![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পেশায় সাহিত্যের শিক্ষক। মতাদর্শে মার্কসবাদী। কোলকাতার বাসিন্দা
৩ অক্টোবর ২০১৪, বিজয়া দশমীর দিনটাতে একটা বিশেষ ঘটনা ঘটল। সেদিন বেতারে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর দূরদর্শনের মতো সরকারী প্রচারমাধ্যমে ‘জাতির উদ্দেশ্যে’ বক্তব্য রাখার জন্য সসম্মানে জায়গা করে দেওয়া হল বর্তমান সঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতকে। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী প্রজাতন্ত্র দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সেই চিরাচরিত প্রথার সঙ্গে বিজয়া দশমীর দিনটাকে কেন জুড়ে নেওয়া হল নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ?
প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তর তো জানা। বিজয়া দশমীর দিনটি আর এস এস এর প্রতিষ্ঠা দিবস, যে আর এস এসকে কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দল বিজেপি তার ‘মতাদর্শগত দিশারী’হিসেবে খোলাখুলি স্বীকৃতি দেয়। আজকের ভারত তথা গোটা উপমহাদেশেই সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, পরিচিতি সংঘাত ও হিংসা বা তোষণ এর মত নানা অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ নিয়ে যে সমস্ত তর্জা অবিরত চলে, যে তর্জা থেকে উপমহাদেশ জুড়ে জন্ম হয় নিরন্তর দ্বেষ বা রক্তক্ষরণের মর্মান্তিক নানা বাস্তব, তাকে বোঝার জন্য সমকাল থেকে একটু পেছন দিকে ফিরে তাকাতে পারি আমরা, একটু বিশেষ নজরে দেখতে পারি হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্তকে।
ভারতে হিন্দুত্ববাদের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক মতাদর্শ ও সাংগঠনিক বিস্তারের বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের নির্দিষ্টভাবে শুরু করতে হবে বিশ শতকের প্রথম ও তৃতীয় দশকে জন্ম নেওয়া দুটি সংগঠনের কথা দিয়ে। প্রথমটি হিন্দু মহাসভা ও দ্বিতীয়টি আর এস এস। প্রদীপ জ্বলার আগে সলতে পাকানোর সচেতনে অচেতনে মেশা এক পর্ব অবশ্য শুরু হয়েছিল হিন্দু মহাসভা প্রতিষ্ঠারও কয়েক দশক আগে। হিন্দুত্বের রাজনীতির কারবারিরা বিভিন্ন সময়ে নিজেরাই সেই নবজাগরণ পর্বের কয়েকজন চিন্তাবিদের থেকে নানা ধরণের প্রেরণা নেবার কথা বলেছেন যাদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দ বা দয়ানন্দ সরস্বতী প্রমুখ। (এই নিয়ে ‘আলিবাবার গুপ্তভাণ্ডার’ বইয়ের ‘পুনর বিষয়ে পুনরবিবেচনা’ নামক আকর্ষণীয় প্রবন্ধে শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় কৃত মনোজ্ঞ আলোচনা আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন।)
মর্লে মিন্টো সংস্কার এল ১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে। এল পৃথক ধর্মভিত্তিক নির্বাচন এর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। আর এই প্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে হিন্দু মহাসভার জন্ম হল ওই একই বছরে, ১৯০৯ সালে। এর আগেই ১৯০৬ এ মুসলিম লীগের জন্ম হয় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকে সদ্য জন্ম নেওয়া মুসলিম লীগ সমর্থন করতে পারে নি এবং মুসলিম অধ্যুষিত এক পৃথক প্রদেশের ধারণার সূত্রে বঙ্গভঙ্গকেই তারা স্বাগত জানিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজের ভেতর থেকে নানা উগ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিল এবং মর্লে মিন্টো সংস্কারে ধর্মভিত্তিক নির্বাচনের প্রস্তাব এলে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। হিন্দুদের পালটা একটি রাজনৈতিক সংগঠন দরকার এবং কংগ্রেস তা হতে পারে না, এই ভাবনা থেকেই হিন্দু মহাসভা জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু হিন্দু মহাসভা সে সময়ে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয় নি। ধর্মীয় উন্মাদনার মুখে দাঁড়িয়েও হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি সংক্রান্ত সঙ্কটের বাস্তব দিকগুলিকে বোঝবার ও তার ভিত্তিতে আন্তরিকভাবে কাছাকাছি আসার একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা গিয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের মধ্য, আর এই এই গোটা প্রক্রিয়ার পুরোভাগে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ‘গোরা’, ‘ঘরে বাইরে’র মত উপন্যাসে বা অসংখ্য কবিতায়, প্রবন্ধে হিন্দু সমাজের মধ্যেকার জরুরী আত্মসমালোচনার কাজটা শুরু করেছিলেন তিনি।
