![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহুরে ডিপ্রেশনে আবদ্ধ.....
“কিরে কি খবর তোর?”
‘ওই তুই সেলে ঢুকলি ক্যামনে?’
মুরাদ কিছুটা ভয় পেয়ে যায় হঠ্যৎ
সেলে এক অপরিচিতের আগমনে।
‘আমারে চিনলি না?’
‘ও তুই! ভয় পাওয়াইয়ে দিছিলি।‘
‘তোর আবার ভয়-ডর আছে নাকি?’
‘সবারই থাকে, কিন্তু সবসময় প্রকাশ পায়।‘
‘তাই না?’
‘হ। তা খবর কি তোর?’
‘খবর? খবর তো তোরই ভালো জানার কথা!’
‘এতদিন পর কই থাইক্যা আইলি?’
‘আমি তো তোর মধ্যেই থাকি রে! তুইই
দেখবার পারোস না!’
‘হুহ!’
‘ভাব লস ক্যান? তুই কি বুঝস না তোর
সাথেই থাকি আমি?’
‘ভাগ এইহান থাইক্যা, বকতে ভাল
লাগতেছে না! ঘুমামু এখন।’
‘ঘুমানো আর ঝিমানো ছাড়া তোর
এইহানে আর কোন কামও নাই।‘
‘হ, জানোসই তো! তাইলে এত বকবক করস
ক্যান?’
‘বকবক না করলে তুই তো লাইনে আবি না!’
‘চেষ্টা করছোস কোনদিন?’
‘কি কস তুই? চেষ্টা করি নাই আমি?’
‘কবে করলি?’
‘হালা চোর! প্রত্যেকবার একখান
কইরে বাচ্চা ধরতি আর আমি আইয়ে কইতাম
ছাইড়ে দে। তুই তখন কইছোস পেট
চালাইবো কেডা?’
‘ঠিকই তো! পেট চালাইবো কেডা?’
‘আর মানুষের পেট চলে না। সবডিই
কি তোর মত কাম করেনি?‘
‘আল্লাহ্ই ওগো কাম দিছে আমাগো দেয়
নাই!’
‘হালার পুত! কাম করনের চেষ্টা করছোস
কোনদিন?’
‘করি নাই তো কি? না খাইয়া রাস্তায়
রাস্তায় ঘুরছি, কাম পাই নাই!’
‘সেই ঘুরাডাও মন দিয়া ঘুরতি!’
‘হু! যা যা। ঘুমামু আমি, ঘুম আসতেছে।‘
‘শালা চশমখোর! আজীবন
তো খালি ঘুমায়েই গেলি!’
‘ঘুমই ভালো, পাপ নাই কুনু।‘
‘তোর আবার পাপের ভয় আছেনি?’
‘কইলাম না একবার ভয় সবারই আছে।‘
‘হু! তোর নাই। থাকলে ওই বাচ্চাগুলানের
সর্বনাশ করতে পারতি না। বারবার
নিষেধ করলাম, তুই হুনলি না।‘
‘ওই কাম না করলে খাওন দিত কেডা? তুই
দিবার পারতি?’
‘আর কিছু না হোক
রিক্সা তো চালাইতে পারতি!’
‘সবই পারতাম, আবার কিছুই পারতাম না!
গরীব হইয়ে জন্মাইছিলাম, গরীব হইয়াই
মরতাম।’
‘তাও শরাফতের জিন্দেগি পাইতি। এহন
কি তুই বড়লোক?’
‘বড়লোক না, তয় সুখে আছি। তুই
তো আমারে ছাইড়ে অনেক
দূরে গেলি গা।‘
‘আমি দূরে যামু ক্যান? আমি তো তোর
লগেই আছি। আমি তোর মইদ্ধে বাস করি,
জানোস না তুই? এহন আর আগের মত
বাঁধা দিবার পারি না!’
‘ক্যান?’
‘পাপ ভিতরে ঢুইকে গেছে, তোর মুনের
আট-দশ হাত গভীরে। তুই আর তুই নাই!’
‘কি কস তুই? আবার ভীমরতি ধরছেনি?’
‘ঠিকই কই! তুই লালন শোনোস
না অনেকদিন!’
‘লালন? হুহ! ভাতের পেছনে ছুটি। ভাত...
বোঝোস? বুঝপি ক্যামতে তোর তো খাওন
লাগে না।‘
‘তুই খাইলেই হইয়া যায়।‘
‘ওইডাই তো সমস্যা!’
‘আচ্ছা তোর খারাপ লাগত না এইসব
পোলাগুলানরে আরেক
দেশে পাঠায়ে দিতে? বাপ-
মা ছাইড়া ছুট ছুট পোলাগুলান কি করবে?
কোথায় যাবে? ভাবছিস কহনো?’
‘এইসব কহনো ভাবি নাই। আমাগো অত
ভাবলে চলে না। ভাবার কাম তোগো।‘
‘কি করমু? তোগো ভিতরে তো আর ঢুকবার
পারি না।‘
‘ঢুকবি ক্যামতে? তোরাও
শালা চোরা হইয়ে গেছস। তোরাও
কামে ফাকি দেস।‘
‘কি কইবার চাস?’
‘দেশ চালায় লোকগুলানরে কি যেন কয়?
ভুইলে গেলাম।‘
‘সরকারের কথা বলবার চাস?’
‘ওরাও চুরি করে, ওগো পোলা-মাইয়ারাও
চুরি করে। আর সবাই যে যার মত
করতেছে তো করতেছেই।‘
‘হগগোলেই সুযুগ পাইলেই এইগুলান করে।
গঞ্জের মাস্টার সাহেবের
কথা মনে আছে তোর? হেয় একবার কইছিল
না যে যারা সৎ তারা সুযুগ পায়
না বইলে সৎ। সুযুগ পাইলে অসৎ
হইতে হেগোরও সময় লাগব না।‘
‘ঠিকই কইছিল হেয়। তোরা আইজকাইল
কামে ফাঁকি দেস নাইলে আমার সুযোগ
পাই ক্যামতে?’
