নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেন মৃত্যু হচ্ছে লোকালয়ে প্রতিদিন,মরে যাচ্ছি আজাবে সুদহীন...

নির্বাসিত শব্দযোদ্ধা

শহুরে ডিপ্রেশনে আবদ্ধ.....

নির্বাসিত শব্দযোদ্ধা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিচছুই না রাজীব সাহেবের দিন গুলো শুধুই...

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:০৭

রাজীব সাহেবের ভুড়ির কদর করে না এমন বাজারি কমই আছে বাজারে...
.
একা মানুষ...
.
এক পোষা কুকুর আর তার নিজের উদরপূর্তির জন্য সে এক গাদা বাজার না করলেও ছোট খাটো বাজার ও করে না।বাবা মা অনেক আগেই গত হয়েছেন।কোনো এক সময় কোনো এক বৃষ্টির মাঝে তার কোনো এক প্রেমিকাকে তিনি কথা দিয়েছিলেন তিনি তাকে ছাড়া আর কাউকে কখনোই বিয়ে করবেন না।এরপরে তিনি প্রেম শোনা যায় অনেকই করেছেন কিন্তু বিয়ে আর করেননি।এ ক্ষেত্রে এক যুক্তি তিনি পাথরের মতো বুকে ধারণ না করলেও মনে ধারণ করেন।যুক্তিটি হচ্ছে,মানুষ যখন সারাজীবন ঘুষের টাকা দিয়ে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করে, বুড়ো বয়সে সে একটা প্রায়শ্চিত্ত করে মারা যেতে চায়। তিনিও সেই প্রায়শ্চিত্তে চিত্ত মাতাচ্ছেন।সারা জীবনে যত মেয়েকে কষ্ট দিয়েছেন বুড়ো বয়সে একা থেকে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন।যদিও তিনি নিজেও জানেন ঈশ্বর তার ক্ষমা করবে না।ঈশ্বরকে যতই অকৃপণ বলা হোক না কেনো,তার মতে সে ভীষণ কৃপণ।অন্তঃত বেহেশতের বন্দোবস্তের ব্যাপারে....
.
ও যা বলছিলাম,তার কুকুরের নাম ব্রুনো।জাপানি স্পিটজ।তার পছন্দের কুকুর।সারাদিন অফিস করে মোটা ভূড়ি নিয়ে ব্রুনো বলে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকেন।বাস্তব জীবনে সে প্রচুর রেস্পন্সিবল মানুষ।আর তার বিয়ে না করার আরেকটা কারণ এই রেসপন্সিবিলিটি। বাবা মা কে হয়তো তিনি অপছন্দই করে থাকবেন।তাও রেসপন্সিবিলিটি তো রেসপন্সিবিলিটিই...
.
তার খুব ইচ্ছা ছিলো অনেক গুলো মানুষ পালবেন।কিন্তু মানুষ পালাতো চাট্টিখানি কথানা।এলাকার মানুষ দুমুখে কথা বলবে আর সেই কথা শুনে লাইফ লীড করা ব্যাপারটাও কেমন যেনো...

ঝামেলা এড়িয়ে চলা তার ছোট বেলার অভ্যাস।তাও তিনি এক সময় অনেক বড় বড় বুলি ছেড়েছেন।প্রেমিকা গুলোকে শিক্ষা দিয়েছেন।আশেপাশের মানুষজনকে তার মতবাদ শোনাতে চেয়েছেন।তাকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।বুড়ো বয়সে এগুলো ভাবলে হাসি পায় তার।তবে নিঃসন্দেহে সমাজতান্ত্রিকতার এক বড় দৃষ্টান্ত হয়তো আরেকটু চেষ্টা করলেই রাখতে পারতেন।কিন্তু ওই যে হয় না এক জীবনে অনেক কিছুই পাওয়া...
.
আর এটা সত্যিই ভয়াবহ,যেই দেশে কোনো জিনিসের দাম ৮০% বাড়িয়ে ৬০% ওয়েভার দিলে কাস্টমার বাড়ে দ্বিগুণ সে দেশে তার কথার মূল্য ধরতে পারবে সাধ্য কার....
.
সে খুব মিতব্যয়ী থাকা সত্ত্বেও জীবনে খুব বেশি টাকা কড়ি জমাতে পারেনি। মানুষের সাথে এক জীবনে খুব কমই মিশেছেন।নিজেকে ঢেকে রাখতেই ব্যস্ত ছিলেন।শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না তার বিশাল ভুড়িটা আজও ঢাকা পড়েনি ছোট বাসটায়।এক বাচ্চা তাই বাসে উঠতে গিয়ে ভুড়িকে বেলুন মনে করে চাপও দিয়েছিলো।সে মিষ্টি হেসে শিষ্ট বাচ্চাকে পথ করে দিয়েছেন...
.
বাচ্চাও খুশি হয়েছিলো...
.
অনেক দিন পর কোনো বাচ্চা তাকে পাশে বসতে দিলো।তার এই কালো চেহারা আর এই ভয়াবহ শরীরকে মিরপুরের জলহস্তী টাইপের কিছু ভাবলে তিনি নিজেও বোধ হয় মাইন্ড করেন না।অফিসের কোনো এক মেয়ে কলিগ তার এই সুস্থ দেহের প্রশংসা করেছিলো।তিনি প্রশংসা বাক্য শুনে নায়িকা তিন্নির কথা করলেন।অতো মোটা শরীর নিয়ে কতো স্ক্যান্ডালই না বের হয়েছিলো তার....
.
আবার ও একই কথা সবাইকে দিয়ে সব হয় না....
.
আজ বাস থেকে নেমে উত্তরার সেক্টর ৬ এর দিকে বাচ্চা কয়েকটা নিয়ে একটা মেয়েকে পড়াতে দেখলেন।কোনো অর্গানাইজেশন এর মেয়ে হয়তো। অর্গানাইজেশন এর টি শার্ট পড়া। এক সময় তিনিও এসবের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ওইযে ঝামেলায় কখনো যাওয়া হয় নি।আর সবাইকে দিয়ে সব হয়না....
.
কোথা থেকে তিনি যেন পড়েছিলেন,এমিনেম ভার্স লেখার জন্য ডিক নিয়ে বসতেন। আই মিন ডিকশনারি নিয়ে বসতেন।তিনিও ভাবলেন, হয়তো তিনিও পারবেন। কিন্তু অই যে সবাইকে দিয়ে সব হয় না...
.
এই এমিনেম সাহেবের সাথে তার পরিচয় অনেকদিনের।সেই ছোট বেলার কাহিনী....
.
৮ মাইল মুভি দেখে,তিনি প্রথমে বন্ধুদের বলেছিলেন,"ছেলেটার চেহারা একদম এমিনেমের মতো "। বড়লোক বন্ধুবান্ধবের হাসি দেখে রাজীব সাহেব অনেক বেশি আজীব হয়েছিলেন।পরে নিজেই বুঝে ছিলেন তিনি আসলেই আজীব....
.
তার এই আজীব জিনিসকে পুঁজি করেই যখন নিজেকে আজীব ভাবতে শুরু করলেন।অনেকেই তাকে গরু বলতে শুরু করলো।এ দিকে প্রথম কাতারে ছিলো তার বাবা মা।যাদের মহান বাণীর জোড়েই আজ তার এতো অধঃপতন।তিনি ছোট বেলায় প্রায়ই প্রশ্ন করতেন ঈশ্বরকে," বাবা মা কই থেকে আসে? " এই প্রশ্নের উত্তরে ঈশ্বরের আসলেই বোধ হয় লজ্জা লাগতো। তাই এক মুঠো বাতাস
চারপাশে খেলা করতো....

