নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার একটি দুঃখ আছে, নাম তার \'সুখ\' ! যার পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হচ্ছি আমি নিত্যি বেহুশ !!( [email protected] )

কথাকথিকেথিকথন

আমি একজন পরীক্ষার্থী...

কথাকথিকেথিকথন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চতুরঙ্গ

২৯ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬

১.
পাপ
''
- আমি আবার ফিরে আসবো। আবারও খুন করবো, গুম করবো!

সে ফাঁসির দড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললো। মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা থাকলেও কথাগুলো বেশ জোরেই শোনা গেল। জল্লাদও ভয় পেয়েছে। তাকে এগারো মার্ডার, পনেরো ডাকাতি এবং পাঁচটি ধর্ষণের মামলার বিচারে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে- হ্যাং টিল ডেথ। টাইম বারোটা ছয়, রুমাল পড়লো, জল্লাদ লিভারে টান দেয়। সে ঝুলতে থাকলো।

এক বছর পর ফাঁসির মঞ্চে আরেকজন। সেও দেখতে তার মত। সেইম টাইম কিপার, রুমাল কিপার এবং জল্লাদ। ওরা আরেকটা ফাঁসি কার্যকর করলো। এভাবে পনেরো বছর তারা এক ব্যাক্তিকে বারবার ফাঁসি দিচ্ছে। একদিন সকালের খবরে আসে ওরা তিনজন সেই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে মৃত্যুবরণ করে। শুধু জল্লাদকে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। বাকি দু'জন নিচে পড়ে আছে। সেখানের দেয়ালে ওরা লিখে গেছে,

-আমরা পাপকে কখনো মারতে পারি নি। আমাদের ক্ষমা কোরো।


২.
আকাশ যাত্রা
''
ঘাটের সাইনবোর্ডে 'আকাশ যাত্রা' লেখা দেখে নৌকায় চড়ে পড়লাম। কিছুদূর যাওয়ার পর মাঝি বললো,

- শুয়ে পড়েন

আমি শুয়ে পড়লাম। আকাশটাকে চিত হয়ে দেখছি। নৌকায় শুয়ে কখনো আকাশটা দেখেছেন ? শুধু বড্ড আকাশটা আর আপনি এবং এর মাঝে শূন্যতা! আপনার মনে হবে বিশাল আকাশটা শুধুই আপনার। মাঝি নৌকা বাইছে। ধীরে ধীরে সে গভীরে যাচ্ছে। মাঝি বললো,

- জানেন, জলের শেষে আকাশ আছে, মস্ত বড় আকাশ!

আমি উত্তর করলাম না। আমি আকাশ এবং আমি'র মাঝখানের শূন্যতার মধ্যে ডুবে আছি! স্রোতের কাঁপন বাড়ছে। আমি দুলছি বেশ। মনে হচ্ছে আমি আকাশ এবং সমতলের মাঝে চিত হয়ে ভাসছি! নৌকার গতি বেড়েছে। মাঝির বৈঠার শব্দ আসছে না, স্রোতের তীব্রতার শব্দ শুনছি শুধু। মাঝি আমাকে ঘুর্ণির কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। মাঝি বললো,

-আপনি শুয়ে থাকেন। আকাশ যাত্রা শুভ হোক...

আমি শুয়ে থাকলাম। নৌকা আমাকে নিয়ে ঘূর্ণির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। ঘূর্ণি আমাকে গিলে নিচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি আকাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মাঝিকে নৌকায় দেখা যাচ্ছে না। সে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।

৩.
জঙ্গলমুখী
''
জঙ্গলমুখী অদ্ভুত বাড়ি তার। বাড়ির সীমানা বেশ বড় হলেও সে পশ্চিমের ঘন জঙ্গল ঘেঁষে জঙ্গলমুখী বাড়ি করেছে। বাড়ির দরজা দিয়ে বের হলেই জঙ্গলের মুখ! চোখ ঝলসে দেয় এমন গাঢ় সবুজ জঙ্গল। উপরের খোলা বারান্দায় দাঁড়ালেই চোখ হারিয়ে যাবে বিস্তৃত জঙ্গলের বুকে। যেন জঙ্গল তার চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে, পলক ফেলছে! বহু বছর হয় সে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তার খবর কেউ রাখে না, কেউ জানে না। তেমনি করেই সে নিজেকে আঁড়াল করেছে। জঙ্গলের মুখ দিয়ে সে ভেতরে ঢুকে পড়ে। গহীনে সে একটা দোলনা পেঁছিয়েছে। সেখানে গিয়ে সে প্রায়শই দোলনায় ধাক্কা দেয়। দোলনা উড়ে গিয়ে আবার তার কাছে ফিরে আসে। যেন কেউ একজন সে দোলনায় বসেছে! দোলনা উড়ে গিয়ে ঝরনাকে স্পর্শ করছে। যেন দোলনা আরহী ঝরনাতে মুখ ভিজিয়ে আসছে।

