নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নারী দিবসে সকল মাকে (নারী) বিনম্র শ্রদ্ধা
জীবন আমার মা
মুহাম্মদ নূরে আলম সূফি বরষণ:
আমার মা আমার জীবন আর জীবন আমার মা। মা আমার স্বপ্ন, মা আমার স্বপ্নের পৃথিবী, মা আমার স্বপ্ন গড়ার কারিগর। মা একান্নবর্তি পরিবারে থেকে অনেক কষ্ট করেছ আমার জন্য। মা এখনও তোমার চোখের জন মুছে দিয়ে হাসি ফুটাতে পারিনি কিন্তু তারপরও বলি মা তোমার নড়ী ছেঁড়ার ধন তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি, মা তোমায় অনেক মিস করি। আর যারা এখনও বলেননি আজই এই মুহূর্তে মাকে জড়িয়ে ধরে বলেন মা আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তবে প্রিয় পাঠক নারী দিবসের এই আলোচনায় বিভিন্ন ধর্মে নারীর মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করবো। নারী দিবস এখন উৎসব। সেটি কনসার্টে হোক, তীব্র তীক্ষ্ণ শব্দের লেখনীতে হোক, টেলিভিশনে সেজেগুজে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে হোক, সর্বত্রই বানিজ্য। বানিজ্যে লক্ষ্ণী। বাহ লক্ষ্ণী! সেও যে নারী। আমি বানিজ্যের বিরোধী নই। বহু দিবসের বিরোধীও নই। বিশেষত যে দিবসটির ইতিহাস- নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলেছিল সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে।যদিও এটি ছিল আন্তর্জাতিক কর্মী নারী দিবস কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই দিবসটি তার রাজনৈতিক চেহারা পাল্টে এখন নারীর প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও নারীর অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে অনেকটা ভ্যালেন্টাইনস ডে ও মাদার’স ডে’র মিশেলে নারী দিবস পালন করছে।
বাংলা সাহিত্যে নারী:
সংস্কৃত নৃ শব্দটি থেকে নারী শব্দটির উৎপত্তি (নৃ+ঈ=নারী)। পশ্চিমা বিশ্বের এই নারীর দিকে যদি নজর দেই, নারীর জীবনের সকল সিদ্ধান্তে নিজ মত প্রয়োগের অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত। এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার।যে অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু হুমায়ুন আজাদ নিজেকে একজন নারী
অধিকার কর্মী হিসাবে মনে করত !
.আর এ নারীদের নিয়ে তার দুটি উক্তি
দেখুনঃ - এক একটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে
দেখি ,মাঝারী স্তন আমার পছন্দ, সরু
মাংসল উরু আমার পছন্দ ,চোখের
সামনে আমার মেয়ে বড় হচ্ছে ।কিন্তু
সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে
আমার হাত-পা বাঁধা !!!
.আরেকটি উক্তিঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের চুইংগামের
মতো চাবাতে ইচ্ছে করে !
সমকালীন বাংলা সাহিত্যে আমরা যদি কবি আল-মাহমুদের কবিতা গুলো পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাব, তাঁর অনেক কবিতাই নারী এবং যৌন অশ্লীলতায় সরব।
তারপর তুলতে চাও কামের প্রসঙ্গ যদি নারী
খেতের আড়ালে এসে নগ্ন করো যৌবন জরদ
শস্যের সপক্ষে থেকে যতটুকু অনুরাগ পারি
তারো বেশী ঢেলে দেবো আন্তরিক রতির দরদ ।
(সোনালী কাবিন- সনেট ১০ )
চরের মাটির মতো খুলে দাও শরীরের ভাজ
উগোল মাছের মতো খুলে দাও শরীরের ভাজ ।
(আষাড়ের রাত : আরব্যরজনীর রাজহাস )।
হুমায়ুন আজাদ ও আল-মাহমুদের কবিতা বা সাহিত্য পর্যবেক্ষণ করলে আরো অনেক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যাবে। শুধু আল-মাহমুদ নয় আধুনিক বাংলা সাহিত্যে কবি বা সাহিত্যিকদের হাতে যৌনতার শৈল্পিক রুপায়ন ঘটেছে। এই যৌনতা আবার কখনো কখনো অশ্লীলতার মাত্রায় পর্যবসিত হয়েছে। যেমন হুমায়ুন আজাদ মত তাসলিমা নাসরিনের লেখা কবিতায়ও: যে নারী নিজে একজন নারী হয়ে নিজেকে তাঁর লেখার মাধ্যমে ছোটো করছে।
শরীরের এই হাল, শরীরে গ্রীষ্মকাল,
স্নানের জল আছে? ও যুবক স্নানের জল আছে তো?
