নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২১

অপেক্ষা
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
মেয়েটাকে যেদিন প্রথম দেখে মেহেদী, সেদিন থেকেই সে মেয়েটাকে নিয়ে নানান কল্পনা, জল্পনা আকতে শুরু করে। মেয়েটার রুপের বর্ণনা দিতে গেলে পুরোপুরিভাবে দিতে পারবোনা। কারণ মেয়েটার রুপের যত বর্ণনাই করা হোক না কেন। তবুও কিছু না কিছু বাদ পড়ে যাবে। তবে ছোট্ট শুধু এটুকু বলাই যায় যে, মেয়েটা যেমন রুপবতী তেমনি রাগী।
.
মেহেদী মনে মনে ভাবে, এই মেয়েকে তার জীবনসঙ্গীনি হিসেবে পেতেই হবে। সেটা যেমন করেই হোক।
মেহেদী মেয়েটাকে ফলো করতে শুরু করতে শুরু। সে মেয়েটিকে তার কলেজ পর্যন্ত ফলো করতে গিয়ে দেখে মেয়েটি তাদের কলেজেই পড়ে এবং একই বর্ষে, একই ক্লাসে।
সেদিন কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় মেহেদী পেছন থেকে মেয়েটিকে ডাক দেয়।
- এইযে ম্যাম।
মেয়েটি পেছনে ঘুরে বলে
- আমাকে বলছেন?
- জ্বী তোমাকেই বলছি।
- বলুন।
- তোমার নাম কি?
- কেন?
- আহা, আমরা তো একই ক্লাসে পড়ি। তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু পরিচিতি হওয়া যাক।
- আমি রিতু।
- বাহ, বেশ সুন্দর নাম। আমি মেহেদী।
- আর কিছু বলবেন?
- না মানে, না মানে হ্যাঁ।
- বলুন।
- বলবো?
- যা বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।
- আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
রিতু এবার কিছু মুহূর্ত ভেবে উত্তর দিলো
- শুধু বন্ধু হতে পারি। কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু না।
- ঠিক আছে। তবে একটা কথা।
- কি?
- তাহলে তুই করে বলতে হবে কিন্তু।
মেহেদীর এমন কথা শুনে রিতু একটা হাসি দিয়ে বললো
- ঠিক আছে।
রিতুর ভুবন ভোলানো হাসিতে মেহেদী পাগল প্রায়। সেও একটা মুচকি হাসি দিলো।
মেহেদী ভাবতেও পারেনি মেয়েটির সাথে তার এত সহজে এবং এত দ্রুত বন্ধুত্ব হয়ে যাবে।
.
বাসায় এসে মেহেদী শুধু রিতুর ভাবনাতেই মগ্ন। খেতে বসলে সে রিতুকে নিয়ে ভাবে, পড়তে বসলে সে রিতুকে নিয়ে ভাবে। যেকোন কাজ করতে গেলেই সে রিতুর ভাবনাতে বিভোর হয়ে থাকে।
বিছানায় শুয়ে মেহেদী এপাশ ওপাশ করছে। কিছুতেই তার চোখে ঘুম আসছেনা। রিতুর ঐ মায়াবী মুখের হাসিটা তার চোখের সব ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ঘুমাতে গেলেও রিতুর কথা ভেবে সে ঘুমাতে পারেনা।
ভোর বেলা যদিও একটু ঘুম এসেছিলো। সেটাও ভেঙে গেলো তার মায়ের ডাকে।
- মেহেদী, ঐ মেহেদী। ওঠ ওঠ, কালকে না বললি যে, আজকে একটু তাড়াতাড়ি ডেকে দিতে!
- যাও তো মা, একটু ঘুমাতে দাও।
- এখন ডাকতেছি, উঠছিস না। পরে তো আবার বলবি, আমি তোকে কেন ডাক দিলাম না।
- বলবোনা যাও তো এখন, একটু ঘুমাতে দাও আমাকে।
- তোর কলেজে নাকি কি কাজ আছে আজকে। কালকে রাতে বললি আজ সকাল সকাল যেন তোকে ডেকে দিই!