মহাত্মা গান্ধীর জাতীয় রাজনীতিতে আবির্ভাবের পর, বিশেষত গণ আন্দোলনের পর্ব শুরু হলে ধর্মীয় উগ্রতার পরিবেশ অনেকটা কমে আসে। লক্ষনৌ চুক্তি (১৯১৬) র সূত্রে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সামনের সারির নেতারা প্রথমবারের জন্য কাছাকাছি আসেন এবং সম্প্রীতি ও সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হয়। সম্প্রীতির পরিবেশ আরো জোরালো হয় ১৯১৯ এ অসহযোগ আন্দোলন ও খিলাফৎ আন্দোলন একযোগে হাত মিলিয়ে চলতে শুরু করলে। সম্প্রীতির পরিবেশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জমিকে অনেকটাই কেড়ে নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং ১৯২২ সালে চৌরিচৌরার একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার আকস্মিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন গান্ধীজী। অচিরেই ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলনে শুরু হয় ভাঁটার পর্ব, হিন্দু মুসলিম ঐক্য ভেঙে পড়ে এবং এই পর্বেই ১৯২৫ এ জন্ম নেয় আর এস এস, নতুন করে বিকশিত হয় হিন্দু মহাসভা। এই সময়েই সাভারকর হিন্দু মহাসভার নেতা হিসেবে সামনে আসেন। ততদিনে তার বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী অতীতকে ঝেড়ে ফেলে তিনি রূপান্তরিত হয়েছেন এক হিন্দুত্ববাদী চরমপন্থী রাজনীতিবিদে। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রভাব সঞ্চারী বই – ‘হিন্দু কে?’ পরবর্তী দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুত্ববাদের রাজনীতিতে এই বই মতাদর্শগত দিকনির্দেশিকা হয়ে থেকেছে।
অবশ্য হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি শুধু মতাদর্শগত বিচার বিশ্লেষণের ওপরেই দাঁড়িয়ে থাকে নি, তাকে সাংগঠনিক দৃঢ়তা দেওয়ার প্রয়োজনও অনুভূত হয়েছিল। সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে তাকে আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপ্ত করার সংকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এই কাজে বিশেষ ভুমিকা গ্রহণের জন্যই তৈরি হয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (আর এস এস)।
হেডগাওয়ার তার অনুগামীদের নিয়ে ১৯২৫ এ আর এস এস তৈরি করেন আর ১৯২৭ সালেই এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রে তার প্রভাব বাড়তে শুরু করে। সাভারকর যে জন্মভূমি ও পিতৃভূমির যুক্তিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে হেডগাওয়ারের মতাদর্শগত সামীপ্য ছিল প্রকট। তারা মনে করেছিলেন খ্রীষ্টান বা মুসলিমরা এদেশে বাস করলেও প্যালেস্টাইন বা আরবকে তাদের পিতৃভূমি (পবিত্রভূমি) ভাবে। জন্মভূমির জন্য এদেশের মুসলিম বা খ্রীষ্টানরা তাই কখনো নিবেদিত প্রাণ হতে পারে না। সেটা পারে একমাত্র হিন্দুরাই, যাদের জন্মভূমি আর পিতৃভূমি এক, এই আসমুদ্র হিমাচল। হেডগাওয়ার এর মতে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ফলে দেশময় তৈরি হয় এক দূষিত আবহাওয়া, নগ্নভাবে প্রকট হয়ে পড়ে ব্রাক্ষ্মণ – অব্রাক্ষ্মণ বিরোধ, দাঙ্গা উসকে তোলে ‘অসহযোগের দুধে প্রতিপালিত যবন সাপেরা’। যবন সাপেদের প্রতি বিবমিষার মতোই লক্ষ্য করার বিষয় তার ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী অবস্থানটি। বস্তুতপক্ষে আর এস এস কে শুধু হিন্দুত্ববাদী বললে সেটি খণ্ডিত অভিধা হতে পারে, হিন্দু ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী হিসেবে আখ্যাত করলেই পাঁচ ব্রাক্ষ্মণকে নিয়ে প্রথম তৈরি এই সংগঠনটির স্বরূপ আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারব।
অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের পর সাম্প্রদায়িক ঐক্য সঙ্কটগ্রস্থ হয়েছিল। আর এস এস নাগপুরে স্থানীয়ভাবে প্রথম তার কাজ শুরু করে। দীর্ঘদিন কাজ করতে পারবে আর আনুগত্য থাকবে প্রশ্নাতীত – এই বিচারে আর এস এস এই সময়ে অল্প বয়েসী ছেলেদের হিন্দুত্বের আদর্শে দীক্ষা দিতে শুরু করে। এখন যেখানে বিশাল হেডগাওয়ার ভবন, তখন সেখানে খোলা মাঠ আর এই মাঠেই প্রথম সঙ্ঘচালক হেডগাওয়ার বালকদের কর্মশালা শুরু করেন। তাদের শোনানো হতে থাকে হিন্দু বীর যোদ্ধাদের সংগ্রাম কাহিনী, শিবাজী বা রাণা প্রতাপের মতোই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের আমরণ রত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। মতাদর্শগত শিক্ষার পাশাপাশি চলতে থাকে ব্যায়াম, কবাডি বা খো খো খেলা, লাঠিখেলা, তলোয়ার খেলা, ছুরি চালানো, বর্শা ছোঁড়ার মতো রাস্তার লড়াইয়ে সাফল্যের লক্ষ্যে নানা কৃৎকৌশলগত শিক্ষা। পরের বছর ১৯২৬ এ রামনবমীর দিন সংগঠনটি তার নামের সঙ্গে নির্দিষ্ট করে নেয় নিজের পতাকাও, যে গৈরিক পতাকা শিবাজী এবং স্বয়ং রামচন্দ্রও নাকি ব্যবহার করতেন। আদ্যন্ত হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের নাম হিসেবে রাষ্ট্রীয় অভিধাটি ব্যবহার লক্ষ্যনীয়, যা বুঝিয়ে দেয় হিন্দুত্ব ভারতীয়ত্বের কোন সমীকরণ তৈরি করা তাদের লক্ষ্য। সেপ্টেম্বর ১৯২৭ এ নাগপুরে একটি দাঙ্গার ঘটনা ঘটে এবং সেখানে রাস্তার লড়াইয়ের কৃৎকৌশলে দক্ষ হয়ে ওঠা আর এস এস কর্মীরা ভালো পরিমাণ সাফল্য লাভ করে। এই সাফল্য লোকের মুখে মুখে ফিরতে থাকে এবং অচিরেই আর এস এস এর ‘জনপ্রিয়তা’ বহুগুণ বেড়ে যায়। দক্ষ সংগঠক হিসেবে হেডগাওয়ার এই সাফল্যকে সংগঠন বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করেন। কয়েকগুণ প্রসারিত এবং উদ্দীপ্ত সংগঠনকে দৃঢ়তর করার প্রয়োজনে ৩১ মার্চ ১৯২৮ এ একটি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে হেডগেওয়ার তার ভাষণে তুলসীদাসের বিখ্যাত পঙতি “প্রাণ যায়ে পর বচন না যায়ে” মন্ত্রে কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন। স্পীকার বিটলভাই প্যাটেল সহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আর এস এস কর্মশালা পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানান হেডগাওয়ার। মহারাষ্ট্রের বাইরে সংগঠনকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। কয়েকজন স্বয়ংসেবককে ছাত্র হিসেবে পাঠানো হয় উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তারা অধ্যক্ষ মদনমোহন মালব্যের অনুগ্রহ লাভ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই খোলা হয় আর এস এসের কার্যালয়। সংগঠনকে কেন্দ্রিকতার দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার দিকে এগিয়ে নেওয়ার ভাবনা তৈরি হয়। এই লক্ষ্যে ১৯২৯ এর ৯ ও ১০ নভেম্বর নাগপুরে একটি বিশেষ অধিবেশন বসে। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের পরিবর্তে এক সঙ্ঘচালকের সর্বময় নিয়ন্ত্রণ ও হিন্দু যৌথ পরিবারের আদর্শে সঙ্ঘ পরিবার চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আর এস এস ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সেভাবে কোনওদিনই অংশগ্রহণ করে নি এবং ব্রিটিশ নয়, মুসলিমদেরই মূল শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারী কংগ্রেস প্রথমবার প্রতীকী স্বাধীনতা দিবস পালন করার কথা বলে এবং অতঃপর প্রতি বছর দিনটি এভাবে পালিত হতে থাকে পুলিশি জুলুমের মোকাবিলা করেই। আর এস এস কেবল প্রথম বছর প্রতীকী স্বাধীনতা দিবস পালন করেছিল, পরে আর কখোনওই নয় আর এই প্রথম বছরেও সে তেরঙ্গা ঝান্ডাকে বর্জন করে গৈরিক পতাকাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে। আইন অমান্য আন্দোলনেও আর এস এস সেভাবে অংশগ্রহণ করে নি এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ১৯৩৩ সালে জামনালাল বাজাজ হেডগাওয়ারের কাছে সরাসরি জাতীয় আন্দোলন বিষয়ে আর এস এসের দৃষ্টিভঙ্গী কী তা জানতে চান। বাজাজের সঙ্গে হেডগাওয়ারের ব্যক্তিগত বৈঠক ফলপ্রসূ হয় নি। ১৯৩৪ সালে কংগ্রেস এক নির্দেশিকায় মুসলিম লীগের পাশাপাশি তার সদস্যদের হিন্দু মহাসভা এবং আর এস এসের সদস্য হওয়া বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। আর এস এস অবশ্য এই পর্বে জাতীয় আন্দোলন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্নতা চায় নি এবং হেডগাওয়ার ১৯৩৪ এই গান্ধীকে তাদের ওয়ার্ধায় এক কর্মশালা পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গান্ধী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণও করেন।
আর এস এসের সঙ্গে হিন্দু মহাসভার সম্পর্ক ১৯৩০ এর দশক জুড়ে মাঝেমাঝে ওঠাপড়া করলেও এই দুই প্রধান হিন্দুত্ববাদি সংগঠনের মিলিত প্রভাব অনেকটাই পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। সমধর্মী দুই সংগঠনের কিছু স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং রাজনৈতিক –সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ সংক্রান্ত ঘোষিত অবস্থানের কিছু পার্থক্য ব্যতিরেকে তাদের মধ্যে মৈত্রি ক্রমশ বাড়তে থাকে। ১৯৩১ এই বাবুরাও সাভারকরের হিন্দু মহাসভার যুব শাখাটি আর এস এসে মিশে যায়। হিন্দু মহাসভার কর্মী সংস্থানগত কিছু অসুবিধা ছিলই এবং তারা সাগ্রহে আর এস এসের মতো সাংগঠনিকভাবে মজবুত দলকে নিজেদের রাজনীতির সম্প্রসারিত গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করতে আগ্রহান্বিত হয়। ১৯৩২ সালে দিল্লিতে আহূত হিন্দু মহাসভার সম্মেলন দেশজুড়ে আর এস এসের প্রসারের প্রয়োজনিয়তার কথা বলে। ওই বছরেই করাচীতে হিন্দু যুবক পরিষদের সম্মেলনে হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয় সঙ্ঘচালক হেডগাওয়ারকে। সিন্ধ এবং পাঞ্জাবে হিন্দু মহাসভার সাহায্যে আর এস এস তাদের সংগঠন বিস্তার করে। পশ্চিম মহারাষ্ট্রে সাভারকর পরিবারের খ্যাতিকে আর এস এস তাদের সাংগঠনিক বিস্তারের কাজে ব্যবহার করে। নাগপুরের পর পুণে হয়ে ওঠে আর এস এসের দ্বিতীয় প্রধান কার্যালয়। ১৯৩৭ সালে জেল থেকে বেরোনোর পর হিন্দু মহাসভার বিশিষ্ট