নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌভিকের চিন্তাচর্চা

চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি

সৌভিক ঘোষাল

পেশায় সাহিত্যের শিক্ষক। মতাদর্শে মার্কসবাদী। কোলকাতার বাসিন্দা

সৌভিক ঘোষাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রীস এর সাম্প্রতিক রাজনীতি অর্থনীতি বিষয়ে কিছু কথা

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫৪



গ্রীস ও তার বর্তমান রাজনীতি অর্থনীতি সারা বিশ্বের চিন্তাজগতের কাছেই অন্যতম আলোচ্য বিষয়। বহু দৃষ্টিকোণ থেকে সমকালীন গ্রীস নিয়ে আজকে চর্চা হচ্ছে। আমাদের এই সময়ের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, রাজনীতির ভাষ্যকার বা অর্থশাস্ত্রীদের অনেকেই এই নিয়ে মননশীল আলোকপাত করেছেন। পরিস্থিতি প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যা ও সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করছে। প্রস্তাব, প্রতিপ্রস্তাব, আপোষরফা, সফল ও নিস্ফল নানা বৈঠকের বিচিত্র চক্রের মধ্য দিয়ে ঘটনাচক্র এগিয়ে চলেছে।
গ্রীসের মধ্যে এবং বাইরে এই যে বিপুল আলোড়ন তাকে একটি বাক্যে গ্রীস গণভোটের আগে ধরতে চেয়েছিলেন তার প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস। ‘এই আলোড়নের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ব্যয়সঙ্কোচ এবং সমৃদ্ধির নীতির মধ্যেকার দ্বন্দ্ব’, ‘কনট্রাডিকশন বিটুইন অস্টারিটি অ্যান্ড প্রস্পারিটি’। গ্রীসের জনগণকে আহ্বান করেছিলেন ব্যয়সঙ্কোচ নীতির পক্ষে বা বিপক্ষে এক খোলা গণভোটে এবং কথা দিয়েছিলেন ব্যক্তিগত অভীপ্সা নিরপেক্ষভাবে তিনি জনগণের রায় মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন। গ্রীস ৫ জুলাই গণভোটের রায়ে জানিয়ে দিয়েছে তারা ব্যয়সঙ্কোচ নীতি চায় না। বস্তুতপক্ষে সিপ্রাস যে শাসক জোটের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন এই বছরে, র্যা ডিক্যাল বামপন্থীদের সেই মঞ্চ সিরিজার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই ছিল দীর্ঘদিন ধরে চলমান গ্রীস সরকারের ব্যয়সঙ্কোচ নীতির রদবদল এবং জনগণের সমৃদ্ধিকে চলমান ঋণসংকটের প্রেক্ষিতে চাপিয়ে দেওয়া নীতির ওপরে স্থান দেওয়া।
গ্রীসের আলোড়নকে বুঝতে গেলে আমাদের অবশ্যই তাকাতে হবে গ্রীস তথা ইউরোপ আমেরিকার আর্থিক সঙ্কটের নির্দিষ্ট পরিস্থিতির দিকে। সাম্প্রতিককালে প্রথমে আমেরিকায় ও পরে ইউরোপে যে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে তাতে বড় ভূমিকা থেকেছে একটা ফাটকা বুদবুদের বিস্ফোরণের, যা হাউজিং বাবল বিস্ফোরণ নামে খ্যাত। আমেরিকার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি সরকারগুলো ঘরবাড়ির বাজারকে করছাড় ইত্যাদি দিয়ে ফুলিয়ে তুলেছে, ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা আছে কিনা তা না দেখেই ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকি বেড়েছে, বেড়ে যাওয়া ঝুঁকিকে মিলিয়ে তারা ডেরিভেটিভে পরিণত করেছে। ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা সীমার বাইরে যাওয়ার পর যাবতীয় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ একসাথে অনাদায়ী হয়ে পড়েছে, ব্যাঙ্কগুলোর পতনের সাথে সাথে সামগ্রিক অর্থনীতি সঙ্কটে পড়েছে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারী ঋণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়াটাকেই সাম্প্রতিক ইউরো জোন ক্রাইসিস বলা হচ্ছে। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায় এটা এত বেড়ে গেছে যে তা অপরিশোধ্য জায়গায় চলে গেছে। জিডিপির তুলনায় গ্রীসের ঋণ ১৬০ শতাংশ, আইসল্যাণ্ডে ১২৩ শতাংশ, ইতালিতে ১১৯ শতাংশ, আয়ারল্যান্ডে ৯৫ শতাংশ, পোর্তুগালে ৯৩ শতাংশ, জার্মানি ও ফ্রান্সে ৮৩ শতাংশ করে, স্পেনে ৬০ শতাংশর আশেপাশে গত পাঁচ ছয় বছরে ঘোরাফেরা করছে। [সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিসংখ্যানে স্বাভাবিকভাবেই অল্পবিস্তর বদল ঘটছে।]
বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, বিশেষত ব্যাঙ্ক ও ফাটকা পুঁজির কারবারীরা ঝুঁকি নিয়ে যে সঙ্কট ডেকে এনেছে তা থেকে মুক্তি দিতে সরকার বেল আউট প্যাকেজ ঘোষণা করে। বিপুল বেল আউট প্যাকেজের ফলে বাজেট ঘাটতি দেখা যায়। ২০০৭ এ ই ইউ দেশগুলির যে গড় বাজেট ঘাটতি ছিল ০.৬ শতাংশ, তা আর্থিক সঙ্কটের পর দাঁড়ায় ৭ শতাংশ তে। গড় সরকারী ঋণ জিডিপির ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৪ শতাংশ হয়। এই আর্থিক সঙ্কটের প্রেক্ষিতে ইউরোপের শাসক দলগুলি ব্যয় সঙ্কোচের নীতি নেয়। এর দুটি দিক – ১) মানুষের ওপর সরকারের বেশি বেশি কর চাপানো, ২) বিভিন্ন সরকারী ব্যয়বরাদ্দ কমানো, ভরতুকি কমানো বা বন্ধ করা। এর ভিত্তিতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক সামাজিক প্রতিক্রিয়া হয়। বিভিন্ন দেশেই বেকারত্মের হার লাগামছাড়া চেহারা নেয়।