কলেজের কথা শুনতেই মেহেদী লাফিয়ে ওঠে ঘুম থেকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯ টা বাজে।
- মা তুমি এই ৯ টার সময় ডাক দিলা?
- তোকে সেই সকাল থেকে ডাকছি, তবুও তুই উঠছিস না।
- আচ্ছা যাও তাড়াতাড়ি নাস্তা তৈরি করো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
খাবার টেবিলে বসে একটু খেয়েই মেহেদী উঠে গেলো।
- কিরে উঠে যাচ্ছিস কেন?
- মা দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
- খাবারটুকু শেষ করে যা।
- তুমি খেয়ে নাও। আমি এসে খাবো।
মেহেদী ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। আজকে একটু তাড়াতাড়ি কলেজে যাবে সে। আর আজকেই সবচেয়ে দেরি হয়ে গেলো।
আরে এ কি! আজ একটা রিক্সাও নেই রাস্তায়।
রাস্তার এপাশ ওপাশ চোখ বুলিয়ে দেখে মেহেদী। কোথাও কোন রিক্সা নেই। রিক্সা না পেয়ে সে ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে কলেজের দিকে। হেঁটে গেলে প্রায় আধা ঘন্টা সময় লাগবে।
.
কিছুদুর হেঁটে যেতেই কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠলো "কে মেহেদী না?"
মেহেদী পেছনে তাকিয়ে দেখে রিতু একটা রিক্সায় বসে আছে।
- উঠে আয়।
মেহেদী ভাবছে উঠবে কি উঠবেনা। আসলে এর আগে কখনো সে কোন মেয়ের সাথে এক রিক্সায় চড়েনি।
- কিরে কি হলো, কি ভাবছিস? উঠে আয়।
সে আর কিছু না ভেবে উঠে পড়লো রিক্সায়। সে রিক্সাতে এক পাশে কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে। তাই দেখে রিতু হাসতে হাসতে শেষ।
- কিরে এভাবে বসেছিস কেন? একটু ভালোভাবে বস।
রিতুর হাসি মাখানো এমন কথা শুনে মেহেদী একটু নড়েচড়ে বসলো।
রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে। আর মেহেদী ভাবছে "যাক আজ দেরি করে ঘুম থেকে উঠে ভালোই হলো।" এভাবে যে একই রিক্সাতে রিতুর পাশাপাশি বসে কলেজে যাবে এটা মেহেদী কখনো কল্পনাতেও ভাবেনি।
.
কলেজ ফাঁকি দিয়ে একসাথে ঘুরে বেড়ানো, ফুচকা খাওয়া, ক্যাম্পাসের এক কোণে বসে বাদাম চিবানো, বেশ ভালোই কাটতে লাগলো তাদের দিন।
এখন রিতু মেহেদীকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা। আবার মেহেদীরও একই অবস্থা। একজন আরেকজনকে ছাড়া যেন অচল, এমন।
প্রতিদিন রিতু মেহেদীকে তার বাসার নিচ থেকে নিয়ে একসাথে কলেজ যায়। এটা যেন রিতুর প্রতিদিনের একটা রুটিন হয়ে গিয়েছে। যেদিন মেহেদীর বাসা থেকে বের হতে একটু দেরি হয়, সেদিন সে সোজা মেহেদীর বাসায় চলে যায়। এতে মেহেদীর বাবা মায়ের সাথে রিতুর বেশ ভাব জমে গেছে।
.
এদিকে মেহেদী রিতুকে সেই প্রথম থেকেই ভালোবাসে। কিন্তু বলতে পারেনা। কারণ রিতু তার সাথে বন্ধুত্ব করার সময় বলেছিলো, সে যেন বন্ধুত্বের থেকে বেশি কিছু আশা না করে তার থেকে।
সামনে তাদের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। রিতু মেহেদীকে ফোন দিয়ে বলে তার কিছু টাকা লাগবে। সে এও বলে যে, তার বাবা তাকে যে টাকা দিয়েছিলো সেটা একজনকে উপকার করতে গিয়ে খরচ হয়ে গেছে।
রিতুর এমন কথায় মেহেদী বেশ রেগে যায়। সে বলে, তোকে বলতে বলেছি যে তোর টাকা কাকে দিয়েছিস কি না দিয়েছিস? আমার থেকে চেয়েছিস, সময়মতো পেয়ে যাবি।
.
