| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাঁর মুখে কোনো দিন বিরক্তির রেখা দেখিনি, শত বাঁধায় ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি, সর্বংসহা তিনি আমার মা। হ্যাঁ, আমি আমার মায়ের কথাই বলছি।
অনেকদিন মায়ের মুখ খানি দেখা হয়না। এই ব্যস্ত নগরীর কাজের ভীড়ে মায়ের কাছে যেতে না পারলেও সেই মায়াময় মুখের ছবিটি কাজের ফাকেও দেখতে কখনো ভুল হয়না।
তখন আমি ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি। ছোট বেলায় আত্মীয় স্বজনের দেওয়া টাকা পয়সা গুলো সব সময় মায়ের হাতে তুলে দিতাম। তবে একটা শর্তে। আমি চাওয়া মাত্রই যেন আমাকে টাকা গুলো দেওয়া হয়। কোনো কারণে আমি রেগে গেলে কিংবা মা বকুনী দিলে সঙ্গে সঙ্গেই আমার সেই টাকা ফেরত চাইতাম। কিন্তু মা নানা রকম টালবাহানা করতেন সেই টাকা নিয়ে। একদিন টাকা চেয়ে না পাওয়ায় রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম আমি। আজও সেই ঘটনা মনে পড়লে রোমাঞ্চিত হই। পালিয়েছিলাম কিন্তু পাশেই। যাতে বাসার লোকজনদের আমি দুর থেকেও পর্যবেক্ষণ করতে পারি। বাসার পাশেই আমাদের পুকুর পাড়ে রাত পর্যন্ত বসে ছিলাম। সারাদিন আমাকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেলো। পরে দেখি আমার মা হাতে হারিকেন নিয়ে পুকুরের পাশেই ধানক্ষেতের আইলের ধারে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তারপর আমি নিজেই ধরা দিয়েছিলাম সেদিন। আমাকে পেয়ে মার সেকি কান্না!
এভাবেই চলতে লাগলো আমার দিন। সত্যি কথা বলতে কী, ছোটবেলা থেকেই আমি মায়ের চেয়ে বাবাকেই প্রধান্য দিতাম বেশি।
আমরা ছিলাম সাত ভাই। কোনো দিন মা কাউকে আলাদা করে দেখতেন না। আজও না। বেশ কয়েক বছর আগে আমার এক ভাই আকস্মিক ভাবে সুপারীর গাছ থেকে পড়ে মারা যান। তখন মা প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। তিন মাস ঘরে বন্দী ছিলেন মা। তখন আমার খুব খারাপ লাগতো।
আমার এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন সকালে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার দাদা (বড় ভাই) কী একটা কাজ করতে বলেছিলেন সেদিন। কিন্তু আমি কেন যেন জেদ ধরে দাদার মুখের ওপর না করে দিয়েছিলাম। তারপর যা হবার তাই। খাটের স্ট্যান্ড ভেঙ্গে শুরু হলো পিটুনী। সেই সঙ্গে যোগ দিলেন আমার বাবা একটু পর মাও। খুব কষ্ট লেগেছিলো সেদিন। তারপর আবারো ঘর পালানো ছেলের ঘর পালাতে হলো। সারাদিন না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। বিকেলে এলো ফলাফল প্রকাশের ক্ষণটি। স্কুলের গেটে গিয়েই দেখি আমার বাবা আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি বাবাকে দেখে ঘাপটি মেরে একটি গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। বাবার মুখে হাসি কিন্তু চোখে তাঁর দু:খ আর ক্লান্তির ছাপ। একটু পরে বাবা চলে গেলেন। আমি এবার স্কুলে ঢুকে পড়লাম। সবাই কাঁদছে। আমারও ভিষণ কান্না পাচ্ছে। এমনিতে সারাদিন কিচ্ছু খাইনি। মাঠেই স্যারের সঙ্গে দেখা। স্যার জানালেন, স্কুলে একজন ছাড়া আর কেউই পাশ করেনি। আর সেই পাশ করা ছেলেটি ছিলাম আমি। অভিমান আর ধরে রাখতে পারি নি। সঙ্গে সঙ্গেই বাসায় চলে গেলাম। বাসায় পৌঁছেই দেখি মা কাদছেন। আমাকে দেখা মাত্রই তাঁর কান্না যেন কোন অতলে হারিয়ে গেলো। এই হলো আমার মা।
এরপর এলো কলেজে ভর্তির সময়। আমার বাবা চাইতেন শহরের কোনো ভালো কলেজে ভর্তি করাবেন। কিন্তু আমার বড় ভাই মানে দাদা কিছুতেই তাতে রাজী নন। কিন্তু আমিও কম নাছোর বান্দা না । গো ধরে বসলাম বাবার কাছে। বাবা আবার কোনো দিন আমার কোনো চাহিদা অপূর্ণ রাখেন নি। তাই দাদাকে না জানিয়ে আমাকে একটা ভালো কলেজের ভর্তি ফরম এনে দিলেন বাবা। ওই কলেজে সব টাকা ওয়ালা লোকের ছেলে মেয়েরা পড়ে। ঘুষ দিয়ে ভর্তি হতে হয়। তাই বাবার ধারণা ছিলো আমি চাঞ্জ পাবো না। কিন্তু রেজাল্টের দিন আমি একাই চুরি করে শহরে গিয়ে রেজাল্ট দেখতে গিয়ে দেখি আমি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছি। সেদিন পাগলের মতো সাইকেল চালিয়ে বাসায় এসে বাবাকে এই সুখবরটা জানালাম। কিন্তু বাবা মা কেউই এ কথা বিশ্বাস করতে চাইলেন না। পরে মায়ের জেদে বাবা পরদিন সেই স্কুলে গিয়ে রেজাল্ট দেখে আসলেন। কিন্তু তিনি খুব একটা খুশি হতে পারলেন না। কারনটা হলো, দাদা তো আমাকে ওই কলেজে ভর্তি হতে দেবেন না । বাবা যেন আমাকে বলা মুখের সব ভাষাই হারিয়ে ফেলেছেন।