সিরিজা ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত গ্রীসের সরকার তার জনগণের সুবিধা না দেখে ঋণ সঙ্কটের মোকাবিলায় জার্মানী ও ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপিয়ে দেওয়া নীতিমালার দাসত্ব করে গেছে। ২০০৯ সালে গ্রীসের ঋণ সংকট বড় আকারে সামনে আসে। দেখা যায় ঋণগ্রস্থতার পরিমাণ জাতীয় আয় বা জিডিপির ১১২ শতাংশ হয়ে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলি গ্রীসের ধারাবাহিক অবমূল্যায়ন করতে থাকে। জার্মানীর নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আই এম এফ এর মতো ঋণদানকারী সংস্থাগুলি অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য চাপ বাড়াতে থাকে। আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলায় গ্রীসকে কয়েক দফায় ঋণ দেওয়া হয়, কিন্তু প্রতিবারই তার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয় বাধ্যতামূলকভাবে জনগণের করবৃদ্ধি ও বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়বরাদ্দ হ্রাস করার কঠোর শর্তাবলী, যা ‘কৃচ্ছসাধন নীতিমালা’ (অস্টারিটি মেজারস) হিসেবে পরিচিত হয়।
২০১০ এর ১ মে জার্মানীর চাপে গ্রীস এর সরকার প্রথমবারের জন্য ‘কৃচ্ছসাধন নীতিমালা’ ঘোষণা করে। এর বিনিময়ে পরদিন ইউরোজন কর্তৃপক্ষ এবং আই এম এফ এর থেকে সে তিন বছরের মধ্যে ১১০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ পাবার প্রতিশ্রুতি পায়। এর পর্বের পর্বটি শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে। ২১ জুলাই ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরে চলমান গ্রীক সঙ্কটের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ সমন্বিত হয়ে গ্রীসের ঋণশোধের পর্বকে সাত বছর থেকে বাড়িয়ে পনেরো বছর করতে সম্মত হন। সুদের হারও ৫.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেওয়া হয় ৩.৫ শতাংশে। ২৭ অক্টোবর ২০১১ তে ইউরো জোনের নেতারা এবং আই এম এফ পারস্পরিক সম্মতিক্রমে গ্রীসের ঋণের কিছু অংশ মকুব করারও সিদ্ধান্ত নেন। এর সঙ্গে সঙ্গেই আসে কৃচ্ছসাধন নীতির পরবর্তী পর্বের কঠোরতর শর্তাবলীও। ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমে আসে ঠিকই, কিন্তু তা আসে ব্যাপকতর আর্থিক মন্দা, জাতীয় আয়ের সর্বাধিক ঋণাত্মক মাত্রা (-৭.১ শতাংশ), সর্বাধিক বেকারত্ম, শিক্ষা, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মাত্রাছাড়া ব্যয়বাহুল্য ও অনিশ্চয়তা, ব্যাপক ছাঁটাই ও মজুরী হ্রাস - ইত্যাদির বিনিময়ে। স্বাভাবিকভাবেই দেশজুড়ে বাড়তে থাকে প্রবল ক্ষোভ। ১৮ মে ২০১১ তে এক জনমত সমীক্ষায় দেখা যায় গ্রীসের জনগণের ৬২ শতাংশই ২০১০ এ আই এম এফ এর নির্দেশে গ্রীসের কৃচ্ছসাধন নীতিতে সম্মতিদানকে বিরাট ভুল বলে মনে করেন। ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেছিলেন অর্থমন্ত্রী পাপাকোন্সটান্টিনু সংকট সামলাতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। ৯৭ শতাংশ মানুষ বেকারত্ম, ৯৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র এবং ৯২ শতাংশ মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কায় ভুগছিলেন।
গ্রীসের রাস্তায় এর বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ব্যাপক বিক্ষোভ। ২০১৩ র ২০ ফেব্রুয়ারী গ্রীসে যে ধর্মঘট হয় তার ব্যাপকতা থেকেই জনগণের আশঙ্কা ও ক্ষোভের হদিশ মেলে। মজুরি ছাঁটাই ও করবৃদ্ধির যে রাস্তায় আর্থিক সঙ্কটে আবদ্ধ গ্রীস তার নিষ্কৃতির পথ খুঁজছে, সাধারণ মানুষ তথা মজুরের পকেট কেটে ব্যাঙ্ক ও অতি ধনীদের স্বার্থ ও মুনাফা অক্ষুণ্ণ রাখা হচ্ছে, এই ধর্মঘট সেই নীতির শ্রেণি চরিত্রকেই প্রশ্ন করেছিল। মিছিল সশব্দে শাসকদের সম্বোধন করেছিল ‘ডাকাত’ বলে। এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলার যে পথ গ্রীস তথা ইউরোপের শাসক শ্রেণি নিয়েছে, জনগণ তা মেনে নিচ্ছে না। উল্লেখ্য এর কিছুদিন আগেই ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, গ্রীস, ফ্রান্স, বেলজিয়াম সহ প্রায় সমগ্র ইউরোপ প্রত্যক্ষ করেছিল মহাদেশ জোড়া এক বিরাট মাপের প্রতিবাদী ধর্মঘট। তারপর আবারো গ্রীসের এই সফল ধর্মঘট ইঙ্গিত দেয় নীতি পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী লড়াইতে শ্রমিক শ্রেণির নাছোড় দৃঢ়তা গোটা সমাজের সমর্থন পাচ্ছে এবং ক্রমশ এই লড়াই আরো ব্যাপ্ত হচ্ছে। ধর্মঘটের দিন এথেন্সের মিছিল থেকে গ্রীসের সরকারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইল্লিওপাস লিওপৌলোস রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রত্যয়ই ব্যক্ত হয়েছে, যেখানে তিনি জানিয়েছেন, ‘এক সামাজিক বিস্ফোরণ অনতি ভবিষ্যতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে’।
