নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুপবতী

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪৫

রুপবতী
পর্ব-৬
.
সোমা বুঝুক, কারো সাথে মজা করে তাকে কষ্ট দেওয়ার ফলটা কেমন হয়! আমি রুমে বসে আছি। আমার হাসি পাচ্ছে খুব। সোমার মুখের ভাবমূর্তিটা দারুণ ছিলো। একেবারে কাঁদো কাঁদো, তার উপর আবার ক্ষমা চাওয়ার প্রবল আকাঙ্খা।
আহা, শুধু কি মেয়েরাই ছেলেদের কষ্ট দিতে পারে? আর আমরা কি পারিনা নাকি? আমরাও পারি। সোমার চেহারা সুন্দর, এটা মানতে হবে। তবে সে যে আমাকে কষ্ট দেবে, আর সেখানে আমি চুপচাপ থাকবো সেটা তো মানায় না।
যখন কষ্ট টা পেয়ে সে চুপ হয়ে যাবে, তখন তার মুখে হাসির রেখা ফোটাতে তাকে প্রপোজ করবো।
আমিও যে সোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তার সাথে একটু মজা করার জন্য মনটা বারবার ডেকে উঠছিলো।
রুমে শুয়ে মোবাইলে ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানের এটাকে আছি। ঠিক সেই সময় দরজায় কেউ নক করলো। ওয়্যারের এ্যাটাক চলছে, এটা হারলে এবারের গেমটা হেরে যাবো। তাই দরজা না খুলেই চুপচাপ গেম খেলে যাচ্ছি। আবারও টোকা পড়লো দরজায়। এদিকে এ্যাটাকও শেষের দিকে। আমি মনে মনে ভাবছি হয়তো মমো কিংবা মিম দরজায় টোকা দিচ্ছে। তাই একটা প্ল্যান করে রাখলাম। যেই রুমে আসুক না কেন, শুধু একা আসলেই হয়। তারেও আচ্ছামতো নিবো কিছুক্ষণ।
উঠে গিয়ে রুমের দরজা খুলে দিতেই কেউ একজন এসে আমার বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। রুমে অল্প আলোর লাইট জ্বালানো। আমি বুঝতে পারলাম এটা সোমা। মেয়েটা এখনো কাঁদছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। ফোপানোর কারণে কথাটাও বলতে পারছেনা। আমি এখনো তাকে জড়িয়ে ধরিনি। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, এসব কি সোমা? সে মাথা নিচু করে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো, আমাকে কি মাফ করা যায়না একটিবার। বিশ্বাস করো নিরব, আমিও তোমাকে খুব পছন্দ করি এবং ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা। তুমি এখান থেকে চলে যাওয়ার পর নিজেকে খুব একা একা লেগেছে আমার। নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছিলো তখন। তুমি আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ। আর তোমাকে একটিবার ভালোবাসার সুযোগ করে দাও। আমি কথা দিলাম, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো, তোমায় ভালোবাসবো।
আমি তার কথা শুনে হাসবো? নাকি তাকে ভালোবাসতে সাহায্য করবো। আমি সিউর এটাও কোন অভিনয় হবে হয়তো। আর যাই হোক, মেয়েরা কিছু পারুক বা না পারুক। অভিনয়টা খুব গোছালো ভাবে করতে পারে। তাদের চোখের পানিটাও অভিনয়ের একটা অংশ। অংশ বললে ভুল হবে। এটাই তাদের প্রধান অস্ত্র। এটা দিয়ে তারা ছেলেদের ধ্বংস করে ফেলে। তবে এই মুহূর্তে সোমাকে দেখে তেমনটা মনে হচ্ছেনা আমার। হয়তো সে সত্যি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে।
সে আমাকে অনেক আকুতি মিনতি করছে ভালোবাসার জন্য। একটা কথা আছেনা যে, কোন মেয়ে যদি কোন ছেলেকে প্রপোজ করে। তবে সেই ছেলে কখনো সেই মেয়েটাকে ফিরিয়ে দেয়না, তার যদি হাজারটা গার্লফ্রেন্ড থাকে তবুও না। আর এখানে তো আমার কোন গার্লফ্রেন্ডই নেই। সো, আমি ফিরিয়ে দেই কি করে?
