![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অস্ত্রবিহীন যোদ্ধা
আজ বন্ধু দিবস বড় মনে পড়ছে আমার সেই বন্ধুকে। যে বন্ধু ছিল আমার অনেক কিছু। দীর্ঘ অনেক দিন অনেক পথে ঘাঠে মাঠে কত কি করেছে সেই বন্ধুকে নিয়ে। খাতুন ম্যানশনের সেই ছোট গফুরের দোকানে গিয়ে বসে থাকতাম আমার সেই দোস্ত কখন আসবে। হঠাৎ কোন কারনে সে যদি না আসে মার্কেটে আমার মনটা খারাপ হয়ে যেত। মোবাইলের যোগ ছিলনা তাই হন্য হয়ে খুঁজতাম তাকে। তখন সে সুরমা সিগারেট কোম্পানীর ডিস্ট্রিভিউটরে চাকুরী করত। আমার তখন লাইব্রেরীর ব্যবসা করতাম। তারই মধ্যে পড়ে গেলাম এক রূপবতি গুরবতীর প্রেমে। গভীর প্রেম। শুরু হলো চুকিয়ে চুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা। কলেজ রোডের সেই সেঞ্চুরী হোটেল একন আর নেই। সে তার ছোট বোনকে দিয়ে চিঠি পাঠাতো আমি আসতেছি কইশলাকে নিয়ে। কইশলা ছিল আমার এক বন্ধুর বান্ধবী। তার মাধ্যমেই তার সাথে আমার পরিচয় হয়ে ছিল। এক সময় প্রেমে পড়ে গেলাম। ছোট বোনের হাতে চিঠি পেয়ে আনন্দে আত্নহারা হয়ে যেত মন আমার। আজ বুঝি সে আসবে। দেখা হবে আমার সাথে। পাগল হয়ে ছুটে যেতাম কলেজ রোডের সেই সেঞ্চুরী হোটেলে। তাকে মন ভরিয়ে খাওয়াতাম সে পছন্দ করত চিকেন রুলস আর চিকেন ভারগার। সেঞ্চুরী হোটেল আর এখানে ওখানে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা আর ভাললাগে না। নীরবে কোথায় দু'জনে বসে মনের কথা বলা চাই। সে জানালো আমাকে। আমি চিন্তায় পাগল । কোথায় যাওয়া যায়। হঠাৎ মাথায় আসলো আমার সেই বন্ধুর কথা। সে তখন মিশন রোডের তার দোলাভাই আসলাম সাহেবের কাছে থাকতো। আমার সেই বন্ধু সাহেদকে জানালাম আমার কথা। সে খুশি হয়ে বলল কোন সমস্যা নাই। বন্ধুর জন্যইতো বন্ধু। আমি জানিয়ে দিলাম আমার সেই হৃদয়ের ঠুকরা ভালোবাসার মনি কে। "আমি প্রেম করার জায়গা খুঁজে পেয়েছি আগামী দিন থেকে আমরা সেখানেই যাব। সে তখন মহা খুঁশি। এক সময় আমরা দুজন দুজনার সাথে দেখা করার জন্য আস্তানা গড়লাম আমার বন্ধু সাহেদ এর দোলাভাই আসলাম সাহেবের বাসায়। দুএকদিন পর পরই আমাদের দু জনার মধ্যে দেখা হত কথা হত। চিঠি আদান প্রদান মান অভিমান। বয়স ছিল আমার তখন মাত্র ২০ বছর ৬ মাস। প্রেম বলতে আমি তখন উপলব্দি করতাম। একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে একটা গভির সম্পর্ক। আমার বাবা যেমন আমার মাকে নিয়ে সংসার গড়ে ছিলেন ঠিক তেমনি আমিও তাকে নিয়ে গড় বাধবো। সারাক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকতাম। বুকটা আমার হঠাৎ ক্ষেপে উটতো কেন জানি আমি তাকে হারিয়ে ফেলি। কিন্তু তার মাঝে ছিল একটু উশৃংখল মনোভাব। যেমন সে আমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতে চাইতো, আমাকে কাছে নিতে চাইতো। আমার তখন লজ্জা করত বা আমারও মনে চাইতে কাছে যাবার। কিন্তু আমি সেই কাজটা ভালো হবে না বলে কাছে যাইনি। আমি জানতাম সে কারনে মনি অনেক সময় কষ্ট পেত। আমার মনে হত প্রকৃত প্রেমিক প্রেমিকারা প্রেম করার সময় দৈহিক সম্পর্ক রাখলে প্রেম অপবিত্র হয়ে যায়। আমি পূর্ণ একজন যুবক যৈাবন বলতে আমার তখনও ছিল। কিন্তু আমি পাড়তাম না তার ডাকে সাড়া দিতে।
