নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলো

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৩

আলো
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
ঘাম ঝরানো রোদ্দুরে দুপুর। জনমানবের ভীড় ঠেলে ক্যান্টিনের দেয়ালে হেলান দিয়ে প্রিয়তমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে নিহান। শ্বাস-রুদ্ধকর অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত হচ্ছে তার। হাত ঘড়িটার দিকে বারবার তাকিয়ে দেখছে সে, কখন বারোটা বাজবে। কেননা বারোটা বাজলেই যে তার প্রিয়তমার ক্লাস শেষ হবে। আর ক্লাস শেষ হলেই সে তার প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে পারবে।

- ভাইয়া একটা ফুল নেন, নেন না ভাইয়া।

ছোট্ট একটা মেয়ে অসহায়ের ন্যায় প্রত্যাশিত নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেয়েটার মুখটা বেশ শুকনা। দেখে মনে হচ্ছে যেন সকাল থেকে কিছুই খায়নি সে। নিহান মেয়েটির হাত থেকে সবগুলো ফুল নিয়ে এক হাজার টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললো, কিছু খাবি?
মুহূর্তেই মেয়েটির চক্ষুযুগল সিক্ত হয়ে উঠলো। হেনকালে এই ক্রুর ধরাতে কেউ তাকে এভাবে খাওয়ার কথা বলেনি। অার্দ্র নয়নে সে লেশ পরিমাণ দেরি না করে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।
নিহান বললো, আয় আমার সাথে।
বলেই সে মেয়েটির হাত ধরে তাকে ক্যান্টিনের মধ্যে নিয়ে গেল। তারপর একটা টেবিলে বসিয়ে বললো, কী খাবি বল? ভাত খাবি?

মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালে নিহান ওয়েটারকে বললো মেয়েটিকে খাবার দিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার চলে এলো। মেয়েটি তার সামনে বিভিন্ন পদের খাবার দেখে উচ্ছ্বাসিত নয়নে নিহানের দিকে তাকিয়ে বললো, ভাইয়া এই সবগুলান খাবারই কি আমার জন্যে?
নিহান মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, "হ্যাঁ, এগুলো সবই তোর জন্যে।"

মেয়েটার সাথে কথা বলার ফাঁকে হঠাৎই তার চোখ পড়লো তার হাত ঘড়িটার দিকে। ঘড়িতে তখন দুপুর বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট। সে মেয়েটিকে বললো, পিচ্চি বোনটা আমার আসি এখন। আরো শোন, তোর যখনই মন চাইবে তখনই তুই এখানে এসে খেয়ে যাবি। আমি বলে যাচ্ছি তোর কথা।
.
নিহান বিল মিটিয়ে ক্যান্টিন থেকে বের হতেই দেখলো তার রূপকুমারী প্রিয়তমা প্রিন্সেস ডাইনা দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দু'টো তার অগ্নিরূপে রূপান্বিত। নিহান বুঝতে পারলো ডাইনা কোনো কারণে তার উপর রেগে আছে। কেননা এমন রক্তবর্ণ চোখে সে তখনই তাকায়, যখন সে নিহানের উপর প্রচণ্ড পরিমাণে রেগে থাকে।
নিহান বিষয়টি বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো, আমার রাজকুমারীটা কি কোনো কারণে আমার উপর রেগে আছে?

উত্তরে ডাইনা কোনো কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নিহান তাকে মনোহর ভঙ্গিতে তার দিকে ঘুরিয়ে বললো, রাজকুমারীর রাগের কারণটা কি জানা যাবে? উমম.. অবশ্য না বললেও চলবে। কেননা রাগলে আমার ডাইনিটাকে বেশ মিষ্টি দেখায়।

- ক্যান্টিনে কী করছিলে এতক্ষণ?

একটু রাগতস্বরেই কথাটি বললো ডাইনা। নিহান বললো, ক্যান্টিনে?
ডাইনা বললো, হ্যাঁ ক্যান্টিনে। কার সাথে ছিলে?
- কই? কারো সাথে না তো!
- সত্যি বলছো?
- হ্যাঁ একদম সত্যি। ও হ্যাঁ, তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি।
- গিফট?

