নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুফি ফারুক এর ব্লগ

জোর হোক শুধু গলার আওয়াজ, গায়ের জোরটা তোলাই থাকুক

সুফি ফারুক

বিশ্বাস রাখি - মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে। চাই - প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ। এবং সেই দিন বদলের সংগ্রামের সাথে থাকতে। কাজ - পলিসি, আইসিটি, উদ্যোক্তা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে। করি - পথ দেখা-দেখানো। ধাক্কা দিয়ে শুরু করানো। সরকারি ও বেসরকারি - অবকাঠামো ও নীতিমালা নিয়ে ঠেলাঠেলি। হাতিয়ার - লেখালেখি, প্রশিক্ষণ, বক্তৃতা, রেডিও-টেলিভিশনে অনুষ্ঠান, পেশাজীবী ও গন-সংগঠন, বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি এবং যখন যা লাগে।

সুফি ফারুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা (পর্ব ২)

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৫২

কাজটা বোঝাই প্রথম কাজ:

তথ্য প্রযুক্তি প্রধান হতে চাইলে প্রথমে তথ্য প্রযুক্তি প্রধানের কাজ বা দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দরকার। সেটিই প্রধান কাজ এবং সম্ভবত সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ভেদে নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড আলাদা হলেও বড় দাগে সব তথ্য প্রযুক্তি প্রধানের মুল দায়িত্ব প্রায় একই। এর মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।



প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানা:

যেকোনো বাণিজ্যিক/অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ নিয়ে কাজ করে। কেউ চায় মূল্য, কেউ চায় মান। এই মূল্য/মানের হিসাব কষার জন্য, সবকিছুই বিভিন্ন ধরনের “নম্বর” এর রূপান্তরিত করা হয়। ওই নম্বরের কমবেশিতেই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ব্যর্থতার মূল্যায়ন হয়। সেটিকে ঘিরেই প্রতিষ্ঠানের সকল আয়োজন। ওই নম্বরের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, এরকম ক্ষুদ্র-মহৎ কোন কিছুর ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে কোন মূল্য নেই।



তাই প্রথমে পরিষ্কার ধরনা নিতে হবে:

- প্রতিষ্ঠানের মুল কার্যক্রম কি?

- স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কি?

- কি ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে এবং কতটা সময়ে প্রতিষ্ঠানটি সেই লক্ষ্যে পৌছাতে চায়?

- প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে কারা কিভাবে সম্পৃক্ত?

- প্রতিষ্ঠানটির প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানসমুহ কোনগুলো?

- কারা কিভাবে প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে?

- প্রতিষ্ঠানের সেবা বা পণ্য কি এবং তার ভোক্তা কারা?

- ভোক্তারা কিভাবে পণ্য বা সেবা গ্রহণ করে?

- প্রতিষ্ঠান তার পণ্য/সেবা, ভোক্তা, জনবল, মালিক, প্রতিযোগী, অবকাঠামোকে কোন মানদণ্ডে মূল্যায়ন করে?

- প্রতিষ্ঠান তার সফলতা/বিফলতা কিভাবে মূল্যায়ন করে।



এই প্রশ্নের উত্তরগুলো পরিষ্কার না হতে পারলে প্রযুক্তি প্রধান হিসেবে আপনার সিদ্ধান্ত সঠিক হবার সম্ভাবনা খুবই কম। এবং একের পর এক ভুল হবার সম্ভাবনা ব্যাপক। সেই উত্তরগুলো যত পরিষ্কার থাকবে, তত ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত আসবে।



এবার আসা যাক কিছু এটিটিউড-মনোভাব বিষয়ে। সচরাচর যারা কারিগরি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেন, তাদের চিন্তার একটা প্যাটার্ন থাকে। সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক তা বলছি না। তবে সেই প্যাটার্নটা কিছু ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যৌক্তিক হয় না। যে কারণে বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকদের সাথে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং বৃহত্তর লক্ষ্য ব্যাহত হয়। তথ্য প্রযুক্তি প্রধান হিসেবে কাজ করতে হলে সেই “চিন্তার প্যাটার্নে” পরিবর্তন আনতে হবে। সেই পরিবর্তনের তালিকা অনেক বড়। স্বল্প পরিসরে সবচেয়ে জরুরী কয়েকটি আলোচনা করার চেষ্টা করলাম।



ব্যবসা সহজ করতে প্রযুক্তি, প্রযুক্তির প্রয়োজনে ব্যবসা না:

মনে রাখতে হবে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মুল ব্যবসা বা ব্যবসা সহযোগী কাজগুলোকে আরও কম খরচে/দ্রুত/নির্ভুল ভাবে করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবার উদ্দেশ্যেই প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া। প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রযুক্তির আর কোন গুরুত্ব নেই। সেই লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করতেই আমাদের মতো কারিগরি লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়, বড় বড় সিস্টেম কেনা হয়, সিস্টেম মেইনটেইনেন্সে বছর বছর বহু পয়সা খরচ করা হয়। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এত আয়োজনের মুল লক্ষ্য স্রেফ মুনাফা বাড়ানো বা ব্যাল্যান্স শিটে নম্বর বাড়ানো। মুনাফা বাড়াতে সক্ষম না এমন প্রযুক্তির উৎকর্ষে ওই প্রতিষ্ঠানের কিচ্ছু এসে যায় না। মুনাফার সম্পর্ক ছাড়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে নিতান্তই মূল্যহীন।



