নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র

পারভেজ আলম

হাসরের ময়দানে ইট কাঠ আর কংক্রিটের দেয়ালে, রক্তের কালিতে, কবিতা কালাম লিখে মরা মানুষএর মিছিলে দাঁড়ায় একবিংশের রাসুল। দুই হাত ভরা ব্যাগে নানান ব্র্যান্ডের আমলনামা।

পারভেজ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আল্লাহর মৃত্যু ও নিৎসের উৎকন্ঠা

১৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৫৯

“আল্লাহ মইরা গেছে! আল্লাহ মৃত! আমরা তারে মাইরা ফালাইছি” - ফ্রেডরিক নিৎসে, দ্যা গে সাইন্স।



“আল্লাহ মইরা গেছে”, উনবিংশ শতকের জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিক নিৎসে’র সবচেয়ে বিখ্যাত এবং কূখ্যাত উক্তি। এই উক্তি তিনি প্রথম ব্যাবহার করেন তার সবচেয়ে ব্যক্তিগত আবেগ অনুভুতির কাজ বলে স্বস্বীকৃত পুস্তক “দ্যা গে সাইন্স”এ। তবে এই উক্তি বিখ্যাত হয়ে আছে তার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক “দাস স্পোক জরাথুস্থ্রা” বাঙলায় “জরথুস্থ্র কহেন” এর মাধ্যমে।



“আল্লাহ মইরা গেছে”, এইটা কেমন কথা? নিৎসে জার্মান ছিলেন। জার্মান ভাষায় তিনি লিখছিলেন "Gott ist tot", ইংরেজি ভাষায় যার অনুবাদ “God is dead”। নিৎসে অবশ্য কোন প্রবন্ধ রচনায় এই ঘোষনা করেন নাই। তার তৈরি চরীত্র ‘পাগল’ এর মুখ দিয়াই এই বক্তব্য তিনি দেয়াইছেন, এই পাগলরে আমরা পরে দেখি প্রাচীন যুগের ফারসি নবীর নাম আর আদলে তৈরি নিৎসের নবী জরথুস্ত্র রূপে। এই পাগল আর এই জরথুস্থ্র অবশ্য নিৎসে নিজেই।



এক ধর্মনিষ্ঠ ক্যাথলিক পরিবারে নিৎসের জন্ম। তার এই আল্লাহ তাই আপাত দৃষ্টিতে ইব্রাহিমী ধর্মের খ্রীষ্টান আল্লাহ বইলাই গণ্য হয়। কিন্তু ইব্রাহিমী আল্লাহ তো এক অমর অজর সার্বভৌম সত্ত্বা, এই সত্ত্বার তো মৃত্যু নাই। তাইলে কি নিৎসে এমন কোন মরণশীল আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন যেই আল্লাহ হঠাৎ কইরা উনবিংশ শতকে মারা গেছেন? সেইটা সম্ভব না, কারণ নিৎসে নাস্তিক ছিলেন, অন্তত তার নিজের জবানিতে তাই মনে হয়। নিৎসে নিজেরে অভিহিত করেছেন একজন প্রবৃত্তিগতভাবে বা স্বভাবজাত নাস্তিক হিসাবে। নিৎসের জবানিতে -



“নাস্তিকতা আমার একেবারেই স্বভাবজাত। আমি বড়ই কৌতুহলী, বড়ই জিজ্ঞাসু। যেনোতেনো কোন উত্তরে আমার পোশায় না। ‘আল্লাহ’ একটা যেনোতেনো উত্তর, আমাদের চিন্তাবীদদের জন্য একধরণের অভদ্রতা, এবং দিন শেষে আবার আমাদের জন্য এক ধরণের যেনোতেনো ‘নিষেধাজ্ঞা’ও বটে, যে ‘তুমি এই বিষয়ে কোন চিন্তা করতে পারবানা’।”



প্রখ্যাত নিৎসে গবেষক ওয়াল্টার কফম্যান অবশ্য মনে করেন যে নিৎসে নাস্তিক ছিলেন না, বরং অজ্ঞেয়বাদ ছিল নিৎসের দার্শনিক অবস্থান, তবে এই খেয়ালী দার্শনিক আরো বহু শব্দের ব্যাবহারের এলাকা নিয়া যেমন উদাসিন ছিলেন, তেমনি উদাসিন ছিলেন নাস্তিকতা শব্দের এলাকা নিয়া, আর এই কারণে নিজেরে তিনি নাস্তিকই দাবি করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, “পরম সত্ত্বা” জাতীয় দার্শনিক “আল্লাহ” অথবা জগতের স্রষ্ঠা জাতীয় কোন সত্ত্বা বিষয়ে তার দার্শনিক অনুসন্ধানের শুরুর এলাকাটা “অজ্ঞেয়বাদী” হলেও ইব্রাহিমী আল্লাহর অনস্তিত্ত্ব বিষয়ে তিনি ছিলেন নিশ্চিত এবং সেইক্ষেত্রে একজন নাস্তিক। তো এই অজড় অমর ইব্রাহিমী আল্লাহর মৃত্যু বিষয়ে নিৎসের এই ঘোষনার অর্থ কি? যার অস্তিত্বে তিনি বিশ্বাসই করেন না, তিনি আবার তার পূর্ব অস্তিত্ব এবং বর্তমান মৃত্যুর ঘোষনাই বা কেমন করেন। তারচেয়েও আরো বড় সমস্যা আছে। নিৎসের পরিচয় আছে দার্শনিক হিসাবে, পরিচয় আছে মনবিজ্ঞানী হিসাবে, জনমনে এইসব তার ইতিবাচক পরিচয়। এর বাইরে নিৎসের এক নেতীবাচক পরিচয় আছে, সেই পরিচয় এন্টিক্রাইস্ট বা ঈসাদ্রোহী হিসাবে। খ্রীষ্টান ধর্ম এবং এই ধর্মের নীতি নৈতিকতার বিরুদ্ধে তার ঘৃণা এবং সমালোচনা তিনি তুলে ধরেছেন তার পুস্তক “দ্যা এন্টিক্রাইস্ট”এ। ইব্রাহিমী আল্লাহর মৃত্যুতে নিৎসের তাই খুশি হওয়ার কথা, অত্যন্ত আনন্দ আর উৎসবের মধ্য দিয়া “আল্লাহ মইরা গেছে” বইলা তার উল্লাস করার কথা। কিন্তু নিৎসে তা করেন নাই। আল্লাহর মৃত্যু ঘোষনা করেছেন তিনি বিমর্ষ মুখে, বেদনার সাথে। তার ঘোষনায় আনন্দ নাই, উৎকন্ঠা আছে।

নিৎসের পাগলা আল্লাহর মৃত্যুতে উল্লাস করে না, পাগল হইয়া সকালের আলোতেও লন্ঠন জালাইয়া বাজারে বাজারে ঘোরে আর চিল্লায়, “আমি আল্লাহরে খুঁজি, আমি আল্লাহরে খুঁজি”। লোকে তা দেইখা হাসাহাসি করে, জিজ্ঞাসা করে – আল্লারে খোঁজো কেন? সে কি হারায়া গেছে? সে কি বাচ্চা পোলাপানের লাহান রাস্তা হারাইছে? না কি সে আমগো ডরে লুকাইয়া আছে? না কি কোনখানে হাওয়া খাইতে গেছে? পাগলা তখন সবার মাঝখানে ঝাপায়া পরে, আর চিল্লায়, “আল্লা কই? আমি তোমগোরে কমু। আমরা তারে খুন করছি, তুমি এবং আমি, আমরা সবাই খুনি”। পাগলা বলে, “আল্লাহ মইরা গেছে, আল্লাহ মৃত, আমরা তারে মাইরা ফালাইছি”। পাগলা সুধায়, “যে ছিল এই দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্র, সবচেয়ে শক্তিশালী, আমাগো ছুরির ডগায় তার হইছে তার রক্তাক্ত মরণ, এই রক্ত আমাগো হাত থেইকা কে ধুইবে?”



