![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহুরে ডিপ্রেশনে আবদ্ধ.....
ন্যুব্জতা...
জাওয়াদুর রহমান সৃজন
যশোর
-আমি তোমার বাবা মা কে দেখতে পারতেছি না। গেলাম বাপের বাড়ি
-প্লিজ যাইও না।আমরা না দেখলে কে দেখবে...?
-ক্যান নিজেরাই একা থাকলেই তো পারে...
-একা থাকবে কিভাবে তুমিই বলো...আম্মা বাথরুমে একা যেতে পারে না।আব্বা কি এতো কাপড় পরিষ্কার করতে পারে...
-ও হ্যা সে একটা ছেলে মানুষ হয়ে পারে না আর আমি পারি??? হ্যা পারবই তো আমি তো মহা মানবী।
-সামিয়া, তুমি তো কখনো পরিষ্কার করোও না প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে তো আমিই করি...
-হ্যা আমি তো কিছুই করি না।সবই তো তুমিই করো।সারাদিন বাইরে বাইরে থেকে সব করো...
-সামিয়া ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু...তোমার বাবা হলে কি করতে না তুমি....???
-আমার বাবা মা তোমার বাবা মায়ের মতো পরগাছা না...
- সামিয়া...
মনের অজান্তেই রাফিদ হাত তোলে সামিয়ার গায়ে।অনেক সহ্য করেছে সহ্য টা আর সহ্য হলো না।সামিয়া বাপের বাড়িই গেল।সমস্যা টা তার একার হলে সমস্যা ছিল না।কিন্তু ৮ বছরের স্কুল পড়ুয়া মেয়েটা একা হয়ে গেল।তার জন্যেই তাকে আনতে হবে।কিন্তু সমস্যাও আছে বাবা-মা যাবে কোথায়...
বাবা-মা কে অনেকটা মাথা নিচু করেই বলে ফেলল...
-বাবা তোমরা বাসায় চলে যাও...
রায়হান সাহেব বয়স খুব বেশি না।তারপরেও মনের দূর্বলতা আর স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে নিজেই অনেক অসুস্থ।একজন আর্মি হিসেবে অবসর নিলেও জীবনের প্রাপ্ত সব টাকা ছোট ছেলে র বেসরকারি ভারসিটিতেই ঢালতে হয়েছিলো।কি আর করা...??
বাধ্য হয়ে শালিসে বসতে হলো...
শালিসে সিদ্ধান্ত হলো বাবা ছোটো ছেলের কাছে আর মা বড় ছেলের কাছে থাকবে।যদিও বড় ছেলের রাখার মতো অবস্থা নাই এটা জানে রায়হান সাহেব। চোখের পানি সবার সামনেই খসে পড়লো তার...
জলের দাম অনেক কমে গেছে মনে হয়।না সাধারণ জলের দাম আজ ও আকাশ চুম্বিই আছে।চোখের পানির কথা ভাবছিলো রায়হান সাহেব....
দূর থেকে তাকিয়ে দেলহছিলো রাশিক।বাবার চোখে আলোর চিকিমিকি।জানে বাবাকেই টানার সাধ্য তার নেই।বাবা তাকে খুব বেশি পড়াতে পারেনি টাকার অভাবে কিংবা তার ওপর জেদের কারণেই।কারণ বাবা তাকে কখনোই পছন্দ করতেন না ছোটবেলা থেকেই।সে জন্মগতভাবেই বদমেজাজি একটু ত্যাড়াও বটে।টাকার অভাবটা আসল কারণ ছিলো না।এটা ছিলো অজুহাত ই। আসল কারণ ছিলো তাকে দেখতে না পারা।কি আর করার কোনো পথ না পেয়ে রাশিক সেদিন একটা কলেজে অনার্সেই ভর্তি হয়েছিলো।রাগ আর জেদের কারণে বাড়ি থেকেই বের হয়ে গিয়েছিলো। পড়াশোনা তেমন ভাবে শেষ করতে পারেনি।কোনোমতে একটা মাদ্রাসার ইংরেজীর শিক্ষক সে।বাচ্চা কাচ্চা নেয়ার মতো দুঃসাহস কখনো হয়নি কারণ একটাই টাকার অভাব...
দুনিয়া আপন নিয়মে চললেও পেট টা চলে না কখনোই...
যেই বাবা আর্মিতে চাকরি করেছেন সে এত সহজে ভেঙ্গে পড়ার কথা না।কিন্তু ভেঙ্গে পড়তেই হলো যখন ছোট ছেলের বউ শালিসে সবার সামনেই বললো...
-আমার দুজনের কাউকেই রাখা সম্ভব না। আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি তারা বাসা ভাড়া করে থাকুক...
রায়হান সাহেব বুঝতে পারলেন।ভূলটা সে ভূলভাবেই করেছিলো জীবনের একটূ একটু করে সঞ্চয় করে রাখা টাকা গুলো রাফিদের পেছনে লাগিয়ে।রাফিদের কোনো দোষ নেই অবশ্য।বাবা মা তো আর তাকে সারাজীবন টানবে না।এইটাই সত্যি।বাবা মা র দরকার শেষ।
একজন উপুযুক্ত শালিস বিদ হিসেবে মোল্লা সাহেব কখনোই বড় ছেলের উপর দুইজনের দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে পারেন না।কারণ সে তার অবস্থা জানে।তার উপর রায়হান সাহেব অনেকটা তাজ্য পুত্রের মতোই দেখে তাকে।এখানে মোল্লা সাহেব নির্বাক ঈ বটে...
বড় ছেলে চুপই থাকলো...
রায়হান সাহেব শুধু এতোটুকুই বললো আমরা একা থাকতে পারবো।তার মুখটা মে বি বলতে চাচ্ছিলো না কথাটা। কারণ তার ঠোট বারবার বন্ধ হয়ে আসছিলো।তাও বাধ্য হয়ে বলতে হলো।চশমার ফ্রেম টা হাতে নিয়ে চোখ মুছল...
রাশিক র ঠোট ও কাপতে কাপতে একটা কথাই উচ্চারণ করতে পারলো...
-আমি পারবো মোল্লা চাচা...
সবার দৃষ্টি রাশিকের উপর।কি পারবা...??
-চাচা আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করবো আম্মা-আব্বাকে রাখতে।চেষ্টা করবো নিজের চার ভাগের খাবারের তিন ভাগ দিতে।কিন্তু এতে যদি আব্বা-আম্মা না থাকতে পারেন আমার কিছু করার নাই...
শালিসের ইস্তফা সেদিনের মতো হলো...
ভ্যানে মালপত্র উঠিতে নির্বাক স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রায়হান সাহেব ভাবছিলেন যে আজ তাকে আশ্রয় দিলো ৮ বছর আগে করা তার প্রতি অন্যায় বিচারের ইস্তফা কি আল্লাহ চোখের জল মুছলেই ক্ষমা করে দিবেন....???
চোখের জল কি এতোটাই সস্তা থাকবে তখন....???
একদম মূল্যহীন...
তার অযথা অপব্যয় করা শুক্রাণুগুলোর মতো....
©somewhere in net ltd.