নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাকতাড়ুয়া

স্পাউট রক

প্রতিটি জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতা মানুষের নেই ,যদি কোনো মানুষের থেকে থাকে তবে সে মহামানব নয়ত মহাবেকুব ।

স্পাউট রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুকুলদের গল্প

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১

এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্টের

দিন রাতের বেলা...



মুকুল বাড়ির এগারো তলার ছাদে

একদম কিনারে দাঁড়িয়ে । অঝোরে

পানি পড়ছে ওর চোখ থেকে !

'এতো চেষ্টা করলাম তারপরেও

রেজাল্ট ভালো হলোনা ! আমি তো

চেষ্টা করেছিলাম ই , কম চেষ্টা করিনি আমি , হলোনা তাতেও ।

আমার কি দোষ ! বাবা তাই বলে

আমাকে এত্তো বকবে ! বললো

আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা !

রিকশা চালাতে বললো ! আমাকে নাকি কোনো কলেজে ভর্তি করবে না আর । শুধু শুধু নাকি টাকা নষ্ট । তারচেয়ে আমাকে গ্যারেজে দিয়ে আসাটাই ভালো হবে ! আমার

কি দোষ ! আমি তো রাত জেগে

জেগে পড়েইছিলাম , সারাদিন যতটুকু সময় পেতাম বইয়ের সাথেই লেগে থাকতাম । তখন তো

সবাই বলেছে আমি ফ্যামিলির

মুখ উজ্জ্বল করবো ! আর এখন

সবাই আমাকে বকছে ! আম্মাটাও

মুখ ভার করে বসেছিলো ! বাবাকে

আটকাচ্ছিলোনা ! কি হতো আম্মা

যদি তখন একটু আমার পক্ষ নিতো ! সবাই শুধু আমাকে বকে !

কেউ আমাকে ভালোবাসেনা !

আমি না থাকলে কারো কিছু

যাবে আসবেনা ! কেউ আমাকে

বোঝেনা, সবাই শুধু আমার

রেজাল্ট বোঝে , আমার চেয়ে আমার রেজাল্টের গুরুত্ব টাই বেশি । থাকবোনা আর

আমি !' - ভাবতে ভাবতে চোখ

মোছে মুকুল ।

সুপারম্যান টিভি সিরিজটা তার

অনেক প্রিয় ছিল । উড়তে তো

পারবেনা , তাই পাইলট হবার খুব

ইচ্ছে ছিল মুকুলের । ইচ্ছে ছিল পাইলট হতে না পারলেও

জীবনে একবার অন্তত প্লেনে

চড়বে । তা আর হলো কই ! বুকে

প্রচন্ড অভিমান আর অপ্রাপ্তি নিয়ে লাফ দিলো

মুকুল, বলতে গেলে নিজেকে

হাওয়ার উপর ভাসিয়ে দিলো , যতক্ষন ভেসে থাকা যায় ।



কয়েক

সেকেন্ড পর বাড়ির সামনের

বাগানে ধুপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ

হলো । তারপর সব চুপচাপ ! কোথাও কোনো আওয়াজ নেই শুধু একটানা ঝিঁঝিঁ ডাকার আওয়াজ । কেউ

শুনলোনা সে ধুপ করে কিছু পড়ার শব্দ ! একটু পর

মুকুলের বাবা আলম সাহেব

এশার নামায পড়ে বাসার সামনে

এসে দাড়ালেন । বাগানে

বস্তামতো কি যে একটা পড়ে

আছে ! রাতের বেলা চশমা ছাড়া

ঠিকমতো দেখতে পান না উনি ।

বুকপকেট থেকে চশমাটা তুলে চোখে লাগালেন উনি ।

ভালো করে তাকালেন !

মুকুউউউউউউউল !!!! বিকট

চিৎকারে বাড়ি কেপে উঠলো !

সবাই শুনলো আলম সাহেবের

সেই চিৎকার । শুধু শুনতে

পেলনা একটা অভিমানী বাচ্চা !

যার রেজাল্ট একটু খারাপ

হয়েছিলো !



মুকুল মারা যাবার পর সবচেয়ে

বেশি কেদেছিলেন মুকুলের বাবা !

এখনো কাদেন ! ছেলের প্রবেশপত্র

বুকে জড়িয়ে ধরে ঠাঁয় বসে থাকেন মুকুলের পড়ার টেবিলটার পাশে আর কাদেন !