এই সামাজিক বিস্ফোরণকে দেশের ভেতরের ও বাইরের দক্ষিণপন্থী শক্তির প্রবল চেষ্টা স্বত্ত্বেও আটকানো যায় নি। এই সামাজিক আন্দোলনের ঢেউয়ের ওপর দাঁড়িয়ে, জনগণের দাবিগুলিকে আত্মস্থ করে বিভিন্ন র্যা ডিক্যাল বামপন্থীদের জোট সিরিজা প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে ব্যাপক নির্বাচনী সাফল্য পায় এবং তারপর গ্রীসের জাতীয় নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে। ক্ষমতায় আসীন হয়ে তারা ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও নিজেদের প্রতিশ্রুতি ও নীতিমালা থেকে সরে আসে নি এবং ট্রোইকার (ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, আই এম এফ) চাপিয়ে দেওয়া কৃচ্ছসাধন নীতিমালার উলটোপথে হেঁটে জনগণের সমৃদ্ধি ও সামাজিক ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধির দিকে মনযোগী হয়েছে। নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য ঋণশোধের ব্যাপক চাপের সামনে তারা ‘কৃচ্ছসাধন নীতিমালা’ নিয়ে গণভোটে যায় এবং সেখান থেকে কৃচ্ছসাধনের বিরোধী রায় নিয়ে নিজেদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করে।
গ্রীস সঙ্কট নিয়ে আলোচনার সময় আমাদের মনে রাখতে হয় গ্রীসের সঙ্কট শুধু বিচ্ছিন্নভাবে তারই সঙ্কট নয়, একই রকম সঙ্কটের মুখোমুখি স্পেন, পর্তুগাল, ইতালির মত আরো অনেক দেশ।
গ্রীস ও এইসব দেশের তথা বর্তমান পুঁজিবাদী দুনিয়ার আর্থিক সঙ্কটের পরিস্থিতি নিয়ে আরো বিশ্লেষণে যাবার আগে আমরা একনজরে দেখে নিতে পারি এই দেশগুলির অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার কিছু তথ্য।
১) ২০১১ থেকে গ্রীসের অর্থনীতি ৬ শতাংশ নেমে গেছে, গত ৫ বছর ধরে দেশটির অর্থনীতির ধ্বস এড়ানো সম্ভব হয় নি।
২) গ্রীসে সরকারি হিসেবে ২০১০-এ বেকারত্ব- ১২.৫ শতাংশ, ২০১১তে ১৭.৩ শতাংশ এবং ২০১২ তে ২১.৮ শতাংশ। এটা ক্রমশ বাড়তেই থাকে।
৩) তরুন যুবকদের মধ্যে গ্রীসে বেকারত্ব ৫০ শতাংশের উর্ধ্বে।
৪) গ্রীসের বন্দর শহর পারমায় বেকারত্বের হার ৬০ শতাংশ।
৫) অর্থনৈতিক মন্দায় গ্রীসের ২০ শতাংশ খুচরা বিক্রির দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
৬)এখন গ্রীসের জাতীয় ঋণ বার্ষিক জিডিপি’র প্রায় ১৮০ শতাংশ।
৭) স্পেনে বেকারত্বের হার ২৩.৬ শতাংশ।
৮) স্পেনে যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব ৫০ শতাংশের বেশি।
৯) স্পেনের জিডিপি ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির প্রধান তিনটি ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যেগুলো দেওলিয়া হওয়ার শেষ সীমানায় রয়েছে।
১০) ২০১১ থেকে স্পেনে বাড়িঘরের মূল্য ১১.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
১১) আর্থিক মন্দা সাথে সাথে স্পেন ৭০ বছরের মধ্যে রেকর্ড খরার সম্মুখিন হয়েছে।
১২) পর্তুগালের বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশ।
১৩) পর্তুগালে যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব ৩৫ শতাংশ।
১৪) ২০১২ সালে পর্তুগালের অর্থনীতি নেমে যাবে ৫.৭ শতাংশ।
১৫) ইতালিতে যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব ৩১.৯ শতাংশ।
১৬) ইতালির জাতীয় ঋণের পরিমাণ গ্রীস, আয়ারল্যান্ড ও পর্তুগালের সম্মিলিত ঋণের ২.৭ গুন।
১৭) ইতালির জাতীয় ঋণ জিডিপির ১২০ শতাংশ।
বস্তুতপক্ষে এই সময়ে ইউরোপ আমেরিকার গোটা অর্থনীতি যেন থমকে আছে- ধ্বস এড়ানো গেলেও ব্যবসা ও অর্থনীতিকে স্লথ গতি থেকে বের করা যাচ্ছে না, লাখ লাখ ছাটাই হওয়া শ্রমিকের জন্য কর্মসংস্থানেরও কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। জনগণের করের টাকায় ব্যক্তিপুঁজির বেল আউটের নীতির মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট কিছুটা সামলানোর পর জুলাই ২০১১ থেকে আবার পতনের দিকে যাত্রা শুরু করে মার্কিন অর্থনীতি। ইউরোপের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে একেবারেই ব্যর্থ হয়।
কেন এই ব্যর্থতা? মার্কস বলেছিলেন পুঁজিবাদের মধ্যেই লুকানো আছে তার সঙ্কট। অতি উৎপাদনের সঙ্কট। পুঁজিবাদ একদিকে যেমন মুনাফার তাগিদে তার উৎপাদন বাড়িয়ে যায় তেমনি অন্যদিকে শ্রমিকের মজুরি কমিয়ে, শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যয় কমিয়ে বাজারকে সঙ্কুচিত করে ফেলে। নিজের তৈরি পণ্য নিজের নীতির কারণেই আর সে বেচতে পারে না। পুঁজিবাদ অতীতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার বাজারকে প্রসারিত করে সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজেছিল, যেমন ১৯১৯ এ মহামন্দার সময় কেইনস এর নীতিমালা অনুসৃত ‘মার্শাল প্ল্যান’ এর মধ্য দিয়ে, এইবারের আর্থিক