‘সবাই দেয় না। যাগো মুনডা এরাম কাম
করতে করতে পাইকে গেছে হেরারটার
দেয়। যেরাম আমি তোরে দেই।‘
‘মানে কি?’
‘তোর মনে দয়ামায়া নাই, নিষ্পাপ
পোলাগুলানরে বাইরে পাঠায়
দিতে কষ্ট লাগে না তোর। ‘
‘একসময় লাগত!’
‘হ, তখন আমি তোরে লাগানোর
ব্যবস্থা করতাম। এহন তুই কিরাম যেন
হইয়ে গেছস। মানুষ না, তুই এহন পশু!’
‘মানুষ আছে কেডা?’
‘হ, কেউ মানুষ নাই, সব পশু হইয়ে গেছে! পশু
পশুরে খাই, মারে, কষ্ট লাগে না। আমারও
লাগে না।‘
‘তোরে তো তহন খুইজে পাই নাই!’
‘আমি ঠিকই ছিলাম, থাহি সারাক্ষণ। একটু
খোজার চেষ্টা করলেই পাইতি।‘
‘হুহ! চেষ্টা? পশুরা হাজার চেষ্টা করলেও
পায় না।‘
‘খুইজে দেখতি একটু, পাইতি আমারে।‘
‘কিডা কইছে তোরে?’
‘কারো কওয়া লাগবনি? আমি কইলে হইব
না?’
‘হ, হইব।‘
‘বাঁচবি কয়দিন আর?’
‘জানি না!’
‘জজ সাহেব কি কইছে?’
‘ফাঁসি দিবার পারে।‘
‘ভয় লাগে না?’
‘এট্টু এট্টু!’
‘তোর আরো কয়বার মরা উচিৎ।‘
‘হালা, আমার লগে থাইকে আমারেই
মারবার চাস?’
‘তুই শালা পাপী, তোরে যে কেউই
মারবার চাব। এতগুলার মাইনষের জীবন
নিছস, তোর কি একবার মরলে হইব?’
‘তাইলে শালা দেশটা যারা চালায়
তাগো কয়বার মরতে হইব?
ওরা তো চেয়ারে চেয়ারে বইসে বইসে হু
দেয় আর মানুষ মারে, জীবন
নিয়া খেলা করে!’
“ওই এরাম উলটাপালটা বকস ক্যান?”
জেলারের কর্কশ কন্ঠে মুরাদ
বাস্তবে ফিরে আসে।
আশেপাশে কাউকেই খুঁজে পাই না। অদৃশ্য
সত্তা অদৃশ্যতেই মিলিয়ে যায়। এটাকেই
মনে হয় বিবেক বলে।
‘নে, খা!’ সেলের গার্ড খাবার
ঠেলে দেয় মুরাদের দিকে। ২টা শক্ত রুটি,
কয়টা ডাল।
‘এই ডাল মনে হয় ঘোড়াও খায় না,
মাইনষে কেমনে খায়?
বাইচে থাকতি হলি এসবই পেটে চালান
দিতি হবে।
বাইরে থাকতে ভালো খাবার
খাইছে এত দিন সে। আইজ তারে খারাপই
খাইতে হবে!’ ভাবতে থাকে মুরাদ।
‘আচ্ছা, যারা দেশটারে চালায়
তারা সেলে আইলেও অত্ত
আরামে থাহে ক্যান? এত্ত খাবারদাবার
পায়, কষ্ট নায় এট্টুও। শুধু আমরা করলেই পাপ
হয়? নাকি ওগো ওইডা পাপ না, জন্মগত
অধিকার? হইতে পারে!’ মুরাদের মাথায়
ধরে এসব কথা। শুধু এটুকু
বোঝে যে সে পাপী। মনুষ্যত্ববোধ
বিবর্জিত বিবেকহীন এক জন্মপাপী সে,
যার শাস্তি হবেই। শুধু বড়লোকদের
শাস্তি নাই। ওরা পাপ
করে টাকা বানায় আর সেই টাকা দিয়েই
ছাড়া পায়। মুরাদ সারাজীবন
টাকা রোজগার করে গেছে কিন্তু
ছাড়া পাবার ব্যবস্থা করেনি। এই জন্য ওর
শাস্তি হবে, ও ফাঁসিতে ঝুলবে। অনেক বড়
মঞ্চ। ও শুনেছে মুখে কালো
কাপড় বেঁধে ঝুলায়ে দেয় দড়িতে। আর
আসামি হাত পা ছুটাছুটি করে মরে যায়।
ও যখন বাচ্চাগুলাকে অজ্ঞান করত তখন
তারাও একইভাবে হাত
পা ছোটাছুটি করত। এক সময় যেয়ে ঝিম
মেরে যেত। তারও একদিন একই
অবস্থা হবে। সে সেই অজ্ঞান
অবস্থা থেকে আর উঠবে না। এসব
ভাবতে ভাবতে মুরাদ শিহরিত হয়। হঠ্যাৎ
দেখতে পায় রুটি থেকে পোকার মত কিছু
একটা বের হচ্ছে। শেষবারের মত
আরেকটা প্রাণীকে সে গলা টিপে হত্য
অবাক হয়ে খেয়াল করে সে, কোনরকম
দুঃখবোধ হচ্ছে না তার। অনুভূতিটা আজ
তার একেবারে অচেনা। কষ্ট দূর
করা দরকার। ধুম্র শলাকায় টান
দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ে সে...
©somewhere in net ltd.