মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এটা কী বললেন ?

৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গতকাল মহান সংসদে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আপনার বলা কথাগুলো কি যৌক্তিক ছিল ? যদিও এরকম কথা আগেও বলেছেন। আস্কারা পেয়ে আপনার মন্ত্রীরাও অনেক উদ্ভট মন্তব্য করেছেন। আপনার এক মন্ত্রী তো বলেইছিলেন-‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হলে কৃত্রিম বন তৈরি করা হবে’।- কতটা আহম্মক হলে এরকম মন্তব্য করা যায় ! যাই হোক- পবিত্র সংসদে দাঁড়িয়ে আপনি বললেন,“ যারা রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে তাদের বাংলাদেশের উন্নতিটা ভাল লাগে না’। আপনি আরও বলেছেন, ‘কথায় আছে মায়ের পোড়ে না মাসির পোড়ে। বাংলাদেশ আমাদের দেশ-সুন্দরবন রক্ষা, বাংলাদেশকে রক্ষা করা, সেখানে আমার দরদ থাকবে না অন্য কারও দরদ থাকবে- এটা আমি বিশ্বাস করি না”-- তার মানে আপনার কথায় বোঝা গেল সাধারণ মানুষ আর দেশের কল্যানে কথা বললেই উন্নয়নবিরোধী। অবশ্য এক আওয়ামীলীগ নেতা আমাকে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপক্ষে কথা বলায় যুদ্ধাপরাধীর সাথেও তুলনা করেছেন ! আবার আপনার কথায় আরও একটি বিষয় পরিষ্কার হল যে যারা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে তারা এদেশের নয়, কারণ বাংলাদেশটা আপনাদের। আপনাদের বলতে কি আওয়ামীলীগকে বুঝিয়েছেন ?

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে কী কী ক্ষতি হবে এবং এই চুক্তিটি কেন স্বার্থবিরোধী তা এতদিনে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। তবু গতকাল আপনার অমন কথা শুনে এই আন্দোলনের একজন কর্মি হিসেবে সত্যি কিছু না বলে পারছি না। বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য রামপালে জমি অধিগ্রহনের ফলে ৮০০০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে। লক্ষ লক্ষ টন ধান উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। বিদেশি কোম্পানীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং আপনাদের পকেটে কমিশন ভরার আগে সাধারণ মানুষের এই ক্ষতির কথা বিবেচনা করেছেন কি ?
কেবল মানবিক বিপর্যয় নয়, রয়েছে পরিবেশগত ঝুঁকিও। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে প্রতিদিন ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড ও ৮৫ টন নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। এছাড়া ২ লক্ষ বটম অ্যাশ নির্গত হবে যা পরিবেশ তো বটেই- রামপাল থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করা সুন্দরবন মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এমনকি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে কয়লা পরিবহন সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরুপ। ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া শ্যালা নদীর ক্ষতি দেখেও কি আমরা বুঝতে পারছি না ?

এবার আসি এই চুক্তিটি প্রসঙ্গ- চুক্তি অনুযায়ী মোট বিনিয়োগের ১৫% দেবে পিডিবি, ১৫% দেবে ভারতীয় কোম্পানি, বাকী ৭০% ঋণ নেয়া হবে। নীট লাভ ভাগ হবে ৫০% হারে। আশ্চর্য ! ৭০+১৫=৮৫ ভাগ বিনিয়োগ আমাদের থাকা সত্বেও নীট লাভ ৫০% হারে, এটা কি অসম হয়ে গেল না ? আবার আমাদের প্রয়োজনে বিদ্যুৎ তাদের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে ৮ টাকা ৩৫ পয়সা দরে। অথচ সচরাচর আমরা বিদ্যুৎ কিনছি ৪ টাকারও কম দামে। তারপরও ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি‘র দালালী কেন করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ? আবার কী অদ্ভুদ ঘটনা, এই এনটিপিসি কোম্পানিকে তার নিজের দেশ ভারতেই এই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের অনুমোদন দেয়া হয়নি ক্ষতির কথা বিবেচনা করে। এ এক আজব দেশে বাস করছি আমরা !

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ভুলে গেলেন সেদিনের কথা ! যেদিন ফুলবাড়িতে এশিয়া এনার্জির উন্মুক্ত কয়লা উত্তোলনের প্রতিবাদে জনতা মাঠে নেমেছিল। বিএনপি-জামাত জোটের পুলিশ-বিডিআর গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল তরিকুল-সালেকিন-আল আমিনদের। আপনি সেখানে গিয়ে বাহবা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় গেলে দেশবিরোধী সব চুক্তি বাতিলের। ক্ষমতায় এসে সব ভুলে গেলেন। আর আপনার ভুলের প্রতিবাদ করা অন্যায় ! প্রতিবাদকারীদের ঠেঙানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে আপনার সোনার ছেলের দল আর পুলিশবাহিনী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা ক্রিকেট নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে খুব মেতে আছি। গতকাল সংসদে আপনিও গর্ব করে টাইগারদের প্রশংসা করেছেন। টাইগার এখন আমাদের শৌর্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সেই টাইগারের আবাসস্থল বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন আমাদের অহংকার সুন্দরবনকে লোভের বশবর্তী হয়ে ধ্বংস করে দেবেন না প্লিজ।

০ টি +০/-০