এবার ইয়ার চেন্জ পরীক্ষা শেষ হলে তাদের বন্ধুত্বের এক বছর পূর্ণ হবে। মেহেদী এটা ভাবতেই নিজেকে বড় গাধা একটা ভাবছে। কারণ সে এই এক বছরেও রিতুকে তার মনের কথা জানাতে পারেনি। সে মনে মনে ভাবছে পরীক্ষাটা শেষ হলেই রিতুকে তার মনের কথা বলে দিবে। তারপরে যা হবার হবে।
.
- ঐ মেহেদী।
- কি।
- কালকে তো পরীক্ষা।
- তো?
- আমি তো কিছুই পড়িনি। তুই কিন্ত সাহায্য করবি আমায়। তুই তো খুব ভালো ছাত্র।
- টেনশন নিস না। আমি থাকতে তোর পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে হবেনা।
- অনেক রাত হয়ে গেছেরে, এখন ফোন রাখি।
- রিতু শোন।
- কি? বল।
- না কিছুনা। পরীক্ষার পরে বলবো।
- না এখনই বল।
- না থাক পরীক্ষার পরেই বলবো।
- কি বলবি বলে ফেল। না হলে আমার মধ্যে তোর কথাটা শোনার জন্য কৌতুহল থেকে যাবে।
- থাকুক না। অপেক্ষা কর, সময় হলেই বলবো।
- আচ্ছা।
রিতু ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো। মেহেদী ভাবছে আজ বলে দিলেই ভালো হতো। রিতুকে আজ কেমন যেন উৎফুল্ল লাগছিলো। ভাবতে ভাবতেই সে রিতুকে একটা মেসেজ দিলো "তোকে বড্ড ভালোবাসিরে" লিখে।
খানিক পর রিতু কল ব্যাক করলো। রিতুর কল আসা দেখে মেহেদীর হাটু কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। সে ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলো। রিসিভ করতেই
- আমিও তোকে ভালোবাসি।
রিতুর মুখে এমন কথা শুনে মেহেদী মনে মনে ভাবছে আজ প্যান্ট খুলে লুঙ্গি পড়ে লুঙ্গি ড্যান্স দিবো। কিন্তু পরক্ষণেই রিতুর পরবর্তী কথাটা শুনে সে মদন হয়ে গেলো। রিতু বললো
- ভালোবাসি, তবে সেটা বন্ধু হিসেবে।
.
পরদিন সকাল বেলা....
- ঐ কে রে আমার শরীরের উপরে পানি দিলো? (মেহেদী)
- তোর জম। (রিতু)
- কি?
- উঠ ঘুম থেকে, ওদিকে পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে আর এদিকে মহারাজ মনপ্রাণ খুলে ঘুমুচ্ছে।
বলেই রিতু মেহেদীর শরীরে থাকা কাথাটা টান দিতে গেলো।
- ঐ কি করছিস, করছিস কি তুই?
- কেন কি হয়েছে?
- আমার শরীরে কাপড় নেই, লুঙ্গিটাও আমার সাথে নেই।
- কি??
- হ্যাঁ।
- আচ্ছা আমি লুঙ্গি নিয়ে আসছি অপেক্ষা কর।
রিতু লুঙ্গি আনতে গেলো। মেহেদী ভাবছে, কি মেয়েরে বাবা!
- এই নে, এটা পড়ে নে।
- তুই রুম থেকে বের হ।
- আমি বের হবো কেন?
- আমার মান ইজ্জতের বারোটা বাজাবি নাকি?
- ওকে দ্রুত কর।
.
দুজনে একই রিক্সায় করে কলেজে যাচ্ছে। মেহেদী রিতুর হাতটা ধরার জন্য তার হাতটা বারবার রিতুর দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা দেখে রিতু হাসতে হাসতে শেষ।
- কিরে আমার হাতে হাত রাখবি?
- না তো!