তাকে বাবা বানিয়ে তার ভূল ভাঙিয়ে দেয়ার সময় ঈশ্বরের বোধ হয় আর হয়নি।তাই যখন বারান্দায় বসে তিনি বৃষ্টির সাথে ঈশ্বরের সৃষ্টিতে চোখ বুলিয়ে নেন ব্রুনো ও তার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে।ব্রুনো ভাবে তার মালিক খুব বেশি খারাপ লোক না...
.
ছোট্ট জীবনে সে যত অন্যায় করেছে তা তার ভালো কাজের বণ্যায় ভাসিয়ে দেয়ার মতো যথেষ্ট।তার শুধু আক্ষেপ সে অনেক সফলের কেউ হতে পারেনি। সে শুধু পালিয়ে এসেছে সব থেকে।জীবনের সবাই যখন রেস্পন্সিবল হতে চেয়েছে সে শুধু ঝামেলা মনে করে তা থেকে দূরে ছিলো। ঝামেলা না থাকলে তার জীবনে হয়তো আরও ভালো হতো...
.
রাজীব সাহেবের একা কথা বলার অভ্যাস অনেকদিনের। চাকরি জীবনের পর থেকে কুকুরের সাথেই বেশি কথা বলেন।এই কুকুর টা তাকে অনেক কিছুর অভাবই বুঝতে দেয়নি....
.
অনেকদিন পরেই তার দরজায় টোকা...
.
-কে?

উত্তর নেই....
.
বৃষ্টি দেখতে দেখতে কখন যে বারোটা বেজেই গেলো সেদিকে নজর ও যায়নি...
.
দুবার জিজ্ঞেস করে কে এর উত্তর জানা গেছে।কোনো বাচ্চা হয়তো।এতো রাতে বাচ্চা...?
.
ভাবতে ভাবতে দরজা খুলেই দিলেন। " হ্যাপি বার্থডে বলতে বলতে এক গাদা বাচ্চা তার রুমে।তার আদরের বিছানা আজ যাবে।হ্যা আজ তার জন্মদিন। যারা ঢুকেছে তারা অন্যদিনের কোনো গেস্ট না...
.
এরা তারা যাদের সাথে তার কমলাপুরে প্রথম দেখা।এদের কারো জন্মদিন পালন করেছিলেন তিনি একাই...
.
প্রথমে যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন জন্মদিন কবে? এরা জিজ্ঞেস করেছিলো,"কি করবেন আপনে? " তিনি নিজেকে এতোটাই অকর্মের ঢেঁকি ভাবতেন যে তিনিও একই কথাই ভেবেছিলেন, "কি করবো? "

পরে অবশ্য তাদের খুজে জন্মদিন পালন করেছিলেন।যদিও বুদ্ধিটা তার মোটা মাথা নাকি পেট থেকে এসেছিলো সেটা ভাবলেও আজও তার অবাক লাগে....
.
বন্ধুত্ব টা এদের সাথে এভাবেই।তার নিজের জন্মদিনেও ওই ছেলেটা চলে আসে এক গাদা নতুন ছেলে মেয়ে নিয়ে।এই জন্মদিনের আনন্দ শেয়ার করতে করতেই প্রতি টা মাস কাটে তার।মাঝে মাঝে এক মাসের পুরো টাকাটাই এদের মাঝে যায়...

এই বুড়ো বয়সের এই উড়ো আনন্দ যখন তার মন জুড়ে থাকে তার অনেক বাচ্চা পোষার ইচ্ছার ও অবসান ঘটে...
.
সবাইকে দিয়ে আসলেই সব হয় না।তাকে দিয়েও যা কিছু হয়েছে তাও হয়তো কাওকে দিয়েই হয়নি...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

নির্বাসিত শব্দযোদ্ধা বলেছেন: স্প্যামার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.