এটাই বাস্তব সত্যটি যা আমরা কারিগরি লোকজন মেনে নিতে পারি না। সাধারণত আমাদের চিন্তা শুরু হয় প্রযুক্তি দিয়ে এবং সেখানেই শেষ হয়। কিন্তু একজন তথ্য প্রযুক্তি প্রধানের চিন্তা শুরু হতে হবে ব্যবসা দিয়ে এবং কারিগরি বিষয় হয়ে ঘুরে ব্যবসাতে এসেই শেষ হতে হবে।



ব্যবসা, জনশক্তি ও তথ্য প্রযুক্তির সমন্বয়েই বিজয়, তাছাড়া সবই অপচয়:

তথ্য প্রযুক্তি প্রধানের ব্যবহারিক কাজটা হল ব্যবসায়ের সাথে কারিগরি সমন্বয়। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে - কোন কাজটি প্রযুক্তি ব্যাবহার করে আরও কম খরচে, আরও কম ভুলে এবং আরও দ্রুত গতিতে করা যেতে পারে। তারপর সেই কাজটির জন্য সবচেয়ে কার্যকর এবং অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের প্রযুক্তি বাছাই করতে হবে। এই ধারনাটি পরিচালনা পরিষদের গ্রহণযোগ্য হবার মত তথ্য উপাত্ত দিয়ে উপস্থাপন করে তাদের অনুমোদন নিতে হবে। এরপর সেই প্রযুক্তিটি গ্রহণ করে, সম্পৃক্ত জনশক্তিতে প্রশিক্ষিত করে ধারনাটির বাস্তব রূপ দিতে হয়। তারপর দায়িত্ব হয় ওই প্রযুক্তিটির রক্ষণাবেক্ষণ। আর এসবের সমন্বয় করাটাই প্রধান তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তার কাজ।



মনে রাখতে হবে - প্রযুক্তি মানে খরচ। এটা যখন নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক লক্ষ্য নিয়ে কেনা হবে, তখন সেটা হয় বিনিয়োগ। সম্পৃক্ত লোকজন যখন ঠিকভাবে সেটা ব্যাবহার করে ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য সফল করে, তখন হয় মুনাফা। এই সমন্বয় ছাড়া প্রযুক্তির পেছনে খরচ করে, ফলাফলে ব্যর্থতা নিশ্চিত।



সেরা প্রযুক্তি নয়, দরকার উপযুক্তি প্রযুক্তি:

আমরা যারা তথ্য প্রযুক্তি পেশাজীবী, তাদের বাজারের সেরা প্রযুক্তির প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা থাকে। আমরা সেরা প্রযুক্তি নিয়ে খেলাধুলা করার সুযোগ পেতে ভালবাসি। মাঝে মধ্যে এই দুর্বলতার কারণে আমরা ভুলে যাই যে, প্রতিষ্ঠানের পয়সা আমাদের খেলনা কেনার জন্য না। যার ফলে আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উন্নত (যে কারণে বেশি দামি) প্রযুক্তি কিনতে চাই। মাঝেমাঝে আমাদের শখ বিনিয়োগের যৌক্তিকতা ছাড়িয়ে যায়।



প্রযুক্তি ব্যবস্থাপককে আবেগ সংবরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে - এটা বিনিয়োগ, যার লক্ষ্য মুনাফা অর্জন। কেনার খরচ যত কম হবে, মুনাফার পরিমাণও ততটা বাড়বে। তাই সেরা প্রযুক্তির পেছনে ছোটা নয়, বরং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রযুক্তি ক্রয়ের আর্টের উপরে দখল অর্জন করতে হবে।



চাকা পুন-আবিষ্কারের প্রয়োজন নেই:

যারা কারিগরি বিষয়ে খুব উৎসাহী তারা অনেকসময় প্রতিটি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করতে চান। প্রতিটি কারিগরি সমস্যা সমাধানের পথ গবেষণা করে বের করতে চায়। যার জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রচুর সময় এবং অর্থ ব্যয় হবার সম্ভাবনা থাকে। অথচ তারচেয়ে কম সময় এবং অর্থ ব্যয় করে বাজারে সহজলভ্য সমাধান পাওয়া যায়।



মনে রাখতে হবে – প্রযুক্তি ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ গবেষণা নয়। তাদের কাজ হল বাজার থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত প্রযুক্তি খুঁজে বের করা এবং সেটার সবচেয়ে উপযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়ানো নিশ্চিত করা।



পরিশেষে বলবো – তথ্য প্রযুক্তি প্রধানের কাজ – জটিল কারিগরি সমস্যার জলের মতো সমাধান, কারিগরি গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়া নয়। ব্যবহারকারীকে বোঝাবেন না আপনি কত জটিল কাজ করেন, বরং বোঝান আপনি তাদের জটিল কাজটা কত সহজ করে দিয়েছেন।



১ম পর্ব : Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.