- রাখবিনা?
- না মানে হ্যাঁ রাখবো।
- তাহলে রাখছিস না কেন?
- যদি তুই কিছু মনে করিস সেজন্য।
হাতে হাত রেখে মেহেদী রিতুকে বললো
- একটা কথা বলবো তোকে।
- বল।
- ভালোবাসি তোকে।
- আমিও।
- মজা নিস না সিরিয়াসলি বলছি।
রিতু এবার আর কোন কথা বললো না। মেহেদী রিতুর নিরবতা দেখে বললো "আমি অপেক্ষা করবো তোর জন্য ততদিন, যতদিন না তুই আমাকে ভালোবাসছিস"।
.
পরীক্ষার হলে মেহেদী নিজের কথা না ভেবে রিতুকে সবদিক দিয়ে সাহায্য করে।
সে পরীক্ষার হলেও মাঝে মাঝে রিতুকে "ভালোবাসি" বলে। কিন্তু রিতু কোন রেসপন্সই করেনা তাকে।
দেখতে দেখতে তাদের পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেলো। কলেজ ছুটি দিয়েছে কিছুদিন। এখন আর প্রতিদিন কেউ মেহেদীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়না। প্রতিদিন আর কেউ কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়িতে এসে হামলা চালায়না।
দুদিন পার হয়ে গেছে। রিতুর সাথে মেহেদীর কোন যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ নেই বলতে সরাসরি সাক্ষাৎ নেই। তবে ফোনে কথা চলে রাতদিন।
সেদিন ফোনে কথা বলার সময় মেহেদী রিতুকে বললো
- আচ্ছা তুই কি সত্যিই আমাকে বন্ধুর থেকে বেশি কিছু ভাবিস না?
- না। কেন?
- তাহলে এইযে রাতদিন আমার সাথে ফোনে কথা বলিস কেন?
- আমার মন চাই, তাই বলি। তোর কোন সমস্যা?
- না, আমার কোন সমস্যা নেই। তবে জানিস আমি তোকে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু ভাবি। তোকে ভালোবাসিরে আমি। তোকে আমি আমার বউ করে পেতে চাই।
- মাথা ঠিক আছে তোর? উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছিস নাকি?
- দেখ আমি সত্যি সত্যিই তোকে ভালোবাসি।
- কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসিনা। ফোন রাখ।
বলেই রিতু ফোন কেটে দিলো। রিতু বেশ রেগে গেছে মেহেদীর কথাতে। সবসময় মেহেদীর এমন কথাবার্তা তার ভালো লাগেনা।
.
মেহেদী কল ব্যাক দিতে গিয়ে দেখে নাম্বার বন্ধ।
"আসলেও কি রিতু তাকে ভালোবাসেনা? নাকি সেও ভালোবাসে, কিন্তু প্রকাশ করেনা" এরকম বিভিন্ন চিন্তা চেতনা মেহেদীর মনে বাসা বাধে। সে এসবের উত্তর খুজে পায়না।
.
কয়েকদিন হয়ে গেলো রিতু আর মেহেদীকে ফোন দেয়না। মেহেদী ফোন দিলেও সে রিসিভ করেনা। এতে মেহেদীর বেশ খারাপ লাগে।
সে কোন কিছু না ভেবেই রিতুর বাসাতে চলে যায়।
সেখানে গিয়ে দেখে রিতুর ভীষণ জ্বর। রিতুর বাবা অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় রিতুর সেবা নেওয়ার মতো কেউ নেই। তার বাবা ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষুধ এনে দিয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সেবার অভাবে রিতুর অবস্থা বেশ করুণ।
মেহেদী রিতুর বাবাকে বলে রিতুর সেবা করতে লাগলো।
ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে বেশ মায়াবী লাগছে। মাথায় হাত দিয়ে দেখে এখনো প্রচন্ড জ্বর। ধীরে ধীরে মেহেদীর সেবায় রিতু সুস্থ হয়ে ওঠে।
রিতু সুস্থ হলে মেহেদী তাকে বলে
- তোর অসুস্থতার কথা আমাকে জানাসনি কেন?
