নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাশ্বত স্বপন

শাশ্বত স্বপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিল বাওয়া পলো বাওয়াঃ মাছের হরিলুট উৎসব

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১



শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ভাটি বাংলার জলাশয় শুকিয়ে আসে। আমারি মত কর্মমুখর মানুষগুলি শীতের সকালে কাজের টানে ছুটে চলে মাঠ-ঘাট-হাওড়-বাওড়-বিলে। কাজের সাথীরা মাঝে মাঝে মাঠের কাজ না করে অথবা কাজ ফেলে কোথা যেন, ছুটে যায়। হঠাৎ কোন সাথীর ডাক শুনি, ‘কুইক্কা--, যাবিনি, আইরল বিলে, কাইলকা দুলাইললা মেলা মাছ ধরছে, যাবিনি?’ গ্রামে যারা বাস করেন তারা জানেন, খোকা থেকে কোকা, কোকা থেকে কুইক্কা--কিভাবে নামের বিবর্তন হয়। যাই হোক, বর্গা ক্ষেতের কাজ ফেলে ছুটি চলি সাথীদের সাথে।



গ্রাম বাংলার হাওড়-বাঁওড়-ছোট নদী-নালা-খাল-বিল-ডোবায় মাছ ধরার হিরিক পরে যায়। আড়িয়ল বিলে মাছ ধরতে কতবার গিয়েছি। ছয় সাত মাইল হাঁটাপথ। শীত কোথায় যেন, পালিয়ে যায় আমার দেহ থেকে।মনের কি টান, কি উদ্দাম--ঠান্ডা পানির মধ্যে মাছ ধরা! শিং মাছের কাঁটা ফুটে কত ক্ষত হয়েছে হাত-পা। বিষকাঁটালী বিরুৎ গাছের পাতা-ডগা দিয়ে কত ঘষেছি ক্ষতস্থান। পল, টাকজাল, জালি, ক্ষেতজাল, টেডা, বড়শী ইত্যাদি দিয়ে টেংরা, বউজ্জা, শিং, মাগুর, কই, পুঁটি, শৈল টাকি--কত না মাছ ধরেছি! বৃহত্তর ময়মনসিংহের ‘বিল বাওয়া’ উৎসবের মত আমাদের এই বিক্রমপুর অঞ্চলেও ‘মাছের হরিলুট’ উৎসব হত। বাঁশের ঝুড়িতে, সিলভারের হাড়িতে অথবা গামছার আঁচলে মাছ বেঁধে রান্নার স্বাদ নিয়ে কত গল্পই না করেছি সাথীদের সাথে। আমাদের অঞ্চলের কিছু কিছু বিল-ঝিল-হাওড়ের গভীর পানি হেমন্তের পরেও থাকে। গ্রীষ্মের চৈত্রমাসে সব শুকিয়ে আসে। কি যাদুর টানে অথবা কি রহস্যময় আনন্দে মাঘ মাসের শীতেও মাছ ধরতে শীত অনুভব হয় না। যেটুকু অনুভব হয়, দু’একটা সিং, কই ধরার পর তাও চলে যায়। মাঝে মাঝে আকিজ বিড়ি, রমনা বিড়ি অথবা যে কোন সুখটানে শীত গা থেকে ঝড়ে পরে মাটিতে।





সবাই খুশী হবে বলে, বিল থেকে আসার পথে কলমী শাক, সরিষা পাতা নিয়ে আসি বাড়ীতে। হরিলুটের মাছ পাড়া-প্রতিবেশী, আত্নীয়-স্বজনদের মাঝে প্রতিবছর শীতের সময়ে কম-বেশি ভাগ করে দেওয়া হত। বড় ভাগটা থাকত আমাদের পাড়ার বীনাদের জন্য। গায়ের কোন পুকুরে মাছ ধরার ডাক পড়লে বীনাকে পুকুর পাড়ে থাকতে বলি। নানা ভংগিতে মাছ ধরি আর ওর হাসি মাখা মুখটা দেখি। মাছ ধরার সেরা কৃতিত্ব নিয়ে শুকনো কাঁদার চটচটে পায়ে মাটির ঘরের আঙিনায় জুড়ি-ডোলার সব মাছ ফেলি। ছোট মাছগুলো রেখে সব দেই প্রতিবেশীদের বিলিয়ে। ঠোঁট চাপা, মুখ ভেংচি আর কথা কাঁটার ভংগি দেখে বুঝি, এই ভাগাভাগি বীনার পছন্দ হয়নি। বলি তারে, ‘আরে, অগো নাচানাচি আর দোয়ায়ইতো এত মাছ ধরলাম।’ বলে সে, ‘তাই বইলা, সব বড় মাছ হেগো দিবা।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.