নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চতুর

২০ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৩৯

চতুর
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
- হাই.. (অচেনা মেয়েটা)
- জ্বী বলুন। (রিতুল)
- কেমন আছেন?
- জ্বী ভালো।
- কি করেন?
- বসে আছি।
- আচ্ছা আপনি কি কম কথা বলেন?
- কেন এমনটা মনে হলো?
- এইযে শুধু আমিই আপনাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছি, কিন্তু আপনি কোন প্রশ্ন করছেন না।
- ও
- আচ্ছা আপনার বাসা কোথায়?
- টাঙ্গাইল।
- আমারও তো টাঙ্গাইল। টাঙ্গাইলের কোথায়?
- সখিপুর।
- আপনার গ্রামের নাম কি?
- কালিদাস।
- মজা করছেন আমার সাথে?
- মজা করবো কেন?
- আচ্ছা আপনি কি আমাকে চিনেন?
- আশ্চর্য, আমি আপনাকে চিনবো কিভাবে?
- আচ্ছা বাই, পরে কথা হবে।
- হুম।
.
কথা বলা শেষে রিতুল বুঝে উঠতে পারলো না "কি হলো এটা"। মেয়েটার মাথায় কি কোন সমস্যা আছে নাকি? চিনিনা জানিনা, আর কি সব অদ্ভুত কথা বলে গেলো।
রিতুল মেসেজগুলো আবার দেখতে লাগলো। দেখতে দেখতে অনেক্ষণ পর সে এটা বুঝলো, মেয়েটার বাড়িও হয়তো তাদেরই গ্রামে। কিন্তু সে এ বিষয়ে ১০০% সিউর না। সে বিষয়টাকে আরো ক্লিয়ারলি জানতে মেয়েটির প্রোফাইলে গেলো। গিয়ে তো সে অবাক। তার ধারণাই ঠিক, মেয়েটা তাদের গ্রামেরই।
.
রাতে.....
- কেমন আছেন? (মেয়েটা)
- ভালো, আপনি?
- হুম ভালো, কি করেন?
- খেলা দেখি, আপনি?
- বসে আছি, আচ্ছা কি খেলা দেখেন?
- ক্রিকেট।
- ও।
- হুম।
কিছুক্ষণ নিরবতা, তারপর আবার.....
- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে।
- জ্বী করুন।
- আপনি এই নাম দিয়ে আইডি খুলেছেন কেন?
- কি নাম?
- এই যে, ক্যাপ্টেন এবি ডি কোহলি!
- আমার মন চাইছে তাই।
- ও, আচ্ছা আপনার আসল নাম কি?
- রিতুল।
মেসেজটা দেওয়ার পর সিন হলো ঠিকই, কিন্তু রিপ্লে এলো না।
প্রায় ১০ মিনিটের মাথায় রিপ্লে এলো
- অনেক সুন্দর নাম আপনার।
- হয়তো বা।
- আমার নাম জিজ্ঞেস করবেন না?
- হুম, আপনার নাম কি?
- সুমি।
রিতুল মেসেজটি দেখে কিছু সময় একভাবে তাকিয়ে রইলো মোবাইলের স্কিনের দিকে।
সে ভাবছে, আচ্ছা এই সুমিই সেই সুমি নয়তো। যাকে সে প্রতিদিন ফলো করে!
তার কিছু সময়ের ভাবনাতে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে টুং করে মোবাইল টা বেজে উঠলো। সে দেখলো সুমি মেসেজ দিয়েছে। লিখেছে..
- কি হলো , কি ভাবছেন?
- কিছুনা।
.
এভাবেই রিতুল আর সুমির মধ্যে এক প্রকার ভাবের আদান প্রদান হয়। এক সময় দুজনই শিওর হয় যে, রিতুল মেয়েটাকে যেই সুমি ভেবছিলো আসলেও মেয়েটা সেই সুমিই। অর্থ্যাৎ তার পছন্দের মানুষ। আর সুমিও শিওর হয় এটা সেই রিতুল, যে তাকে প্রতিদিন ফলো করে।
আর এ বিষয় টা এতদিন না জানার কারণ হলো, তাদের প্রোফাইলে কারো নিজের ছবি দেওয়া নেই।
এদিকে সুমি সেই কবে থেকেই রিতুলকে পছন্দ করে। কিন্তু সে বলে না, কারণ সে চায় রিতুল তাকে প্রতিদিন ফলো করুক।
আর অন্যদিকে রিতুল তো সুমিকেই পছন্দ করে।
.
ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ফোন নাম্বার আদান প্রদান হয়। চলতে থাকে তাদের ফোনে কথপোকথন।
রাতদিন সব সময়ই তারা ফোন কথা বলে কাটিয়ে দেয়। সকালে একজন ফোন না দিলে আরেকজনের ঘুম ভাঙেনা। একজন না খেলে আরেকজনও খায়না। খুব মধুর সম্পর্ক বিরাজ করেছে তাদের মধ্যে। এক আরেকজনকে ছাড়া যেন চলতেই পারেনা।
.
সেদিন সুমি রিতুলকে বললো
- এই শুনো....
- হ্যাঁ বলো।
- চলো কালকে আমরা দেখা করি।
রিতুল এইদিনেরই অপেক্ষা করছিলো অনেক দিন ধরে। সে খুব দ্রুত উত্তর দিলো
- কোথায় দেখা করবে?
- তুমি আমাদের কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে থাকবে, আমি ওখানেই দেখা করবো। আর আমি কালকে কলেজে না গিয়ে সারাদিন তোমার সাথে ঘুরবো।
- ঠিক আছে।