তোর একার জলে না হলে যুবকের দল কাছে তো? (কাঁপন ১৭ তাসলিমা নাসরিন)
এছাড়া তাসলিমা তাসরিনের কবিতা, উপন্যাস, হুমায়ুন আজাদের নারী উপন্যাস সহ আরো অনেক কবি সাহিত্যিক রয়েছেন, যাদের কবিতা সাহিত্য যা অশ্লীলতার মাত্রায় পর্যবসিত হয়েছে। সাহিত্যে যৌনতার উপস্থিতি সমাজের বিদ্যমান দ্বন্দ্বকে রুপায়ন করার জন্য প্রয়োজন হবে। তবে এই রুপায়ন যেন যৌন সাহিত্য বা পর্ণো সাহিত্যের রুপান্তরিত না হয়। তথাকথিত নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, মানবতাবাদী আর নারীবাদীরা ও নারী অধিকারের কথা বলে নারীকে হেয় আর অশ্লীল ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
অশ্লীলতা শুধু বিষয়বস্তুতে নয়, প্রকাশভঙ্গীতেও। অশ্লীলতা আকারে-ইঙ্গিতে। বিষয়বস্তুর প্রাথমিক স্তর বিন্যাসে। ইসলামী সাহিত্যের কোন েেত্র কোন পর্যায়েও অশ্লীলতার প্রতি সমর্থন নেই। অশ্লীলতা হচ্ছে একটা বিকৃত রুচি। আর এই বিকৃতি রুচির সাথে ইসলামী সাহিত্যিকের হৃদ্যতা কেমন করে বাড়তে পারে? “বুঈস্তু লিউতাম্মিমা মাকা-রিমাল আখলাক” আমাদের নবীকে যেখানে আমাদের চরিত্রে নৈতিক দিকগুলোকে আরো বেশি শালীন, আরো বেশি রুচিশীল ও আরো বেশি পূর্ণতা দান করার জন্য পাঠানো হয়েছিল সেখানে আমরা কেমন করে অশালীন পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব নিতে পারি। কুরআনে মুমিনের রুচিবোধ সম্পর্কে বলা হয়েছে: “ওয়া ইযা মাররু বিল লাগবি মাররু কিরা-মা”- যখন তারার কোন বাজে বা অশালীন কাজের কাছ দিয়ে যায়, তখন কোন আগ্রহ প্রকাশ না করে একান্ত অনীহা দেখিয়ে ভদ্রভাবে সে স্থান অতিক্রম করে। রসিয়ে রসিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এটাকে বর্ণনা করা কোন মুসলিম সাহিত্যিকের কাজ হতে পারে না।
সাহিত্যে যৌনতা প্রসঙ্গে এই কথাই বলা যায়। স্বামী স্ত্রীর গোপন বিষয় তৃতীয় ব্যক্তির সামনে বলা নবী করিম (সা.) নিষিদ্ধ করেছেন। আসলে এটা সাহিত্যের বিষয় নয়। সাহিত্য ক্ষেত্রে একে টেনে এনে সাহিত্যের কোন উন্নতি সাধন করা হয়নি এবং এ ধরনের কোন সাহিত্যের কল্যাণকামী চরিত্র থাকতে পারে না। এ ধরনের সাহিত্য চরিত্র য়, চরিত্র নাশ ও চরিত্র ধ্বংসই করতে পারে শুধু। কাজেই ইসলামী সাহিত্যের সাথে এর দূরবর্তী কোন সম্পর্কও থাকতে পারে না।
অশ্লীলতা ও যৌন প্রসঙ্গকে যারা সাহিত্যের আওতাভুক্ত করেন জীবন সম্পর্কে আসলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গীও আলাদা। মানুষকে ও মানুষের জীবনকে তারা যে দৃষ্টিতে বিচার করেন ইসলামের সাথে তার বিরোধ সুস্পষ্ট। ফ্রয়েডের দৃষ্টিতে মানুষকে তারা দেখেন একটি যৌন জীব হিসাবে। মানুষ ও পশুর মধ্যে এেেত্র তারা কোন পার্থক্যই করেন না। আর জীবনকে তারা শুধু উপভোগ করার কথাই চিন্তা করেন। জীবন ও যৌবন তাদের কাছে একটি সম্পদ। এজন্য দুনিয়ায় যতদিন থাকা যায় ততদিন এই সম্পদ দু’টো উপভোগ করার জন্য তারা হাজারো পন্থা উদ্ভাবন করেছেন। ধর্ম তাদের জীবন চিন্তায় পঙ্গুত্ব বরণ করার এবং আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সংশয় জাগার পরই তারা এই নতুন ভোগবাদী জীবন দর্শন রচনা করেছেন। এই জীবন দর্শনের সাথে ইসলামের বিরোধ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। ইসলাম জীবন ও যৌবনকে একটি মূল্যবান সম্পদ মনে করে এজন্য যে, এটি আল্লাহর একটি আমানত। এর মধ্যে বেঁচে থাকার ও বংশ রার একটা তাগিদ রয়েছে। কিন্তু যে তাগিদটি এর সমগ্র সত্তাকে ঘিরে রেখেছে সেটি হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যে একে পুরোপুরি সোপর্দ করা। এমনকি বেঁচে থাকার ও বংশ রার তাগিদটিও এই দ্বিতীয় তাগিদটির আওতাধীনে থাকবে। কাজেই এখানে পাশবিক জীবন উপভোগের কোনো অবকাশ নেই। জীবন ও যৌবনের মানবিক ব্যবহারকেই এখানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সমগ্র মানব জাতির জন্য জীবন ও যৌবনের এই ব্যবহারকেই ইসলাম কল্যাণকর গণ্য করে।
বিজ্ঞাপনে নারী:
গ্রামীন ফোনের বিভিন্ন বিলবোর্ডে এবং বিভিন্ন ওয়েব সাইটে "চলো বহুদূর" লেখা এ বিজ্ঞাপনটি অনেকেরই নজরে পড়ে। এ জাতীয় গ্রামীন ফোনের আরো কতগুলো বিজ্ঞাপন থাকেলেও এটি বেশ অশ্লীল। "চলো বহুদূর" লেখা একটি বিজ্ঞাপনে ছোট শিশুর ছবি দেয়া হয়েছে যা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই তার মধ্যে কোন অশ্লীলতা নেই। কিন্তু এখানে তারা যে ছবি দিয়েছে তা সমাজকে দূষিত করার জন্য ব্যপক ভূমিকা রাখতে পারে। আদিম যুগের লোকেরা নাকি গাছের লতাপাতা পরিধান করতো। কুল বডি স্প্রের বিলবোর্ডে মনে হয় এমন আদিম কিছু লোককে মডেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যাদের গায়ে জামা কাপড় নেই। লজ্জাস্থান গাছের লতাপাতা দিয়ে ঢাকা। এ ছবিটি কী ধর্ষনের উষ্কানিমূলক নয়!!!
