নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাকতাড়ুয়া

স্পাউট রক

প্রতিটি জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতা মানুষের নেই ,যদি কোনো মানুষের থেকে থাকে তবে সে মহামানব নয়ত মহাবেকুব ।

স্পাউট রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেরা - শেষ পর্ব

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৭

৫.

তীব্র ঝাকি আর প্রচন্ড জোরে হর্নের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল রাশেদের । হঠাত্‍ করে বাসের সামনে একটা ভ্যান চলে আসায় বেশ শক্ত করে ব্রেক কষতে হয় ড্রাইভার কে । একটুর জন্য বেঁচে গেছে ভ্যান টা , ভ্যান আর ভ্যানের যাত্রীদের তেমন কোন ক্ষতি হয় নি ।



বিরক্ত হয়ে সময় দেখার জন্য হাত ঘঁড়িটার দিকে তাকালো রাশেদ , বন্ধ হয়ে গেছে । বড় কাঁটাটা ৯টার কাছে আর ছোট কাঁটাটা ৩ এর কাছে এসে থেমে গেছে । নির্ঘুম রাতের ক্লান্তি আর টেনশন ক্ষনিকের জন্য ঘুম এনে দিয়েছিল রাশেদের চোখে । আর তাতেই বাড়ি ফেরার স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেছিল সে । কিন্তু সবই তো বাস্তব মনে হচ্ছিল তার কাছে । গ্রামের মেঠো পথ , নির্মল বাতাসে ফসলের মিষ্টি সুবাস , গাছের ডালের ফাকে ফাকে চড়ুই আর শালিকের কিচিমিচি শব্দ , মাটির সোঁদা গন্ধ সবটাই তো বাস্তব মনে হচ্ছিল । আর বাবা ? বাবার কান্না ভেজা চোঁখ , সেটাও কি স্বপ্ন ছিল ? আর ভাবতে পারল না রাশেদ , চোঁখ বন্ধ করে ফেলল । কিছুক্ষন থেমে থাকার পর আবার চলতে শুরু করল বাস ।



৬.

টাঙ্গাইলের কাছাকাছি আসার পর আবার থেমে গেল বাস । জানালা দিয়ে মাথা বের করে উকি দিয়ে সামনে দেখার চেষ্টা করল রাশেদ । সামনে আরও কয়েকটা বাস দেখা গেল , তার পরে আর কিছু বোঝা যাচ্ছে না । খানিকপরে বাসের হেল্পার এসে বলে গেল , সামনে পুলিশ চেকপোস্ট । বাস চেকিং হচ্ছে । ভেতরে ভেতরে ঘামতে শুরু করল রাশেদ । বাস যতই আগাতে থাকল চেকপোস্টের কাছে রাশেদের হার্টবিট ও বাড়তে শুরু করল । ভয়ের কি আছে , সাহস রাখ । নিজেকেই যেন প্রবোধ দিল রাশেদ । কিন্তু ভীতু তো সে ছিল না কোনোকালেই । তাহলে এখন ভয় পাচ্ছে কেন সে ? তবে কি স্বপ্নে বাবাকে দেখতে পাওয়ায় সে দুর্বল হয়ে গেছে !!



চেকপোস্টের কাছে চলে এসেছে বাস । দুজন পুলিশ উঠে এল বাসে । সামনে থেকে চেকিং করতে করতে এগিয়ে আসছে । আর মাত্র দুইটা সিট , তার পরেই পুলিশ পৌছে যাবে রাশেদের কাছে । দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল রাশেদ , তাকে পালাতে হবে , কোনোমতেই ধরা পড়া যাবে না । কখনোই না ।

বাসের জানালা খুলেই লাফ দিয়ে নিচে নামল রাশেদ । তার পর দৌড় দিল রাস্তার পাশের গাছপালা লক্ষ করে । প্রানপণে ছুটতে লাগল রাশেদ , কাধের ব্যাগটা সে বাসেই ফেলে রেখে এসেছে । কোনোদিকে তাকানোর সময় নেই তার । পিছনে না তাকিয়েও সে বুঝতে পারছে বেশ কয়েকজন পুলিশ ছুটে আসতে তার পিছু পিছু । থামলেই ধরা পড়তে হবে । দৌড়ে সামনের আঁখের ক্ষেতে ঢুকে পড়ল রাশেদ । ক্ষেত থেকে বের হতেই পর পর তিনটা গুলির শব্দ পাওয়া গেল । গুলির শব্দে গাছে বসে থাকা একঝাঁক বুনো কবুতর ডানা ঝাপটে উড়ে গেল । মুখ থুবড়ে কর্দমাক্ত মাটির উপর পড়ে গেল রাশেদ । বুঝতে পারছে তার শরীর ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছে , চোঁখের দৃষ্টিও ক্ষীণ হয়ে আসছে । হঠাত্‍ চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই দৃশ্য , রহমত শেখ দৌড়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরল রাশেদকে । বাবার বুকে আশ্রয় পেয়ে ডুঁকরে কেঁদে উঠল রাশেদ । রহমত শেখ বলতে লাগলেন , 'বাপজান তুই এদ্দিন পর ফিরলি ? এতদিন পর তোর এই বুড়া বাপটার কথা মনে পড়ল ? তুই ক্যামনে ছিলি আমগোরে ছাইড়া ? বল বাপজান বল ?'

রাশেদ বিড়বিড় করে শুধু বলল , 'আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা । আমি এভাবে ফিরতে চাইনি তোমাদের কাছে । মাফ করে দিও আমাকে ।'

তারপর সব অন্ধকার হয়ে গেল চোঁখের সামনে ।



৭.

বাসে ফেলে যাওয়া ব্যাগ সার্চ করে জামা কাপড়ের সাথে কয়েকটি ককটেল , ককটেল তৈরির সরন্জাম , মোঃপুরের একটা মেসের ঠিকানা আর দুইটি চিঠি পাওয়া যায় । বাসার ঠিকানা মোঃপুরের হওয়ায় মোঃপুর থানায় ব্যাগটি হস্তান্তর করা হয় । থানার ইন্সপেকটর ইমতিয়াজ চিঠি দুইটি মোজাম্মেল হকের হাতে দেয় । একটি চিঠি তে রাশেদের সকল সহযোগীদের লিস্ট করে রেখে গিয়েছিল , সে হয়ত আগেই বুঝতে পেরে গিয়েছিল তার শেষ পরিনতি কি হতে পারে । আর ২য় চিঠিটি হল রাশেদের বাবাকে লেখা তার শেষ চিঠি । ২য় চিঠিটি ভাজ করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন মোজাম্মেল হক ।



পরের দিন দেশের সকল বড় বড় খবরের কাগজ ও পত্রিকা তে হেডলাইন লেখা হল , ''বিপুল পরিমান ককটেল ও ককটেল তৈরীর সরন্জামসহ ঢাকা থেকে পালানোর পথে নাশকতা সৃষ্টিকারী গ্রুপের সদস্য ও অন্যতম ককটেল সরবরাহকারী রাশেদ শেখ ওরফে ককটেল রাশু পুলিশের গুলিতে নিহত ।''



-------সমাপ্ত-------

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.