নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা-তরী

সন্ধ্যা-তরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি জীবনের অসমাপ্ত সমাপ্তি (ছোট-গল্প, সময় থাকলে পড়ে দেখতে পারেন)

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০২

হাসি খুশি একটি মেয়ে সালমা। বয়স আর কত হবে ? ১৫ পেরিয়ে ১৬ এর ঘরে পা। এস, এস, সি শেষে ইন্টারের প্রস্তুতি চলছে। পরম সুখেই কাটছিল সালমার পড়াশুনার দিনগুলো । চলতে পথে হঠাৎ থেমে যায় সালমার এ স্বাভাবিক পথচলা। স্কুল জীবন থেকেই একই ক্লাসের শামীমের সাথে তার অবৈধ সখ্যতা গড়ে উঠে। সালমাকে পাওয়ার নেশায় উম্মাদ হয়ে ওঠে শামীম। এক সময় বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পরিবারের কেউ রাজি না হওয়ায় পরিবাবের অমতেই সালমা শামীমকে বিয়ে করে। এক পর্যায়ে স্বার্থের টানে শামীমের পরিবার মেনে নিলেও সালমার পরিবার তা কিছুতেই মেনে নেয়নি। বিয়ের পর দিন থেকেই শেষ হয়ে যায় সালমার সুখের জীবন। সালমার জীবনজুড়ে নেমে আসে গহিন অন্ধকার। বিয়ের প্রথম রাত থেকেই শুরু হয় নরকের দেশে পথচলা। সালমা কে উঠিয়ে নিয়ে অপরিচিত একটা রুমে রাখা হয়। সময় গড়াতে থাকে। ধীরে ধীরে রাতের স্তব্ধতা নেমে আসে। সালমা শামীমের প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে। শামীম আসছেনা কেন ? কখন স্বপ্নের মানুষের স্পর্শ পাবে, সেই ভাবনায় বিভোর ১৬ বছরের তরুণী সালমা। নাহ্ শামীমের কোন সাড়া শব্দ নেই। নববধু সালমা অধৈর্য হয়ে কম্পিত পায়ে খাট থেকে নেমে দাঁড়ায়। বাথরুমের দরজা ভেবে একটা দরজা টান দেয়। পরক্ষণেই সালমার দৃষ্টি সীমায় ভেসে উঠে একটি নোংরা দৃশ্য। শামীম তখন খালাত বোন রিনার সাথে আপত্তিকর কর্মে ব্যস্ত। শামীম আদিমতায় এতটাই মত্ত ছিল যে কারো উপস্থিতি সে টেরই পায়নি। সালমা কিংকর্তব্যেবিমোঢ়। বোবা পাথরের মত খাটে নিশ্চুপ বসে থাকে। চোখজুড়ে তখন শ্রাবনের জল। রাত প্রায় ২Ñটার ও বেশি। বেশ কিছুক্ষণ পর শামীম সালমার রুমে ফিরে আসে। সালমাকে কাঁদতে দেখে শান্তনার সুরে যখন শামীম তাকে স্পর্শ করতে যাবে, তখনি সালমার বাঁধা। শামীম কিছু বুঝে ওঠতে পারেনা। কী হয়েছে জানতে চাইলে সালমা তার ক্ষাণিক পূর্বের দৃশ্যের কথা তাকে বলল। তখনই উম্মেচিত হয় শামীমের আসল চেহারা। এই তোর কী হয়েছে: বলে সে রাতেই সালমার গায়ে হাত তোলে শামীম। প্রচন্ড প্রহার করে সালমাকে। অযাচিত নির্যাতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সালমার জীবন যাত্রা। বিয়ের মাস খানেক পর শামীম সালমার কাছে এক লক্ষ্য টাকা দাবী করে। এবং এই সপ্তাহের মধ্যেই । সালমার মাথার উপর যেন আকাশটা ভেঙ্গে পড়ল। তার কোন আপত্তি অর্থহীন। এটা সালমা জানে। বাবার কাছেও চাওয়ার কোন সুযোগ নেই। অগত্যা মায়ের কাছে সালমার সমস্যার কথা জানায়। মা সালমার কথাকে কোন পাত্তা দেয়নি। কিন্তু প্রতিদিন সালমার দিন শুরু হয় অশ্রাব্য ভাষা শুনার মধ্য দিয়ে আর শেষ হয় সীমাহীন আঘাতের মাধ্যমে।

সালমার নির্যাতনের কথা মাকে জানায়। এক পর্যায়ে রক্তের টানে সালমার মা বাবা জামান সাহেবকে জানায়। সালমার বাবা রেগে বলে যে মেয়ে মাÑবাবার অবাধ্য হয়। পিতাÑমামার সম্মান ক্ষুন্ন করে , এমন মেয়ে আমার দরকার নেই। তবুও মায়ার টানে বহু কষ্টে এক লক্ষ্য টাকা দেয়। বিনিময়ে সালমার নির্যাতন কিছুটা হ্্রাস পায়।