শাড়ির বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে একটি কোম্পানি ব্যবহার করলো এ ছবিটি-
এসব বিজ্ঞাপন ইচ্ছা না থাকলেও দেখতে হচ্ছে আমাদেরকে। কামুক প্রকৃতির লোকেরা এতে আশক্ত হয়ে পড়ছে ধর্ষনের প্রতি। আর আমাদের মানবাধিকার সংগঠনের লোকেরা মানব বন্ধন করছে ধর্ষনের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের চোখের সামনেই এসব অশ্লীল বিলবোর্ড। এগুলোর বিরুদ্ধে বলার কেউ নেই! এসব অশ্লীল বিলবোর্ডের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য সচেতন ও বুদ্ধিজীবি মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। (শালীনতা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কোন কোন ছবির কিছু অংশ ঢেকে দেয়া হয়েছে)|
শিল্প বিপ্লবোত্তরকালে পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন বেড়েছে প্রচুর। বাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী। এগুলো বাজারজাত করতে প্রচার দরকার। ব্যবসায়ী সমাজ পণ্য সামগ্রীর বহুল প্রচার আকর্ষণীয় প্রচারের জন্য বেছে নিল নারী সমাজকে। বিজ্ঞাপনের নানা টেকনিক পণ্যসামগ্রীর কদর বাড়াচ্ছে। নারীদের আকর্ষণীয় করে তুলছে তা বোঝা কষ্টকর। এ প্রচার ব্যবসায় নারী দেহের সৌন্দর্যকে পুঁজি করে নানাভাবে ভোক্তাদের পণ্যের প্রতি আকর্ষিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পণ্যের প্রতিযোগিতায় বাজার বিজ্ঞাপনের জগতেও নারী সৌন্দর্য প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতা ক্রমশ বেড়ে চলছে। বিজ্ঞাপনের ছদ্মাবরণে নারী সৌন্দর্য প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা একটি বিপদসীমায় এসে উপনীত হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোন নতুন ব্রান্ডের জিনিস প্রচলন করার বেলায় দেখা যায় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ড আনুগত্য কমিয়ে এনে নিজস্ব ব্রান্ডের প্রতি ক্রেতাকে আগ্রহী করে তোলা, এজন্য তারা হালকা বিজ্ঞাপন তৈরি করে থাকে যার মূলে থাকে প্রায়ই নারী সৌন্দর্য। ব্যবসায়ী মহল পুনঃ পুনঃ নারীকেন্দ্রিক বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে উদ্দীপনা সৃষ্টির পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে।
এটি এক দৃঢ় সত্য যে, মানুষের আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গী সমাজ ও সমাজের বিভিন্ন অংশের সাথে সম্পর্কিত। মানুষ তার আবহমান কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ধাক্কায় ভুলে যেতে বসেছে। জীবনের পরিধি বাড়ার সাথে এর নিজস্ব সংস্কৃতির বন্ধনকে অটুট রাখার কোন শক্তি না থাকার কারণে পশ্চিমা ও ভিন্ন সংস্কৃতি আমাদের সমাজের মানুষকে তার দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে ও আচরণ বিন্যাসে প্রভাবিত করছে। আর এ ক্ষেত্রে নারীকেন্দ্রিক বিজ্ঞাপন প্রক্রিয়া দিন দিন খোলাখুলি হতে চলছে। আধুনিক ব্যবসায়ী সমাজ পণ্য বিক্রয় বাজার তৈরি করার জন্য ফ্রয়ডীয় তত্ত্ব অনুসরণ করে সহজাত প্রবৃত্তির স্থলে মৌলিক তাড়না সৃষ্টির উপর গুরুত্ব প্রদান করছে। এই তাড়না বৃদ্ধির জন্য তারা বিজ্ঞাপনে নারীর সৌন্দর্য ও যৌনতাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করছে।
নারী সৌন্দর্য পণ্য বাজারজাত করার জন্য নয়। মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নারীর সৌন্দর্য মানব জাতির জন্য আল্লাহর এক বিশেষ অবদান। এই সৌন্দর্যকে ব্যবহার করতে হবে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে, সুনির্দিষ্ট পথে, কিন্তু যখনই কোন জাতির মধ্যে নারী সৌন্দর্য শুধুমাত্র উপভোগ ও আনন্দের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে তখন সে জাতি ধ্বংস হয়েছে। গ্রীক ও রোমান পুরাণে সর্বাধিক আলোচিত নারী চরিত্র হেলেন। হেলেনের সর্বনাশা রূপের জন্য গ্রীক ও ট্রয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। শুধুমাত্র প্রতীচ্য পুরাণই নয়, বর্তমানকালের বহু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, অনিয়ন্ত্রিত নারী সৌন্দর্যচর্চা বর্তমান সভ্যতাকে বিপদসীমানায় উপনীত করেছে।
