ভট্টাচার্যের আদর্শ, সাহিত্য বেঁচে থাকবে।

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০৩

লিখেছেন বলেছেন: এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়" - সেই কবি নবারুণ ভট্টাচার্যই কি এখন আমাদের সামনে শেষ শয্যায় শায়িত পিস হেভেনের মেঝেতে

খুব সুন্দর লিখেসেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.