![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহৎ মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে চিকিৎসা সেবায় মহৎ মানুষ খুবই কম। সারা জীবন চিকিৎসা সেবায় ত্যাগ স্বীকার করা, নিজের জীবনের সব ইচ্ছা জলান্জলী দেওয়া, সব মানুষের কাছে ভালো থাকা, সাদা মনের এক মহৎ মানুষের নাম ডা. সামন্ত লাল সেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সাথে, বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার ইতিহাসে যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা, পোড়া রোগির চিকিৎসা নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেছেন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির জাতীয় প্রধান সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন ।
প্রশ্নঃ জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির রাজপথে চলতে আমাদের কি ধরনের সাবধানতা নেওয়া উচিত?
ডা. সামন্তঃ বাস বা সিনজি অটো রিক্সায় যারা যাতায়াত করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, দরজা-জানালা বন্ধ করে জেল খানার মত গাড়িকে আবদ্ধ করবেন না। আবদ্ধ গাড়িতে অতি গরম বাস্প বাতাস নিশ্বাসের মাধ্যমে শ্বাসনালী পুড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দিতে পারে, তাই বের হবার দরজা-জানালা খোলা রাখুন, গরম বাতাস বের হতে দিন।
প্রশ্নঃ ঘটনা ঘটার মুহূর্তে করণীয় কি?
ডা. সামন্তঃ ঘটনা ঘটার মুহূর্তের মধ্যে স্টপ ড্রপ রুল মানতে হবে অর্থাৎ মুহূর্তেও মধ্যে সব কাজ বন্ধ করে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিতে হবে। তারপর পোড়া দেহে প্রচুর পানি ঢালতে হবে।
প্রশ্নঃ বার্ণ রোগীদের জন্য গোল্ডেন আওয়ার বলে একটা কথা আছে?
ডা. সামন্তঃ ১ম চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে রোগীকে বার্ন ইউনিটে আনতে পারলে রোগির জন্য এই সময়টাকে আমরা গোল্ডেন আওয়ার বলি। এই সময়টা রোগির জন্য ভালো। এর পর যত দেরী হবে ফ্লুইড লস তত বেশি হবে, রোগীর অবস্থাও খারাপ হতে থাকবে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের কোথায় পোড়া রোগির চিকিৎসা হয় ?
ডা.সামন্তঃ প্রাথমিক চিকিৎসা সব হাসপাতালেই হতে পারে। একটু বেশি খারাপ হলে ঢাকা মেডিকেল ছাড়াও মিটফোর্ড, সোহরাওয়ার্দ্দী, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা,বগুড়া, আরো অনেক জায়গায় পোড়া রোগীকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া যেতে পারে। আপনারা যদি প্রচার করেন তাহলে পোড়া রোগীর উপকার হবে।
প্রশ্নঃ পোড়া রোগীর চিকিৎসা কি প্লাস্টিক সার্জন ছাড়া অন্য বিষয়ের কোন ডাক্তার করতে পারেন না?
ডা. সামন্তঃ পোড়া রোগীর প্রাথমিক চিকিৎআ সব ডিসিপ্লিনের ডাক্তারাই করতে পারেন কিন্ত তার পরের চিকিৎসা বা মূল চিকিৎসা প্লাস্টিক সার্জনরাই করেন।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে প্লাস্টিক সার্জন কত জন?
ডা.সামন্তঃ মোট ২৫ জন, ধীর গতিতে হলেও এই সংখ্যা বাড়ছে।
প্রশ্নঃ এই স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে সারা দেশের পোড়া রোগির চিকিৎসা কিভাবে সম্ভব? বিশেষ করে বর্তমানে দেশের এই পরিস্থিতিতে?
ডা. সামন্তঃ চেহেরা বা দেহ সুন্দর করা বাদে, শুধু পোড়া রোগী ও ঠোঁট কাটা-তালু কাটা রোগির জন্য এই মুহুর্তে সারা দেশে ৫০০ প্লাস্টিক সার্জন দরকার। ২৫ জন দিয়ে তাই আমাদের খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে।
প্রশ্নঃ রংপুর বা রাজশাহীতে চিকিৎসা হয় জেনেও অনেকে ঢাকা মেডিকেলে চলে আসেন, তাদের জন্য কিছু বলুন।
ডা. সামন্তঃ এরা ভুল করে। রংপুরে একটা পোড়া রোগি যদি ঢাকা আসতে চায় তাহলে ২/৩ সময় লেগে যাবে, দেশের বর্তমার পরিস্থিতিতে আরো বেশি সময় লাগবে। গোল্ডেন আওয়ার অনুসারে তার প্রচুর ফ্লুইড লস হবে, রোগির মুত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। তাই দেশের মানুষকে বলব, পোড়া রোগি নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কাছের কোন হাসপাতালে যাবেন, প্রাথমিক চিকিৎসা হবার পরে যদি হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জন বা কর্তৃপক্ষ মনে করেন, বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়া দরকার, তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা মেনটেন করার পরে আপনারা অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসবেন।
প্রশ্নঃ পোড়া রোগীর জন্য বর্তমান বার্ণ ইউনিট, আই সি ইউ কবে চালু হয়েছে, বেড সংখ্যা কত? খরচ কি রকম?
