নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুমন নিনাদ

বাংলা ও বাংলাদেশ- আমার ভাগফল, আমার ভাগশেষ

সুমন নিনাদ

সুমন নিনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টিবন্দনা

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৯



আমি সবসময় সব কাজ একটু দেরী করে করে ফেলি। মায়ের কাছে শুনেছি, জন্মের পরে সকলকে তীব্র উৎকণ্ঠায় রেখে আমি নাকি কাঁদতে একটু দেরী করে ফেলেছিলাম। আমি ক্লাস সিক্সের অঙ্ক সেভেনে উঠে শিখতাম। সেভেনের টা এইটে। স্কুল লাইফে স্কিন টাইট জিন্স প্যান্টের খুব শখ ছিল। বাবার কাছে বলার সাহস আমার ছিলনা। মাকে বলেছিলাম, ক্লাস টেনে উঠার পর শখ পূরণ হয়েছিল। কিন্তু তখন কেউ আর স্কিন টাইট জিন্সের প্যান্ট পরেনা। আমি যখন নোকিয়া ১১০০ মোবাইল কিনেছি তখন সবাই স্মার্টফোনে চলে গেছে। স্মার্টফোন যখন কিনেছি তখন সবাই ট্যাবে চলে গেছে। আমার এখনো ট্যাব কেনা হয়ে ওঠেনি। এভাবেই আমি আজন্ম সব কিছুতেই দেরী করে আসছি। শুধু একটা জায়গায় দেরী করিনি। আর তা হল- আমি একদম সময়মত (মতান্তরে সময়ের আগে) বিবাহকার্য সম্পাদন করিয়াছি।



মাস তিনেক যাবৎ ভাবছি, বৃষ্টি নিয়ে কিছু লিখব। কিন্তু হয়ে উঠছিল না। অবশেষে প্রকৃতি বর্ষা ঋতু পেরিয়ে শরতের কাশবনে উঁকি দিল। সবকাজে দেরী করা আমার অভ্যাস। তাই বর্ষা শেষ হবার পরেই এল আমার বৃষ্টিবন্দনার পালা।



আমার জন্ম বর্ষাকালে নয়। মায়ের কাছে শুনেছি অক্টোবরের সেই সোমবারে নাকি গায়ে কাঁপুনি উঠিয়ে তুমুল বৃষ্টি নেমেছিল। এখনও আমার জন্মদিনে নীল আকাশে নরম তুলোর মত মেঘেদের আনাগোনা দেখা যায়। আমি তাই আজন্ম বৃষ্টি প্রেমিক। বৃষ্টির সাথে আমার আজন্ম আত্মীয়তা। এখনও জানালার গ্রীল ভেদ করে আমি যখন বৃষ্টির দিকে তাকাই, আমার অশ্রুনদীর ঠুনকো বাঁধ নড়বড় করে ওঠে।



ক্লাস এইটের বৃত্তির টাকা পাবার পর আমি একটি ওয়াকম্যান কিনেছিলাম। মনে আছে আমি একটি ক্যাসেটের পুরোটা জুড়ে অঞ্জন দত্তের “আমি বৃষ্টি দেখেছি” গানটি রেকর্ড করিয়ে নিয়েছিলাম। নাওয়া খাওয়া পড়ালেখা সব ভুলে আমি কানের মধ্যে হেডফোন গুঁজে সারাক্ষণ সেই গানটিই শুনতাম। এখনও বৃষ্টি হলে আমি পাড়া কাঁপিয়ে সেই গান ছাড়ি।



বৃষ্টি নামলেই আমি হারিয়ে যাই। শরীরটাকে চার দেয়ালে বন্দী রেখে আমি আমার মনটাকে বৃষ্টিতে তুমুল ভিজিয়ে আনি। বউয়ের সমস্ত প্রতিরোধ উপেক্ষা করে আমার হাত সিগারেটের প্যাকেটে চলে যায়। বালিশের আশেপাশে থাকা “জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা” ভীষণ দ্রুততায় আমার চোখের সামনে এসে খুলে যায়।



“শোনা গেল লাশকাটা ঘরে, নিয়ে গেছে তারে” শুরু করলেই কী এক ধ্রুপদী অলৌকিকতায় আমার চোখে শ্রাবনের ঢল নামে।



পুরোটা শেষ করার পর-বরাবরের মতই সবকাজে দেরী করা আমি উপলব্ধি করতে পারি, আমি খুব সম্ভবত কাঁদছিলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:০১

মুদ্‌দাকির বলেছেন:

সুন্দর লেখা!!!


আসল কাজটা আগেই করে ফেলেছেন :P :P :P

আসলেই অক্টোবরের বৃষ্টিগুলোর অন্যরকম একটা আমেজ আছে।

তবে আমার পছন্দ আকাশ অন্ধকার করে ঝুম বৃষ্টি, আর গুড়ুম গুড়ুম বজ্রনাদ :) :)

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:০৬

সুমন নিনাদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা মুদ্‌দাকির

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:২৫

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: আত্মকথন ভালো লাগলো ভ্রাতা :)
ভালো থাকবেন সবসময় :)

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৩০

সুমন নিনাদ বলেছেন: আপনিও। শুভকামনা নিরন্তর

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.