নেতা সাভারকর আর এস এসের শাখা বৈঠকগুলিতে একের পর এক বক্তৃতা করেন। ১৯৪০ এ লাহোর এর আর এস এসের এক শাখায় গিয়ে হিন্দু মহাসভার আর এক বিশিষ্ট নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেশের মেঘাচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে আর এস এস কেই একমাত্র আলোর রুপোলি রেখা বলে বর্ণনা করেন। হিন্দু মহাসভার সূত্র ধরেই হিন্দি বলয়ে আর এস এস তাদের কাজের সূত্রপাত ঘটাতে সক্ষম হয়। ১৯৩৭ থেকে ৪০ সালের মধ্যবর্তী সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার তীব্র পর্বটিকে আর এস এস দেশজোড়া সংগঠন বৃদ্ধির কাজে সফলভাবে ব্যবহার করে। পশ্চিম ভারতে তারা আগেই ভালোরকম শক্তিশালী ছিল। উত্তর ভারত, হিন্দি বলয়ের পাশাপাশি এই সময়ে হেডগাওয়ার মাদ্রাজ শহর এবং তামিলনাড়ু কর্ণাটকের বিভিন্ন অঞ্চলে সঙ্ঘসেবকদের পাঠান।
উত্তর ভারতে আর এস এসের বিস্তারে অবশ্য দয়ানন্দ সরস্বতী প্রতিষ্ঠিত আর্য সমাজের প্রভাব সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়েছিল। উত্তরভারত জুড়ে আর্যসমাজের অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। এই দয়ানন্দ অ্যাংলো বৈদিক বিদ্যালয় এবং গুরুকুল কাংড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহর মতাদর্শগত প্রভাবকে আর এস এস ভালোভাবেই ব্যবহার করে নিতে পেরেছিল। ১৯৪০ এ নাগপুরে দেওয়া তার শেষ ভাষণে প্রথম সঙ্ঘচালক হেডগাওয়ার গোটা দেশ এর প্রায় সমস্ত অঞ্চল থেকে আগত বিরাট সংখ্যক স্বয়ংসেবকদের কে সম্বোধিত করে আবেগদৃপ্ত গলায় জানিয়েছিলেন এতদিনে তিনি তার চোখের সামনে স্বপ্নের হিন্দুরাষ্ট্রের এক ছোট সংস্করণকে দেখতে পাচ্ছেন।
হেডগাওয়ারের পর সঙ্ঘচালকের দায়িত্বভার বর্তায় গোলওয়ালকরের ওপর এবং ৪০ ও ৫০ এর দশক জুড়ে জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ বছরগুলিতে তিনি আর এস এস ও হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাকে দেশজুড়ে বিস্তৃত ও সংহত করেন। সঙ্ঘচালক হিসেবে দায়িত্ব নেবার দু বছর আগেই তিনি লিখেছিলেন ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড’ নামের আলোড়ন সৃষ্টিকারী রচনা । এখানে এবং তার দেওয়া বিভিন্ন প্রবন্ধ ও বক্তৃতার সংগ্রহ ‘চিন্তাসমূহর সংকলন’(বাঞ্চ অব থটস) এ পাওয়া যাবে গোলওয়ালকারের হিন্দুত্ব ভাবনার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। আমরা দেখব গোলওয়ালকর সাভারকরের সেই ‘পিতৃভূমি/ পুণ্যভূমি ও মাতৃভূমি’সংক্রান্ত তত্ত্বায়নটিই গ্রহণ করেন এবং আরো উগ্রভাবে তাকে এগিয়ে নিয়ে যান। ভৌগলিক জাতিয়তাবাদ এবং সাংস্কৃতিক জাতিয়তাবাদের মধ্যে গোলওয়ালকর শুধু পার্থক্যই করলেন না, হিটলারের উদাহরণ সামনে রেখে দেশকে বিশুদ্ধ রক্তের মানুষেরই আবাসভূমি রাখার জন্য ‘সেমেটিক বিতাড়ন’এর প্রয়োজনিয়তার কথা তুললেন। হিটলারের উদাহরণকে হিন্দুস্থানের জন্য শিক্ষণীয় বলেও মনে করলেন। বলাই বাহুল্য হিটলারের সেমেটিক তথা ইহুদী বিদ্বেষকে এখানে সেমেটিক অর্থাৎ মুসলিম বিদ্বেষে পরিবর্তিত করে নেওয়া হল। ভারতের অ-হিন্দুদের জন্য গোলওয়ালকর রাখলেন তার স্পষ্ট নিদান। ‘সমস্ত অহিন্দুদের অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষা, হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে, হিন্দু জাতিরাষ্ট্রের জন্যই কেবল গৌরব করতে হবে, অন্য কোনও কিছুর (অর্থাৎ অন্য কোনও পুণ্যভূমির) জন্য নয়। এই দেশ এবং তার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য সংস্কারগুলিকে অশ্রদ্ধা করা চলবে না বরং একে ভালোবাসতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে। এককথায় হয় তাদের দেশ ছাড়তে হবে অথবা কোনও দাবি না রেখে হিন্দুজাতির অনুগত হয়ে থাকতে হবে। কোনও বিশেষ সুযোগ সুবিধা পাওয়া দূরে থাক, তাদের এমনকী নাগরিক অধিকারও থাকবে না’। (উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড – পৃ – ২৭)
খ্রীষ্টান এবং মুসলিম বিদ্বেষকে চরম সীমায় নিয়ে গেলেন গোলওয়ালকর। প্রশ্ন তুললেন ‘খ্রীষ্টান এবং মুসলিমরা এদেশে জন্মেছে ঠিকই, কিন্তু তারা কি দেশের নুন এর প্রতি সত্যকারের বিশ্বস্ত ? তাদের বিশ্বাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই জাতির প্রতি তাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে গেছে’। বিশেষ করে মুসলিমদের তিনি এককথায় ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে আখ্যা দিলেন। বললেন ‘মুসলিমরা এখনো ভাবে তারা এদেশ দখল করতে এসেছে, এখানে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে এসেছে। তাই এটা কেবল বিশ্বাসের পরিবর্তনের বিষয় নয়, এটা হল জাতীয় পরিচয় পরিবর্তনের প্রশ্ন’।