আল্লাহর মৃত্যুতে নিৎসে খুশি না, বরং ব্যাথিত এবং হতাশ। নিৎসের এই হতাশার কারণ আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, প্রেম বা সহানুভুতি না, বরং নৈতিকতা বিষয়ে তার উদ্বেগ। পাগলা এমনি এমনি আল্লাহর সন্ধানে দিনের আলোয় লন্ঠন নিয়া বাজারে বাজারে ঘোরে না। যেই আল্লাহর মৃত্যুর কথা নিৎসে ঘোষনা করেছেন সেই আল্লাহ কোন বাস্তব অস্তিত্বশীল সত্ত্বা না, বরং সামাজিক সত্ত্বা। বিষয়টা আমি যেইভাবে বুঝি তা একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। আদতে আল্লাহরে কেউ কোনদিন দেখে নাই, আল্লাহ মানুষের সাথে কথা বলে না, সামনে আইসা আদেশ দেয় না, মুখ ভার কইরা রাগও করে না। তারপরেও আল্লাহর একটা হেজেমনিগত অবস্থান জনমানুষের জীবনে প্রবল। মানুষ আল্লাহরে ডরায়, তার আদেশ অমান্য করারে পাপ মনে করে, অমান্য করলে তা নিয়া অপরাধবোধে ভোগে, অনবরত আল্লাহর অস্তিত্ব নিজেরে জীবনে অনুভব করে। এই অনুভুতি অদেখা আল্লাহর সাথে কোন বস্তুগত সম্পর্কের কারনে তৈরি হয় না, হয় কিছু বাস্তব সত্ত্বার সাথে সম্পর্কের কারণে। মসজিদ, মোল্লা, কোরআন, হাদিস ইত্যাদি ধর্মপুস্তক অদেখা বা অজ্ঞেয় বস্তু না, বরং বাস্তব সত্ত্বা। আর এইসব বাস্তব সত্ত্বার সাথে মানুষের সম্পর্ক যতক্ষন থাকে ততক্ষন পর্যন্ত তার জীবনে আল্লাহর অস্তিত্ব আছে, ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ জীবন্ত সত্ত্বা। এইসব বাস্তব সত্ত্বার সাথে সম্পর্ক না থাকলে আল্লাহর আদেশ থাকে না, নিষেধ থাকে না, আল্লাহ থাকে না। মসজিদ যদি শিক্ষা এবং সামাজিক আচার বিচারএর কেন্দ্রে না থাকে, তাইলে আল্লাহ থাকে না। কোরআন, হাদিস যদি মূলধারার শিক্ষালয়ে পাঠ্য না হয়, তাইলে আল্লাহ থাকে না। শরিয়ত যদি বিচার ব্যাবস্থার আইন না হয়, তাইলে আল্লাহ থাকে না। নিৎসের সময় জ্যোতির্ময়কাল অর্থাৎ ইউরোপিয় এনলাইটেনমেন্টের পরের সময়। চার্চ বহু আগেই ক্ষমতা হারাইছে। উনবিংশ শতকের বেশিরভাগ বড় দার্শনিক, বিজ্ঞানী বুদ্ধিজীবী খ্রীষ্টান্ ধর্ম, খ্রীষ্টান আইন এবং খ্রীষ্টান আল্লাহর প্রয়োজন এবং যৌক্তিকতা অস্বীকার করেছেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা থেকে আল্লাহর আইন পুরাপুরি দূর করা হয়েছে। যেই সামাজিক বাস্তব সত্ত্বা এবং প্রতিষ্ঠানগুলা সমাজে আল্লাহর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতো সেইগুলা তাদের ক্ষমতা হারাইছে। মানুষের ওপরে তাদের কোন নিয়ন্ত্রন নাই, মানুষের কাছ থেকে আগের সম্মান এবং আনুগত্বও তারা পায় না। জ্ঞান আর আইনের উৎস এবং যাবতিয় ক্ষমতার উৎস হিসাবে ইউরোপীয় ভুখন্ডে ইব্রাহিমী আল্লাহ তখন মৃত। এই আল্লাহর মৃত্যুতে নিৎসে ব্যথিত না, উদ্বিগ্ন না। তার উদ্বেগ এই আল্লাহ যেই খ্রীষ্টান নৈতিকতা এবং আদর্শের ধারক ছিলেন সেই নৈতিকতা বা নৈতিকতার সিস্টেমের মৃত্যুতে। কিন্তু একজন ঈসাদ্রোহী নিৎসে ঈসার নৈতিকতা তথা ইব্রাহিমী ধর্মের নৈতিকতার মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন কেন হবেন? ভুলে গেলে চলবেনা যে নিৎসের চিন্তার পুরাভাগে মূলত ইউরোপ, ইউরোপের দর্শন এবং সমাজ। ইউরোপিয় এই সমাজ প্রায় দুই হাজার বছর ইব্রাহিমী ধর্ম শাষিত, জনমানুষের যাবতিয় নৈতিকতার উৎসই ছিল ইব্রাহিমী আল্লাহ। এই ইব্রাহিমী আল্লাহ যখন সকল জ্ঞান এবং আইনের উৎস হিসাবে আর থাকেন না, তখন জনমানুষের কাছে নৈতিকতার উৎস বইলাও আর কিছু থাকে না। আইন আর ট্যাবুর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। আইন থাকলেও সেই আইনের হেজিমনিগত অবস্থান না থাকতে পারে, সেই আইনের প্রতি মানুষের ভয় বা শ্রদ্ধাও না থাকতে পারে, থাকলেও কম থাকতে পারে, কিন্তু ট্যাবু মানুষের জ্ঞানে এমন প্রভাব বিস্তার করে যেই প্রভাবের বাইরে গিয়া সেই ট্যাবু অতিক্রম করা মানুষের পক্ষে সহজে সম্ভব হয় না। প্রায় দুই হাজার বছরের পথ পার হয়ে ইব্রাহিমী আইন মানুষের কাছে পায় ট্যাবুর মর্যাদা, আর সেই আইন যখন থাকে না, সমাজ তখন আক্রান্ত হতে পারে আদর্শহীনতা আর অনৈতিকতার পাগলামীতে। নিৎসের নায়ক তাই পাগল, আল্লাহর মৃত্যুতে সে পাগল হইছে, আল্লাহর খোঁজে অথবা নৈতিকতার উৎসের খোঁজে সে পাগল।

