![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইহার মতো, তাহার মতো বা তাহাদের মতো নই। আমি আমার মতো। আমার মাঝে ইহাকে, উহাকে, তাহাকে খুঁজিয়া কোন লাভ নাই...।
চার্চের দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে বসে আছে নিক। রাস্তার গোলাগুলির হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা তাকে টেনে ওখানে বসিয়ে দিয়ে গেছে। তার পা দুটো নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে। মেরুদন্ডে আঘাত লেগেছে তার। ঘাম আর ধূলাবালিতে তার মূখমন্ডল নোংরা হয়ে আছে।
মেঘহীন আকাশে সূর্যের কড়া রোদ। বেশ গরম পড়েছিল। পাশেই রেনাল্ডের অস্ত্র মাটিতে পড়ে আছে। আর সে দেয়ালের পাশে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। নিক সামনের দিকে তাকাল। রাস্তার ওপারের ভবনটার গোলাপী রঙের দেয়াল খসে পড়েছে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া একটা লোহার খাট রাস্তার উপর ঝুলছে। ঘরের পাশের খসে পরা ইটের মধ্যে দুজন অস্ট্রিয়ানের মৃতদেহ পড়ে আছে। রাস্তার উপর পড়ে আছে আরও একটি লাশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। যেকোনো মুহূর্তে স্ট্রেচারবাহীরা তাদের উদ্ধারে এসে পড়বে।
নিক অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মাথা ঘুরিয়ে রেনাল্ডের দিকে তাকাল। রেনাল্ড রোদের মধ্যে অত্যন্ত কষ্টের সাথে শ্বাস নিচ্ছে। নিক মৃদু হেসে আবার সতর্কতার সাথে তার মাথা ঘুরিয়ে নিল। রেনাল্ড চুপচাপ পড়ে রইল।
পাদুয়ায় এক ক্যাম্পে আছে নিক। এক উষ্ণ সন্ধ্যায় তারা নিককে ছাদের উপর নিয়ে গেল। সে ছাদের উপর থেকে শহরটা দেখতে পেল। চিমনি থেকে ধোয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে আকাশের দিকে উঠছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে অন্ধকার নেমে আসল। দূরে সে সার্চ লাইট দেখা গেল। অন্যরা মদপানের জন্য নিচের তলায় বেলকনিতে গেল। শুধু নিক আর লুজ বসে আছে ছাদে। তারা নিচে বেলকনিতে অন্যদের মদপানের আর হৈ হুল্লোড়ের সাড়া টের পাচ্ছিল। লুজ বিছানার উপর বসল। এই উষ্ণ সন্ধ্যায় তাকে বেশ লাবণ্যময়ী আর আকষর্ণীয় লাগছিল নিকের কাছে। তিন মাস ধরে লুজ এখানে নাইট ডিউটি করছে। তার সেবায় সকলে মুগ্ধ। লুজকে পেয়ে এখানকার সবাই বেজায় খুশি। নিকের যখন অপারেশন হল, তখন লুজ তাকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করেছিল। তখন থেকেই নিক লুজকে ভালবাসতে শুরু করল। যখন সে স্ক্রাচ দিয়ে হাটতে শুরু করল, তখন থেকেই সে নিজে নিজে শরীরের তাপমাত্রা মাপে, যাতে করে লুজকে কষ্ট করে ঘুম থেকে উঠতে হয় না। ওখানে অল্প কয়েকজন রোগী ছিল। তারা সবাই নিক আর লুজের সম্পর্কের ব্যাপারটা আচ করতে পেরেছিল । হাঁটতে-চলতে সবসময় নিক লুজকে নিজের করে পেতে চাইত। আবার যুদ্ধক্ষেত্রে যাবার আগে তারা ডুমোতে গেল এবং প্রার্থনা করল। ডুমোর ভিতরে ছিল হালকা অন্ধকার এবং বেশ শান্ত। সেখানে আরো অনেকে ছিল। তারা চুপচাপ প্রার্থনা করছিল। নিক আর লুজ বিয়ে করতে চাইছিল। কিন্তু আইনগত সমস্যা ছিল। কারণ তাদের কারো কাছেই তাদের জন্ম সনদ ছিল না। যদিও তারা নিজেদেরকে বিবাহিতদের মতই মনে করতো। কিন্তু তারা চাইত তাদের বিবাহের একটা সামাজিক স্বীকৃতি হোক এবং তাদের বিয়ে সম্পর্কে সবাই জানুক। কারণ তারা পরস্পরকে হারাতে চাইত না।