৪.
বোমারু
"
সে হাঁটছে। দরজাটা খুলে সে হেঁটে হেঁটে ভেতরে আসছে। তার পায়ের শব্দ আমার কানে বাজছে। ফ্লোরের পড়ে থাকা টুকরো কাচগুলো আরো টুকরো হচ্ছে। সে ধীরে ধীরে ভেতরে আসছে। আমি আরো ভেতরে যাচ্ছি। সে আসছে, আমি ভেতরে ঢুকছি... সে আসছে, আমি ভেতরে ঢুকছি। সে আমাকে খুঁজছে। কী অদ্ভুত এই ছোট্ট ঘরে আমি শুধু ছুটছি, সে খুঁজছে আমায়। ঘরের আয়তন যেন বাড়ছে আমাদের সাথে!

স্পেশাল স্কোয়াড প্রস্তুত। গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে সে আজ ঘরে এসেছে। তাকে যেকোন মূল্যে ধরতে হবে। অতীতে বেশ কয়েকটা অপারেশন অসফল হয়েছে। এবার তিন বাহিনীর ইন্টিলিজেন্সের সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে এই স্পেশাল স্কোয়াড। সে এবার ফাঁকি দিতে পারবে না এমন নিশ্চয়তা দিচ্ছে এই স্কোয়াড।

সে একজন বোমারো। তার ঘরে তার বানানো বোমা ব্লাস্ট হয়। গবেষক দল ব্লাস্ট হওয়ার পর সিনারিও বিশ্লেষণ করে বোমারুর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পায় নি। শুধু পোড়া একজন নারীর দেহ উদ্ধার করতে পারে তারা। তাই ধারণা করা হচ্ছে তখন সে ঘরে ছিলো না৷ কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় এই ব্লাস্ট ঘটে। বিভিন্ন ব্যাক্তির স্টেটমেন্টে উঠে এসেছে ওই নারী বোমারুর বউ অথবা বান্ধবী ছিলো। ওরা লিভটুগেদারে থাকতো অথবা হাসবেন্ড ওয়াইফ ছিলো। কেউ কেউ আবেগী ভাষায় বলেছে ওদের কেমেস্ট্রি অনন্য অসাধারণ ছিলো, দে ডেফিনিটলী মেইড ফর ইছ আদার!

স্পেশাল স্কোয়াড এগিয়ে যাচ্ছে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। পুরো বাড়ি বাহিনী দিয়ে ঘেরাও। স্কোয়াড দরজার নিকটে চলে এসেছে। দরজা ফাঁকা হয়ে আছে। নিশ্চয় সে ভেতরে অবস্থান করছে। স্কোয়াডের সদস্য ছড়ায়ে ছিটায় একে একে ভেতরে ঢুকছে। সবাই যখন ভেতরে ঢুকে পড়ে বাইরের দরজাটা আওয়াজ দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। স্পেশাল স্কোয়াডের সদস্যরা তাদের আবিষ্কার করে এক বিশাল ফাঁকা মাঠে! এক নারী কন্ঠ ভারী গলায় বলে উঠে,
I hate him, kill him!

মাঠের এক প্রান্তে এক ব্যাক্তি অন্যদিক ফিরে দাঁড়িয়ে আছে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৩৭

শায়মা বলেছেন: কঠিন কাব্যের মতন এখন গদ্যও আসছে একের পর এক।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৮

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: গদ্য সহজ!

কেমন আছেন?

২| ২৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:১২

রাজীব নুর বলেছেন: চতুরঙ্গ নামে রবীন্দ্রনাথের একটা উপন্যাস আছে।

অতি জটীল লিখেছেন। ভালো লেগেছে।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪০

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:


সুন্দর মন্তব্যে ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২৬

মা.হাসান বলেছেন: রঙ্গ সমগ্র অসাধারণ হয়েছে।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪০

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।

৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:১৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: জটিল পোস্ট।
"জানেন, জলের শেষে আকাশ আছে, মস্ত বড় আকাশ" - "আকাশ যাত্রা" ভাল লেগেছে।

০৩ রা মার্চ, ২০২১ রাত ৯:১২

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন:
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যে । কেমন আছেন?

৫| ০৩ রা মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি ভাল আছি। আশাকরি, আপনিও কুশলেই আছেন।

০৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:০৪

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: আমিও ভাল আছি । শুভ কামনা রইলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.