সালমা এখন সাত মাসের অন্তসত্তা। আবারো যৌতুকের টাকা চায় শামীম। কিছু বলতে গেলেই শামীম বলে : ও সব কিছু শুনতে চাইনা, টাকা আনবি কি না বল, এই বলে হুমকি দেয়। সালমার গড়িমসি দেখে শশুরও কঠিন চাপ দেয়। বলে এই সপ্তাহের মধ্যেই টাকা আনতে হবে। নিরুপায় সালমা কিছুই ভাবতে পারেনা। রাতের শুরুতে দিনের শেষ এবং দিনের শুরুতে রাতের শেষ হয়,কিন্তু সালমার নির্যাতন আর শেষ হয়না। এ দিকে সালমার বাবা মেয়ের জন্য পৈতৃক সম্পত্তি হারাতে বসেছেন। বলে দেন: এরপর থেকে আর আমি কিছু দিতে পারবনা। আর আমার বাড়ি বরাবরও কোন দিন এসোনা। সালমার বাবা কড়া নোটিশ দিয়ে দেয়। একবুক যন্ত্রনা নিয়ে কাটতে থাকে সালমার জীর্ণ জীবন।

সাত মাসের অন্তসত্তা সালমা একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারেনা। এখনো নাস্তা তৈরী হয়নি দেখে শামীম সালমাকে পচন্ড একটা লাথি মারে। বলে: দ্রুত নাস্তা তৈরী কর। বাবা অফিসে যাবে না ? আমরা কী খালি পেটে বাসা থেকে বের হব? আর তুই কী কোন জমিদারের মেয়ে না কী যে শুয়ে শুয়ে খাবি। সালমা অসুস্থ শরীর নিয়েই কোন রকমে উঠে বসে। ধীরে ধীরে রান্না ঘরের দিকে যায়। পরিবারের সকলের প্রায় ১৫/২০ টি রুটি সালমার একাই তৈরী করতে হয়। এবং প্রতিদিন সে তা করেও যাচ্ছে। জোরে চিৎকার করতে পারেনা। নিরবে কষ্ট সহ্য করে যায়। আঁচল দিয়ে চোখের নোনাজল বারবার মুছতে থাকে। নাস্তা পরিবেশন করতে আজ দেরী হয়েছে বলে অকথ্য ভাষায় যাÑতা বলে কতক্ষণ গালাগালি করে সালমার শশুর রফিক সরকার। অসহায় সালমা সব নিরবে সইতে থাকে। রফিক সরকার এবার সালমার কাছে পাঁচ লক্ষ্য টাকার যৌতুক দাবি করে। সালমা আর সহ্য করতে পারেনা। সালমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায়। শশুরের মুখের উপর প্রতিবাদ করে বলে: আমার বাবা আপনাদের জন্য আর কী করবে ? বিয়ের পর থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত কী না দিয়েছে ? ঘরের ফার্নিচার থেকে শুরু করে সব কিছুইতো দিয়েছে। কিছই তো বাদ রাখেনি। আর কী চান ? সালমার প্রতিবাদী কন্ঠ শুনে রফিক সরকার আর স্থির থাকতে পারেনি। চেয়ার থেকে উঠে সালমার কোমরে সজোরে একটা লাথি মারে। সালমা লাথির চোট সইতে না পেরে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। প্রচন্ড ব্যথা পায়। বাচ্চার কোন ক্ষতি হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে যাওয়া একান্ত প্রয়োজন। সালমাও বেশ আহত। শামীমের কাছে আবেদন জানায়। শশুর শাশুড়ীসহ কেউ কোন পাত্তা দেয়নি । আহত সালমা বাপের বাড়ি গিয়ে নিজের অবস্থা জানায়। বাবা জামান সাহেব মেয়েকে কঠিন ধমক দেয়। বলে পরে কোন সমস্যা হলে আমাদের কে দায়ী করবে, এই বলে সালমাকে তাড়িয়ে দেয়। সালমা কিছুই ভাবতে পারেনা। অবশেষে একাই হাসপাতালের দিকে পা বাড়ায়। কাউকে না পেয়ে প্রথমে একজন পুলিশ অফিসারকে নিজের সমস্যার কথা জানায়। পুলিশ অফিসার সালমার স্বামীÑশশুরসহ তাদের নামে থানায় একটা জি,ডি করে। তারপর হাসপাতালে টেষ্টের পর ঐ পুলিশ অফিসার সালমার স্বামীর বাসায় পৌঁছে দেয়,এবং আগাম সাবধান করে দেয়। এরপর থেকে একরকম ভালই কাটতে থাকে সালমার দুঃখী জীবন। কিন্তু সালমার একটা কষ্ট শেষ হতে না হতেই শত কষ্টের হাতছানি। সালমার জীবনে অপেক্ষা করতে থাকে এক ভয়াবহ ট্রাজেডি।