যে মুকুল ভেবেছিলো সে না

থাকলেও তার পরিবারের কিছু

যাবে আসবেনা , সেই মুকুলের

পরিবার আজ জীবন্মৃত । বাড়ির

সবচেয়ে চঞ্চল ছেলেটাই তো আজ

নেই ! সারা বাড়ি দুষ্টুমি হাসি

চিৎকার চেচামেচিতে ভরে

থাকেনা আর ! মুকুলদের বাড়ির কেউ

আর হাসেনা ! মুকুলের খাবারের

প্লেটটায় খাবার ওঠেনা ! মুকুলের

মা খালি প্লেটটার দিকে নিঃশব্দে

চেয়ে থাকেন । কখন যে চোখের

পানিতে ওনার গাল ভিজে ওঠে

টেরও পান না উনি ! কেউ

জানেনা এখানে কারো কোনো

দোষ ছিলোনা ! মুকুল শুধু বুঝতে

পারেনি সে তার পরিবারের

কাছে কতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল । অন্য

কেউ এটা স্বপ্নেও ভাবেনি

মুকুলকে এটা বোঝানো উচিৎ ।

মুকুল কাল শিক্ষক হতে পারতো ,

পাইলট হতে পারতো হয়তো বা ,

প্লেনেও চড়তে পারতো ! তার

কিছুই হলোনা ! একটা ছেলে যখন একটু খারাপ রেজাল্ট করল কেউ পাশে থাকেনি তার । সবাই শুধু ধ্বিক্কার ই দিয়েছে । ছোট্ট একটা মনের উপর কতটুকু চাপ পড়তে পারে তা কেউ বুঝতে পারেনি ।



...আজ জে এস সি ২০১৩ এর

রেজাল্ট । প্রতিবছরই পাবলিক পরীক্ষার পরপর কিছু কিছু মুকুলদের এমন করুন পরিণতির শিকার হতে হয় । যারা পরীক্ষা দিয়েছো তাদের

জন্যে বলি তোমার কিছু হলে

তোমার পরিবারের অবস্থা এর

চাইতেও ভয়াবহ হতে পারে তার গ্যারান্টি

আমি নিতে পারি ।ক্ষণিকের আবেগ আর ভূল

বোঝাবুঝিতে এমন কিছু কখনোই

করে ফেলো না । আর যাদের

আপনজনেরা পরীক্ষা দিচ্ছেন ,

তাদের প্রতি একটাই অনুরোধ

বিপদে প্রিয় মানুষটির পাশে

থাকুন । তাকে বোঝার চেষ্টা

করুন , বোঝানোর চেষ্টা করুন । আপনি পাশে থাকলে সে

এবার যা করতে পারলোনা ,

পরের যেকোন সময় তার

দ্বিগুণ করে পুষিয়ে দেবে , এর

গ্যারান্টি আমি নিচ্ছি , শুধু

আপনি তার পাশে থাকুন । আপনজনদের সমর্থনই একজনকে বহুদূর নিয়ে যেতে পারে আর আপনজন যদি পরিত্যাগ করে তাহলে সে পুরো পৃথিবীকেই পরিত্যাগ করতে উদ্যত হয় ।



আমাদের সবার একটাই কামনা

রেজাল্টের দুদিন পর পত্রিকার

পাতায় আর কোন ছোট

ভাইবোনের আত্মহত্যার খবর

যেন আমারদের আর পড়তে না

হয় । প্রতিবছর ই রেজাল্টের পরপরই ভালো রেজাল্ট করায় হাসিমাখা মুখ যেমন খবরের শিরোনাম হয় তেমন ব্যার্থতার গ্লানিমাখা মৃত্যুর খবর ও শিরোনাম হয় । আমাদের একটু সতর্কতা , একটু দেখভাল , একটু ভালবাসা চাইলেই অনেক কিছু রক্ষা করতে পারে । সবাইকে অনুরোধ করে বলতে চাই , শুধু আবেগকে প্রশ্রয় দিয়ে যেকোনো কথা বলে বসবেন না । ছোটদের মন নরম কাদামাটির মত , যেকোন দাগ সহজেই বসে যায় আর তার চিহ্ন ও রেখে যায় । :)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.