নিৎসে কি তাইলে আল্লাহর পূনর্জীবন চান, তিনি কি ইব্রাহিমী ধর্মের পূনঃপ্রতিষ্ঠা চান? তা না, তিনি অবশ্যই তা চান না। নিৎসের চাওয়া বুঝতে গেলে নিৎসে দর্শনের একেবারে মৌলিক কিছু বিষয় বুঝতে হবে। নিৎসের দর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হইল decadence বা “অবক্ষয়” বিষয়ক ধারণা। এই ডিকেডেন্স বা অবক্ষয় বলতে নিৎসে বুঝাইছেন “নৈতিক এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক আদর্শের অনুপস্থিতি”। অবক্ষয় আক্রান্ত মানুষ ধোঁকাবাজ, অন্তর্মূখী এবং দায়িত্ব জ্ঞানহীন। অবক্ষয় আক্রান্ত সমাজে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য চুরান্ত আকার ধারণ করে। নিৎসে খ্রীষ্টান তথা ইব্রাহিমী ধর্মকে অবক্ষয়ের ধর্ম, ইব্রাহিমী আল্লাহকে অবক্ষয়ের আল্লাহ এবং এর নৈতিকতাকে অবক্ষয়ের নৈতিকতা বলে গণ্য করেছেন। ইব্রাহিমী ধর্ম ও নৈতিকতা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট তথা স্বভাবধর্মকে গুরুত্ব দেয় না, মানুষের স্বভাবজাত গুন, ক্ষমতা এবং নৈতিকতার সন্ধান করে না বরং বেহেশতি আরামের লোভ আর দোযখী আযাবের ডর ভয় দিয়া মানুষের নৈতিকতা নিয়ন্ত্রন করে। নিৎসের মতে মানুষ অপার সম্ভাবনাময় প্রাণী, নিজের অন্তর্গত যোগ্যতা এবং ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে সে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। কিন্তু ইব্রাহিমী ধর্ম এবং নৈতিকতা মানুষকে মনে করে পাপি এবং অসহায়। নিজের পাপ, অসহায়ত্ব এবং দুর্বলতা থেইকা বাঁচতে এবং অপূর্ণতা দূর করতে সে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। নিৎসের মতে এই ধরণের আদর্শের প্রচার চরম অবক্ষয়ের সৃষ্ঠি করে, কারণ এই ধরণের আদর্শের অনুগত মানুষ নৈতিকতা এবং জ্ঞানের ক্ষেত্রে নিজের জ্ঞান, বিবেক এবং সাধণার উপরে নির্ভর করা শেখে না, ভয় এবং লোভের বশবর্তী হয়ে নৈতিকতার অনুসরণ করে। আর এই কারণেই নিৎসে ভীত এবং ব্যথিত। তার মতে, ইব্রাহিমী নৈতিকতার অনুপস্থিতিতে জনমানুষ আদর্শহীণতার পাগলামীতে আক্রান্ত হবে, কারণ ইব্রাহিমী ধর্ম এবং নৈতিকতা মানুষ হিসাবে তার মধ্যে অবক্ষয়এর সৃষ্ঠি করেছে, নিজের জ্ঞান এবং বিবেক খাটিয়ে নৈতিকতা নির্ধারণের ক্ষমতা এখন আর তার নাই। নিৎসে তাই নৈরাশ্যবাদে আক্রান্ত হন। কিন্তু যেই সময়ে দুনিয়ায় মানুষের জ্ঞান আর মুক্তবুদ্ধির চরম বিকাশ হচ্ছে, নয়া নয়া বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে দুনিয়ার চেহারা যখন পালটে যাচ্ছে সেই সময়টাতো ইতিবাচক একটা সময়, পুরো ইউরোপ সেই সময়টাকে গণ্য করছে আশাবাদের সময় বলে। কিন্তু নিৎসে তা বলছেন না, আধুনিক দুনিয়াকে তিনি দেখেছেন চরম নৈরাশ্যবাদী দুনিয়া হিসাবে, যেই সময়ে অবক্ষয় অত্যন্ত প্রবল। পুরণো আদর্শবাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়া নতুন কোন আদর্শবাদের জন্ম হচ্ছে না, আল্লাহর মতো সম্পূর্ণতা নাই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নতুন কোন পূর্ণতা তৈরি হচ্ছে না। নিৎসে একে বলেছেন এনার্কি অফ এটম অর্থাৎ আনবিক নৈরাজ্য বলে। পূর্ণতার যায়গায় বিচ্ছিন্নতার এই বিজয়কে নিৎসে গণ্য করেছেন অবক্ষয় হিসাবে। নিৎসের মতে এমন অবক্ষয়ের সমাজে ভাল মন্দের বোধ লোপ পাবে, উপর-নিচ বলে কিছু থাকবেনা, জোর যার মুল্লুক তার হবে, গোষ্ঠিগত শাসন এবং লুটপাটই হবে স্বাভাবিক ঘটনা। আল্লাহ’হীণ দুনিয়া তাই নিৎসের কাছে চরম নৈরাশ্যময়।

কিন্তু এই যে আল্লাহর মৃত্যু হইছে, এইটা তো মানুষ স্বীকার করে না। বেশিরভাগ মানুষই বলবে যে, নিৎসে আদতেই পাগল ছিলেন। সেকুলার আইন আসতে পারে, ধর্মপুস্তক শিক্ষাঙ্গন থেইকা দূর হইতে পারে, মসজিদ এবং মোল্লার আগের দাম না থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহ মানুষের মনে, আল্লাহর আইন মানুষের কাছে যেমন ছিল তেমনি আছে। আল্লাহর হেজিমনিগত অবস্থান এবং তার প্রদত্ত্ব ট্যাবু, এই সবই আছে। আর এইখানেই নিৎসে হতাশ, নিৎসের পাগলও হতাশ। কারণ মানুষ তার ঘোষনার গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ, আস্তিক অথবা নাস্তিক কেউ তার ঘোষনার গুরুত্ব বোঝে নাই। আল্লাহর মৃত্যুর খবরে কেউ উদ্বিগ্ন হয় নাই। বাজারের মানুষ যখন তার কথারে গুরুত্ব দেয় না, পাগল তখন হতাশ হইয়া ফিরা যায়, যাওয়ার আগে পাগল বলে, “আমি বোধহয় অনেক আগে আইসা গেছি। হায়, আমার সময়তো এখনো আসে নাই। মানুষের কানে এই খবর এখনো পৌঁছায় নাই”। নিৎসে মনে করেন যে, চোখের সামনে আল্লাহর মৃত্যু দেখার পরও মানুষ নিজের অন্তরের গোপন কোনায় লুকানো ভয়ের কারণে এখনো নিজেই নিজের কাছে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা স্বীকার করতে চায় না। আল্লাহর বেঁচে থাকা নিয়া নিজেরে সে নিজে সান্তনা দেয়। প্রচন্ড ভয়ে এই সত্যরে সে এখনো উপলদ্ধি করতে পারছে না। কিন্তু একদিন এই সত্য উপলদ্ধ হবে, দুনিয়া ব্যাপি তখন পাগলামী, নৈরাজ্য আর নৈরাশ্য বিরাজ করবে। নিৎসে বলেন, “ বুদ্ধের মৃত্যুর শত শত বছর পরও মানুষ এক গুহায় তার ছায়া দেখিয়েছে, এক প্রচন্ড ভীতিকর ছায়া। আল্লাহ মারা গেছে, কিন্তু মানব জাতির অবস্থা বিচারে, হয়তো আরো হাজার বছর কোন না কোন গুহায় তার ছায়া দেখাবে। এই ছায়াকে আমাদের অতিক্রম করতে হবে”। ১৮৮২ সালে দ্যা গে সাইন্স প্রকাশিত হয়, ১৮৮৩ থেকে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয় দাস স্পোক জরাথুস্থ্রা, ১৯০০ সালে নিৎসে মৃত্যুবরণ করেন। আজ অবধি কি সেই সত্য উপলদ্ধ হয় নাই? নিৎসের কোন ভবিষ্যতবাণী কি এখনো পূর্ণতা পায় নাই? হঠাৎ কোন উপলদ্ধি না হলেও ধীরে ধীরে আদর্শহীণতার পাগলামীতে কিন্তু গোটা বিশ্ব ঠিকই আক্রান্ত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরাপুরি পূজিবাদী জীবন যাপনে অভ্যস্থ এবং খ্রীষ্টান নৈতিকতার থোড়াই কেয়ার করেও বেশীরভাগ মানুষ নিৎসে কথিত মনের অন্তর্গত ভয়ের কারনে নিজেরে খ্রীষ্টান দাবি করে শান্তী পায়। বাংলাদেশের একজন আধুনিক মানুষ, আস্তিক নাস্তিক নির্বিশিষে পূজিবাদী অবক্ষয়ের সময়ে ব্যক্তি স্বার্থ এবং সুবিধা অনুযায়ী জীবন যাপন করে, কিন্তু নিজের জীবনে আল্লাহ এবং আল্লাহর আইনের মৃত্যু মেনে নিতে একজন মুসলমান প্রস্তুত না, প্রচন্ড ভয়ের কারণে সে তা অস্বীকার করে। তার যুক্তিবোধ এবং জীবনাচার এই আল্লাহকে অস্বীকার করে, কিন্তু তার অবক্ষয় আর অবক্ষয়ের পাগলামী অস্বীকারকে অস্বীকার করে। আদর্শহীণতা আর অনৈতিকতায় সে প্রবলভাবে আক্রান্ত। নিৎসের বক্তব্য অনুযায়ী আল্লাহর মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ উপলদ্ধী যখন সে প্রাপ্ত হবে তখন হয়তো আসলেই নৈরাজ্য আর নৈরাশ্য প্রবল হবে। কোন রকম আদর্শ বা নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে ব্যাক্তি এবং গোষ্ঠির স্বার্থের শাসন অনেক আগেই সমাজের অধিকাংশ মানুষের ওপর কায়েম হয়েছে।