অবশেষে আমার দাদা ঠিকই গ্রামের একটি কলেজে ভর্তি করালেন। কিন্তু আমার মন মানতে পারলো না। মা বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। এক সময় আমাদের আভিজাত্য থাকলেও সেই সময়টা অর্থনৈতিক ভাবে আমাদের একেবারে করুণ ছিলো। তাই মা আমার দিকে তাকিয়ে ভর্তির একদম শেষ দিনে গলা থেকে সোনার হারটা খুলে দিয়েছিলেন। বাবা না করেছিলেন অনেক। আমি এতে রাজী হতে পারিনি। কিন্তু মাও যেন জেদ ধরে বসলেন। অতপর, মায়ের সেই গলার হার বিক্রি করে আমি সেদিন শহরের ওই ভালো কলেজটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। মায়ের গলার হার বেঁচে কলেজে ভর্তি হওয়ার ঘটনা আজও বাবা ছাড়া কেই জানেন না। দাদা অবশ্য এতে একটু মন খারাপ করেছিলো সেদিন। সেদিনই পণ করেছিলাম আমি নিজের উপার্জিত টাকা দিয়ে মায়ের গলার হার বানিয়ে দেবো। যদিও তার কিছুদিন পরেই বাবা আমার মাকে হার বানিয়ে দিয়েছিলেন।
আমার দাদা মানে আমার বড় ভাই আবার সবার মাঝেই বেশ পরিচিত ব্যক্তি। তাই আমার কলেজের শেষ দিনে কলেজে তিনি বক্তব্য দিতে এসেছিলেন তিনি। আমাকে নিয়ে কথা বলতে বলতে কী কারণে যেন, কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। আজও তা বুঝতে পারিনি। এই হলো আমার মা।
খুবই সাধারণ এক মানুষ। অতি সাধারণ এক মা। যার মুখ আমি সবার মায়ের মুখে বসিয়ে দেখেছি—তাঁকে চিনতে আমার ভুল হয়না, হবেও না কখনো।
মা, অনেক দিন তোমার কাছে যাওয়া হয় নি মা। আমার তো মন প্রতি মুহুর্তে তোমার কাছে ছুটে যায়। কিন্তু এ নিষ্ঠুর নগরী আমাকে বুঝতে পারে না মা। তুমি রাগ করো না মা। তোমার ছেলে তোমার জন্য গলার হার বানিয়েই তবে আসবে। দোয়া কোরো মা।
মা দিবসে সব মায়েদের প্রতি আমার ভালবাসা
void(1);
০৮ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
সুজন সুপান্থ বলেছেন: ধন্যবাদ
২|
০৮ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪২
ফেরিওলা বলেছেন: ভালো লাগলো....................আপনি ভালো থাকবেন এতে সন্দেহ নাই।
০৮ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
সুজন সুপান্থ বলেছেন: ধন্যবাদ
৩|
০৮ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৩
রঙ পেন্সিল বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার ভেতর সুন্দর মানুষটাকে দেখে!! আপনার মাকে আমার অনেক অনেক ভালবাসা.........'মা' তোমায় দিলাম আমার শুভকামনা!
০৮ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৫
সুজন সুপান্থ বলেছেন: আপনার জন্য শুভ কামনা। ধন্যবাদ
৪|
০৮ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৫
নুরুন নেসা বেগম বলেছেন: সব মায়েদের সালাম। আপনার মায়ের জন্য বিশেষ দোয়া। শুভকামনা!
০৮ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৭
সুজন সুপান্থ বলেছেন: আপনার জন্য শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
৫|
০৮ ই মে, ২০১০ রাত ৮:২৩
সায়েম মুন বলেছেন:
ভাল লাগল সুজন মাকে নিয়ে লেখাটি!!
শুভকামনা রইল!!
০৮ ই মে, ২০১০ রাত ৮:৩২
সুজন সুপান্থ বলেছেন: ধন্যবাদ
৬|
১০ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:৩৭
শাওকী আজাদ বলেছেন: চমৎকার লেখা। পড়ে আমার নিজের মায়ের জন্য খারাপ লাগে। কত সময়ে কত কষ্টই না দিয়েছি তাকে। লেখককে আরেকবার ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৩
করবি বলেছেন:
মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে
সেই যে আমার মা...............