সাহেদের বাসায় প্রথম পরিচয় হবার দিন মনি সাহেদকে ধর্মের ভাই বলে সম্মোদন করেছিল। আমি অত্যান্ত খুঁশি হয়েছিলাম সেই দিন। সাহেদ যখন আমাকে বলল দোস্ত আমি তখন সাথে সাথে বললাম এই শালা হয়ত শালা হবি নয়ত সমন্দি। দোস্ত বলিস কি তুই তো আমার বউয়ের ভাই। একসাথে তিনজনই হেসে ফেলেছিলাম সেই দিন। সেই থেকে সাহেদের বাসায় আমাদের প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া হত। মাঝে মাঝে আমার কাছে আমার বন্ধু সাহেদ আর আমার প্রেমিকার চলাফেরার মধ্যে কি যেন সন্দেহ সন্দেহ মন হত। আমি তখন আমার মনকে দুষারোপ করতাম। মনকে বলতাম সেই বন্ধু আমার যার সাথে আমার এত দিনের সম্পর্ক তাকে কেন আমি ভুল বুঝবো?
হঠাৎ একদিন মনি আমাকে জানালো সে আমার বাড়িতে আসতে চায়। সে আমাকে যেদিন বলেছে আমি সেই দিনের পরের দিনই তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসিছি। মনির সাথে আমার সম্পর্কের কথা আমার বাসার সবাই জানতো। আমি আমার মাকে বলিছিলাম। আমার মা আমাকে বলেছিলেন তোর যাকে পছন্দ আমার তাতে কোন সমস্য নেই।
আমার বাবা পুকুর থেকে মাছ মেরে নতুন হবু বউকে আদর করে খাইয়ে দিয়ে ছিলেন।
দীর্ঘ তিন বছর মনির সাথে আমার প্রেম চলাকালিন সময় হঠাৎ একদিন মনি আমাকে কইশলার মাধ্যমে জানালো সে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না বা আমার সাথে সে কোন সম্পর্ক রাখতে চায় না। কারন জানতে চাইলে সে আমাকে কিছুই বলল না। না বলে কইশলার বাসা থেকে হোর হোর করে হেঠে চলে গেল। আমাকে কইশলা ঢেকে নিয়ে বলেছিল "ভাইয়া তোমাকে কি বলবো আমার মুখ দিয়ে বেড়োচ্ছেনা , তোমার মনি আর তোমার নেই। সে এখন তোমার বন্ধু সাহেদের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে।।।।।
কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়লো। আমি কইশলাকে বললাম কইশলা "তুই কি আমার সাথে টাট্টা করছিস?। কইশলা জবাব দেয় "না ভাইয়া আমি সত্যি বলছি। মনি আমাকে জানিয়ে গেছে সে সাহেদকে বিয়ে করবে"। আমি তখন সাহেদ আর মনির চলা ফেরার সেই দৃশ্য গুলি আমার চোখের সামনে বাসতে থাকলো। আমি কনফার্ম হয়ে গেলাম যে আমার সেই হৃদয়ের ঠুকরা নয়নের মনি একন আমার আর নেই। জীবনরে প্রথম প্রেম- কি করবো কি করা যায়- বার বার মনির দরজায় নক করে জানতে চেয়েছি " কি দোষ আমার যে তুমি আমাকে ভাল বাসনা ? কি অপরাধ করেছি আমি যে তুমি আমাকে ভুলে যেতে চাও? তুমি আমাকে বল তুমি যা চাও তাই হবে তবে আমি তোমাকে ভুলতে পারবো না। প্রতি উত্তরে আমি মনির কাছ থেকে কোন জবাব পাইনি। শুরু পথে পথে বসে কান্না আর কান্না, মাঝে মাঝে মন হত একটা রিভলবার দিয়ে ওই শালা বন্ধু নামের প্রতারককে মেরে ফেলি। পথের কাটা সরিয়ে দেই। আমার মন তখন বলে উঠে " ওর কি দোষ তোমার মনি যদি তোমার হত তাহলে কি সাহেদ তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেত পারতো? একদিকে বন্ধু আর অন্য দিকে প্রেমিকা- আমি কি করবো কোন পথ খুঁজে পাইনা। শুরু হলো খারাপ বন্ধু বান্ধবদের সাথে সময় ব্যয় করার। শুরু হলো মদ গাজা সেবন করা। কতদিন মদ খেয়ে কত চিপাগল্লিতে শুয়ে রাত কাটিয়েছি জানি না।
হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম সাহেদ মনিকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এক সময় ওরা দু'জন জনকে কোর্ঠ মেরিজ করে বিয়েও করে ফেলল। আমি তখন কিছুই করতে পারিনি। বেয়ারিশ জিন্দা লাশের মত নিজেকে প্রতারিত সৈনিক হিসাবে মেনে নিয়েছি। কিন্তু মেনে নিতে পারি নি নিজেকে। বুকটা আমার জ্বলে ছারকার হয়ে গিয়েছিল। আমি অনেক কেদেছি অনেক যে কান্না আর কষ্ট পৃথিবীর আর কোন প্রেমিক কেদেছে কি না আমি জানি না। সেই হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো চোখের সামনে যখনই ভেসে উঠে তখনই আমি শিউরে উঠি। শিউরে উঠি কলেজ রোডের সাহেদের সুরমা সিগারেটের অফিসে মনি এসে আমাকে ফোন দিত আমি এখানে এসেছি আমি দৈারে যেতাম। এক সময় সাহেদ আমাকে বলতো মনিকে কিছু খাওয়া আমি তখন সেঞ্চুরী হোটেল থেকে ভালো ভালো খাবার নিয়ে যেতাম। খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে সাহেদ বলতো তুই এখন চলে যা মনিও বলতো তুমি চলে যাও আমিও বাসায় চলে যাবো। আমার তখন বিরাট আঘাত লাগতো। তাহলে কি মনি খাওয়ার জন্য আমাকে খবর পাঠিয়েছে। মন খারাপ করে সেই থেকেই আমি বুঝতে শুরু করে ছিলাম মনি যেন আমার সাথে কি একটা করছে।
মান অভিমান প্রেম ভালোবাসা এ সব স্মৃতি বুকে নিয়ে দৃর্ঘদিন আমি কাঠিয়েছি এক অন্য জগতে। আস্তে আস্তে নিজেকে একটু স্বাভাবিক পথে এনেছিলাম ঠিক তখনই এরকম আরো অনেক যন্ত্রনা আমাকে ঘ্রাস করে আজও আমি প্রতারিত সৈনিক। আমি জানি না মনি কি সাহেদ কে নিয়ে সুখি হয়েছে নাকি দুঃখ ভরা জীবন কাটাচ্ছে। তবে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে শ্রীমঙ্গলের জালালিয়া রোডের সেই মরতুজা আলী খানের সেই চঞ্চল মেয়েটি যে ছিল আমার চোখের মনি, আর শমসেরনগর এলাকার সেই হালকা ছেলেটা যাকে তার দোলাভাই ছোট বেলায় তার কাছে এনে বরন পুষণ করেছিল। যে ছিল আমার বন্ধু মহলের একমাত্র প্রানপ্রিয় বন্ধু সাহেদ সে আজ কেমন আছে? যদি তার সাথে আমার মাঝে মাঝে দেখা হয়। কিন্তু সেই রাক্ষসিণি মনি আজও আমার সাথে দেখা করেনি খোঁজ খবর নেইনি। আমি কেমন আছি। আমার জানতে খুব ইচ্ছে করে এটি কোন প্রেম ???? এটি কোন বন্ধুত্বতা। আমি এ পৃথিবীর বুকে ওই সমস্ত প্রতারক, নাপরমান, বেইমান, বিশ্বাসঘাতক বন্ধুদের ঘৃণা করি। আমি জীবনেও কোন দিন ক্ষমা করব না তাদের। আমি অভিশাপ দিলাম তাদের যারা আমার এই সুন্দর সহজ সরল মনকে নিয়ে খেলা করেছি। আজ বন্ধুত্ব দিবসে আমার মনে তাদের খুব বেশী মনে পড়ে।
২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৪:০২
শাহাব আহমেদ মামুন বলেছেন: ধন্যবাদ আরিফ, কেমন আছেন? ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:০১
আরিফ থেকে আনা বলেছেন: বন্ধু দিবসের শুভকামনা