অসংখ্য পণ্যসামগ্রীর বিজ্ঞাপনে নারীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য নারী সৌন্দর্যের বিভিন্ন গোপন অংশকে আকর্ষণীয় করে প্রচার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উলঙ্গপনা ও অশ্লীলতার প্রতিযোগিতা চলছে। এজন্য এমনকি আজ সিক্ত বসনা নারীকে বিজ্ঞাপনের বাজারে উপস্থিত করা হচ্ছে। এ ফ্যাশনের ছড়াছড়ি পশ্চিমা মুল্লুকে দূষণীয় নয়। কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে নারীর পর্দাকে ঈমানের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় সেখানে বিজ্ঞাপনের নামে এমন শরীর প্রদর্শন রাষ্ট্রীয় বিধানের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে এসব কর্ম তৎপরতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত। যারা যেসব নারী সৌন্দর্য প্রদর্শন করে এবং যারা প্রদর্শনে নারী জাতিকে উৎসাহিত করে তারা উভয়ই অপরাধী। আলী ইবনে আবী তালেব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘‘অশ্লীলতা ও লজ্জাহীনতার কথা যে বলে এবং যে প্রচার করে উভয়ই সমান গুণাহগার।’’নারী সমাজ বিজ্ঞাপন শিল্পে ক্ষণিক মোহ বিস্তারের দ্বারা জৈব উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য নেমে পড়েছে তা রোধে যদি সমাজের দায়িত্বশীল বুদ্ধিজীবী সমাজ তৎপর না হন তবে এ সমাজ যৌনলীলার পঙ্কে ডুবে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইহুদি ধর্মে নারী:
ইহুদী ধর্মে নারীর প্রকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সতী নারীর চেয়ে পাপিষ্ট পুরুষও শতগুণে ভাল’। তারা নারীকে যাবতীয় পাপ ও মন্দের মূল কারণ হিসাবে গণ্য করেছে।
খ্রিস্টান ধর্মে নারী:
খৃষ্টান ধর্মের মতে নারীরাই নরকের প্রবেশ দ্বার। সপ্তদশ শতাব্দীতে ‘কাউন্সিল অব দ্যা ওয়াইজ’-এর অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় 'Woman has no soul' ‘নারীর কোন আত্মা নেই’।
চীন সভ্যতায় : চীন দেশের নারীদের অবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে জনৈকা চীনা নারী বলেন, ‘মানব সমাজে নারীদের স্থান সর্বনিম্নে। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! নারী সর্বাপেক্ষা হতভাগ্য প্রাণী। জগতে নারীর মত নিকৃষ্ট আর কিছু নেই’।
রোমান ও গ্রীক ধর্মে নারী:
গ্রীক সভ্যতায় : বিশ্বখ্যাত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস বলেন, 'Woman is the greates source of chaose and disruption in the world' ‘নারী জগতে বিশৃংখল ও ভাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস’।
রোম সভ্যতায় : রোম সভ্যতায় পরিবারের নেতা ও পরিচালক পিতা বা স্বামী নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের উপর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিল। তারা যখন ইচ্ছে তখনই নারীকে ঘর থেকে বহিষ্কার করে দিত।
হিন্দু ধর্মে নারী:
খ্রিস্টধর্মের মৌল তত্ত্বকথায় আছে "আদিপাপবর্জিত জন্ম", বা ভারতীয় পুরাণ ও উপকথাতে আছে 'অযোনিসম্ভব আবির্ভাব’ (Virgin Birth)? যেমন—‘সীতার জন্ম লাঙলের ফলায়, উর্বশীর জন্ম জহুমুনির জঙঘা থেকে, দ্ৰৌপদীর জন্ম হোমাগ্নি থেকে, বৌদ্ধশাস্ত্রে মাতা আম্রপালী পূর্ণযৌবনা স্বয়ম্বরূপে আম্রকাননে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু এগুলো উপকথা মাত্র। হিন্দু বা বৌদ্ধধর্মের মর্মমূলের তত্ত্বকথা নয়। অপর পক্ষে খ্রিস্টান ধর্ম নরনারীর জৈব সম্পর্কের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে। খ্রিস্টধর্মে যাজকদের বার-বার আদম-ঈভের আদিপাপ থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ধর্মযাজক সেন্ট অগাস্টিন তার শিষ্যদের সাবধান করে বলেছেন : “What does it matter whether it be in Person of mother or sister: We have to be beware of Eve in every woman” (নারীর মূল্যজ্জ শরৎচন্দ্র ) কিন্তু তথাপি একথা মানতে আমরা বাধ্য যে, প্রকৃতি-পুরুষের আবশ্যিক মিলনের মাধ্যমেই সূর্যের এই তৃতীয় গ্রহে জীবের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এই ধ্রুব সত্যকে শুধু ভারতীয় ঋষিরাই নয়, প্রতিটি প্রাচীন সভ্যতা মেনে নিয়েছে খ্রিষ্টের জন্মের কয়েক সহস্রাদি পূর্বকাল থেকেই। হিন্দুশাস্ত্র বলে; একই সত্তা সৃষ্টির জন্য নারী-পুরুষ রূপে দ্বিরূপপ্রাপ্ত হয় নিরাকার। আত্মসংযম বা ইন্দ্রিয়সংযমের বিধান ধর্মে থাকলেও, কোথাও কোনো ধর্মেই গৃহীদের ক্ষেত্রে ‘বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি’-র কথা বলা নেই।