মন্দায় সেই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা তার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ৪৪৭ বিলিয়ন ডলারের নতুন একটা বিল উত্থাপন করেছিলেন ৭ সেপ্টম্বর ২০১১ তে। দুই দিন পর নিউ ইয়র্ক টাইমস এর হেডলাইন হয়: “মালিকেরা বলছেন নতুন কর্মসংস্থানের জোয়ার আসবে না”। মালিকেরা বলছে তারা নতুন নিয়োগ দেবে না কারণ বাজারে বাড়তি পণ্যের চাহিদা বা জনগণের পর্যাপ্ত ক্রয়ক্ষমতা নেই ফলে বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগও নেই। কিন্তু মুশকিল হলো নতুন কর্মসংস্থান না হলে তো লোকের ক্রয় ক্ষমতাও বাড়বে না, বাজারের চাহিদাও বাড়বে না! অন্যদিকে অতীতে আমরা দেখেছি এরকম সংকট জনক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য লাভজনক বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুজতে আমেরিকা ইউরোপ সহ প্রথম বিশ্বের দেশগুলির লগ্নী পুজি সারা দুনিয়াকে তার বিনিয়োগের ক্ষেত্র বানিয়েছে। একসময় এভাবে প্রান্তস্থ দেশগুলো থেকে, যেখানে পুজিবাদ তুলনামূলক কম বিকশিত ফলে পুজিবাদের সংকটও অপরিণত, সেখানে পুজি রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল মুনাফা আহরণ করেছে আমেরিকা ইউরোপ এবং তার বিনিময়ে নিজ দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও শ্রেণী সংগ্রামকে সামাল দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ব্শ্বিায়িত দুনিয়ায় ইতোমধ্যেই সারা দুনিয়ার প্রায় সমস্ত লাভজনক ক্ষেত্রে পুজিবাদী অর্থনীতির নিয়মের আওতায় চলে আসা, নতুন বৈশ্বিক শ্রম বিভাজন, ম্যানুফ্যাকচারিং এর লাভজনক আউট সোর্সিং ইত্যাদির ফলাফল স্বরূপ পুজি রপ্তানি এখন সাম্রাজ্যবাদী দেশের শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থা উন্নয়ণের বদলে মজুরী হ্রাস, শ্রমিক ছাটাই, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হ্রাস ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আর এর ফলে ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট ক্রমেই শাসকশ্রেণির রাজনৈতিক সঙ্কটে রূপান্তরিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের জাতীয় ঋণ লাগামছাড়া মাত্রায় পৌঁছনোর পর কীভাবে তার মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে বিতর্ক সমাজ জীবনকে উথাল পাথাল করে দিচ্ছে। জার্মানীর চান্সেলর মার্কেল এর নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থী শিবির আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলার জন্য কড়া ব্যয়সঙ্কোচ নীতি গ্রহণের দাওয়াই দিচ্ছেন, সরকারগুলিকে বেল আউটের (ঋণ মুক্তির) শর্ত হিসেবে ব্যয়সঙ্কোচ নীতি গ্রহণে বাধ্য করছেন। বামপন্থী শিবির এই ব্যয়সঙ্কোচ নীতি, অর্থাৎ স্বাস্থ্য শিক্ষা ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক খাতের অর্থবরাদ্দ হ্রাসের তীব্র বিরোধি। অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময়ে ব্যয়সঙ্কোচের এই বোঝা সাধারণের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠবে এবং বাজার সঙ্কুচিত হয়ে সঙ্কটকে আরো তীব্র করবে, এই তাদের মত। উচ্চ আয়ের মানুষের করহার বাড়িয়ে সেই অর্থে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে তারা এই সঙ্কটের মোকাবিলা করার কথা বলছেন। দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী শিবিরের এই মত বিভাজন স্পষ্ট চেহারা নিয়েছে এবং বিভিন্ন নির্বাচনে এর প্রতিফলন ঘটছে। গ্রীসে বহু বছর পর এই দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতেই বামপন্থীদের প্রবল সামাজিক ভিত সম্পন্ন গুরূত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠতে দেখেছি। ২০১৫ র সাম্প্রতিক নির্বাচনে যারা কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় আসীন হতে পেরেছেন।
সঙ্কটে পড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো গ্রীসও এই নীতি এতাবৎ অনুসরণ করে এসেছে, যার প্রতিক্রিয়ায় সিরিজার মতো র্যামডিক্যাল বামপন্থীদের উত্থান ও ক্ষমতা দখল। অবশ্যই গ্রীস এবং সিরিজা একক ব্যতিক্রম কিছু নয়। স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল সহ ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশেই র্যা ডিক্যাল বামপন্থাকে আমরা উঠে আসতে দেখছি। নির্বাচনে বামপন্থীরা সাফল্য পাচ্ছেন। তার চেয়েও বড় কথা নির্বাচনের আঙিনার বাইরেও জনগণের বিক্ষোভ ইউরোপকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। স্পেন আর পর্তুগাল এর রাস্তা এখন প্রায়শই বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বস্তুতপক্ষে গত কয়েক বছরে ইউরোপে যে পরিমাণ শ্রমিক বিক্ষোভ, বিরাট বিরাট মিছিল ইত্যাদি সঙ্ঘটিত হয়েছে, তা সোভিয়েত সমাজবাদের পতনের পর থেকে আর চোখে পড়ে নি।