হাত দুটো তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। সে দৌড়ে এসে আবারও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আহ! মেয়েরা জড়িয়ে ধরলে তো দারুণ একটা ফিলিংস আসে!
এবার আমিও তাকে আমার বাহুডরে আবদ্ধ করলাম। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে আবার বললো, আমাকে মাফ করে দাও নিরব। সেদিনের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।
আমি তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, মাফ না করলে কি এভাবে জড়িয়ে ধরতে দিতাম? না আমি জড়িয়ে ধরতাম?
সে একবার মুখটা উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে আবার আমার বুকে মুখ লুকালো।
আমি তাকে বললাম, আজকেও কি তোমার থাকার জায়গা নেই? সে বললো, হু আছে। কেন?
আমি বললাম, না এমনিই। হয়তো সে আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরেছে, তাই সে বললো 'আমার থাকার জায়গা আছে তো কি হয়েছে? আমি আজ তোমার সাথেই থাকবো। কি? নিবেনা আমাকে তোমার সাথে?'
আমি একটু দম নিয়ে বললাম, হুম নিবো। তবে একটা শর্তে। সে এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। ওভাবেই সে আমাকে বললো, কি শর্ত? আমি একগাল হেসে বললাম, সারারাত এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে নিবো।
আমার কথাতে সে লজ্জা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, যা দুষ্টু।
সে বিছানা ঠিক করতে লাগলো। আর আমি তাকে অপলক চেয়ে রইলাম।
.
দেখতে দেখতে বিয়ের দিনও চলে এলো। পরশুদিন বিয়ে। এ কয়েকটা দিন সোমার সাথে এতো বেশি সময় কাটিয়েছি যে, তা বলার বাইরে। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি যে, সোমা আমাকে এতোটা ভালোবাসে। তবে আমার মনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, সে তো অতীব সুন্দরী। তবে সে কেন তার থেকে কম সুন্দর ছেলেকে ভালোবাসবে? এই প্রশ্নটা আমি মমোকে বললে সে উত্তর দেয়, তুইও তো যথেষ্ট হ্যান্ডসাম একটা ছেলে। আর এমন হ্যান্ডসাম হওয়া স্বত্ত্বেও এতো ভাব ধরিস কেন? তুই কি জানিস, কলেজের বেশিরভাগ মেয়েই তো জন্য পাগল। ফার্স্ট ইয়ার থেকে শুরু করে ফোর্থ ইয়ার পর্যন্ত যত মেয়ে আছে, সবাই তোকে পছন্দ করে। আর তুই মোটেও খারাপ না দেখতে। ওকে?
আমি মনে মনে বললাম, সে বলতে হবেনা। আমি সেটা জানি যে, আমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দর।
বিয়ের আগের রাতে একটু ক্লান্ত হয়ে পড়ি আমি। কারণ, বিয়ের যাবতীয় কাজ সবকিছুই আমাকে একা সামলাতে হয়। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ছাঁদে বসে আছি। আজকে জ্যোৎস্না উঠেছে আকাশে, সাথে ছোট্ট ছোট্ট তারাগুলোও। কালকে মিমের বিয়ে। কালকের দিনটা চলে গেলেই আমি হয়তো সোমার সাথে আর এতোটা কাছে থেকে সময় কাটাতে পারবোনা। এ কয়টা দিনে আমি সোমাকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছি।
পেছন থেকে কেউ একজন এসে আমার পাশে বসলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম সোমা। সে আমার কাধে মাথা রেখে দূর আকাশের চাঁদ তারাগুলো দেখতে লাগলো। আমিও চুপচাপ ঐ দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে কোন কথা বলতে না দেখে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কি? হ্যান্ডসাম বয়ের মন খারাপ নাকি? আমি বললাম, না মন খারাপ থাকবে কেন?
- তাহলে এমন চুপচাপ কেন?
- এমনিই।
- শরীরটা ক্লান্ত?
- ছিলো একটু। তবে তুমি এভাবে পাশে বসে আমার কাধে মাথা রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ক্লান্তি কেটে যাবে।
- শুধুই কি পাশে বসে কাধে মাথা রাখলেই হবে? অন্যকিছু করলে হবেনা?
- অন্যকিছু?
- হুম।
- কি?
- তোমাকে বলবো কেন?