বলা হয়ে থাকে হিন্দুধর্মের মূল গ্রন্থ বেদ।এজন্য অনেকে হিন্দুধর্মকে বৈদিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।হিন্দুধর্মের বেদ চারটি; যথা ঋগে¦দ, সামবেদ, অথর্ববেদ ও যজুর্বেদ। এই যজুর্বেদ দুই ভাগে বিভক্ত—একটি হচ্ছে কৃষ্ণযজুর্বেদ বা তৈত্তরীয় সংহিতা অন্যটি শুক্লযজুর্বেদ; এই শুক্লযজুর্বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত, একটি শতপথ ব্রাহ্মণ এবং বৃহদারণ্যকোপনিষদ। শুক্লযজুর্বেদের অন্তর্গত শতপথ ব্রাহ্মণে নারীকে তুলনা করা হয়েছে এভাবে, “সে ব্যক্তিই ভাগ্যবান, যার পশুসংখ্যা স্ত্রীর সংখ্যার চেয়ে বেশি” (২/৩/২/৮)। শতপথ ব্রাহ্মণের এ বক্তব্যকে হয়তো দরদী ধর্মবাদীরা ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে যৌক্তিকতা দিতে চেষ্টা করবেন, কিন্তু পরের আরেকটি শ্লোকে পাওয়া যায় হিন্দু ধর্মের দৃষ্টিতে নারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান; “বজ্র বা লাঠি দিয়ে নারীকে দুর্বল করা উচিৎ, যাতে নিজের দেহ বা সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার না থাকতে পারে” (৪/৪/২/১৩)। এর থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্যের আর প্রয়োজন আছে? বৃহদারণ্যকোপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবাল্ক্য বলেন, “স্ত্রী স্বামীর সম্ভোগকামনা চরিতার্থ করতে অসম্মত হলে প্রথমে উপহার দিয়ে স্বামী তাকে ‘কেনবার’ চেষ্টা করবে, তাতেও অসম্মত হলে হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে মেরে তাকে নিজের বশে আনবে” (৬/৪/৭, ১/৯/২/১৪)।
দেবীভাগবত-এ নারীর চরিত্র সম্পর্কে বলা আছে (৯:১): “নারীরা জোঁকের মত, সতত পুরুষের রক্তপান করে থাকে। মুর্খ পুরুষ তা বুঝতে পারে না, কেননা তারা নারীর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। পুরুষ যাকে পতœী মনে করে, সেই পতœী সুখসম্ভোগ দিয়ে বীর্য এবং কুটিল প্রেমালাপে ধন ও মন সবই হরণ করে।” বাহ্! হিন্দুরা না-কি মাতৃজ্ঞানে দেবীর (দূর্গা, কালি, মনসা, স্বরসতী,লক্ষী) পূজা করে? ‘নারী’ সম্পর্কে যাদের ধর্মীয় বিধানে এমন হীন বক্তব্য রয়েছে, তারা দেবীর পূজা করলেই কী আর না-করলেই কী? ঋগে¦দ বা অন্যান্য বেদ, উপনিষদে কয়েকজন বিদুষী ও শাস্ত্রজ্ঞ নারীর নাম জানা যায়, যারা বিভিন্ন শ্লোক রচনা করেছিলেন; তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছেন লোপামুদ্রা, বিশ্ববারা, গার্গী, বাৎসী, বাক্, অপালা, সূর্যা, ইন্দ্রাণী প্রভৃতি।
আধুনিককালে কেহ কেহ এই বিদুষী নারীদের নাম দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে চান, সেকালে নারীরা কতটুকু স্বাধীন ছিল যে, তাঁরা বেদের শ্লোক পর্যন্ত রচনা করেছিলেন! অস্বীকার করা যাবে না, সেকালে কয়েকজন নারী শ্লোক-মন্ত্র রচনা করে শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের স্বতন্ত্র্য অবস্থান প্রমাণ করে গেছেন।কারণ ধর্মগ্রন্থকে ঘিরেই ছিল সেকালের শিক্ষা। তবে একটা উদাহরণ দিলেই বুঝা যাবে, তৎকালীন সমাজে এ বিদুষী নারীদের অবস্থান কি রকম ছিল? (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে পঞ্চম শতকের মধ্যে রচিত) বৃহদারণ্যক উপনিষদে দেখা যায়, খ্যাতনামা ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য এবং অন্যান্য ঋষিদের সাথে এক সভায় ঋষি বাচাক্লুর কন্যা গার্গী ব্রহ্মজ্ঞান নিয়ে তর্কে লিপ্ত হয়ে নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। একসময় যাজ্ঞবল্ক্য ক্রুদ্ধ হয়ে বলে উঠেন, “হে গার্গী, আর বেশি প্রশ্ন করো না, তাহলে তোমার মাথা খসে পড়ে যাবে!” (৩/৬/১); যাজ্ঞবল্ক্যের বক্তব্যে গার্গী থেমে গেলেন পরবর্তীতে স্বীকার করলেন, ব্রহ্মবিদ্যায় যাজ্ঞবল্ক্যকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না (৩/৮/১-১১)। আবার যে নারীরা বেদের-উপনিষদের শ্লোক-মন্ত্র রচনা করেছেন, সেই নারীদের উত্তরসূরীদের জন্য মনু বেদসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পাঠের অধিকার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, “নারীরা ধর্মজ্ঞ নয়, এরা মন্ত্রহীন এবং মিথ্যার ন্যায় (অশুভ)এই শাস্ত্রীয় নিয়ম” (মনুসংহিতা,৯/১৮)।
