![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
...... শ্রাবনের মাঝামাঝি সময়, ব্রম্মপুত্রের বুক বেয়ে নৌকা করে রৌমারী থেকে চিলমারী হয়ে রংপুর যাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে গত পরশু। আর বাড়িতে থাকা ঠিক হবে না। ঝুম ঝুম করে ঝরছে অঝোর বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বইছে ঝড়ো মাতাল হাওয়া। হাওয়ার তোড়ে ছাউনীর ভেতরেও পানির ছিটা এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। এর চেয়ে মাচার উপর বসে ভিজে ভিজে যাওয়াই ভাল। তাই মাঝি যখন বলল -
'এ্যাংকা বিষ্টিত ভিজি যাইমেন তো বাবা' তখন পাত্তাই দিলাম না।
মিষ্টি মধুর বৃষ্টির ছোয়ায় বেশ ভালই লাগছে। পুরনো দিনের বর্নিল স্মৃতি গুলোর কথা মনে পড়ছে। বৃষ্টিতে সবাই হৈ-হুল্লোড় করে ছড়া কাটতাম-
বিষ্টি এল কাশ বনে
জাগল সাড়া ঘাস বনে,
বকের সারি কোথা রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে৷
----------
----------
গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,
বিষ্টি বাদল দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে মেঘ দেশে,
যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা । *
ছোটবেলায় নাসিম চাচার সংগে যখন রংপুরে যেতাম তখনও এভাবে ভিজেই যেতাম।
নাসিম চাচা বলত-
'তোর মাক বলিস নে যে বড় আব্বা ভিজি নিয়ে গেইছে, জর আইসলে পাছে অংপুর থাকি ওষুধ কিনি দিমো এলা।'
তার মতে একটু আকটু জ্বরের ভয়ে বৃষ্টিতে না ভেজা কাপুরুষের লক্ষন।
তিনি মানুষটাই এমন। প্রেশারের সমস্যার জন্য জোর করেও তাকে কোন ওষুধ খাওয়ানো যেত না।ওষুধের কথা বললে হাসতে হাসতে বলতেন-
' অংপুরের প্রিশার সেন্টারের বড় ডাকতর কইছে , সারা জেবন প্রিশারের ওষুধ খাওয়া নাইগবে। আরে মোর দাদা জেবনে কোনদিন কোন ওষুধে খায় নাই, তায় নব্বই বছর বয়সত তিন নাম্বার বিয়া কইরছে, সেই ব্যাটার নাতি মুই। আর মোকে কয় সারা জেবন ওষুধ খাইমেন। হাসিয়াই বাচংনা। '
দাওয়াত খেতে গেলে তিনি বেছে বেছে চর্বিযুক্ত মাংস খেতেন। আমরা যদি ডাক্তারের নিষেধের কথা বলতাম। তিনি বলতেন-
'ওই ডাকতরগোরে একে আলাপ, এটা খাবান নন , ওটা খাবান নন, নইলি কিন্তুক মরি যাইমেন। আরে এইগলে যদি খাবারে না পারি, তাইলে বাচি থাকি কি লাভ?'
ব্যায়াম করতে বললে তিনি বলতেন-
'দুইদিন বেশি বাচার জন্যি মুই বেগার খাইটপের পাবার নও'
কারো কোন পরামর্শই কানে নেননি তিনি।
তিল তিল করে নীরবে নিঃশেষিত হয়েছে তার জীবনীশক্তি। প্রেশারের অসুখটাই নাকি এমন , নীরবে বাসা বেধে হঠাৎই তছনছ করে দেয় পুরো দেহকে। তখন আর কিছুই করার থাকে না। ভাবতেই কষ্ট লাগে সেই স্বপ্নীল চোখ গুলো এখন ঘোলা হয়ে গেছে আঁধারের মায়াজালে। তার যৌবনদীপ্ত শরীরটা হয়ে গেছে স্থবির। প্রানবন্ত সেই মানুষটা আজ হাটতেও পারেন না।
পুরনো সেই রংগীন দিন গুলো চোখে ভাসে আর মনের অজান্তে গড়িয়ে পড়ে অশ্রুধারা। নিজেকে আর ধরে রাখা যায় না। বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যায় চোখের নোনা প্রবাহ। বুকের অচেনা এক গোপন কুঠুরীতে লাগে অব্যক্ত বেদনা।
------------------------
*ছড়া- কবি ফররুখ আহমদ
(গল্পটি একটি সাস্থ্য সাময়িকীতে প্রকাশিত)
২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৪২
মহাশুন্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:৩৯
আহমেদ জী এস বলেছেন: মহাশুন্য ,
এটা ঠিক গল্প হয়নি , স্মৃতিকথন হয়েছে ।
তবে ভালো লাগলো এর "অংপুরী" ভাষা । অদ্ভুত সুন্দর ভাষা । আঞ্চলিক ভাষার প্রতি আমার একটা সহজাত টান আছে বলেই এমনটা বললুম আপনার ভাষাকে নিয়ে ।
"অংপুরী" কথা গুলো কপি করে রাখলুম ।
২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৪৩
মহাশুন্য বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৮
মার্কো পোলো বলেছেন:
'তোর মাক বলিস নে যে বড় আব্বা ভিজি নিয়ে গেইছে, জর আইসলে পাছে অংপুর থাকি ওষুধ কিনি দিমো এলা।'
তার মতে একটু আকটু জ্বরের ভয়ে বৃষ্টিতে না ভেজা কাপুরুষের লক্ষন।'
' অংপুরের প্রিশার সেন্টারের বড় ডাকতর কইছে , সারা জেবন প্রিশারের ওষুধ খাওয়া নাইগবে। আরে মোর দাদা জেবনে কোনদিন কোন ওষুধে খায় নাই, তায় নব্বই বছর বয়সত তিন নাম্বার বিয়া কইরছে, সেই ব্যাটার নাতি মুই। আর মোকে কয় সারা জেবন ওষুধ খাইমেন। হাসিয়াই বাচংনা। '
'ওই ডাকতরগোরে একে আলাপ, এটা খাবান নন , ওটা খাবান নন, নইলি কিন্তুক মরি যাইমেন। আরে এইগলে যদি খাবারে না পারি, তাইলে বাচি থাকি কি লাভ?'
আমার এলাকার ভাষা শুনে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। কথাগুলো শুনে রৌমারীর কথা খুব মনে পড়ছে।
খুব ভাল লাগলো।