- মন চায়নি, তাই জানাই নি।
- তুই জানিস না আমি তোকে ভালোবাসি। তোর কিছু হলে যে আমি ঠিক থাকতে পারিনা।
- কিন্ত যে আমি তোকে ভালোবাসিনা।
- কেন ভালোবাসিস না আমাকে?
- তোকে বলেছিলাম না, আমি তোকে বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারবোনা।
- রিতু বিশ্বাস কর আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবোনারে। আমি তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।
- আচ্ছা তুই কি আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ভালোবাসার কথা বলছিস?
- না তো।
- শোন আমরা বন্ধু আছি, বন্ধুই থাকবো। আর যদি তুই আমাকে জোড় করিস তাহলে শোন আমি তোর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে বাধ্য হবো।
রিতুর মুখে বন্ধুত্ব ভাঙার কথা শুনে মেহেদী চলে আসে রিতুদের বাসা থেকে।
সে বাসায় এসে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নেয়।
তাকে দেখতে কি খারাপ দেখা যায়? না তো খারাপ তো দেখা যায়না, তবে রিতু তাহলে তাকে বারবার ফিরিয়ে দেয় কেন?
.
রিতু এখনো মেহেদীর সাথে ঠিক আগের মতোই কথা বলে। কিন্তু বন্ধু হিসেবে।
মেহেদী এখন আর আগের সেই মেহেদী নেই। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। নিজের প্রতি সে আর তেমন খেয়াল রাখেনা।
খেয়াল রাখবেই বা কেন? যার জন্য নিজের যত্ন করবে সেই যদি তার না হয়। তবে কার জন্য সে নিজের যত্ন নিবে?
রাতে রুমে বসে বসে মেহেদী সিগারেট ফুঁকছে। হঠাৎ সেসময় রিতু তাকে ফোন দিলো।
- দোস্ত কালকে একটু আমার সাথে এক জায়গা যেতে পারবি?
সিগারেটের ধোঁয়া মেহেদীর সহ্য হয়না। এর আগে সে কখনো এসব ছায়পাস হাতেও করেনি। সিগারেটে একটা টান দিয়ে কাঁশতে কাঁশতে সে বললো
- কোথায় যেতে হবে?
মেহেদীকে এরকম কাঁশতে দেখে রিতু বললো
- কিরে তোর কি হয়েছে? এরকম কাঁশছিস কেন?
- কই কিছু হয়নি তো।
- মিথ্যে বলিস কেন? তোর কন্ঠটাও কেমন যেন ভারি ভারি লাগছে।
- আরে না কিছুই হয়নি। বল কোথায় যেতে হবে?
- কালকে বসুন্ধরাতে আমার সাথে দেখা করবি।
- আচ্ছা।
.
ফোন কেটে দিয়ে মেহেদী আবার মনের সুখে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। রিতুর বলা "ভালোবাসিনা" কথাটা শোনা যতটা বেদনাদায়ক। তার কাছে এই সিগারেটটা কিছুই না।
অন্যদিকে রিতুও মেহেদীকে ভালোবাসে। কিন্তু সে মেহেদীকে সেটা বলেনা। কারণ তার মেহেদীর ঐ আবেগ মাখানো মুখে "ভালোবাসি" কথাটা শুনতে ভালো লাগে। সে চায় মেহেদী তাকে বারবার "ভালোবাসি" বলুক।
সে মনে মনে ভাবে সে যতবার মেহেদীকে ফিরিয়ে দেবে, ততবারই মেহেদী তাকে ভালোবাসার কথা বলবে। কিন্তু তার ধারণাটা ভুল ছিলো।
মেহেদী সেদিনের পর থেকে আর কখনো রিতুকে তার ভালোবাসার কথা বলেনি। যেদিন রিতু তাকে বলেছিলো "যদি আমাকে ভালোবাসতে বেশি জোড় করিস, তবে আমি তোর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে বাধ্য হবো।"
.
পরদিন মেহেদী ঠিক সময়মতো বসুন্ধরাতে চলে যায়। গিয়ে দেখে রিতু তার জন্য অপেক্ষা করছে।
- কেমন অাছিস রিতু?