হিন্দুধর্মের ইতিহাসে সেই কুখ্যাত সতীদাহ বা সহমরণের কথা প্রথম জানা যায় অথর্ববেদে, “... জীবিত নারীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃতের বধু হতে” (১৮/৩/৩); “এই নারী পতিলোকে যাচ্ছে, এ প্রাচীন রীতি অনুসরণ করছে...” (১৮/৩/৩/১)। এ প্রাচীন রীতি কত পুরানো? এটি আর্য না প্রাগার্য সংস্কৃতি?কারণ আমরা ইন্দো-ইয়রোপীয় অন্য সভ্যতাগুলিতে আমরা সহমরণের কথা তো পাই না। উত্তরগুলো আমার জানা নেই। তবে পাঠক, আপনারা হয়তো ইতিহাস পাঠের কারণে জানেন, এই বাংলায় ১৮১৫ সাল থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত মাত্র তের বছরে ব্রাহ্মণ্যবাদীর দল পুণ্যলাভের আশায় আর নারীর সতীত্ব (?) রক্ষার ধুয়া তুলে ৮১৩৫ জন নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে সতী বানিয়েছিল! একটু ভাবুন তো, একটি নিরাপরাধ মেয়েকে টেনে-হিচড়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলছে, পাশে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন সক্কলে দাঁড়িয়ে‘বল হরি বল’ কীর্তন গেয়ে নিজেদের স্বর্গে যাবার আয়োজন করছে,ভাবতেই তো গা গুলিয়ে উঠে! মানুষ কী পরিমাণ পাষণ্ড-হারামি-ধর্মান্ধ হলে এরকম কাজ করতে পারে? ‘ধর্ম’ নামক আফিমীয় মাদক মানুষকে কতটুকু নিবোর্ধ-মানবিকতাশূণ্য বানিয়ে দেয়, তারই উদাহরণ হতে পারে উপমহাদেশের এই সতীদাহ প্রথা।
মনুসংহিতা এবং নারী : হিন্দু আইনের মূল উৎস হচ্ছে এই ‘মনুসংহিতা’ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বিবেচ্য। এই ধর্মগ্রন্থে নারীর কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে,“বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদিকঃ স্মৃতঃ/পতিসেবা গুরৌ বাসো গৃহার্থোহগ্নিপরিক্রিয়া॥” (২:৬৭),অর্থাৎস্ত্রীলোকদের বিবাহবিধি বৈদিক সংস্কার বলে কথিত, পতিসেবা গুরুগৃহেবাস এবং গৃহকর্ম তাদের (হোমরূপ) অগ্নিপরিচর্যা; আবারও বলে দেয়া হয়েছে নারীর কর্তব্যগৃহকর্ম এবং সন্তান উৎপাদন (৯:২৬)। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যই নারী এবং সন্তান উৎপাদনার্থে পুরুষ সৃষ্টি হয়েছে (৯:৯৬)। যে সকল নারী একদা বৈদিক মন্ত্র-শ্লোক পর্যন্ত রচনা করেছিলেন,তাদের উত্তরসূরীদের জন্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত-অমন্ত্রক (২:৬৬);নারী মন্ত্রহীন, অশুভ (৯:১৮)। কন্যা, যুবতী, রোগাদি পীড়িত ব্যক্তির হোম নিষিদ্ধ এবং করলে নরকে পতিত হয় (১১:৩৭)! স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে (৫:১৫৪)“বিশীলঃ কামবৃত্তো বা গুণৈর্বা পরিবর্জিতঃ/উপচর্যঃ স্ত্রিয়া সাধ্ব্যা সততং দেববৎ পতিঃ॥” বাংলা করলে দাঁড়ায়, স্বামী দুশ্চরিত্র, কামুক বা নির্গুণ হলেও তিনি সাধ্বী স্ত্রী কর্তৃক সর্বদা দেবতার ন্যায় সেব্য। পরবর্তী শ্লোকে রয়েছে, কোনো নারী (স্ত্রী) যদি স্বামীকে অবহেলা করে, ব্যভিচারিণী হলে সংসারে তো নিন্দিত হবেই সাথে-সাথে যক্ষা, কুষ্ঠ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়, শুধু তাই নয় পরজন্মে শৃগালের গর্ভে জন্ম নিবে সেই নারী (৫:১৬৩-১৬৪)। স্ত্রীদের জন্য স্বামী ছাড়া পৃথক যজ্ঞ নেই, স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনো ব্রত বা উপবাস নেই, শুধু স্বামীর সেবার মাধ্যমেই নারী স্বর্গে যাবে (৫:১৫৫)।
সাধ্বী নারী কখনো জীবিত অথবা মৃত স্বামীর অপ্রিয় কিছু করবেন না (৫:১৫৬)। স্বামী মারা গেলে স্ত্রীদের কি করতে হবে“কামন্তু ক্ষপয়েদ্দেহং পুস্পমূলফলৈঃ শুভৈঃ/ন তু নামাপি গৃহ্নীয়াৎপত্যৌ প্রেতে পরস্য তু॥” (৫:১৫৭), সহজ ভাষায় বাংলা করলে হয়, স্ত্রী সারা জীবন ফলমূল খেয়ে দেহ ক্ষয় করবেন, কিন্তু অন্য পুরুষের নামোচ্চারণ করবেন না। কিন্তু স্ত্রী মারা গেলে স্বামী কি করবেন, “ভার্যায়ৈ পূর্বমারিণ্যৈ দত্ত্বাগ্নীনন্ত্যকর্মণি/পুনর্দারক্রিয়াং কুর্যাৎ পুনরাধানমেব চ॥” (৫:১৬৮), এই শ্লোকেরও বাংলা শুনুন, দাহ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে স্বামী আবার বিয়ে এবং অগ্ন্যাধ্যান করবেন। সত্যি! নারী-পুরুষের মধ্যে কী চমৎকার সমতা!! কেহ কেহ বলেন, ‘মনুবাদ’ থেকেই না-কি ‘মানবতাবাদ’ এসেছে! দারুন! ধন্য মোরা মনুর প্রতি! আবার এই ‘মনুবাদ’ না-কী হিন্দু আইনের উৎস! নারীর গুণাবলী নিয়ে মনু বলেন, নারীর কোনো গুণ নেই, নদী যেমন সমুদ্রের সাথে মিশে লবনাক্ত (সমুদ্রের গুণপ্রাপ্ত) হয়, তেমনই নারী বিয়ের পর স্বামীর গুণযুক্ত হন (৯:২২)। নারীর স্বাধীনতা সম্পর্কে মনুর সংহিতাতে বলা আছে :“অস্বতন্ত্রাঃ স্ত্রিয়ঃ কার্য্যাঃ পুরুষৈঃ স্বৈর্দ্দিবানিশম্/ বিষয়েষু চ সজ্জন্ত্যঃ সংস্থাপ্যা আত্মনো বশে॥” (৯:২), অর্থাৎ স্ত্রীলোকদের স্বামীসহ প্রভৃতি ব্যক্তিগণ দিনরাত পরাধীন রাখবেন, নিজের বশে রাখবেন...; আবার এর পরেই আছে বিখ্যাত সেই শ্লোক : “পিতা রক্ষতি কৌমারে ভর্ত্তা রক্ষতি যৌবনে/রক্ষতি স্থবিরে পুত্রা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি॥” (৯:৩) অর্থাৎ স্ত্রীলোককে পিতা কুমারী জীবনে, স্বামী যৌবনে ও পুত্র বার্ধক্যে রক্ষা করে; (কখনও) স্ত্রীলোক স্বাধীনতার যোগ্য নয়।