ডা. সামন্তঃ ২০০৩ সালে বর্তমান বার্ণ ইউনিট এ বিল্ডি এ চালু হয়। আর আই সি ইউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা বর্তমান সরকার ও এক্সিম ব্যাংক এর সহায়তায় এক বছর হল চালু হয়েছে। এর বেড সংখ্যা ১০। বেসরকারী পর্যায়ে ২০% পোড়া রোগির জন্য চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা, ৫০% পোড়া রোগির জন্য ব্যয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। সরকারী বলে আমাদের আইসিইউ এর কোন খরচ রোগিকে বহন করতে হয় না, সব সরকারই বহন করে।
প্রশ্নঃ বেসরকারী পর্যায়ে পোড়া রোগির চিকিৎসা কোথায় হয়?
ডা. সামন্তঃ বেসরকারী ভাবে সিটি হাসপাতাল, সেন্টাল হাসপাতালে শুরু হয়েছে।
প্রশ্নঃ ২০০৩ সালের ৫০ বেড এর এই ইউনিট কাগজে কলমে ও কথায় ১০০ ইউনিট হিসাবে বলা হয়, কিন্তু আমরা যতটুকু জানি বরাদ্ধ আসে ৫০ জনের জন্যই। জাতীয় প্রধান সমন্বয়ক হিসাবে আপনার কাছে জানতে চাই।
ডা. সামন্তঃ ঘটনা সত্য। আমলা তান্ত্রিক জটিলতাই এর মূল কারন। তবে অচিরেই সমস্যা সমাধান হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আ.সঃ স¤প্রতি রাজনীতির সহিংসতার শিকার হয়ে কত জন ভর্তি আছেন? কত জন মারা গেছেন?
ডা. সামন্তঃ প্রায় ৩৫০ জনের মত ভর্তি আছেন। গত কাল পর্যন্ত ৩২ জন মার গেছেন।
প্রশ্নঃ আগে রোগী ও বিশিষ্টজনের কাছে আপনার পরিচিতি ছিল। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টমিডিয়ার কারনে আপনার মহৎকর্ম উদ্দীপনা এদেশের সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। দেশের আপামর সাধারন মানুষ আপনাকে দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা, ডা,. ইব্রাহীমের মত শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আপনার অনুভূতি কি?
সামন্ত লাল সেনঃ আমি মনে করি, ভগবান ডাক্তাদেরকে আর্শীবাদ দিয়ে মানব সেবায় জন্য পাঠায়। কেউ মানুষের ভালোবাসা নিয়ে মানব সেবায় বেশি ব্যস্ত থাকে, কেউ সেবার পাশাপাশি অর্থ রোজগারেই বেশি ব্যস্ত থাকে। একটু ধৈর্য্য নিয়ে সেবা করলে মানুষের মন জয় করা খুব সহজ। আমি নিজের জীবনে কারো খারাপ কিছু করি নাই, চিন্তাও করি নাই। আমার দীর্ঘ জীবনের কর্মের কারনে মানুষ হয়তো আমায় ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে। মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।
প্রশ্নঃ স্যার, আমরা জানি, আপনার উদ্দ্যোগেই হাসপাতালের বার্ন ইউনিট চালু হয়, সেই ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
ডা. সামন্তঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু চট্রগ্রাম থেকে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা রোগিদের ঢাকায় আনলেন। পঙ্গু রোগিদের চিকিৎসা দেখতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন পোড়া রোগীর জন্য প্লাস্টিক সার্জন দরকার। ১৯৭৫ সালে ড. বোজলিং নামে একজন ইন্ডিয়ান প্লাস্টিক সার্জন তিনি বাংলাদেশে নিয়ে আসলেন। আমি যখন ১৯৮০ সালে ঢাকা মেডিকেলে বদলী হয়ে এলাম তখন আমার অধ্যাপক ছিলেন ডা. শহীদুল্লাহ, ডা. কবীরউদ্দিন। দুজনেই মারা গেছেন। বার্ণ রোগিদের দুরাবস্থা দেখে আমরা সবাই সেই সময় চিন্তা করলাম আলাদা বার্ণ ইউনিট দরকার। ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ স্যারের নেতৃত্বে, অধ্যাপক কবীর স্যারের সহযোগিতায় তৎকালীন ৩৫/বি নামে একটা ওয়ার্ডে ৮ টি বেড নিয়ে ক্ষ’দ্র পরিসরে বার্ণ ইউনিট আমরা চালু করি। তারপর আমরা সরকারে কাছে প্রস্তাব রাখলাম আলাদা বার্ণ ইউনিট, আলাদা বিল্ডি তৈরী করার জন্য। তারপর আমরা জায়গা হিসাবে এই জায়গাটা (এটা আগে বস্তি ছিল) সিলেক্ট করি। ১৯৮৬ সালে সরকারের কাছে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন, শেখ সেলিম, এখানকার যারা নেতা ছিলেন, সবার সহায়তায় এই বিল্ডিং এর কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৩ সালে ৫০ বেডের বার্ণ ইউনিট হিসাবে যাত্রা শুরু করে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে বলুন।
