নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাশ্বত স্বপন

শাশ্বত স্বপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাঘের শীত

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫১


বিপদ-আপদ-মঙ্গল-রোগ মুক্তি-পরকাল কামনায় বাংলার শাশ্বত সাংস্কৃতিক রূপের সাথে অগ্রহায়ণ-পৌষ-মাঘ মাসে শুরু হয় নানান পাগলের মেলা, পীর-মুর্শীদের ওরস, ওয়াজ মাহফিল। হেমন্ত শেষে ফসলে ফসলে ছড়িয়ে থাকে আঙ্গিনা-ঘর-গোলা। মুসলমানরা প্রথম ফসল দিয়ে মাজার, দরগায় ভাত-পিঠা-ফিন্নি-বানিয়ে শিন্নি দেয়; কেউবা কোন কিছু পাবার আশায়, কারো রোগ মুক্তি কিংবা মঙ্গল কামনায় পীর-মুর্শীদ বা পাগল বাবার জন্য প্রথম ফসল মানত করে রাখে। গাঁয়ের কোন কোন বাড়িতে ক্ষেতের বত্ত, সূর্য পূজা শুরু হয়। মানুষের দ্বারে দ্বারে ভাগ্যলক্ষ্মী কার্তিক-অগ্রহায়ণের কাঁধে চড়ে পৌষ-মাঘে ঘুরে বেড়ায়, মাঠ-ঘাট শস্য শ্যামলায় ভরিয়ে দেয়। আর তাইতো, সনাতন জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য ধর্ম বা গোত্র জাতির মধ্যে অসীম রহস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নিজেদের তৈরী বিশ্বাসের মিথগুলোকে গড়ে তোলে নিজেদের মতো করে।


কদম বাবার মেলা শীত প্রকৃতির আরেক অকৃত্রিম রূপ। নানা জাতের মাঘের পাগল এখানে এসে মাস খানিক ভীড় করে আর সারাদিন গান করে। ব্যবসায়ীরা আর ভক্তরা খুশী থাকলে এ মেলা সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত চলে। নানা রকমের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা। নানা স্বাদের মুড়ী-চিড়া-খইয়ের মোয়া-সন্দেশ-নাড়ু-বাতাসা-কদমা-মিষ্টি খই-চিনি মাখানো ছোট ছোট গোল মিষ্টি-নিমকী-গজা--কত না স্বাদের, গন্ধের খাবার। মাঘ মাসের শীতের মেলায় মানুষের ভীড়ে একটুও শীত লাগে না। ছোট্ট বেলায় তাই আগুন না জ্বালিয়ে, মায়ের সাথে চুলার কাছে না বসে উষ্ণতার জন্য মেলায় চলে যেতাম।


কোন কোন স্কুলে শুরু হয় বার্ষিক-ক্রীড়া অনুষ্ঠান। বড় রাস্তায় গাড়ি হাঁকিয়ে মাইক বাজিয়ে কোন স্কুলের শিক্ষা সফর অথবা কোন ক্লাব, সংঘের সদস্যরা বনভোজনে ছুটে চলে--নাচে, গানে, আনন্দে আত্নহারা হয়ে। ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায়ও হেড লাইটের আলোয় গাড়ী চলে শহরে। সচ্ছল মানুষেরা দেহের উপর আরামের বোঝা চাপিয়ে অথবা নানা রংয়ের টুপি, জ্যাকেট, হাত মোজা, পা-মোজা, কোট-টাই পরিধান করে শীতকে হাসি দিয়ে মুখে বরন করে। অসচ্ছল, দরিদ্রদের হয় একটি চাদর, নয়তো একটি জামা, কারো মাফলার থাকে, কারো টুপি, কেউবা একটি লুঙ্গী গায়ে দিয়ে আরেকটি ছিঁড়া লুঙ্গী গায়ে জড়ায়ে রাখে--এরা সর্বদা আগুনের কাছে থাকতে চেষ্টা করে অথবা হাড় কাঁপানো শীতে ফুটপাতে কুড়ানো কাগজ পুড়ায়ে উষ্ণতা অনুভব করে। তাই মনে হয়-এ শীত যেন মানুষের হাতে গড়া এ বুর্জোয়া সমাজে বিত্তবানদের জন্য পোশাক প্রদর্শনী আর নিঃস্বদের জন্য সহিষ্ণুতার অগ্নিপরীক্ষা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.