- না বললে থাক, বলতে হবেনা।
আমি জানি সোমা কিসের কথা বলছে। আমি জেনেও না জানার ভাব ধরলাম। কিছুক্ষণ নিরবতা চললো দুজনের মধ্যে। আজকে ছাঁদে কেউ নেই। সোমার বান্ধবীরা, মমো, কেউ নেই। সবাই মিমকে নিয়ে ব্যস্ত।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে সোমা বললো, বুঝেছি তুমি আমার উপস্থিতিতে বিরক্ত বোধ করছো। আমি চাইনা তোমাকে বিরক্ত করতে। তুমি একা একা বসে থাকো। আমি যাই।
সোমা আমার পাশে থেকে উঠে যেই না সামনের দিকে পা বাড়িয়েছে, ঠিক তখনই আমি পেছন থেকে তার হাত ধরে টান দিয়ে একেবারে আমার কাছে নিয়ে আসলাম। সে খানিকটা চমকে যায় আমার এমন আচরণে। তবে তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও এমনটাই চেয়েছিলো।
সে এখন আমার এতোটা কাছে যে, দুজনের নিশ্বাসের শব্দ দুজনে শুনতে পাচ্ছি। হঠাৎই সে আমাকে একটি ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে লজ্জায় দৌড়ে পালিয়ে গেলো।
আহা! আসলে সোমা তো তখন ঠিকই বলেছিলো। সে পাশে থাকলে আমার সব ক্লান্তি দুর হয়ে যাবে। সাথে এরকম যদি মিষ্টি একটা পরশ পাই, তাহলে তো কোন কথায় নেই। এই প্রথম কোন মেয়ে আমাকে স্পর্শ করলো, সেটাও আবার এতোটা কাছে থেকে। সোমার নরম ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শটা মন্দ লাগেনি আমার। বেশ ভালোই লেগেছে। আমি আজ বুঝলাম, আমার বন্ধুরা কেন এতো এতো প্রেম করে। বেডারা একটা ছাড়ে তো আরেকটা ধরে। বিশেষ করে ঐ আকাইশ্যা।
.
সেদিন রাতে আর সোমার সাথে আমার দেখা হয়নি। আমি অনেক চেষ্টা করেছি তাকে খোঁজার। কিন্তু সে বেপাত্তা।
চারিদিকে টিপটিপ লাইটের উজ্জল আলোর প্রতিফলন। সে আলো যেন ক্রমেই উজ্জল হয়ে উঠছে। বাড়িটা আজ রঙিন আলোতে সুসজ্জিতময়। সোমাকে কোথায়ও খুঁজে না পেয়ে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। চোখটা লেগে এসেছে। একটা ঘুম দেওয়া বাধ্যতামূলক এখন আমার জন্য। রুমে ঢুকে লাইটটা জালিয়ে বিছানা ঠিক করতে গিয়ে আমি অবাক হয়ে যাই। দেখি সোমা শুয়ে আছে। তাইতো বলি তাকে এতক্ষণ ধরে খোঁজার পরেও কেন পেলাম না।
আচ্ছা, মেয়েরা অবচেতন হয়ে থাকলে অর্থ্যাৎ ঘুমিয়ে থাকলে তাদের এতো পবিত্র এবং সুন্দর লাগে কেন? প্রশ্নটা এর আগে আমার বন্ধুরা আমাকে করতো। তখন আমি বলতাম, তোরা যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছিস, সে নিশ্চয়ই তোদের প্রেমিকা? তারা বলতো, হ্যাঁ। তখন আমি বলতাম, তোরা তোদের নিজেদের সুন্দরী প্রেমিকা ছেড়ে অন্যকোন কালো কুৎসিত মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখিস। আর তখন কেমন লাগে সেটা আমাকে জানাস। তখন তাদের মুখখানা কালো হয়ে যেতো।
সোমাকে বেশ অপরুপ লাগছে। তার চুলগুলো মুখের উপর এসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাকে দেখে আমার মনের গহীনে এক অজানা ভালোলাগার আভাস দেখা দিলো। আমি নিজেতে সংযত রাখলাম। নাহ, তাকে এই মুহূর্তে স্পর্শ করা যাবেনা। সে জেগে যাবে। ভাবছিলাম তার মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিই। কিন্তু না, সে জেগে বলে সরালাম না। আমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে তার মাথার কাছে বসলাম। তার সুন্দর চাঁদমুখানা দেখে আমার ঘুমটাও কেটে গেছে। এখন ইচ্ছে করলেও ঘুমোতে পারছিনা। মন চাইছে সারাটিরাত এভাবে বসে বসে তাকে দেখি।
.