সমকালীন ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও দেশাত্ববোধের প্রচলিত ধারণাটিকেই গোলওয়ালকর প্রশ্নায়িত করেন। তার মতে ‘ভৌগলিক জাতিয়তাবাদের সাধারণ শত্রু সম্বন্ধীয় তত্ত্বসমূহই হোল মূল সমস্যা, আর এগুলিই হিন্দু জাতিয়তাবাদের ইতিবাচক প্রণোদনা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে এবং আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে কেবল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পর্যবসিত করেছে। ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দেশাত্ববোধ ও জাতিয়তাবাদের সঙ্গে একীভূত করে ফেলা হয়েছে। এই প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ আমাদের সমগ্র স্বাধীনতাযুদ্ধ, আমাদের নেতা এবং জনগণের ওপর ভয়ংকর খারাপ প্রভাব বিস্তার করেছে’।
এই যুক্তিজাল থেকেই গোটা চল্লিশের দশক জুড়ে গোলওয়ালকরের আর এস এস সরে থেকেছে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে। ৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন, আজাদ হিন্দ ফৌজ এর লড়াই, আজাদ হিন্দ ফৌজ এর সেনানিদের বিচারকে কেন্দ্র করে ১৯৪৫-৪৬ এর উত্তাল প্রতিরোধ বা নৌ বিদ্রোহ – কোনও কিছুতেই আর এস এস অংশগ্রহণ করেনি। বিপরীতে দাঙ্গার ঘটনাগুলিতে অতিসক্রিয় থেকেছে। এইসময় হিন্দু মৌলবাদ ও মুসলিম মৌলবাদ পরস্পর পরস্পরকে পাল্লা দিয়ে বাড়তে চেয়েছে এবং স্বাভাবিক নিয়মেই একে অপরকে পুষ্ট করেছে। মুসলিম লীগের মতো আর এস এসও এই পর্বে ব্রিটিশ এর যুদ্ধকালীন নিপীড়ণের মুখোমুখি হয় নি এবং গোটা পর্বটিকে সংগঠন বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করেছে। ১৯৪৫ এ আর এস এস দশহাজার স্বয়ংসেবক এর এক শিক্ষাশিবিরের আয়োজন পর্যন্ত করেছে। এই সময় মুসলিম মৌলবাদেরও ভালোমাত্রায় বিকাশ হয়েছিল এবং মুসলিম লীগের পাকিস্থান দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছিল। অনেকে মনে করতে শুরু করেছিলেন এই পরিস্থিতিতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আর এস এস ই তাদের ত্রাতা হতে পারে। বেশি সংখ্যক মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশগুলির হিন্দুদের একাংশের মধ্যে এই ভাবনা দানা বেঁধে উঠছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ। কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশও আর এস এস এর প্রতি তাদের দুর্বলতা পোষণ করছিলেন। নেহরু আর এস এস প্রতি আগাগোড়া বিদ্বিষ্ট থাকলেও বল্লভভাই প্যাটেল তাদের প্রতি অনেকটাই সহানুভূতি সম্পন্ন ছিলেন। বেনিয়া গোষ্ঠী আর এস এস কে বিরাটভাবে মদত দিয়েছিল। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য শক্তিশালী বামপ্রভাব থাকায় বাংলাতে আর এস এস এর উত্থানকে প্রতিহত করা সম্ভবপর হয়েছিল।
১৯৪৬ এ জিন্না তথা মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ঘোষণা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে তীব্র করে তোলে। কোলকাতায় শুরু হয় নারকীয় দাঙ্গা ও বিহারের নোয়াখালি, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়ে। আর এস এস এই পর্বে হিন্দু মহাসভা ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে মিশে দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। দাঙ্গা বিধ্বস্ত মানুষের মধ্যে তাদের চালানো ত্রাণকার্য ও ব্যাপক সাম্প্রদায়িক প্রচার তাদের বিকাশকে ত্বরাণ্বিত করে।
আর এস এস এর কার্যক্রম ও বৃদ্ধিবিকাশে একটি বড় যতিচিহ্ন পড়ে গান্ধীহত্যার পর। গোটা দেশজুড়ে গান্ধীহত্যায় আর এস এস এর যুক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়, আর এস এস এর অফিস ও বাড়িগুলি গণক্রোধে ভাঙা হতে থাকে এবং ১৯৪৮ এর ৪ ফেব্রুয়ারী আর এস এস নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। আর এস এস নিষিদ্ধ হবার পর গোলওয়ালকর প্রাথমিকভাবে প্রতিবাদ আন্দোলন বা সত্যাগ্রহের পথ নিলেও দ্রুত তা পরিত্যাগ করেন এবং জাতীয় নেতৃত্বের কাছে নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে অনুরোধ করা শুরু করেন। নেহরু ও প্যাটেল উভয়কেই তিনি আর্জি জানিয়ে চিঠি লেখেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এই সমস্ত চিঠিতে পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে তিনি কমিউনিস্ট ভীতি জাগিয়ে তুলতে চান এবং জানান আর এস এস এর মতো সংগঠনই কমিউনিস্টদের প্রতিষেধক হতে পারে। কংগ্রেস রাজনৈতিকভাবে এবং আর এস এস সাংস্কৃতিকভাবে কমিউনিস্টদের মোকাবিলা করলে তবেই এদেশে ক্রমবর্ধমান কমিউনিজম এর প্রভাব থেকে ভালোভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে – এমনই ছিল তার অভিমত। কয়েকটি শর্ত পালনের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে আর এস এস এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় ১২ জুলাই, ১৯৪৯। আর এস এস ও সরকারের মধ্যে এই পর্বের মধ্যস্ততাকারীদের অন্যতম ছিলেন জি ডি বিড়লার মতো শিল্পপতি। ১৯৬২ র চীন যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আর এস এস জাতীয় রঙ্গমঞ্চে তার গুরূত্ব ফিরে পায় এবং ১৯৬৩ র প্রজাতান্ত্রিক দিবসের শোভাযাত্রায় সে অংশগ্রহণও করে। ১৯৬৫ র ভারত পাকিস্থান যুদ্ধ আর এস এস এর বৃদ্ধি বিকাশের সহায়ক আবহাওয়া তৈরি করে।