- এইতো খুব ভালো আছি।
বলেই রিতু মেহেদীর দিকে তাকিয়ে খানিকটা অবাক হয়ে যায়।
- কিরে তোর এই হাল কেমনে হলো?
- কই, কেমন হাল?
- কেমন যেন শুকিয়ে গেছিস আগের থেকে, রাতে ঘুমাস না বোধ হয়।
রিতুর কথা শুনে মেহেদী মনে মনে ভাবছে "তুই এতো কিছু বুঝিস, কিন্তু এটা বুঝিস না কেন যে তোর ভালোবাসার অভাবেই আমার এই অবস্থা।"
মেহেদীর এই অবস্থা দেখে রিতু তার পরিকল্পনা বদলে ফেললো। আসলে রিতু চেয়েছিলো মার্কেটে যখন তার খালাতো ভাইয়ের সাথে সে দেখা করবে। তখন সে মেহেদীকে বলবে "দেখ এটা আমার বয়ফ্রেন্ড, তার খালাতো ভাইকে দেখিয়ে।"
কিন্তু সে মেহেদীর এমন হাল দেখে তার সাথে মজা করার বুদ্ধিটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো।
তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মেহেদীকে এমন অবস্থায় দেখে।
- মেহেদী তুই কি আমার উপর রেগে আছিস?
এবার মেহেদী পকেট থেকে সিগারেটটা বের করে মুখে দিতে দিতে বললো
- তোর উপর রেগে থাকবো কেন?
মেহেদীকে সিগারেট খেতে দেখে রিতু তার মুখ থেকে সিগারেটটা টান দিয়ে ফেলে দিয়ে তার গালে কষে একটা চড় মারলো।
- কিরে মারলি কেন?
- আমার মন চাইছে তাই মেরেছি। তোর সমস্যা?
- হ্যাঁ আমার সমস্যা।
- কিসের সমস্যা?
- যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।
- খুব ভালোবাসিস আমাকে?
- নাহ, একটুও না।
- সত্যি বলছিস?
- মিথ্যে কেন বলবো?
- আচ্ছা থাক তাহলে আমি আসি।
রিতু সামনের দিকে পা বাড়াতেই মেহেদী তাকে একটান দিয়ে তার বুকের মধ্যে নিয়ে নিলো।
- কোথায় যাচ্ছিস? (মেহেদী)
- যে আমাকে ভালোবাসেনা, তার কাছে থেকে দূরে চলে যাচ্ছি।
- যখন তুই আমাকে ফিরিয়ে দিতি তখন আমার কেমন লাগতো, এবার বুঝেছিস সেটা?
- হুম।
- একবার ভালোবাসি বল।
- বলবোনা।
- না বললে এইযে ছেড়ে দিলাম।
বলেই মেহেদী রিতুকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
রিতু এবার অগ্নি দৃষ্টিতে মেহেদীর দিকে চেয়ে বললো
- আমাকে নিজের থেক ছাড়িয়ে নিলি কেন?
- তুই যেহেতু আমাকে ভালোবাসিস না, সেহেতু কেন তোকে আমার বুকে স্থান দিবো?
- কে বলেছে আমি তোকে ভালোবাসিনা?
- তুই-ই তো বললি।
- আরে গাধা আমি এমনিতেই বলেছি।
বলেই রিতু মেহেদীর বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।
- আমিও ভালোবাসি তোকে।
- তাহলে এতোদিন কষ্ট দিলি কেন আমাকে।
- তোকে কষ্ট দিতে আমার কেমন যেন ভালো লাগে।
- তাই, না?
বলেই মেহেদী রিতুকে আরো শক্ত করে তার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কানে কানে ফিস ফিস করে বললো "পেয়েছি তোমারে অনেক অপেক্ষার পরে, নিজেকে দিয়ে বেদনা।
বেসেছি ভালো গভীরভাবে তোমায়, দিবোনা হারাতে দিবোনা।
অপেক্ষার পালা শেষ হলো আজ বহু সাধনার পরে।
আগলে রাখবো এভাবেই তোমাকে, এই জীবনের তরে।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.