স্পেন এ ২০১১ থেকে লাগাতার চলছে অকুপাই আন্দোলন, ১৫ মে শুরু হওয়ায় যার জনপ্রিয় নাম ‘এম-১৫’। সাম্প্রতিক সময়ে এই আন্দোলন নতুন গতি পেয়েছে যার প্রেক্ষাপটে আছে গণ আন্দোলনের চাপে বিশিষ্ট ব্যাঙ্কার, প্রথমে আই এম এফ এবং পরে স্পেনের চতুর্থ বৃহৎ ব্যাঙ্ক ‘ব্যাঙ্কিয়া’র প্রাক্তন কর্ণধার রডরিগো র্যাদডোর বিরুদ্ধে ফৌজদারী তদন্ত শুরুর নির্দেশ অর্জনের সাফল্য। উল্লেখযোগ্য রডরিগো ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে থেকে বহু মানুষের সর্বণাশ করেছিলেন। যদিও এই আন্দোলন এই ধরণের শীর্ষস্থানীয়দের বিরুদ্ধেই শুধু নয়, গোটা ব্যবস্থাটারই বিরুদ্ধে। কেন এই আন্দোলন তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতিবাদীদের এক সংগঠক, বছর পঁচিশেক বয়সের স্টেফানি গুয়েরসো জানাচ্ছেন, “ যেদিকে যাচ্ছিলাম, যা দেখছিলাম তা আমাদের ভালো লাগছিল না। আমরা অনুভব করছিলাম আমরা আমাদের গণতন্ত্র হারাচ্ছি, আমাদের দেশকে হারাচ্ছি, আমাদের জীবন ধারণের পথকে হারাচ্ছি। আমাদের একটাই স্লোগান, আমরা প্রকৃত গণতন্ত্র চাই”।
আন্দোলন চলাকালীন স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর পার্লামেন্ট ঘোষণা নিঃসন্দেহে বিক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। সরকারের ঘোষিত ব্যয়সংকোচ কর্মসূচীতে ভ্যাট বাড়ানো থেকে শুরু করে ক্রিসমাসের বোনাস ছাঁটাই - কিছুই বাদ যায়নি। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন,পণ্য ও পরিষেবাতে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট তিন শতাংশ বাড়ানো হবে,ফলে স্পেনে ভ্যাটের নতুন হার হবে একুশ শতাংশ। অনেক সরকারি কর্মচারী আর বড়দিনের বোনাস পাবেন না,আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই সরকারি চাকুরেদের সংখ্যা বা বেতন ছাঁটাই করা হবে - কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা হবে এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। স্পেনের সঙ্কটাপন্ন ব্যাঙ্কগুলোকে সাহায্য করার জন্য ইউরোজোনের নেতারা এ মাসের মধ্যেই তিন হাজার কোটি ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন - তার শর্ত হিসেবে স্পেনকে নতুন একগুচ্ছ ব্যয়সঙ্কোচনের প্রস্তাবে রাজি হতে হয়েছে। আর সেই শর্ত পূরণের তাগিদ থেকেই প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় পার্লামেন্টে এই সব নতুন পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন।
এই পর্বে আন্দোলনের শুরুতে নগরের কেন্দ্রস্থল পুয়ের্তো দেল সোল এ প্রথমে জমা হয়েছিলেন মাত্র জনা পঞ্চাশেক বিক্ষোভকারী। পুলিশ বলপ্রয়োগে তাদের হটিয়ে দিতে চায়। এতে আন্দোলন তীব্র হয়। দিন তিনেকের মধ্যেই স্পেনের অন্তত বারোটি শহরে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ২০১১ থেকে বিশ্বজোড়া অকুপাই আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্পেনের এই আন্দোলন শুরু হলেও আমেরিকার মতো হঠাৎ গতি হারিয়ে ফেলেনি বরং নানা আকর্ষক পথে এগিয়ে চলেছে। বিভিন্ন কর্মী দলে বিভক্ত হয়ে নানা ইস্যু ভিত্তিক লড়াইয়ে তারা অংশগ্রহণ করছেন। রাজপথের আন্দোলনের সাথেই তারা মিলিয়ে নিয়েছেন আইনী লড়াইকেও। একটি দল বহু মানুষের সর্বণাশকারী রডরিগো র্যাবগোর মত ব্যাঙ্কারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি লড়াইয়ের পথে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় জনা পঞ্চাশেক আইনজীবী এগিয়ে আসেন বিনা পারিশ্রমিকে মামলা লড়তে, মামলার অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য অজস্র মানুষের থেকে অল্প অল্প টাকা নিয়ে একদিনেই ওঠে পঁচিশ হাজার ডলার। মামলা শুরু হয়। আর ব্যয়সঙ্কোচ নীতির ফাঁস যত তীব্র অয়েছে, ততই বেড়েছে রাজপথে বিক্ষোভ। প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রোজার যখন পার্লামেন্টে আরো বেশি কৃচ্ছসাধন নীতির কথা ঘোষণা করছেন, বলছেন বিক্রকর বাড়ানো বা সরকারী কর্মচারীদের মজুরী কমানোর কথা, বেকারভাতার সময়সীমা কমিয়ে আনার কথা তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার খনি শ্রমিক এসে পৌঁছেছেন মাদ্রিদে। তাদের স্লোগান ছিল ‘আমরা নিরানব্বই শতাংশ’। খনিশ্রমিকদের বক্তব্য,স্পেন সরকার যেহেতু কয়লাখনি সংস্থাগুলোকে দেওয়া ভর্তুকির প্রায় দুই তৃতীয়াংশই ছাঁটাই করছে - তার ফলে এই খাতে হাজার হাজার কর্মী চাকরি খোয়াবেন। শ্রমিকদের আন্দোলন বৃহত্তর জনসমাজের সমর্থনলাভে সক্ষম হয়েছে। টোনি নামে প্রতিবাদকারী একজন খনিশ্রমিক বলেন তারা মাদ্রিদবাসীর কাছ থেকেও আশাতীত সমর্থন পেয়েছেন । “দারুণ সাড়াজাগানো সমাবেশ হয়েছে - দেখুন, কত মানুষ এসেছেন! কেউ কেউ বলে মাদ্রিদ না কি দক্ষিণপন্থীদের শহর - কিন্তু আমার তো তা মনে হয় না! এটা তো শ্রমজীবীদের শহর,সাচ্চা শহর। আমরা ভীষণই খুশি - গোটা পদযাত্রায় আমরা দেশের প্রতিটা গ্রামে যেরকম সাড়া পেয়েছি মাদ্রিদেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি ... সত্যিই এটা দারুণ ব্যাপার।”আগত খনি শ্রমিক ও মাদ্রিদের নাগরিকদের বিপুল অংশ ব্যয়সংকোচ নীতির বিরুদ্ধে মিছিল করে অগ্রসর হলে রবার বুলেট নিয়ে পুলিশ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, অন্তত ছিয়াত্তর জন গুরূতর যখম হন। কিন্তু দমন নীতি অগ্রাহ্য করে আন্দোলন ক্রমশ আরো তীব্র হচ্ছে।