এই সময়ে গোলওয়ালকর এর উদ্যোগে ১৯৬৪ তে তৈরি হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভি এইচ পি)। এর মধ্য দিয়ে একদিকে গোটা দেশের সাধু সন্তদের সঙ্গে আর এস এস সংযোগ তীব্র হয়, অন্যদিকে গোটা বিশ্বের হিন্দুসমাজকে ‘রক্ষা’ করতে ও ‘মর্যাদা’ দিতে তাকে এক বিশ্বজনীন অবয়ব দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। উত্তেজনা তৈরির রসদ সম্পন্ন বিভিন্ন সংবেদনশীল বিষয়কে ভি এইচ পি তার প্রচার আন্দোলনের বিষয় করে তুলতে থাকে এবং তীব্র সামাজিক মেরুকরণে সক্ষম হয়। ১৯৬৭ তে সে শুরু করে গোহত্যা বন্ধের দাবিতে এক জঙ্গী আন্দোলন। আশির দশক থেকে রামমন্দির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারতীয় রাজনীতিতে আগ্রাসী হিন্দুত্বের রাজনীতির এক নতুন বিস্তার ঘটে। ভি এইচ পি অযোধ্যা, মথুরা ও কাশীতে মন্দির নির্মাণের জন্য ডাক দেয় এবং এই প্রশ্নটিকে ঘিরে দেশজোড়া ব্যাপক উন্মাদনা সৃষ্টিতে সে সক্ষমও হয়। ১৯৯২ তে বাবড়ি মসজিদ ধ্বংসের পর দেশজোড়া সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়েও নিবৃত্ত হবার কোনও ইচ্ছে না দেখিয়ে সে স্লোগান তোলে ‘ইয়ে তো পহেলি ঝাঁকি হ্যায়/ আব তো কাশী মথুরা বাকী হ্যায়”।
আর এস এস সর্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের জন্য ভি এইচ পি সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনের ওপর আরো বেশি বেশি করে নির্ভর করতে থাকে। বিভিন্ন মাত্রার সচলতা সম্পন্ন অনেকগুলি সংগঠন সমৃদ্ধ একটি বৃহৎ সঙ্ঘপরিবারের সে জন্ম দেয়। সঙ্ঘ পরিবারের অংশ বা প্রত্যক্ষ প্রভাবাধীন এমন সংগঠন এর তালিকাটি বিরাট এবং আগ্রহোদ্দীপক। শিক্ষার ক্ষেত্রে আর এস এস এর নিয়ন্ত্রণাধীন বিদ্যাভারতী বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা বিষয়ক সংগঠন। ১৩,০০০ শাখা, ৭৫,০০০ জন শিক্ষক ও ১৭ লক্ষ বিদ্যার্থীর এই বিশাল কর্মকাণ্ডর মাধ্যমে আর এস এস তার প্রভাবকে ভালোভাবেই ছড়াতে সক্ষম হয়। উপজাতিদের নিয়ে রয়েছে আর এস এস এর বনবাসী কল্যাণ আশ্রম, সাহিত্য সম্পর্কিত ভারতীয় সাহিত্য পরিষদ, বুদ্ধিজীবীদের সংগঠিত করার জন্য প্রজ্ঞা ভারতী আর দীনদয়াল গবেষণা কেন্দ্র, ইতিহাস সম্পর্কিত ভারতীয় ইতিহাস সংকলন যোজনা, শিক্ষকদের নিয়ে ভারতীয় শিক্ষক মণ্ডল আর অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসঙ্ঘ, ভাষা বিষয়ে সংস্কৃতি ভারতী, সংস্কৃতি বিষয়ে সংস্কার ভারতী, বস্তি সম্পর্কিত ক্ষেত্রে সেবা ভারতী, হিন্দু সেবা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দ মেডিক্যাল মিশন, ন্যাশানাল মেডিকোস, সমবায় সম্পর্কিত সমবায় ভারতী, গ্রাহকদের সংগঠন অখিল ভারতীয় গ্রাহক পঞ্চায়েত, মিডিয়া সংক্রান্ত ভারত প্রকাশন, সুরুচি প্রকাশন, জ্ঞানগঙ্গা প্রকাশন, লোকহিত প্রকাশন ইত্যাদি সহ আরো বেশ কিছু, বিজ্ঞান বিষয়ক বিজ্ঞান ভারতী, ধর্ম ও ধর্মান্তরীতকরণের জন্য বিবেকানন্দ কেন্দ্র, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, শিল্পপতিদের জন্য ভারত বিকাশ পরিষদ, যুবদের জন্য বজরং দল, ছাত্রদের জন্য অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ, অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য ভারতীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ, ফ্রেন্ডস অব সোসাইটি ইন্টারন্যাশানাল, ট্রেড ইউনিয়ন ক্ষেত্রে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বি এম এস), মহিলাদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতি, অর্থনীতি ক্ষেত্রে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। আর এস এস এর এই সুবিস্তৃত জাল এর রাজনৈতিক মুখ হিসেবে আছে ভারতীয় জনতা পার্টি, যা তৈরি হয়েছে প্রথমে হিন্দু মহাসভা ও পরে ভারতীয় জনসঙ্ঘের উত্তরাধিকার বহন করে।