সামন্ত লাল সেনঃ অনেক রোগী বিদেশে চলে যান। অথচ এমন কোন চিকিৎসা নাই যা বাংলাদেশের ডাক্তাররা পারে না। ৪০ বছর আগে এতটা ছিল না। এখন তো অনেক উন্নতি হয়েছে, বিশ্বমানের সেবা এখন এদেশেই সম্ভব। আপনি তো নিজে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন, আমার মনে পড়ে, ১৯৭৫ সালে পঙ্গু হাসপাতালে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন ছিলা না।এটা কঠিন একটা সাবজেক্ট। ম্যান্ডিবল, ম্যাক্সিলা ভেঙ্গে গেলে আমরাই ম্যানেজ করতাম। এখন তো আপনারাই করেন। যত দিন যাবে চিকিৎসা বি¹ানের উন্নতি হতেই থাকবে।
প্রশ্নঃ একদিন আপনি থাকবেন না, আপনার কর্ম দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা, ডা. ইব্রাহীমের মত চিরন্জীব করে রাখবে, আপনাকে নিয়ে আলোচনা হবে, মনোমেন্ট হবে, আপনার অনুভূতি কি?
ডা. সামন্তঃ আমাকে নিয়ে আলোচনা বা আমার মনুমেন্ট নিয়ে আলোচনা এই নিয়ে আমি ভাবি না। আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব আমার মৃত্যুর পর পোড়া রোগিরা যেন ভালো চিকিৎসা পায়। একদিন এই বার্ন ইউনিট আরো উন্নত হবে--এই আশা আমি করি। আমার ব্যক্তিগত জীবনে ইচ্ছা ছিল, চেহেরা বা দেহ সুন্দর করা বড় মাপের একজন প্লাস্টিক সার্জন হব, বড় মাপের অধ্যাপক হব কিন্তু পোড়া রোগিদের চিকিৎসা করতে করতে সব জলান্জলী দিয়েছি। বিদেশে অনেক বড় চাকুরী নিয়ে চলে যেতে পারতাম। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে, অনেক কষ্ট সহ্য করে, নিজের অনেক শ্রমে গড়া এই বার্ণ ইউনিট, পোড়া রোগি, এই দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে পারিনি। সব সময় ভাবতাম আমি না থাকলে কি হবে এই বার্ণ ইউনিটের? এখন একটা ভিত্তির উপর এই প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেছে, খুব শীঘ্রই উচু মানের ইন্সটিটিউট হবে। এর উন্নয়নের গতি এখন আর থেমে থাকবে না।
প্রশ্নঃ সবাই আপনাকে ভালবাসে। আপনি মানুষের মন জয় করতে পারেন। রোগী তথা মানুষের মন জয় করার বিষয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের প্রতি আপনার উপদেশ?
ডা.সামন্তঃ ভোগে সুখ নয়, ত্যাগেই সুখ। একটু ধৈয্য নিয়ে, একটু ভালোবাসা দিয়ে সেবা দিলেই রোগী তথা মানুষের মন পাওয়া যায়। জীবনের জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত অর্থ অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা যেন টাকার পিছনে না ছুটি, মানুষ যেন অগোচরে আমাদেরকে ডাকাত, কসাই না বলে। ভালো ব্যবহার, ভাল মানের সেবা রোগিদের বিদেশ যাওয়া থামাতে পারে। ডাক্তার হবার আগে আমাদের সৎ, দায়িত্ববান ভালো মানুষ হতে হবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের প্রতি আমি আহ্বান করছি ‘আসুন, আমরা শুরু করি, আমরা জাগলে, সবাই জাগবে, জাগবে বাংলাদেশ।’
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৭
শাশ্বত স্বপন বলেছেন: হ্যাঁ, দৈনিক আমাদের সময় এবং জাপানের কমিউনিটি নিউজ পত্রিকায়
২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৮
এহসান সাবির বলেছেন: ভালো পোস্ট দাদা।
২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৯
শাশ্বত স্বপন বলেছেন: এহসান ভাই , পড়ার জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এটা কি আপনার লেখা পোষ্ট ভাইয়া? এটা কি অন্য কোথাও প্রকাশিত হয়েছে?