নিহান গিফটের প্যাকেটটা ডাইনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, হ্যাঁ। এর মধ্যে একটা লাল শাড়ি আছে। আমার ইচ্ছে ছিল, যে আমার গার্লফ্রেণ্ড হবে বিয়ের আগে তাকে একবার লাল শাড়িতে দেখবো। আগামীকাল বিকেল চারটার সময় এখানে চলে এসো। কাল আমরা পুরোটা বিকেল এই শহরটা ঘুরে কাটিয়ে দেবো।
.
পরদিন বিকেলবেলা.....

- সিহাব দেখো ক্যান্টিনের সামনে লাল শাড়ি পড়ে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। (নিহান)
- জ্বী বস, দেখেছি। কী করতে হবে বলুন শুধু।
- ওকে কিডন্যাপ করে জায়গামতো পাঠিয়ে দাও। আর হ্যাঁ, টাকাটা ঠিকঠাক মতো বুঝে নিও।
- জ্বী বস। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। কাজ শেষ করে কল করবো।
.
ঘণ্টা খানেক পর সিহাব নিহানকে কল করে বললো, বস কাজ হয়ে গেছে।
- গুড, গুড জব। অফিসে চলে এসো।
- জ্বী বস।
নিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদৃস্বরে বললো, "যাক, টার্গেটটা কমপ্লিট হলো।"

চেয়ারে হেলান দিয়ে টেবিলের উপর পা দু'টো তুলে সে সিহাবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। ঠিক এরই মধ্যে টেবিলের উপর থাকা তার ফোনটা বেজে উঠলো। সে ফোনটা হাতে করে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই কিয়ৎকালের জন্য থমকে গেল। কেননা যাকে সে কিডন্যাপ করলো, সেই কিনা তাকে কল করেছে।
কল রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো সেই চিরচেনা কণ্ঠস্বর, নিহান আমি সরি।

নিহান ডাইনার কথার দিকে কান না দিয়ে ভাবতে থাকলো, এটা যদি ডাইনা হয়। তাহলে সে কাকে কিডন্যাপ করলো!

- নিহান তুমি শুনছো আমার কথা?
সে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়েই বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ বলো।
- আমি সরি নিহান।
- কেন?
- আসলে আমি আজকে যেতে পারিনি সেজন্য। তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ। আগামীকাল কলেজে গিয়ে দেখা করবো, কেমন?
- কোনো প্রবলেম হয়েছে কী?
- না, তেমন কোনো প্রবলেম না।
- তাহলে?
- তেমন কিছু না।
- বলতে বলেছি তোমাকে।
- আসলে হয়েছে কী, তোমার দেওয়া লাল শাড়িটা আমি তোমার বোন আলোকে দিয়ে দিয়েছি। তুমি আমাকে শাড়ির প্যাকেটটা দিয়ে চলে যেতেই আলোর সাথে আমার দেখা হয়। সে প্যাকেটটা দেখে বলে, ভাবি কে গিফট করলো? নিশ্চয়ই ভাইয়া করেছে!
আমি হ্যাঁ বলাতে সে প্যাকেটটা খুলে দেখতে চাইলো, তুমি কী গিফট করেছো। পরে লাল শাড়িটা দেখে এবং সবকথা শুনে সে বললো, সে নিজে শাড়িটা পড়ে বিকেল চারটার সময় তোমার জন্য অপেক্ষা করে তোমাকে চমকে দেবে। আর এই কারণেই আমি যেতে পারিনি। কিছু মনে করো না প্লিজ। আর শোনো, আমি আবারো সরি। কারণ, কালকে তোমাকে না বুঝে শুধু শুধু তোমার উপর রাগ দেখিয়েছি।

ডাইনার সাথে কথা বলা শেষ হতেই নিহানের হাত থেকে তার ফোনটা পড়ে গেল। সে টেবিলের উপর স্বজোরে একটা আঘাত করে উচ্চস্বরে বলে উঠলো, ওহ্ শীট।
.
লেখার সময়কাল: ১২/০৪/২০১৯

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:০৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভালো হয়েছে।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩৫

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি ওদের কাছ থেকে ফুল নিই। এবং যা দাম তার চেয়ে বেশি দিতে চেষ্টা করি।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩৬

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জ্বী দাদা। সেম টু ইউ। ভালোবাসা অবিরাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.