আর এস এস বা ভি এইচ পির আন্দোলন অবশ্যই শুধুমাত্র কোনও ধর্মীয় আন্দোলন ছিল না, তা ছিল তার রাজনৈতিক মুখকে ক্ষমতার কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য এক সুচিন্তিত পরিকল্পনা। বস্তুতপক্ষে স্বাধীনতার পর থেকেই আর এস এস রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন করে ভেবেছে, সময় অনুযায়ী রণকৌশল বদলের নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। হিন্দু মহাসভার কমে আসা প্রভাবের প্রেক্ষিতে নতুন এক রাজনৈতিক দল গঠন বিষয়ে সে চিন্তাভাবনা করেছে। এরই ফসল হিসেবে মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং সঙ্ঘচালক গোলওয়ালকরের উদ্যোগে ১৯৫১ সালে জন্ম নেয় ভারতীয় জনসঙ্ঘ। ষাটের দশকে ভারত চীন যুদ্ধ ও ভারত পাক যুদ্ধের পর কংগ্রেস বিরোধী মানসিকতাকে উশকে দিতে সে নমনীয় রণকৌশল নেয় এবং বিভিন্ন অকংগ্রেসী দলের সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য স্থাপনের নীতি নেয়। জনসঙ্ঘের তৎকালীন নেতা দীনদয়াল উপাধ্যায় সরাসরি এই নীতি ঘোষণাও করেন। এমনকী কমিউনিস্টদের উপস্থিতি স্বত্ত্বেও বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে সে অকংগ্রেসী সরকারের শরিক হয়েছিল । বলরাজ মাধোকের মতো যারা এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তাদের জনসংঘের বাইরেই শেষপর্যন্ত চলে যেতে হয়। সংসদীয় রাজনীতির দিকে আর এস এস এর নজর কতটা তীব্র হয়েছিল তা বোঝা যায় যখন সে ৭০ দশকের প্রথম দিকে তার শাখাগুলির বিন্যাস সংসদীয় আসনের ভৌগলিক চৌহদ্দি অনুসারে পুনর্গঠিত করে। শুধুমাত্র লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনেই নয় বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন বা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের নির্বাচনের দিকেও তার আগ্রহ প্রসারিত হয়।
আর এস এস এবং তার রাজনৈতিক মুখ ভারতীয় জনসঙ্ঘের কার্যকলাপ ১৯৭৪-৭৫ এ ইন্দিরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণের দেশব্যাপী আন্দোলনের সময় এক অন্য মাত্রায় পৌঁছয়। আশ্চর্যজনক ভাবেই তারা এবং জয়প্রকাশ কিছুসময়ের জন্য পরস্পরের ঘনিষ্ট মিত্রে পরিণত হন। আর এস এস এর নেতৃত্বে সঙহচালক হিসেবে তখন গোলওয়ালকরের মৃত্যুর পর অভিষিক্ত হয়েছেন দেওরাস। ১৯৭৪ এর ডিসেম্বরে তিনি জয়প্রকাশকে ‘একজন সন্ত’ বলে উল্লেখ করেন। এমার্জেন্সী পর্ব শুরু হলে সঙ্ঘচালক দেওরাস গ্রেপ্তার হন, আর এস এস আবারো নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এই সময় জনতা দল নির্মাণের প্রস্তুতি চলতে থাকে এবং আর এস এস তাতে সক্রিয়ভাবে মদত দেয়। ১৯৭৭ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনতা দলের সরকার ক্ষমতায় আসে এবং প্রথমবারের জন্য কয়েকজন প্রথমসারির আর এস এস কর্মী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন, যাদের মধ্যে ছিলেন বাজপেয়ী এবং আদবাণী। জনসঙ্ঘ তার সমস্ত সদস্যদের জনতা দলে মিশিয়ে দেয় কিন্তু অচিরেই আর এস এস এর মধ্যে পূর্বতন জনসঙ্ঘীদের সদস্যপদ তথা যৌথ সদস্যপদের প্রশ্নটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত এই বিতর্কের ফলেই ১৯৭৯ তে জনতা দল ভেঙে যায়। এই সময়ে জনতা দলে জনসঙ্ঘের ৯৩ জন এম পি ছিলেন। ১৯৮১ তে ভারতীয় জনসঙ্ঘকে পুনর্জীবিত না করে জনতা পার্টির সাফল্যকে মাথায় রেখে নতুন নামে দল খোলা হয় ও নাম দেওয়া হয় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
১৯৮৪ র নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু এবং সহানুভূতি হাওয়ার বিজেপি মাত্র দুটি আসনে নেমে যায়। দেশজুড়ে এই সময় আর এস এস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নিয়ে আসে রামমন্দির নির্মাণের ইস্যুটিকে এবং যথেষ্ট সফলও হয়। ১৯৮৯ এ প্রায় ৮৮টি সংসদ আসনে যেতে বিজেপি এবং ক্রমশ কেন্দ্রীয় ক্ষমতার দিকে এগোতে থাকে।
রাম রাজনীতির ঢেউয়ে ভর করে বিজেপি অচিরেই সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে এবং নির্বাচনের আগে পরে জোট রাজনীতির নতুন সমীকরণ বিন্যাসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বিজেপি তার নেতৃত্বাধীন এন ডি এ সরকার চালায় এবং এই সময় সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আর এস এসের বিভিন্ন অ্যাজেন্ডা জাতীয় কার্যক্রম হিসেবে সামনে আসে। ইতিহাসকে ইচ্ছামতো বিকৃত করা হয়, বিজ্ঞানের জগতে অধিবিদ্যা নানাভাবে প্রশ্রয় পায়, জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্রকে পর্যন্ত মিলিয়ে মিশিয়ে নেওয়া হয়। তৎকালীন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মুরলী মনোহর যোশী শিক্ষার ব্যাপক গৈরিকীকরণের কাজ শুরু করেন। দশ বছর পর ২০১৪ র লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের সূত্রে একক শক্তিতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করল বিজেপি আর আমরা দ্রুতই দেখলাম আর এস এস আরো জোরেশোরে গৈরিকীকরণের কাজ শুরু করেছে। এবারের কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী ঘন ঘন বৈঠক করছেন আর এস এস নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। দীননাথ বাত্রা ইতিহাস সংসদের কর্ণধার হিসেবে ইতিহাস বিকৃতির খেলা শুরু করেছেন মারাত্মকভাবে। তাঁর লেখা বইতে কখনো বৈদিক যুগে মোটর গাড়ি আবিষ্কারের কথা বলা হচ্ছে তো কখনো গান্ধারীর সন্তান জন্মের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে স্টেম সেল রিসার্চ এর কথা, সঞ্জয় প্রসঙ্গে আসছে টেলিভিশন আবিস্কারের লোমহর্ষক সিদ্ধান্ত। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদী গণেশের কাটা মুণ্ড জোড়ার পৌরাণিক কাহিনীতে প্লাস্টিক সার্জারির নিদর্শন খুঁজে পাচ্ছেন বৈদিক যুগে, আর বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়ে দিচ্ছেন ‘গীতা’কে জাতীয় গ্রন্থ করার ভাবনা চিন্তা করছে সরকার। বলপূর্বক ধর্মান্তরের আয়োজন করছে হিন্দুত্ববাদীরা, নাম দেওয়া হচ্ছে ‘ঘরবাপসি’ বা ঘরে প্রত্যাবর্তন। সমস্ত ভারতীয়ই আবশ্যিকভাবে রামজাদা, রামের সন্তান – এমন নিদান দিচ্ছেন মন্ত্রী আর যারা তা মানতে রাজী নয় তাদের দেগে দিচ্ছেন হারামজাদা বলে। ছেলেমেয়েদের খোলামেলা মেলামেশাকে লাভ জেহাদ নাম দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে, নির্বাচনী বৈতরনি পার হতে লাগানো হচ্ছে পরিকল্পনামূলক দাঙ্গা, যাকে আর এস এস বরাবরই সংগঠন বৃদ্ধির অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে।
আজকের বিজেপির হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন অ্যাজেণ্ডাকে তার মতাদর্শগত নির্দেশক আর এস এস এর ইতিহাস-দর্শন থেকে বুঝে নেবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও মাথায় রাখার আজকের শাসকশ্রেণি তথা কর্পোরেট ক্যাপিটালের কাছে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি জনগণের বিশেষত শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও আন্দোলনকে ভেঙে দেবার অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার হিসেবেই এত মদত পেয়ে থাকে।
আজকের বিজেপি নিঃসন্দেহে তার পূর্বসরী জনসঙ্ঘের অবিকল অনুকৃতি নয়, এমনকী ৯০ এর দশকের শুরুতে জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে ওঠার পর্বে তার যে চরিত্র ছিল তার থেকেও খানিকটা আলাদা। কংগ্রেসকে পেছনের আসনে ঠেলে দিয়ে সেই এখন কর্পোরেট পুঁজির প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এবং দেশি বিদেশি একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে সবচেয়ে আগ্রাসী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। মিডিয়ার একাংশ বিজেপি ও মোদির কেবল ‘উন্নয়ন সর্বস্ব মুখ’কেই আমাদের সামনে তুলে ধরতে চাইলেও ঘটনাধারা দেখিয়ে দিয়েছে বিজেপি বা তার সামনের সারির নেতারা তাদের হিন্দুত্বের রাজনীতিকে কখোনোই পেছনের সারিতে ঠেলে দেয় নি, বরং সর্বদাই তাকে অবলম্বন করে এগোতে চেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও লোকসভা নির্বাচনের আগে পরে ধর্মীয় মেরুকরণ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো বিভিন্ন মন্তব্য ও কার্যকলাপ, পরিকল্পিত দাঙ্গা ও সংখ্যাগুরুর মৌলবাদকে চাপিয়ে দেওয়ার মতো ভয়ংকর সমস্ত ঘটনা বারেবারেই সামনে এসেছে।
‘কর্পোরেট কমিউনাল’ শক্তি বিজেপির পুঁজির পক্ষে দাঁড়িয়ে চালানো আগ্রাসন আর তার মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মধ্যকার পরস্পর সম্পর্ককে বুঝে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। মেহনতি মানুষের ঐক্যকে বিভক্ত করার এবং তাদের লড়াই আন্দোলন দাবি দাওয়ার বিষয়গুলিকে উত্তেজনার ইন্ধন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ইস্যু দ্বারা প্রতিস্থাপিত করার সবচেয়ে সহায়ক কৌশল হিসেবেই বিজেপি সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে ব্যবহার করে থাকে। সাম্প্রতিক বিজেপি সরকারের কার্যকলাপের একটি দিক যদি ‘রামজাদা –হারামজাদা’ তত্ত্বায়নের মধ্য দিয়ে হিন্দুত্ব-ভারতীয়ত্বের সমীকরণ কষা হয়, তবে অপর দিকটি অবশ্যই আদানি আম্বানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা, মেক ইন ইন্ডিয়ার নামে এফ ডি আইকে সাড়ম্বর আহ্বান আর শ্রম আইন, জমি অধিগ্রহণ নীতি, বিলগ্নীকরণ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তড়িৎ গতির সমস্ত সংস্কারের পরস্পর সংযুক্ত এক বহুবর্ণ ছবির কোলাজ। নয়া উদারনৈতিক রাজনীতি অর্থনীতির বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের লড়াই আর উগ্র হিন্দুত্বের আধিপত্যবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে বহুস্বর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষার গণতান্ত্রিক লড়াই এখন একসঙ্গে মিলেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭
বিদগ্ধ বলেছেন:
বিজেপি তাদের হিন্দুত্ববাদ বা গোড়া মৌলবাদ থেকে কিছুটা সরে এসে সেকুলারিজমের নৈকট্য লাভ না করলে হয়তো আজকের অবস্থানে তারা যেতে পারতো না।
সুন্দর একটি লেখার জন্য আপনাকে অভিনন্দন।