পর্তুগাল সরকারও তাদের কৃচ্ছসাধন নীতির বিরুদ্ধে নেওয়া প্রতিবাদী আঁচ ভালোরকম টের পাচ্ছে। রাজধানী লিসবনে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়ে জানিয়েছেন ব্যয়সংকোচ করা চলবে না। বস্তুতপক্ষে গত তিন দশকের মধ্যে এটিই পর্তুগালে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী বয়ন শ্রমিক সুশানা লিল জার্মানী নির্দেশিত ব্যয়সঙ্কোচ নীতির বিরোধিতা করে বলেছেন, “আর্থিক সঙ্কট কেবল জার্মানীকেই লাভবান করছে”। মে মাসে পর্তুগালের সংসদ শ্রম আইনে যে সব পরিবর্তন এনেছে, পর্তুগালের প্রধান শ্রমিক ইউনিয়ন তার তীব্র বিরোধিতা করেছে।
তিরিশ বছর ধরে চলা স্বাস্থ্যনীতিতেও এসেছে পরিবর্তন। বস্তুতপক্ষে ব্যয়বরাদ্দর তীব্রতম প্রকোপ পড়েছে স্বাস্থ্যখাতেই। চিকিৎসক, নার্সদের বেতনে কাটছাঁট করা হচ্ছে, বাড়ছে ওষুধের দাম। অনেক সরকারী হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসার সুযোগ পেতে রোগীদের অনেক বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়বরাদ্দ হ্রাসের প্রতিবাদে চিকিৎসকেরা শুরু করেছেন ধর্মঘট। লিসবনের কেন্দ্রীয় হাসপাতাল সাও হোসের চিকিৎসক ড. পিলার এবং ড. কার্লোস মার্টিং জানিয়েছেন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেসরকারীকরণ সমাজে গভীর প্রভাব ফেলবে। মানুষ স্বল্পব্যয়ে উন্নত চিকিৎসার যে সুযোগ পেতেন তা থেকে বঞ্চিত হবেন। বেসরকারীকরণের তাগিদে অনেক সরকারী হাসপাতাল বন্ধও করে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা লাভজনক পণ্যে পরিণত হবার ফলে জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদেই তাদের এই ধর্মঘট। সাধারণ মানুষ এই ধর্মঘটকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করছেন। এদেরই একজন দক্ষিণ লিসবনের আলমাদার এক ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আসা জনৈক জোয়াল পালমা ক্ষোভের সুরে জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্য একটা ভালো ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকা আছে তো ঠিক আছে, না হলেই মরণ”।
গ্রীসের পরিস্থিতি ও সিরিজার উত্থান এর পাশাপাশি স্পেন ও পর্তুগালে র্যা ডিক্যাল বামপন্থা ও শ্রমিক শ্রেণির এই নয়া জাগরণ চোখে পড়ার মতো। আগামী দিনে শ্রমিক শ্রেণি ও তার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা কমেই বাড়ছে। তারা রাজনীতির পরিসরকে নতুন ভাবে খুলে দিতে পেরেছেন সাধারণ ও মেহনতি মানুষের পক্ষে।
শুধুমাত্র র্যানডিক্যাল বামপন্থী আলোড়ণের পুনর্জাগরণের দিক থেকেই নয়, ভূ রাজনৈতিক অবস্থান ভারসাম্যের কিছু মৌলিক পরিবর্তনের সম্ভাবনাও এই সময় ব্যাপকভাবে চর্চিত হচ্ছে। গ্রীসের সরকারের কঠোর অবস্থান এবং গ্রীক জনগণের গণভোটের রায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে গ্রীসের নিষ্ক্রমণের সম্ভাবনাকে সামনে আনছে এবং এই সম্ভাবনা, যাকে গ্রেক্সিট (গ্রীক এক্সিট) বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, শুধু রাজনৈতিক অবস্থান নয়, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আলোচিত হচ্ছে। বস্তুতপক্ষে ঋণ সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে অতীতে অনেক দেশই নিজের মুদ্রার ইচ্ছাকৃত অবমূল্যায়নের মাধ্যমে রপ্তানী বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে সঙ্কট মুক্তির চেষ্টা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকলে এবং মুদ্রা হিসেবে ‘ইউরো’ ব্যবহার করলে তার এই সুবিধা নেই। তাই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান এর মতো অনেকেই গ্রীসকে ইউরোজন ও ইউরো মুদ্রা ত্যাগ করে নিজস্ব মুদ্রা ‘দ্রাখমা’ চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন।
[http://krugman.blogs.nytimes.com/2015/05/25/grexit-and-the-morning-after/?smid=tw-NytimesKrugman&seid=auto]