আমি অপলক তাকিয়ে আছি তার দিকে। রুমের লাইটটা এখনো নিভিয়ে দেইনি। তাকে একবার ছুৃয়ে দিতে ইচ্ছে করছে খুব। ইচ্ছেটাকে পূর্ণতা দিতে আমার হাতটা তার মুখের কাছে চলে গেলো। তার মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরাতেই সে কেঁপে উঠলো। আমি দ্রুত হাতটা সরিয়ে নিলাম। ভাবছি, সে জেগে গেলোনা তো? হ্যাঁ, সে সত্যিই জেগে গেছে। সে শোয়া থেকে উঠে বসে কোমরে হাত দুটো রেখে বললো, কি হচ্ছিলো?
আমি তার এমন হাবভাব এবং কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে আমতা আমতা করে বললাম, কই কিছু না তো! কি হবে?
সে এবার রাগের একটা ভাব ধরে বললো, নিশ্চয়ই কোন খারাপ মতলব ছিলো তোমার। তার অমন রাগি রাগি চেহারা দেখে আমার হাসি পেলো বেদম। কারণ তাকে দেখে মোটেও রাগি মনে হচ্ছিলো না। তবুও সে নিজেকে রাগি দেখানোর জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
আমি বললাম, তোমার কি মনে হয়? আমার খারাপ মতলব ছিলো? আর থাকলেই বা কি? তুমি মানেই আমি, আমি মানেই তুমি। তোমার সাথে খারাপ মতলবের উদ্দেশ্যটা কার্যকর করবোনা তো কার সাথে করবো?
সোমা আর কিছু বললোনা। সে চুপচাপ অার কোন কথা না বলে শুয়ে পড়লো। আর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, তুমিও শুয়ে পড়ো। আর আজ রাতটা সম্পূর্ণ তোমার। তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো আমাকে। সোমা তার ওড়নাটা সরিয়ে নিলো নিজের বুক থেকে। আমি বললাম, এসব কি করছো সোমা? আমি চাইনা বিয়ের আগে এসব করতে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। সে হয়তো আমার থেকে এমন উত্তর আশা করেনি। আমি তার থেকে উল্টোদিক হয়ে শুয়ে পড়লাম। সে বললো, নিরব একটা কথা বলি?
আমি বললাম, হ্যাঁ বলো কি বলবে?
সে এবার একটা দীর্ঘস্বাস ছেড়ে বললো, তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য। তোমার মধ্যে আমি একটি সুন্দর মন দেখতে পেয়েছি। যে মনটা একেবারে পবিত্র।
.
পরদিন সকালে সোমার ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার। ঘুম ঘুম চোখে তার দিকে তাকিয়েই আমি খুন হয়ে গেলাম। একটা মেয়ে এতোটা সুন্দর হয় কি করে? মাত্রই সে গোসল সেরে এসে আমার জন্য চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো এখনো ভেজা। মুখে হালকা হালকা জলের বিন্দু। সোমাকে যতবার দেখি, ঠিক ততবারই নতুন করে তার প্রেমে পড়ে যাই।
আমার বন্ধুরা আমাকে বলতো, তুই তো শালা মদন। প্রেম না করলে প্রেমের স্বাদ বুঝবি কেমনে? যখন প্রেমে পড়বি তখনই বুঝবি মেয়েরা কতটা সুন্দর। তখন তাকে যত দেখবি ততই ভালো লাগবে। বন্ধুদের সেই কথাগুলো একদম ঠিক ছিলো। আসলে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো, তাই তারা এসব বিষয়ে জানতো। আমি আবুল এসবের কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু এখন বুৃঝছি।
সোমার ঐ অপরুপ সৌন্দর্যের দিকে আমি অপলক চেয়ে আছি। আর না থেকেই বা উপায় কোথায়? সে বললো, এইযে মিস্টার আপনার চা! চা টা টেবিলের উপর রেখে একটা মুচকি হাসি দিয়েে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে। আমি আবার দ্বিতীয়বারের জন্য তার প্রেমে পড়লাম। এতো সুন্দর করে কেউ মুচকি হাসে?
.