নিক যুদ্ধক্ষেত্রে চলে গেল। লুজ নিককে একে একে অনেক গুলো চিঠি লিখেছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত নিক একটা
চিঠিও হাতে পায়নি। যুদ্ধবিরতির পর সে পনেরটা চিঠি একসাথে পেল। তারিখ দেখে দেখে সে চিঠিগুলোর সিরিয়াল ঠিক করল এবং সবগুলো চিঠি এক সাথে পরে ফেলল। লুজের সবগুলো চিঠি ছিল আবেগে ভরপুর। চিঠিতে সে হাসপাতালের বিভিন্ন ঘটনার বর্ননা দিত। সে তাকে কতটা ভালবাসত, সে সব কথাও লিখত। লুজ আরও লিখত যে, তাকে ছাড়া তার বেশ একাকী লাগত। তাকে ছাড়া তার জীবন অসহায় মনে হত। রাতের বেলা সে তাকে প্রচন্ড মিস করে- এ জাতীয় কথাবার্তায় ভরা থাকত তার চিঠি।
যুদ্ধ বিরতি হলে, তারা দুজন একমত হল যে, দেশে গিয়ে শিকাগোতে নিক একটা চাকরি গ্রহণ করবে। যাতে করে তারা
বিয়ে করতে পারে। তবে যতক্ষন নিক চাকরি না পাবে এবং তার সাথে দেখা করার জন্য সে নিউইয়র্ক না যাবে, ততক্ষণ লুজ দেশে ফিরবে না। নিক প্রতিজ্ঞা করল সে আর মদ পান করবে না। এমনকি সে তার কোনো বন্ধুবান্ধবের সাথেও সাক্ষাৎ করবে না। তার শুধু একটা চিন্তা- একটা চাকরি চাই। অন্তত লুজের জন্য তাকে একটা চাকরি পেতেই হবে।
নিকের দেশে ফিরে যাবার সময় হল। লুজ নিককে মিলান পর্যন্ত পৌছে দিতে গেল। পাদুয়া থেকে মিলানে যাবার সময় নিক লুজকে তখনি তার সাথে দেশে ফিরে যাবার জন্য পীড়াপীড়ি করল। কিন্তু লুজ তখন দেশে যেতে চাইল না। এ নিয়ে তারা দুজনে ঝগড়া করছিল। যাহোক, বিদায়ক্ষণ উপস্থিত হল। তারা একে অপরকে চুমু খেয়ে বিদায় নিল। নিকের মনটা কিন্তু তখনো বেশ খারাপ। ঝগড়াঝাটি করে এমন বিদায়
তো সে কখনো চায়নি।
নিক জেনোয়া থেকে জাহাজে করে আমেরিকা গেল। আর লুজ চলে গেল পুরদন। সেখানে সে একটা হাসপাতাল চালু করল। লুজ খুব একাকী বোধ করছিল। যদিও তখন শীতকাল ছিল, সেখানে বেশ বর্ষা পড়ছিল। এরকম একটা স্যাতসেতে শীতে লুজ একাকী তার সময় কাটাচ্ছিল।
অদ্রিতির একটা সেনা ব্যাটালিয়ন তখন সেখানে অবস্থান করছিল। ঐ সেনা ব্যাটালিয়নের এক মেজরের সাথে লুজের ভাব হল। যদিও লুজ এর আগে কখনো ইতালিয়ানদেরকে তেমন ভাল করে চিনত না, তবুও সে মেজরের প্রেমে পড়ল।
যাহোক, একদিন সে নিকের কাছে চিঠি পাঠালো। সে লিখল, তাদের মধ্যে যা যা হয়েছিল, তা ছিল নিছক ছেলেমী। সে সবের জন্য সে সত্যিই দুঃখিত। লুজ বুঝতে পারছিল, নিক হয়তো তার এমন আচরণের কারণ বুঝতে পারবে না। কিন্তু সে নিশ্চয়ই তাকে একদিন না একদিন এর জন্য ক্ষমা করবে এবং তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। সত্যিই সে অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত ভাবে এই বসন্তে বিয়ে করতে চেয়েছিল। লুজ নিককে সত্যিই ভালোবাসত। সে চাইত নিকের একটা বিরাট ক্যরিয়ার হোক এবং নিকের সামর্থ্যের উপর তার বিশ্বাস ছিল। কিন্তু সে বুঝতে পারছিল নিককে বিয়ে করাটা হবে নিছক ছেলেমী। ঐদিকে ইতালিয়ান মেজর ঐ বসন্তে তো নয়ই , এমনকি অন্য কোনো সময়ও লুজকে বিয়ে করে নি। লুজ কখনো শিকাগো থেকে তার চিঠির কোনো জবাব পায়নি।
নিক টেক্সিতে বসে লিঙ্কন পার্কে যাবার সময় একটি লুপ ডিপার্টমেন্টের সেল্স-গার্লের কাছ থেকে গনোরিয়ায় আক্রান্ত
হল। আর এই গনোরিয়াতেই মৃত্যুবরণ করল নিক।
— অনুবাদ- স্বপ্নীল পরান
— মূল লেখকঃ আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৬
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: হয়তোবা, তবে আমার কেমন যেন একটু ভাল লেগেছিল। এই আর কি !!!