গ্রীস এই পথে যাত্রা করলে ইতালি পর্তুগাল বা স্পেনের মত অনেক দেশই এই নির্গমনের পথ নিতে পারে বা কঠোরতর রফাসূত্র পেশ করতে পারে। ইউক্রেন সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া অবশ্যই ইউরোপীয় অঞ্চলে নতুন মিত্র খুঁজে পেতে আগ্রহী এবং গ্রীসের সঙ্গে ইতোমধ্যেই তার কিছু কথাবার্তা হয়েছে। এশিয়ায় চীনকে সঙ্গে নিয়ে রাশিয়ার নতুন মঞ্চ গঠনের মধ্যেই ভূ রাজনীতির নতুন বিন্যাস থেমে থাকবে না এবং তা সঙ্কটগ্রস্থ ইউরোপকে নানাভাবেই তাড়া করে যাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে গ্রীসের নিষ্ক্রমণ অবশ্যই একমাত্র পথ নয় এবং টমাস পিকেটির মত অনেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদই ইতিহাসের সূত্র ধরে ঋণ সঙ্কট মেটানোর ভিন্নতর সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
[http://thewire.in/2015/07/08/thomas-piketty-germany-has-never-repaid-its-debts-it-has-no-right-to-lecture-greece/]
পিকেটি বলেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সার্বিক ঋণ এর প্রশ্ন নিয়ে যেমন একটি বিশেষ সম্মেলন বসেছিল, তেমনি একটি সম্মেলন হওয়া দরকার। শুধুমাত্র গ্রীস নয়, ইউরোপের আরো অনেক দেশের ঋণ সঙ্কট নিয়েই আলোচনা করার আছে। যে জার্মানী ঋণ এর প্রশ্নে কড়া ও সুবিধাবাদী অবস্থান এখন নিচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার বিপুল পরিমাণ ঋণ মকুবের কথাও পিকেটি এই প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর চেতাবনী যদি গ্রীস বা অন্যান্য দেশের প্রতি ‘কৃচ্ছসাধন নীতিমালা’ গ্রহণের কঠোর অবস্থান বজায় রেখে তাদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে নির্গমনের রাস্তা পাকা করে দেওয়া হয়, তবে ইউরোজোনের বিশ্বস্ততাই শুধু সমস্যায়িত হবে তাই নয়, ইউরোপের সামাজিক বিন্যাস, তার গণতন্ত্র ও সভ্যতাই সঙ্কটগ্রস্থ হবে।
সমস্যা অবশ্য গ্রীসের রাজনৈতিক মহলেও ভালোরকম বিদ্যমান এবং সংগ্রাম ও সমর্পণবাদী বিভিন্ন প্রবণতার মিশেল সেখানে দেখা যাচ্ছে। ৫ জুলাই গ্রীসে গণভোটের মাধ্যমে ‘কৃচ্ছসাধন নীতি’ নিয়ে জনগণের রায় নেওয়া হয়েছিল। ৬১ শতাংশ মানুষ, নানা ভয়ভীতি প্রদর্শনকে উপেক্ষা করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন ট্রোইকা নির্দেশিত ‘কৃচ্ছসাধনের নীতিমালা’ মেনে নিতে তারা প্রস্তুত নন। এই গণভোটের রায় গ্রীসকে অবশ্যই দরকষাকষির শক্ত জমির ওপরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ঘটনার গতিধারা এর পরেও আবার অন্যদিকে নাটকীয় মোড় নিল। আমরা দেখলাম ট্রোইকার নীতিমালার কাছে অনেকটা আত্মসমর্পণ করেই গ্রীসের সরকার নতুন অর্থসাহায্য নিলেন এবং তা গ্রীসের পার্লামেন্টে গৃহীতও হয়ে গেল। এ যেন অনেকটাই ‘ওয়ান স্টেপ ফরওয়ার্ড টু স্টেপ ব্যাক’ এর মতো ঘটনা। অবশ্য পরিস্থিতি এই আত্মসমর্পণের মধ্যেই থেমে থাকলো না এবং আত্মগ্লানিতে সমৃদ্ধ প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস এর আবেগময় ভাষণও বিক্ষুব্ধদের শান্ত করতে ব্যর্থ হল। গ্রীসের রাস্তায় আবারো শুরু হয়ে গেল তীব্র প্রতিবাদ, পার্লামেন্টের সামনে মানুষ ফেটে পড়লেন তীব্র বিক্ষোভে। পার্লামেন্টের মধ্যেই অবশ্য অনেক সাংসদ এই নয়া আত্মসমর্পণের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন, যার মধ্যে শাসক জোট সিরিজার সাংসদরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সদ্য পদত্যাগ করা অর্থমন্ত্রীও এই বিরুদ্ধতার শরিক। তাঁর একটি লেখায় তিনি তুলে ধরলেন নয়া এই আত্মসমর্পণের চুক্তিপত্র সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট আপত্তিগুলি।
[http://yanisvaroufakis.eu/2015/07/15/the-euro-summit-agreement-on-greece-annotated-by-yanis-varoufakis/]
কীভাবে গ্রীস নতুন করে আবারো শৃঙ্খলিত হতে চলেছে তাকে বিশ্লেষণ করে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যখন বিক্ষোভে সামিল, তখন শাসক জোট সিরিজাও খোলা বিবৃতি দিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করল। সিরিজার কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। এই ঘটনা গ্রীসে বর্তমান সরকারের স্থায়িত্ব ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই নানা প্রশ্ন তুলে দিল।
গ্রীসে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগামীদিনে কোন দিকে যাবে, সমর্পণ ও সংগ্রামের মধ্যকার বিচিত্র দ্বন্দ্ব শেষপর্যন্ত কী পরিণতি পাবে, তার জন্য আমাদের আরো অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু গ্রীসের আর্থিক সঙ্কট ও তাকে সমাধানের পদ্ধতি ও নীতি সংক্রান্ত যে মৌলিক প্রশ্নগুলি উঠে এসেছে তা ভিন্ন দেশকালের ব্যাপ্ত প্রেক্ষিতেও গুরূত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।
‘কৃচ্ছসাধন’ এর যে নীতিমালার ওপর দাঁড়িয়ে গ্রীসের আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলা করার জন্য চাপ দিচ্ছে জার্মানীর নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দক্ষিনপন্থী লবি, তার সারবত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন স্টিগলিজ, ক্রুগম্যান, পিকেটি, অমর্ত্য সেন সহ অনেক অর্থশাস্ত্রী। ইতিহাস পর্যালোচনা করে তাঁরা দেখিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে না আর্থিক না সামাজিক – কোনও দৃষ্টিকোণ থেকেই কৃচ্ছসাধনের নীতিমালা কার্যকরী হতে পারে নি। বরং ব্যাপক ঋণ সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে ঋণের পুনর্বিন্যাসই সঙ্কটের প্রকৃত সমাধান বলে বিবেচিত হয়েছে। অমর্ত্য সেন তাঁর সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে
[http://www.newstatesman.com/politics/2015/06/amartya-sen-economic-consequences-austerity]
দেখিয়েছেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানীর ওপরেও এরকমই এক ঋণের বোঝা চেপে বসেছিল। এবং প্রাচীন রোমক প্রথা অনুসারী এই শোষণ পদ্ধতিকে অকার্যকরী বলেই মনে করেছিলেন সেকালের অন্যতম বিশিষ্ট অর্থশাস্ত্রী কেইনস। পিউনিক যুদ্ধে পরাজয়ের পর কার্থেজের ওপর যেভাবে বিজয়ী রোম আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ইংলন্ড ফ্রান্স ইতালি আমেরিকা সহ বিজয়ী পক্ষ জার্মানীর ওপর একই রকম কাজ করতে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেছিলেন আর ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরের কয়েকদিন আগেই এর শর্তাবলী সম্পর্কে তীব্র ভিন্নমত পোষণ করে এ থেকে সরে এসেছিলেন। বস্তুতপক্ষে এ নিয়ে কেইনস তাঁর যুক্তিমালা সহ লিখেছিলেন আস্ত একটি বই – ‘ইকনমিক কনসিকোয়েন্স অব দ্য পিস’। জার্মানীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া কৃচ্ছসাধন নীতির বিপক্ষে ছিলেন কেইনস এবং পরবর্তী ইতিহাস তাঁর দূরদৃষ্টির স্বাক্ষ্য দেবে। আজকে ইতিহাসের পক্ষ বদল হয়ে জার্মানীর নেতৃত্বেই গ্রীসের ওপর কৃচ্ছসাধন নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলতে পারে, কিন্তু তাতে অর্থশাস্ত্রের সাধারণ নীতিমালা বদলে যায় না। একইভাবে মূলত লগ্নি পুঁজির বাজারের চূড়ান্ত পর্যায়ের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল থেকেই (মার্কিন ব্যাঙ্কগুলির পতনের মধ্য দিয়ে) সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপ আমেরিকা জুড়ে যে আর্থিক সঙ্কটের সূত্রপাত, তার বাস্তবতাকে সরকারের ব্যয়সঙ্কোচ ও কৃচ্ছসাধন নীতি গ্রহণের উপদেশমূলক প্রচারের মধ্য দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায় না। সেইসঙ্গে বিভিন্ন আর্থিক সমীক্ষা থেকে এটাও স্পষ্টভাবে বুঝে নেবার দরকার আছে কৃচ্ছসাধন নীতিমালা প্রকৃতপক্ষে আর্থিক সঙ্কটকেই আরো ঘনীভূত করে তুলছে এবং তা কোনোভাবেই জাতীয় আয় ও ঋণের অনুপাতের অসামঞ্জস্যর সঙ্কটকে সমাধান করতে পারবে না। যদি খুব সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের সঙ্কটগ্রস্থ দেশগুলির অবস্থা কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে থাকে, তবে তা হয়েছে তলা থেকে আন্দোলনের চাপে ‘কৃচ্ছসাধন নীতিমালা’র বিপরীতে অর্থনীতিকে কিছুটা প্রসারিত করার চেষ্টার মধ্য দিয়েই। ক্লিন্টনের সময়ে আমেরিকা বা ১৯৯৪-৯৮ পর্বে সুইডেনের প্রবল সঙ্কটকে কৃচ্ছসাধনের মধ্য দিয়ে নয়, জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির মধ্য দিয়েই সামলানো সম্ভব হয়েছিল।
কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণার মধ্য থেকে আর্থিক সঙ্কট ও তার সঙ্গে জড়িত সামাজিক সঙ্কটকে কীভাবে সামলানো যায় তার উদাহরণ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ব্রিটেনের অর্থনীতির দিকে তাকানো যায়। বিশ শতকের চল্লিশের দশক থেক ষাটের দশক পর্যন্ত ব্রিটিশ অর্থনীতির জাতীয় আয়ের চেয়ে জাতীয় ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছিল, এমনকী তা দুশো শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ব্রিটেনে কৃচ্ছসাধন নীতির পরিবর্তে সরকারী উদ্যোগে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিস্তার ঘটানো হয়, তৈরি হয় ‘ন্যাশানাল হেলথ সার্ভিস’ এবং তা বিশেষ ফল দেয়। সামাজিক আর্তিকেই তা শুধু হ্রাস করেছিল তাই নয়, অর্থনীতির বৃদ্ধির চাকা ঘোরাতেও সক্ষম হয়েছিল। আজ গ্রীস, পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন সহ ইউরোপের একগুচ্ছ দেশের বিশেষ আর্থিক সামাজিক সঙ্কটের সামনে দাঁড়িয়ে চাপিয়ে দেওয়া কৃচ্ছসাধন নীতির পরিবর্তে জনগণের আর্তি ও প্রতিবাদের অন্তর্বস্তুর দিকে নীতি নির্ধারকদের নজর ঘোরানোর প্রয়োজন আছে। জনগণের সামনেও সুযোগ আছে একচেটিয়া পুঁজির মুনাফার পাহারাদারদের বিরুদ্ধে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে তোলার। ইউরোপকে সত্যিই আজ এক নতুন ভূত আবার তাড়া করছে। ১৮৪৮ এ প্রকাশিত ক্ষীণকায় ম্যানিফেস্টোর প্রথম বাক্যটি নতুনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে চিন্তায়, রাস্তায়। ‘আ স্পেকট্রা ইজ হন্টিং ইউরোপ’ ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.