মিমের বিয়েটা যথাসময়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো। ঐ যে সকালে একবার সোমাকে আমি দেখেছি। সারাদিনে আর একটিবারও তার দেখা পাইনি। রাত আটটা বাজে। সবাই যে যার যার মতো চলে যাচ্ছে। সোমার বান্ধবীরাও চলে যাচ্ছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো সোমাকে তাদের সাথে দেখলাম না। তাহলে সে গেলো কোথায়? নাকি সে আগে থেকেই চলে গিয়েছে? না না সে চলে যাওয়ার সময় তো আমাকে একবার বলে যেতো। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকজনে পরিপূর্ণ বাড়িটা একদম ফাকা হয়ে গেলো। আমি সোমাকে খুঁজতে খুঁজতে মিমের রুমের দিকে যেতেই দেখলাম খালা সোমা আর মমোকে ধরে কান্না করছে।
আমি মনে মনে বললাম, সুন্দরী তুমি তাহলে এখানে? সারাদিন এভাবে কষ্টে রাখার ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে। না হলে তোমাকে আজ কোথায়ও যেতে দিচ্ছিনা। আমার উপস্থিতি দেখে খালা আমাকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আমি খালার বেদনাটা বুঝতে পেরেছি। মিম ছাড়া এ বাড়িতে খালার আর কেউ ছিলোনা। এখন সেই মিমও চলে গেলো পরের বাড়ি। এখন থেকে খালা বাড়িতে একা হয়ে গেলো। খালাকে স্বান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছুই নেই আমার।

আমি সোমাকে ইশারা করে বললাম, সুন্দরী ভীষণ কষ্ট দিয়েছো আজ। আগে একটু তোমাকে একাকী পাই, তারপর কষ্ট দেওয়ার সাজাটা টের পাবে।
খানিক পর আমি আবারও সোমাকে হারিয়ে ফেললাম। মমো আমার চারদিকে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু সোমাকে দেখতে পাচ্ছিনা। আমি মমোকে বললাম, কি রে পেত্নী, তোর বান্ধবী কই গেলো? মাত্রই তো এখান দেখলাম। সে আমার এমন কথা শুনে মুখটা বাঁকা করে একটা ভেংচি দিয়ে বললো, হু.. সবসময় খালি সোমা আর সোমা! একবারও কি আমাকে খুৃঁজেছিস? সোমার মধ্যে কি দেখেছিস এতো? যখন সে তোকে ছেড়ে চলে যাবে তখন বুঝবি ভালোবাসা কারে কয়।
আমি তার কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য স্তব্দ হয়ে গেলাম। সোমা আমাকে ছেড়ে যাবে মানে? মমো এসব কি বলছে আমাকে? আমি মমোকে জিজ্ঞেস করলাম, তুই কি বলছিস এসব? সোমা আমাকে ছেড়ে যাবে মানে?
সে বললো, যেতেও তো পারে। সবার মন মানসিকতা তো আর সবসময় এক থাকেনা।
.
মমোর কথাটা আমার মাথায় বারবার ঘুরপাক খেতে থাকলো। তবে কি সত্যিই সোমা কোন দিন আমাকে ছেড়ে যাবে?
আমি বাসায় যাওয়ার জন্য মমোকে বের হতে বলে রুমে ঢুকলাম সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। রুমে ঢুকতেই দেখি সোমা তার সব জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। আমি সোমাকে ডাক দিলাম। সোমা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বললো, আজকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাইনা?
সোমার এমন আচরণে আমার একটুও মনে হচ্ছেনা যে, এই সোমা কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমিও আর কোনকিছু না ভেবে তাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, কখনো ছেড়ে যাবেনা তো? সে বললো, এ জীবন থাকতে তো নয়ই। পরজন্মেও আমি তোমারই থাকবো। কিন্তু.....
সে 'কিন্তু' বলে চুপ হয়ে গেলো। তার এভাবে কিন্তু বলাতে আমি থমকে গেলাম। সোমা কি বলতে চায় তাহলে? আমি বললাম, কিন্তু কি সোমা?
সে বললো......
.
অপেক্ষা করুন সপ্তম পর্বের। সপ্তম পর্বটা যত বড়ই করিনা কেন তবুও সপ্তম পর্বেই শেষ করবো গল্পটা।
আন্তরিক ধন্যবাদ প্রিয় পাঠক, পাঠিকারা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.