এই নৈরাশ্যই কি তাহলে শেষ কথা? নিৎসে কিন্তু তা বলেন না। নৈরাশ্যবাদকে তিনি বরণ করে নিয়েছেন, সময়ের অবক্ষয়কে তিনি গ্রহণ করেছেন। নিৎসের দার্শনিক পদ্ধতি তাই অবক্ষয়ের পদ্ধতি। বৃহৎ পূর্ণতার বদলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের রাজত্ব তার লেখা এবং দর্শন জুরে। কিন্তু এই অবক্ষয়ের পদ্ধতির মধ্য দিয়েই তিনি অবক্ষয়ের মোকাবেলা করেছেন। নিজের দার্শনিক প্রজ্ঞার মধ্য দিয়ে নৈরাশ্যকে তিনি জয় করেছেন। আল্লাহ’হীণ দুনিয়ায় আশাবাদের সন্ধান পেয়েছেন। নৈরাশ্যের হাত থেকে এই জয়ের কাহিনী ভিন্ন এক কাহিনি। তবে নিৎসের মতে, আল্লাহ’হীণ দুনিয়ায় রাজত্ব হবে মানুষের রাজত্ব। নতুন দুনিয়ায় আবির্ভুত হবে উবারমেইঞ্ছ, ওভারম্যান, অতিমানুষ। একমাত্র নৈরাশ্যকে জয় করার মাধ্যমেই অতিমানুষ হওয়া সম্ভব। মানুষের অন্তর্গত ক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ বিকাশের মাধ্যমেই মানুষ অতিমানুষ হয়ে উঠবে, আল্লাহ’হীণ দুনিয়ায় আল্লাহর যায়গা দখল করে নেবে। নতুন প্রজন্মের দার্শনিকরা হবে পুরণো দার্শনিকদের চেয়ে নৈতিকতার ক্ষেত্রে অনেক ভিন্ন। বেশিরভাগ পুরনো দার্শনিকরা যেখানে সমাজে প্রচলিত নৈতিকতার দার্শনিক ভিত্তী এবং যৌক্তিকতা নির্মানের চেষ্টা করেছেন, নতুন প্রজন্মের দার্শনিকরা সেখানে নীতির মূল্যায়ন করবে, নতুন নৈতিকতার জন্ম দেবে। নিৎসের পাগল আল্লাহর মৃত্যুর নিদান খোজে তাই মানুষের মাঝে। পাগল তাই বলে-

“যে ছিল এই দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্র, সবচেয়ে শক্তিশালী, আমাগো ছুরির ডগায় হইছে তার রক্তাক্ত মরণ, এই রক্ত আমাগো হাত থেইকা কে ধুইবে? কোন পানিতে এই হাত আমরা পরিস্কার করুম? কোন পবিত্র উৎসব, কোন পবিত্র খেলা আমরা আবিস্কার করুম? এই শ্রেষ্ঠত্ব কি আমাগো লাইগা বড় বেশী শ্রেষ্ঠ না? এই শ্রেষ্ঠত্বের মূল্য দিতে আমাদেরই আল্লাহ হইতে হবে”।



“সব দেবতার মৃত্যু হয়েছে, আমরা চাই অতিমানুষ বেঁচে থাকুক” – ফ্রেডরিক নিৎসে (দাস স্পোক জরাথুস্থ্রা)





মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +১৭/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৪০

বাদ দেন বলেছেন: ভাল লাগল।

তবে ব্যপারটা মনে হয় যতটা না ভয়ে তার চাইতে বেশী প্রইয়োজনে, এ ক থা স্বীকার করতে আমরা চাই না।

একটা জোক্সের মত,
এক লোক পাগলের ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলল "আমার ভাই পাগল হইয়ে গেছে সে নিজেরে মুরগি মনে করে" । ডাক্তার তাকে ওষুধ দিয়া বলল "এটা তোমার ভাইকে দাও সে আর নিজেরে মুরগী মনে করবে না। " লোকটা আতকে উঠে বলল "ডাক্তার তুমি বুজতে পারছ না, আমাদের যে ডিম দরকার"।

"GOD is dead but we still need the eggs" =p~


অসাধারন লেখা , আশা করি একটা ভালো আলোচনা হবে

১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৫০

পারভেজ আলম বলেছেন: হা: হা:, ভালো বলছেন। এই ভয় অবশ্য নিজের নির্ভরতা হারানোর ভয়, মৃত্যুভয়, অস্তিত্বহীণতার ভয়, আরো অনেক কিছুই।

আলোচনা হলে অবশ্য ভালো হয়।

২| ১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৪২

কালো-ভোমরা বলেছেন: অর্ধেক পড়ে শেষ করার সময়াভাবে ট্যাগ মারলাম।

১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৩২

পারভেজ আলম বলেছেন: আলোচনার অপেক্ষায় থাকলাম।

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৪২

ওঙ্কার বলেছেন: ইন্নানিল্লাহ......