রিতুলের আনন্দ এখন দেখে কে? সে সাউন্ড বক্স ছেড়ে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে লাগলো। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় সে সেই মুহূর্তে প্যান্ট পড়ে ছিলো।
পরদিন সে খুব পরিপাটি হয়ে দেখা করতে গেলো সুমির সাথে। কলেজ গেটে পৌছানোর পর সুমিকে দেখে তো সে একেবারে ফিদা। এ যেন সাক্ষাত পরীকে দেখছে সে। যদিও সে কখনো বাস্তবে পরীকে দেখেনি। কিন্তু সে ১০০% শিওর দিতে পারবে পরীকেও সুমির এই রুপ হার মানাতে বাধ্য করবে।
.
সারাদিন ঘুরাঘুরি, করিম চাচার দোকানের ফুচকা খাওয়া, লেকের ধারে বসে অনর্গল কথা বলা, মাঝে মাঝে সুমির অদ্ভুত আবদারগুলো পূরণ করা। বেশ ভালোভাবেই কাটলো দিনটা তাদের।
.
ক্রমেই দিন যায়, তাদের সম্পর্কটা আরো মজবুত হতে থাকে। সময় টা এখন তাদের এমন যে, তাদের এখন একে অপরকে ছাড়া পথচলা টা অসম্ভব।
দিন যায় একে অপরের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হতে থাকে। কিন্তু লক্ষণীয় একটা ব্যপার হলো সুমি রিতুলের কাছ থেকে প্রায়শই কিছু না কিছু চায়। রিতুল নিজ ইচ্ছাতে সুমিকে একটা কিছু দিবে, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু সুমির নিজ থেকে কোন কিছু চাওয়া টা রিতুলের কাছে কেমন যেন লাগে।
.
দেখতে দেখতে তাদের সম্পর্কের ৭ মাস পেড়িয়ে গেলো। এতদিনও তাদের সম্পর্কটা বেশ ভালোই ছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক রিতুল লক্ষ করছে সুমি তাকে আর আগের মতো সময় দেয় না। ফোনে বেশি সময় কথা বলে না। আবার অনেক সময় ফোন দিলে ওয়েটিং দেখায়। কারণ জানতে চাইলে সে বলে তার মামাতো বোন কিংবা বান্ধবীদের সাথে কথা বলে। ফেসবুকে মেসেজ দিলে দ্রুত রিপ্লে আসেনা, হ্যাঁ রিপ্লে আসে তবে অনেক্ষণ পর। আর এখন প্রায় সময়ই তাকে ফেসবুকে দেখা যায়।
সুমির এমন পরিবর্তন রিতুলের কাছে কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হয়। সে সুমিকে দেখা করতে বলে, কিন্তু সুমি দেখা করতে রাজি নয়। সে নানান বাহানায় রিতুলকে এড়িয়ে চলে। এর কারণ টা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা রিতুল।
.
সেদিন রিতুল একটা কাজে থানার দিকে যাচ্ছিলো, তার বাইকটা নষ্ট হয়ে যাওয়াতে সে রিক্সাতে করে গ্রামের পথটুকু পাড় হচ্ছিলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে সে সুমিকে একটা ছেলের সাথে বেশ হেসেখেলে কথা বলতে দেখে, হাসতে হাসতে তারা একে অপরের গায়ের সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
রিতুল ফোন বের করে সুমিকে কল দিতেই দেখে সে কল কেটে দিচ্ছে। বারবার কল দেওয়াতে সুমি ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখলো।
ছেলেটা কে, সেটা রিতুল ঠিক ভালোভাবে বুঝতে পারলো না।

আবার আরেকদিন তাদের পাশের রোডের গলিতে বাসের পেছনে সে সুমিকে ঐ ছেলেটিকে চুমু খেতে দেখলো। বেখেয়ালি একটা কুকুরের ডাকে সুমি খুব দ্রুত নিজের ঠোঁটকে সামলে নিলো।
সেদিন রিতুলের বুঝতে বাকি রইলো না যে, সুমি নতুন আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়েছে। সে সেদিন ঐ ছেলেটিকে বেশ কাছে থেকে খেয়াল করেছে। ঐ ছেলেটি তাদের গ্রামেরই মেম্বারের ছেলে।
রিতুলের কাছে এখন একটা বিষয় খুব স্পষ্ট, সুমি তাকে দেখে নয় বরং তার টাকা পয়সা দেখে তাকে ভালোবেসেছিলো।
.
রিতুল বিষয়টা বুঝতে পেরে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সে নিজেকে এখন এই বলে বোঝাচ্ছে, যে তোকে নয় বরং তোর টাকাকে ভালোবাসে তাকে তোর ভালোবাসা টা একেবারেই মানায় না।
চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসছে আর রিতুল মনের সুখে একটা অসম্পূর্ণ কবিতা পাঠ করছে....

তুমি চলে গিয়ে খুব ভালো করেছো, দেখিয়ে দিয়েছো তোমার আসল রুপ।
সময় থাকতে আমি বেঁচে গিয়েছি, না দিয়ে তোমার প্রেমে ডুব।
.
উৎসর্গ: Ritul Hasan Hridoy

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.