ধন্যবাদ গ্রিন জোন ভাই।
২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৪
তুষার আহাসান বলেছেন: অনুবাদ কি আপনি করেছেন ভাইয়া,
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: জ্বি ভাইয়া, আমিই করেছি।
গল্পটা পড়ে কেমন যেন একটা ভাল লাগা তৈরি হল। তাই অনুবাদ করে শেয়ার করে দিলাম।
ধন্যবাদ তুষার আহাসান ভাই, অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য। আর আপনার জন্যেও শুভ কামনা।
৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৭
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: শেষ'টা ঠিক শেষের মত হল না, তবুও ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৯
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: ধন্যবাদ ফেলুদার তোপসে ভাই, অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য।
আর আপনার জন্যেও শুভ কামনা।
৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৭
প্রামানিক বলেছেন: গল্প খুব ভাল লাগল। ধন্যবাদ
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫১
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই, অনুপপ্রাণিত করার জন্য।
আর আপনার জন্যেও শুভ কামনা।
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৭
ফেলুদার তোপসে বলেছেন: শেষ'টা ঠিক শেষের মত হল না, তবুও ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।।
৬| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৮
সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: ভালো লেগেছে। তবে ফিনিশিংটা একটু করুণ।তাও ভয়ানক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫৩
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: ধন্যবাদ সাইয়িদ রফিকুল হক ভাই, অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য।
আর আপনার জন্যেও শুভ কামনা।
৭| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২০
গেম চেঞ্জার বলেছেন: প্রচেষ্টা চালিয়ে যান, সাথেই আছি।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৩
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: ধন্যবাদ গেম চেঞ্জার ভাই, অনুপ্রাণিত করার জন্য।
পাশে আছি আমিও।
৮| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:১৩
মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: মোটামুটি লাগল। আশা করি আস্তে আস্তে আরও ভাল অনুবাদ গল্প আমাদের উপহার দিবেন।
চালিয়ে যান।
অনেক অনেক শুভ কামনা।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:১৭
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: ধন্যবাদ মাহবুবুল আজাদ ভাই, অনুপপ্রাণিত করার জন্য।
আর আপনার জন্যেও শুভ কামনা।
৯| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২১
আরজু পনি বলেছেন:
অনুবাদ করার সাহস সবার থাকে না।
সেদিক থেকে আপনি অনেকের চেয়েই এগিয়ে আছেন ।
আশা করি সামনে কখনো নামকরা অনুবাদক হিসেবে আপনার নাম পাবো ।
প্রচেষ্টায় অনেক শুভকামনা রইল।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: ধন্যবাদ আরজুপনি ভাই, অনুপ্রাণিত করার জন্য।
শুভ কামনা আপনার জন্যেও……………
১০| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩০
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অনেকটা বাস্তবতা উঠে এসেছে গল্পে। ভালোবাসা না ক্ষণিক আবেগ -এটা এমন এক প্রশ্ন যার জবাব খুঁজতে খুঁজতেই জীবন পার হয়ে যায়।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৮
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: ঠিক বলেছেন রেজওয়ানা আলী তনিমা আপ্পি। আসলে এই বিষয়টা নিয়ে আজীবন থিসিস করে গেলেও আমার মনে হয় না যে, শেষ করা যাবে………
শুভ কামনা আপনার জন্য……………
১১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৭
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: গল্প খুব ভালো লাগল। ধন্যবাদ
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:০৭
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
শুভ কামনা আপনার জন্য………
১২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭
ডট কম ০০৯ বলেছেন: ট্রাজিক ঘটনা।
আর আরজুপনি ভাই না, আপু।
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৪
স্বপ্নীল পরান বলেছেন: হুমমমমমম ঘটনাটা সত্যিই এমন।
আর হ্যা, আরজুপনি ভাই না আপু সেটা সম্পর্কে আমি অবহিত নই।
নতুন তো………
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪৪
গ্রিন জোন বলেছেন: ভাল, তবে খুব উচ্চমানের তা মনে হয়নি...........