ইসলাম ধর্মে নারী:
নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা : মানব সৃষ্টির প্রথম দিকে আল্লাহ তা‘আলা আদি পিতা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর তাঁর সহধর্মিনী হিসাবে তাঁরই বাম পাঁজরের একটি হাড় হ’তে আদি মাতা হাওয়া (আঃ)-কে সৃজন করেন। অতঃপর তাঁদের হ’তে অসংখ্য নর-নারী সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى ‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হ’তে সৃষ্টি করেছি’ (হুজুরাত ১৩)।
মহান আল্লাহ এ বিশ্ব জগতে অসংখ্য মাখলূকাতের মধ্যে মানব জাতিকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلاً-
‘আর আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি এবং তাদেরকে জলে ও স্থলে আরোহণ করিয়েছি এবং উত্তম বস্ত্তসমূহ প্রদান করেছি। আর আমি তাদেরকে আমার বহু সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (বনী ইসরাঈল ৭০)।
আল্লাহ তা‘আলা নারী-পুরুষ উভয়কেই সম্মান দিয়েছেন, পুরুষের থেকে নারীকে ভিন্ন ভাবে দেখেননি। বরং যুগ যুগ ধরে অবহেলিত ও উপেক্ষিত নারী সমাজকে পুরুষের সমমর্যাদা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়ে অধিক মর্যাদা দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِيْ عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ‘স্ত্রীদেরও পুরুষদের উপর ন্যায় সঙ্গত অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে’ (বাক্বারাহ ২২৮)।
ইসলাম নারীর প্রতি সকল প্রকার অত্যাচার, অবিচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করতঃ নারীকে সর্বক্ষেত্রে অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে। ইসলাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর যে অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হ’ল-
(ক) বিবাহের মাধ্যমে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান : জাহিলী যুগে বৈবাহিক ক্ষেত্রে নারীদের কোনরূপ অধিকার ছিল না। তারা শুধু পুরুষের ভোগের সামগ্রী ছিল। ইসলাম এহেন ঘৃণিত প্রথার মূলোৎপাটন করতঃ নারী ও পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَانْكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلاَثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلاَّ تَعُوْلُواْ-
‘তবে যেসব নারী তোমাদের পসন্দ হয়, তাদের মধ্য থেকে দুই দুই, তিন তিন, চার চার জনকে বিবাহ কর। কিন্তু তোমাদের মনে যদি আশংকা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না। তাহ’লে একজন স্ত্রী গ্রহণ কর অথবা তোমাদের দাসীদেরকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ কর। অবিচার হ’তে বাঁচার জন্য এটাই অধিক সঠিক কাজ’ (নিসা ৩)।
(খ) স্বামী নির্বাচনের স্বাধীনতায় নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান : ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে নারীদের পসন্দমত স্বামী গ্রহণের কোন অধিকার ছিল না। যখন-তখন তাদেরকে পাত্রস্থ করা হ’ত। কিন্তু ইসলাম নারীকে স্বামী নির্বাচনের স্বাধীনতা দিয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে বলপূর্বক কোন নারীর স্বামী হ’তে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلاَ تَعْضُلُوْهُنَّ أَن يَنْكِحْنَ ‘হে পুরুষরা! তোমরা মহিলাদেরকে (স্বীয় স্বামী নির্বাচন করে) বিয়ে করাতে বাধা প্রদান করো না’ (বাক্বারাহ ২৩২)।
হাদীছে এরশাদ হয়েছে,
عِنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالََ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تُنْكَحُ الْأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنُ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘স্বামীহীনা নারীর বিবাহ তার অনুমতি ব্যতীত দেওয়া যাবে না। কুমারীর বিবাহ তার সম্মতি ব্যতীত দেওয়া চলবে না। তারা (উপস্থিত ছাহাবায়ে কেরাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কুমারীর সম্মতি কিরূপে (নেওয়া যাবে)? উত্তরে তিনি বললেন, তার নীরবতাই সম্মতি’।