১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৩৩

পারভেজ আলম বলেছেন: ইন্নালিল্লাহ

৪| ১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:২১

মেহেদীহাসানসুমন বলেছেন: "মসজিদ, মোল্লা, কোরআন, হাদিস......আল্লাহ জীবন্ত সত্ত্বা। "

"ঈসাদ্রোহী হিসাবে। খ্রীষ্টান ধর্ম এবং এই ধর্মের নীতি নৈতিকতার বিরুদ্ধে তার ঘৃণা এবং .....আনন্দ নাই, উৎকন্ঠা আছে। "

যা বলতে চাচ্ছি, তা হলো-ঈসাদ্রোহী, খ্রীষ্টান ধর্ম...এর মধ্যে মুসলিম আসলো কেনো?

ভাই, সামুতে আধ্যাতিক, দার্শনিক, ধার্মিক লোক অনেক...!

পারভেজ ভালো উদ্যোগ...

২০ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:০৮

পারভেজ আলম বলেছেন: ইব্রাহিনী ধর্ম হিসাবে এবং আমাদের আলোচনার সুবিধার্থে আমাদের অবস্থান থেইকা ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে আলোচনা আসছে। পশ্চিমের পূজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং জীবনাচার ক্রমেই আমরা আয়ত্ব করছি, অথবা এর ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছি। পশ্চিমের জন্ম দেয়া বহু ক্রাইসিসই এখন আমাদের ক্রাইসিস। আমাদের ভুখন্ডে এখন ইসলামের যে চেহারা তাও উপনিবেশের প্রভাবপূষ্ট। আলোচনায় তাই ইসলাম আসবেই।

৫| ১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:৫৯

সজীব আকিব বলেছেন:
আরেকটি পারভেজীয় পরিবেশনা। দারুন!!

১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৩৭

পারভেজ আলম বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। যেই তিনজন ব্যক্তি আমার দর্শন চিন্তায় সবচেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তারকারী, নিৎসে তাদের একজন। দীর্ঘদিন নিৎসে চর্চা করলেও নিৎসে বিষয়ে লেখার সাহস পাই নাই, কারণ নিৎসের লেখার ধাচ এবং দর্শনের শিল্পমান। সাহস করে শুরু করলাম। সামনে আরো কিছু লিখবো।

৬| ১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৩:০৮

মিটুলঅনুসন্ধানি বলেছেন: নিৎসে একটু ভুল করছেন, যার অস্তিত্ব নেই তা কখনো মরতে পারে না। এটাকে অতো গভীর মন্তব্য ভাবা ঠিক হবে না বলে মানছি। নিৎসের তত্ব বিশ্লেষণ অনেকাংশে সঠিক হলেও এই বাক্যটিকে আমি একটু ( হালকা) ভুল বলে মনে করছি।

মুক্তবুদ্ধির জয় হোক...সকলের জন্য শুভকামনা।।।

১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:২৫

পারভেজ আলম বলেছেন: মিতুল@ আমার মনে হয় এই পোস্টটা তোমার আরেকবার পড়া উচিৎ। আল্লাহর মৃত্যু বলতে নিৎসে কি বোঝাইছেন সেইটা নিয়া এত আলোচনা করছি কিন্তু বিষয়টা যাতে মিসলিডিং না হয় সেই কারণেই। নিৎসের এই ঘোষনা তার দর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিৎসে প্রচলিত ইউরোপিয় কায়দায় দর্শন আলোচনা করতেন না, তিনি রুপকের আশ্রয় নিতেন প্রচুর পরিমানে, এই কারণে তাকে বলা হয় শিল্পী দার্শনিক এবং লেখার স্টাইলের মানের কারণে স্টাইলিস্ট দার্শনিক।

৭| ১৬ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৮:৩৭

স্টাডি-ইটিই বলেছেন: আপাতত বুকমার্ক করে রাখলাম। গড ইস ডেড এর বাংলা করতে গিয়া আল্লারে টানলেন কেন?

১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:২৭

পারভেজ আলম বলেছেন: আল্লাহরে না টাইনা ইশ্বররে টানা যাইতো। আরবীর যায়গায় সংস্কৃত শব্দ ব্যাবহার করা যাইতো। তারচেয়ে আরবী আল্লাহই উপযুক্ত মনে হইছে, যেহেতু নিৎসের গড ইব্রাহিমী গড। ইশ্বর শব্দের ব্যাবহার আরো ইনএপ্রোপ্রিয়েট হইতো।

৮| ১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:২৯

শুভ রহমান বলেছেন: জসিলা জিনিস। অনেকগুলান দাবীর সাথে একমত হবো কি না জানি না। পড়াশুনাটা অতদূর যায় নাই। তারপরেও, ভাবনাটা অসাধারণ।

নৈরাশ্য দূর করতে হবে। অতিমানুষ হতে হবে।

১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৩৭

পারভেজ আলম বলেছেন: মানুষের দার্শনিক অগ্রযাত্রা তার প্রগতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং সদা বিকাশমান। গৌতম বুদ্ধ এবং নিৎসে এই দুইজনই নৈরাশ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু দুইজনের জানাশোনা আর পদ্ধতিগত ধরণ ভিন্ন ছিল। আমাদের সময়কার দার্শনিক এবং সমাজতাত্ত্বিক প্রশ্নের উত্তরের জন্য পূর্বসূরীদের ধ্যান ধারণা এবং দাবি বোঝা খুবি জরুরি।

৯| ১৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:২৬

সন্যাসী বলেছেন: বস্তুত আস্তিকদের কাছেই আল্লার বর্তমান অবস্থানটা মৃত। তারা শুধু ট্যাবুর জন্যই আল্লাকে অস্বীকার করতে পারছে না। আল্লা প্রদর্শিত পথে তারা চলতে পারছে না, আবার আল্লাকে ফেলতেও পারছে না। যারা নাস্তিক তাদের কাছে মৃত জীবিত ব্যাপার না।

ইউরোপে কি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠেনি? আল্লার স্থান পূরণ করতে পারেনি কি জ্ঞান? যে হেজেমনির কথা বললেন ইউরোপের অনেক দেশই সে অবস্থা বর্তমানে কাটিয়ে উঠেছে। হয়তো ইউরোপের যৌনতা/বিবাহবিচ্ছেদ বিষয়ক উদাহরণ হেজেমনির উদাহরণ হিসেবে দাড় করায় কেউ কেউ, কিন্তু ওসব দেশের যৌনতার ক্ষেত্রেও কিছু প্রিন্সিপল রয়েছে যা ঈশ্বরভিত্তিক সমাজে নেই।


একটু প্যারা করে দিলে পড়ে মজা পাওয়া যেত। বানান ভুল অনেকগুলো।

১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৪৩

পারভেজ আলম বলেছেন: জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন আমি পরিস্কার না। ইউরোপে সেকুলার সমাজেও মরা খ্রীষ্টান ধর্মের ছায়া অত্যন্ত প্রবলভাবেই বেঁচে আছে। পূজিবাদ যেই সমাজের মূল জীবনবোধ সেই সমাজ কখনো নৈতিক এবং আদর্শিকভাবে শক্তিশালী হতে পারেনা। আল্লাহর স্থান পূরণ করতে হলে দরকার মানব জাতির জন্য উদ্দেশ্যভিত্তীক বিশ্ববিখ্যা। ইউরোপ অথবা মধ্যপ্রাচ্যে আল্লাহ যখন জীবিত ছিল মানুষ তখন জানত এই মহাবিশ্বে তার অবস্থান কি, কোথা থেকে সে এসেছে, কোথায় সে যাবে এবং তার জীবনের উদ্দেশ্য এবং মূল্য কি? আল্লাহহীণ পৃথিবীতে মানব জীবনের মূল্য নির্ধারণটা যতক্ষন না হচ্ছে, ততক্ষন নৈরাশ্যবাদই রাজত্ব করবে।

