নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘৃণিত সে
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
দিনটা ছিলো চৈত্রের ঘাম ঝড়ানো এক সন্ধা। সন্ধা নেমেছে তবুও গরমের ঠান্ডাতে রুপান্তরিত হওয়ার কোন নাম গন্ধও নেই। শুনেছিলাম চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসলে, সূর্যের আলোটা ধীরে ধীরে নিভে গেলে নাকি গরমটা একটু কমে, কিন্তু এ দেখছি তার পুরো উল্টো। প্রচন্ড গরমের মাঝেও হালকা বাতাস বইছে, ঐ দূরে একটা বেখেয়ালী কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে।
সন্ধার এই অকৃত্রিম মনোমুগ্ধকর ঘাম ঝড়ানো পরিবেশটা যেন শ্রাবণের কাছে একটা অপেক্ষাকৃত কোন শুকতারা।
শ্রাবণ আনমনে ঐ দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
কি যেন ভেবে সে হঠাৎই হেসে উঠলো। হয়তোবা নিদারুণ পরিবেশের সঙ্গে তার মন নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, হয়তোবা অন্য কোন কারণে।
শ্রাবণ হেসেছে, হ্যাঁ সে অনেকদিন পর আজ হেসেছে। তবে তার এই হাসির মাঝে আজ কোন কষ্টের ছিটেফোটাও নেই।
কিন্তু আজ থেকে পাঁচ বছর আগের হাসিতে ছিলো অভিনয়, কষ্টকে লুকানোর অভিনয়।
.
ঠিক আজকের মতোই এক সন্ধাবেলা মেয়েটা হঠাৎ শ্রাবণকে ফোন করে তার বাসায় ডাকে। শ্রাবণ বলে সে এখন যেতে পারবেনা কিন্তু মেয়েটা বললো তোমাকে আসতেই হবে। আমার বাবা মা তোমাকে ডেকেছে।
-
শ্রাবণ নিরুপায় হয়ে তার পছন্দের লাল পাঞ্জাবিটা পরে মেয়েটার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। তার মনে নানান চিন্তা ভাবনা উকি দিচ্ছে। এই অসময়ে আবার সোমার কি হলো, আর ওর বাবা মা-ই বা কেন তাকে ডাকলো? এ প্রশ্নের উত্তর তার অজানা।
তার কাছে একটা বিষয় খুব অদ্ভুত, আর সেটা হলো "ডাকবে যখন দিনের বেলা ডাকবে, এই সন্ধাবেলা ডাকলো কেন"। সোমার মনে কোন দুষ্টু বুদ্ধি উকি দেয়নি তো?
.
সোমাদের বাড়ির গেটে এসে শ্রাবণ সোমাকে কল দিলো, কল দেওয়ার সাথে সাথেই সোমা কল রিসিভ করে বললো
- আর কতক্ষণ লাগবে তোমার?
- চলে এসেছি, তবে আজ কেন জানি তোমাদের বাড়িতে ঢুকতে ভয় লাগছে।
- ভয় লাগবে কেন? চলে এসো।
- তুমি একটু নিচে এসো।
- ওকে দাঁড়াও, আসতেছি।
.
কিছুক্ষণ পর সোমা নিচে এসে শ্রাবণকে তার বাসাতে নিয়ে গেলো। তার বাসাতে যাওয়ার পর শ্রাবণ যা দেখলো তা সে আগে থেকেই কল্পনা করেছিল।
কারণ তার বাসাতে আজ কেউ নেই। তার বাবা মা সবাই বাইরে গেছেন। বাসাতে এখন সে শুধু একা। কিছু একটা হতে চলেছে সেটা শ্রাবণ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
.
সোমার চোখ দুটো নেশায় পরিপূর্ণ, সে আজ শ্রাবণকে খুব কাছে পেতে চায়। সে শ্রাবণকে তার দিকে বারবার আহ্বান করছে। কিন্তু শ্রাবণের মধ্যে কেমন যেন একটা বাধা কাজ করছে। সে কখনো কোন মেয়ের সাথে একাকি কোন বদ্ধ ঘরে সময় কাটায় নি। সোমার সাথে এক বছরের রিলেশনে সে সোমাকে কখনো স্পর্শ অব্দি করেনি। কিন্তু আজ তার সাথে সে একান্ত ভাবে মিলিত হতে যাচ্ছে সে, এটা ভেবে সে নিজেই অবাক হচ্ছে।
সোমা তার ওড়না টা সরিয়ে নিলো নিজের শরীর থেকে। সে নানান ভাবে শ্রাবণকে তার কাছে টানছে। শ্রাবণের মধ্যে কোন রেসপন্স না দেখতে পেয়ে সে নিজেই শ্রাবণকে টেনে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।
কিছু সময় যেতে না যেতেই সে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে কয়েকটি ছেলে বেরিয়ে এলো।
তারপর যা হবার তা ইতিহাস, কিন্তু এই ইতিহাস কোন বইতে লেখা হয়নি।
.
রক্তাক্ত হয়ে শ্রাবণ বাসায় ফিরলে তার ফোনে একটা মেসেজ আসে। সে নিজেকে ফ্রেশ করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে মেসেজ টা পড়তে শুরু করে....
তোর মনে আছে যখন আমি তোর পিছে ঘুরঘুর করতাম, তখন তুই আমাকে কোন পাত্তাই দিতিনা। এ নিয়ে আমার বন্ধুরা আমাকে বেশ ক্ষেপাতো। বলতো, দেখ তোর মতো একটা কিউট মেয়েকে ঐ ছেলেটা পাত্তাই দেয়না।
ছয়টি মাস তোর পিছে ঘুরছিলাম। যেদিন তুই আমাকে কলেজের সবার সামনে চড় মেরেছিলি, সেদিনই আমি শপথ করেছিলাম এর যথোপযুক্ত প্রতিশোধ আমি নিবোই।
এখন বলতো, কেমন নিলাম প্রতিশোধটা?
এই ঘটনাটা মনে পড়তেই শ্রাবণ হেসে উঠলো, সে তখন কত না বোকা ছিলো।
.
হঠাৎ প্রাপ্তির ডাকে শ্রাবণের ভাবনাতে ছেদ পড়লো।
- আব্বু আব্বু, আম্মু তোমাকে ডাকে।
সে তার মেয়েকে নিয়ে রুমে গেলো, গিয়ে তো সে অবাক। মৌটুসি তার জন্য আজ তার সবচেয়ে পছন্দের খাবার গুলো রান্না করেছে।
শ্রাবণ আজ নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে করে এই ভেবে যে, সে সোমার মতো মেয়ের জীবনে দ্বিতীয় বার নিজেকে জড়ায়নি। আর মৌটুসির মতো একটা সুন্দর মনের মানুষকে সে তার জীবন সঙ্গীনি হিসেবে পেয়েছে।
©somewhere in net ltd.