(গ) স্ত্রী হিসাবে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান: ইসলাম পারিবারিক জীবনে নারীকে দিয়েছে তার ন্যায্য অধিকার। সংসার জীবনে নারী-পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক। কোন একজনের একক প্রচেষ্টায় সংসার জীবন পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক’ (বাক্বারাহ ১৮৭)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম চরিত্রের অধিকারী, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের মধ্যে নিজ স্ত্রীদের কাছে উত্তম’। শুধু তাই নয় নবী করীম (ছাঃ) তাঁর বৈবাহিক জীবনে বাস্তব দৃষ্টান্ত পেশ করে পুরুষদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, স্ত্রীর সম্মান ও অধিকার কিভাবে প্রদান করতে হবে। আর স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ‘তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করো’ (নিসা ১৯)।
(ঘ) মোহর দানের মাধ্যমে নারীর অধিকার ও মর্যাদা : ইসলাম নারীর মর্যাদার স্বীকৃতি স্বরূপ বিবাহের ক্ষেত্রে মোহর প্রদান অপরিহার্য করে দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে মোহর দিয়ে দাও সন্তুষ্টির সাথে’ (নিসা ৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে শর্তটি পূরণ করা সবচেয়ে যরূরী তাহ’ল ঐ শর্ত- যা দ্বারা তোমরা (স্ত্রীর) লজ্জাস্থান হালাল করো’। অর্থাৎ ‘মোহর’।
(ঙ) সহবাসের ক্ষেত্রে নারীকে অধিকার ও মর্যাদা দান : সহবাসের ক্ষেত্রে নারীর শারীরিক কষ্টের বিষয়টি খেয়াল রেখে ঋতুস্রাব অবস্থায় স্ত্রীর সাথে মেলামেশা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ বলেন,
وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُواْ النِّسَاءَ فِي الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّىَ يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ-
‘হে রাসূল (ছাঃ)! লোকেরা আপনার নিকট মহিলাদের স্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এটা অশুচি জনিত কষ্টদায়ক বিষয়। অতএব তোমরা ঋতুস্রাব চলাকালীন মহিলাদের সাথে সহবাস থেকে বিরত থাক। তারা পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের নিকটে যেও না। যখন তারা (সম্পূর্ণরূপে) পবিত্র হবে তখন তোমরা তাদের কাছে যাও, যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে হুকুম করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২২২)।
পায়ুপথে সহবাস করা হারাম। তবে পুরুষরা স্ত্রীদের যৌনাঙ্গে যেদিক থেকে ইচ্ছা সহবাস করতে পারে। আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন,نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوْا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র স্বরূপ। অতএব তোমাদের যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে শস্যক্ষেত্রে গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২৩)।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَتِ الْيَهُوْدُ تَقُوْلُ إِذَا أَتَى الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ مِنْ دُبُرِهَا فِيْ قُبُلِهَا كَانَ الْوَلَدُ أَحْوَلَ فَنَزَلَتْ نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوْا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ-
জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ইহুদীরা বলত, পুরুষ যদি পশ্চাৎদিক হ’তে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে সঙ্গম করে তাহ’লে সন্তান ট্যারা হয়। (তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা নিরসনের উদ্দেশ্যে) কুরআন মাজীদের এ আয়াত نِسَآؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُواْ حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার’ (বাক্বারাহ ২২৩)’।
এই দীর্ঘ আলোচনার পর আমি একজন সাধারণ সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে নিরপেক্ষ থাকতে পারলাম না। কারণ আমি আপনাদেরকে গর্ব করে বলতে পারি ইসলামই নারীকে দিয়েছে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা এবং অধিকার। যদি আমরা আমাদের সন্তানদেরকে সঠিক ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারি তবে অনেক বেশী কমে যাবে নারীর প্রতি সহিংসতা আর অত্যাচার।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
মুহাম্মদ নূরে আলম সূফি বরষণ
লেখক লন্ডন প্রবাসী লেখক সাংবাদিক ব্লগার গবেষক।
©somewhere in net ltd.