১০| ১৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:৫৫

বাকী বিল্লাহ বলেছেন: শুরু করার জন্য দারুণ হইছে। মন্তব্য করার জন্য প্রস্তুতি দরকার। আপাতত পড়ে নিলাম।

১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৪৪

পারভেজ আলম বলেছেন: অপেক্ষায় থাকলাম বাকী ভাই।

১১| ১৯ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:৪৬

গ্রাউন্ড ফ্লোর বলেছেন: আল্লারে আর আপ্নারে ফাঁসিতে চড়ানো দর্কার

১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৪৬

পারভেজ আলম বলেছেন: আমি আবার কি দোষ করলাম?

১২| ১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:২৭

বৃষ্টিধারা বলেছেন: B:-) B:-) B:-)

১৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৫২

পারভেজ আলম বলেছেন: কি হৈছে???????

১৩| ২২ শে মার্চ, ২০১১ রাত ২:৫৯

নির্ণয় বলেছেন:
নিৎসের সাথে কথা বলবো না, আপনার সাথে বলি-

যে নৈতিকতা নিয়ে এই লেখা সেটা আসলে কী কী দিয়ে তৈরী? কীসের কীসের অবক্ষয়ে এই দুঃশ্চিনতা? পুঁজিবাদ নৈতিকতার কী কী নষ্ট করেছে? সেগুলোকে রক্ষা করতে পারার সাধ্য কার আছে - সমাজতন্ত্রের নাকি ধর্মের? সমাজতন্ত্র বা ধর্ম (যাদের কাছে অবক্ষয় রোধের প্রত্যাশা অনেকের) তারাও কী অন্য কোন অবক্ষয়কে ডেকে আনতে পারে? যদি পারে, তাহলে পুঁজিবাদের ডেকে আনা অবক্ষয়, সমাজতন্ত্রের ডেকে আনা অবক্ষয় ও ধর্মের ডেকে আনা অবক্ষয় এর পার্থক্য কীসে? এসব কিছু কী নির্ভর করছেনা আসলে আমরা নৈতিকতার কম্পোনেন্ট কী কী বলে মনে করি তার উপরে? আলো দিন।

২২ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:১৫

পারভেজ আলম বলেছেন: লেখাটা যেহেতু নিৎসের দর্শন নিয়া, আমার নিজের বক্তব্য দিতে গেলে তো ভাই পুরাপুরি আলাদা আলোচনা শুরু করতে হবে। নৈতিকতা কি কি দিয়া তৈরি এই প্রশ্নের অর্থ যদি এমন হয় যে নৈতিকতা কি জিনিস সেই সম্বন্ধে আমার ধারণা জানতে চাইছেন তাইলে আমার পুরান একটা পোস্টের লিংক ধরায়া দেই Click This Link পোস্টে দীর্ঘ আলোচনা আছে, পড়ে ভাল লাগতে পারে।

পুঁজিবাদ নৈতিকতার কিছু নষ্ঠ করে নাই। নৈতিকতা কোন এবসলুট জিনিস না যে তার কিছু নষ্ঠ করার প্রশ্ন আসে। পুঁজিবাদেরও নিজস্ব নৈতিকতা আছে। সেই নৈতিকতাটা সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে যায় না। অথবা, আমার অবস্থান থেকে বলতে গেলে উত্তর উপনিবেশিক দুনিয়ায় বাংলাদেশের গণমানুষের পক্ষে যায় না। নিৎসে যেই অবক্ষয় সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন সেইটা নৈতিকতার অবক্ষয় না, মানুষ হিসাবে মানুষের স্বভাব ধর্ম বা স্বভাবজাত ক্ষমতা বা যোগ্যতার অবক্ষয়, নীতিহীনতা বা আদর্শহীনতা যার বহিঃপ্রকাশ। নৈতিকতা বরাবরি মানব তৈরি বিষয়, মানুষের প্রয়োজনেই এর সৃষ্ঠি। নৈতিকতার ঐশ্বরিক তকমা মানব সৃষ্ঠ নৈতিকতার প্রতি জনগণের অশ্রদ্ধা তৈরি করে।

ধর্ম অথবা সমাজতন্ত্র আপনার প্রশ্নের বিষয়। সমাজতন্ত্রকে আমি ধর্মই মনে করি। ধর্ম বিষয়ে আমার চিন্তা ভাবনা জানতে এই পোস্টটা দেখতে পারেন Click This Link

আপনার প্রশ্ন অনেক বেশী আলোচনার দাবি করে। আমার এই ছোট উত্তর এবং লিংক ধরিয়ে দেয়া আলো দেয়া হলো কি না এইটা আপনি বলতে পারবনে। সন্তুষ্ট না হলে আবার প্রশ্ন করার অনুরোধ রইল।

১৪| ২২ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৯:১০

দু-পেয়ে গাধ বলেছেন: সাঙ্ঘাতিক একটি লেখা। মাত্র একখানা লাইক দিয়ে মন ভরল না।

২২ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:২০

পারভেজ আলম বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

ঘটনা কি দু-পেয়ে গাধ ভাই, আপনি কি ঘুরে ঘুরে আমার ব্লগের সব লেখা পড়ে ফেলছেন নাকি?

১৫| ২৬ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৩৬

নির্ণয় বলেছেন:

অনেকবার করে মন্তব্যের লিংক দুটো ওপেন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম। শেষে দেখি দুটো লিংকের শেষেই একটা করে অতিরিক্ত "। " চলে এসেছে ! ঠিক করে দিতে পারেন।লেখা দুটো নিঃসন্দেহে দারুণ। কিন্তু এই লেখার ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন আছে।

বাংলাদেশের একজন আধুনিক মানুষ, আস্তিক নাস্তিক নির্বিশিষে পূজিবাদী অবক্ষয়ের সময়ে ব্যক্তি স্বার্থ এবং সুবিধা অনুযায়ী জীবন যাপন করে।

এখানে যেহেতু "পূজিবাদী অবক্ষয়ের" কথা আছে সেহেতু জানতে চাইছিলাম যে কোন কোন বিচ্যুতিকে অবক্ষয় হিসেবে ধরছেন আর তাদের ভেতর কোনগুলোর উৎস হিসেবে পুঁজিবাদকে দায়ী মনে করছেন। যেহেতু এগুলো "পূজিবাদী অবক্ষয়", সেহেতু সেটা ঠেকাতে পারবে কে?

নিৎসে যেই অবক্ষয় সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন সেইটা নৈতিকতার অবক্ষয় না, মানুষ হিসাবে মানুষের স্বভাব ধর্ম বা স্বভাবজাত ক্ষমতা বা যোগ্যতার অবক্ষয়, নীতিহীনতা বা আদর্শহীনতা যার বহিঃপ্রকাশ।


এখন কথা হচ্ছে যে স্বভাব ধর্ম বা স্বভাবজাত ক্ষমতা বা যোগ্যতা কোনগুলো? নিৎসের পাগল কোনগুলোকে ফেরত চায়?

২৬ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৫২

পারভেজ আলম বলেছেন: প্রথম প্রশ্নটা মনে হচ্ছে আমাকেই করেছেন, তাই একি সাথে আমার এবং নিৎসে দুইজনের বক্তব্যই দিচ্ছি। নিৎসে আমাদের বর্তমান সময়ের অবক্ষয় হিসাবে চিহ্নিত করেছেন 'নিহিলিজম'কে। তার মতে আধুনিকতার কোন আদর্শবাদী বিশ্ববিখ্যা নাই, মানুষ তার জীবনের মানে এবং উদ্দেশ্য বলে কিছু খুজে পাচ্ছে না বা পাবে না। এই কারণে সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাবে। একমাত্র নিজের ক্ষমতা আবিস্কার এবং ব্যাবহারের মধ্য দিয়াই সে এই অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাবে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি পূজিবাদের অবক্ষয় বলতে যেই বিচ্যুতি বুঝি তা শাসনতান্ত্রিক শ্রেণীর সাথে সম্পর্কৃত। সামাজিক বণ্য পশুতে দৈহিকভাবে শক্তিশালী আলফা মেল শাসন করে, মানুষের প্রাইমাল অবস্থায়ও তাই ছিল। ভাষার সৃষ্ঠি মানুষকে মানুষ করেছে, আর এই কারনেই মানব সমাজে পুরোহিত বা বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর আবির্ভাব, নবি এবং দার্শনিকের উত্থান। এই শ্রেনী খুব দ্রুত বৌদ্ধিক আলফা মেলএর স্থান দখল করে নেয় এবং মানব সভ্যতা বলতে যা বোঝায় তাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দীর্ঘকাল যাবৎ রাজা এবং পুরোহিতএর মেলবন্ধনে সমাজ শাসন চলতো, ব্যাবসায়ী শ্রেণী ছিল তারপরের অবস্থানে। রেনেসা পরবর্তি ইউরোপে এর ব্যাত্যয় ঘটে, পূজিবাদ বলতে আমি বুঝি ব্যাবসায়ী শ্রেণীর শাসন ক্ষমতায় উত্তোরণ এবং বুদ্ধিজীবী বা পুরোহিত শ্রেণীর উপরে আধিপত্ব বিস্তার। আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট অথবা চেঙ্গিস খান এর তরবারীর চেয়েও ঈসা, বৌদ্ধ, মোহাম্মদের ছায়ার প্রভাব মানব জীবনে বেশী, আর তাতে রাজার শাসনের সমাপ্তিতে প্লেটোর স্বপ্নের দার্শনিকের শাসন আমাদের পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমরা পেয়েছি ব্যাবসায়ির শাসন, তাদের লাভ লোকশানই এখন সমাজের নৈতিকতার মানদন্ড। বিচ্যুতি বলতে আমি এমনটাই বুঝি। বেশী আলোচনা এখানে করতে চাচ্ছি না। এই বিষয়ে বিষদ লেখার ইচ্ছা আছে।

দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে, নিৎসের একটা মানদন্ড ছিল। তিনি মনে করতেন প্রাচীন গ্রিক সমাজ মানুষের সতঃস্ফুর্ত ক্ষমতা এবং উন্নত স্বভাবের সমাজের মানদন্ড। নিৎসের পাগল অবশ্য তারচেয়েও বেশী কিছু চায়। নিৎসের পাগল চায় মানুষ এমন হয়ে উঠুক যেমন সে আগে ছিল না, নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সে আবিস্কার করুক।

১৬| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৪

ইরফানুর রহমান রাফিন বলেছেন: "পুরণো আদর্শবাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়া নতুন কোন আদর্শবাদের জন্ম হচ্ছে না, আল্লাহর মতো সম্পূর্ণতা নাই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নতুন কোন পূর্ণতা তৈরি হচ্ছে না। নিৎসে একে বলেছেন এনার্কি অফ এটম অর্থাৎ আনবিক নৈরাজ্য বলে। পূর্ণতার যায়গায় বিচ্ছিন্নতার এই বিজয়কে নিৎসে গণ্য করেছেন অবক্ষয় হিসাবে। নিৎসের মতে এমন অবক্ষয়ের সমাজে ভাল মন্দের বোধ লোপ পাবে, উপর-নিচ বলে কিছু থাকবেনা, জোর যার মুল্লুক তার হবে, গোষ্ঠিগত শাসন এবং লুটপাটই হবে স্বাভাবিক ঘটনা।"

পারভেজ আলম ভাই, উল্লিখিত অংশে আমার দ্বিমত আছে। বিশেষতঃ "উপর-নিচ বলে কিছু থাকবে না, জোর যার মুল্লুক তার হবে" এই অংশটা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর ও হেঁয়ালির মতো লাগে। উপর-নিচ বলে কিছু থাকাটা জোরের সাথে সম্পর্কিত, তবে কাঠামোবদ্ধ জোর এবং সেই কাঠামোও আবার নির্মিত হয়েছে যারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উপরে উঠতে পেরেছে তাদের এই আরোহণকে এক ধরণের বৈধতা দেওয়ার জন্য; যখন উপর-নিচ বলে কিছু থাকছে না, অর্থাৎ সম্পর্কক্ষেত্রে সামন্তবাদী দাস-মালিক দ্বান্দ্বিকতায় পরিবর্তন আসছে [বলে রাখা দরকার, নিটশে কিন্তু পুরাতন "আদর্শবাদ"(?)-এর প্রশংসাকারী হিসেবে সামন্তবাদী সম্পর্ককেই রোমান্টিসাইজ করেছেন, স্বেচ্ছায় হোক কি অনিচছায় হোক] তখন জোরের ভিত্তি আর বংশমর্যাদা বা আভিজাত্য থাকছে না, সেখানে জোরের নয়া ভিত্তি হচ্ছে পুঁজি। উদাহরণ হিসাবে আপনি "উদারিং হাইটস"-কে নিতে পারেন, হীথক্লিফ যত ধূর্তই হোক না কেন, আভিজাত্য আর বংশমর্যাদা নিয়ন্ত্রিত সামন্ত মানসিকতার সমাজে সে কখনোই ক্যাথারিনকে বিয়ে করার "যোগ্যতা" অর্জন করতে পারত না, বাটপারি করে বড়লোক হওয়ার সুযোগটা কিন্তু পুঁজিবাদই তাকে এনে দিয়েছে। আর পূর্বের সামন্তরাও কোনো "আদর্শবাদী" প্রক্রিয়ায় "উপরে" ওঠেনি, তারা উপরে উঠেছে বাটপারি করেই, আর সেই বাটপারির সূত্রায়ন করে করে সেটার নাম দিয়েছে "আদর্শ"। মুল্লুক সবসময়ই তার ছিল যার জোর ছিল, তবে সামন্তবাদী ইউরোপে জোর অর্জন করার পরিসরটা ছিল ছোট খুব, বংশমর্যাদা আর আভিজাত্য ছিল সামান্য কিছু মানুষের, পুঁজিবাদ জোর অর্জন করার পরিসরটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই ব্যাপারটাই নিটশের কাছে "সর্বব্যাপি অবক্ষয়" মনে হত। ফলত, ইচ্ছায় হো অনিচ্ছায় হোক নিটশে সামন্ত মানসিকতাকেই রসদ যুগিয়েছেন তার চিন্তায়। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমার সেটাই মনে হয়েছে।

আর Azfar Hussain স্যার তাঁর "দ্য ওয়ার্ল্ড(ওয়ার্ড) ইন কোয়েশ্চেন-এর একটি প্রবন্ধে উত্তরাধুনিক বুদ্ধিজীবিদের, যাঁরা ইরাক যুদ্ধে নির্লজ্জভাবে প্রতিবাদহীন অবস্থান নিয়েছিলেন, "নিটশের উরু থেকে জন্ম থেকে জন্ম নেওয়া" বলেছিলেন। আমি তাঁর সাথে একমত পোষণ করি। যত বড় দার্শনিকই হন না ক্যানো নিটশে, শেষ পর্যন্ত তিনি নিষ্ক্রিয়তাকেই তাত্ত্বিক ভিত্তি দ্যান বলেই বিশ্বাস করি। আর সেই নিষ্ক্রিয়তা শক্তিমানের পক্ষেই যায়। ফ্রেইরে যেমন বলেছেন, "শক্তিমান ও শক্তিহীনের দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া শক্তিমানের অবস্থান নেওয়ার শামিল, কখনোই নিরপেক্ষতা নয়"।

আশা করি আমার অবস্থান আমি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি। স্বেচ্ছাচারী হওয়া বাঘের বৈশিষ্ট্য, মানুষের নয়। আর আমি মনে করি, জাতীয় সম্পদ রক্ষায় যেসব ব্লগার অনলাইন এক্টিভিস্ট আছেন, তারা বাঘীয় স্বেচ্ছাচার [যা প্রকৃত প্রস্তাবে শক্তিমানের তৈরি করা "নেসেসারি ইল্যুশন" ছাড়া আর কিছু নয়] ও মানবীয় দায়িত্বশীলতার মধ্যকার দ্বন্দ্বে দ্বিতীয়টিকেই বেছে নিয়েছেন, নইলে আপনারা জাতীয় সম্পদ রখার আন্দোলনে আসতেন না। ধন্যবাদ।

১৭| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৬

ইরফানুর রহমান রাফিন বলেছেন: "পুরণো আদর্শবাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়া নতুন কোন আদর্শবাদের জন্ম হচ্ছে না, আল্লাহর মতো সম্পূর্ণতা নাই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নতুন কোন পূর্ণতা তৈরি হচ্ছে না। নিৎসে একে বলেছেন এনার্কি অফ এটম অর্থাৎ আনবিক নৈরাজ্য বলে। পূর্ণতার যায়গায় বিচ্ছিন্নতার এই বিজয়কে নিৎসে গণ্য করেছেন অবক্ষয় হিসাবে। নিৎসের মতে এমন অবক্ষয়ের সমাজে ভাল মন্দের বোধ লোপ পাবে, উপর-নিচ বলে কিছু থাকবেনা, জোর যার মুল্লুক তার হবে, গোষ্ঠিগত শাসন এবং লুটপাটই হবে স্বাভাবিক ঘটনা।"

পারভেজ আলম ভাই, উল্লিখিত অংশে আমার দ্বিমত আছে। বিশেষতঃ "উপর-নিচ বলে কিছু থাকবে না, জোর যার মুল্লুক তার হবে" এই অংশটা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর ও হেঁয়ালির মতো লাগে। উপর-নিচ বলে কিছু থাকাটা জোরের সাথে সম্পর্কিত, তবে কাঠামোবদ্ধ জোর এবং সেই কাঠামোও আবার নির্মিত হয়েছে যারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উপরে উঠতে পেরেছে তাদের এই আরোহণকে এক ধরণের বৈধতা দেওয়ার জন্য; যখন উপর-নিচ বলে কিছু থাকছে না, অর্থাৎ সম্পর্কক্ষেত্রে সামন্তবাদী দাস-মালিক দ্বান্দ্বিকতায় পরিবর্তন আসছে [বলে রাখা দরকার, নিটশে কিন্তু পুরাতন "আদর্শবাদ"(?)-এর প্রশংসাকারী হিসেবে সামন্তবাদী সম্পর্ককেই রোমান্টিসাইজ করেছেন, স্বেচ্ছায় হোক কি অনিচছায় হোক] তখন জোরের ভিত্তি আর বংশমর্যাদা বা আভিজাত্য থাকছে না, সেখানে জোরের নয়া ভিত্তি হচ্ছে পুঁজি। উদাহরণ হিসাবে আপনি "উদারিং হাইটস"-কে নিতে পারেন, হীথক্লিফ যত ধূর্তই হোক না কেন, আভিজাত্য আর বংশমর্যাদা নিয়ন্ত্রিত সামন্ত মানসিকতার সমাজে সে কখনোই ক্যাথারিনকে বিয়ে করার "যোগ্যতা" অর্জন করতে পারত না, বাটপারি করে বড়লোক হওয়ার সুযোগটা কিন্তু পুঁজিবাদই তাকে এনে দিয়েছে। আর পূর্বের সামন্তরাও কোনো "আদর্শবাদী" প্রক্রিয়ায় "উপরে" ওঠেনি, তারা উপরে উঠেছে বাটপারি করেই, আর সেই বাটপারির সূত্রায়ন করে করে সেটার নাম দিয়েছে "আদর্শ"। মুল্লুক সবসময়ই তার ছিল যার জোর ছিল, তবে সামন্তবাদী ইউরোপে জোর অর্জন করার পরিসরটা ছিল ছোট খুব, বংশমর্যাদা আর আভিজাত্য ছিল সামান্য কিছু মানুষের, পুঁজিবাদ জোর অর্জন করার পরিসরটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই ব্যাপারটাই নিটশের কাছে "সর্বব্যাপি অবক্ষয়" মনে হত। ফলত, ইচ্ছায় হো অনিচ্ছায় হোক নিটশে সামন্ত মানসিকতাকেই রসদ যুগিয়েছেন তার চিন্তায়। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমার সেটাই মনে হয়েছে।

আর Azfar Hussain স্যার তাঁর "দ্য ওয়ার্ল্ড(ওয়ার্ড) ইন কোয়েশ্চেন-এর একটি প্রবন্ধে উত্তরাধুনিক বুদ্ধিজীবিদের, যাঁরা ইরাক যুদ্ধে নির্লজ্জভাবে প্রতিবাদহীন অবস্থান নিয়েছিলেন, "নিটশের উরু থেকে জন্ম থেকে জন্ম নেওয়া" বলেছিলেন। আমি তাঁর সাথে একমত পোষণ করি। যত বড় দার্শনিকই হন না ক্যানো নিটশে, শেষ পর্যন্ত তিনি নিষ্ক্রিয়তাকেই তাত্ত্বিক ভিত্তি দ্যান বলেই বিশ্বাস করি। আর সেই নিষ্ক্রিয়তা শক্তিমানের পক্ষেই যায়। ফ্রেইরে যেমন বলেছেন, "শক্তিমান ও শক্তিহীনের দ্বন্দ্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া শক্তিমানের অবস্থান নেওয়ার শামিল, কখনোই নিরপেক্ষতা নয়"।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.