আবারো শুরু হয় সালমার উপর অত্যাচার। পান থেকে চুন খসলেই অমানবিক নির্যাতন। যৌতুকের টাকার জন্য ফের সালমাকে চাপ দেয়। এবার সালমা কিছুতেই রাজি হয়না। কারণ, বাবার বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। বারবার বলেও যখন কোন সমাধান মিলছেনা, তখন সালমার উপর শুরু হয় অভিনব নির্যাতন। কখনো চামড়া কেটে লবণ লাগিয়ে দিত। কখনো চাবুকের বেদম আঘাত। কখনো বা চুল ধরে খাট থেকে মেঝেতে ফেলে দিত। কখনো আবার লোহা গরম করে গায়ে ছেক দিত। প্রতিদিন এমনি নিত্য নতুন নিপীড়ন চলতে থাকে আট মাসের অন্তসত্তা নিরীহ সালমার উপর। এত আঘাত চামড়ার শরীরে আর কতক্ষণ সয় ? রক্তে মাংসে গড়া একটা মানুষ কত নির্যাতনই আর সহ্য করতে পারে। সালমা কখনো কখনো অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার দিয়ে উঠত। কিন্তু নরপশু শামীম ও তার বাবা, সালমার সেই চিৎকারও বন্ধ করে দেয়। সালমার মুখে কাপড় পুরে দেয়। চোখজোড়া কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেধে রাখে। সালমা জানতে পারে না কী তার অপরাধ ? কেন তাকে এই শাস্তি দেওয়া হচ্ছ্ ে। আঘাতের চোট সইতে না পেরে কখনো তাদের পায়ে পড়েছে। কিন্তু পাষন্ডরা তার হাত দুটির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। সালমার এসব নির্যাতনের কথা তার বাবাÑমা জেনেও নিরব শ্রোতা। কেউ তাকে দেখতে আসেনি। সালমার বাবা জামান সাহেবের মন এরপরও পাথরের মত শক্তই রইল। বাবার ভয়ে সালমার মা ও যেন কেমন হয়ে গেছে। নিজের সন্তানকে একজন বাবা কী করে ভুলে যায় ? সালমা কিছুই বুঝতে পারে না। এভাবে চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে চলছে সালমার নরকীয় জীবন।

অবশেষে যখন তারা দেখল সালমা যৌতুকের টাকা আনবেনা, তখন তারা বেছে নেয় অন্য কৌশল। খুন। সালমাকে খুন করার পরিকল্পনা করে মানব রুপি পশুরা। সালমা যখন আট মাসের অন্তসত্তা তখন শেষ টেষ্ট করানোর কথা বলে শামীম হাসপাতালে নিয়ে যায়। সঙ্গে তার বাবা রফিক সরকারও । টেষ্ট শেষে শামীম বলল: তোমাকে আজ এখানে থাকতে হবে। সালমা বলে আমার টেষ্ট তো শেষ! পাষন্ড শামীম তখন দরদী কন্ঠে বলে : তুমি অনেক দুর্বল হয়ে গেছ। একটা স্যালাইন নেহায়েতই দরকার। সালমা সরল মনে শামীমের যুক্তি মেনে নেয়। রাত প্রায় ১২Ñটা। সালমাকে একটা কক্ষে বেডের উপর শুয়ানো হয়। একটু পরে নার্স এসে স্যালাইন দেয়। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই সালমা আর্তচিৎকার করতে থাকে। পেটে শুরু হয় রিয়েকশন। ততক্ষণে অনাগত বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে যায়। সবার অজান্তে অসময়ে ঝরে যায় নিষ্পাপ একটি জীবন। সালমা জানতে চায় একি স্যালাইন দিয়েছ আমায়। নার্স উল্টো সালমাকে শাসায়। বলে: বাচ্চা নষ্ট করতে এসেছেন আর জানেন না কী হয়েছে? কী স্যালাইন ? সালমা নির্বাক দৃষ্টিতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নরপশু দু‘টার পঙ্কিল চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোটা তপ্ত অশ্র“। এক সময় সালমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ততক্ষণে সালমাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। বেশ কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসে। মানবরুপি হায়েনা গুলো খুন করে ফেলল সালমার ৮ মাসের নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে। সালমার কিছু বলার থাকেনা । সালমা যেন কাঁদতে ভুলে গেছে। হারানোর কষ্টে চোখের জলও শুকিয়ে গেছে। কয়েকদিন পরপর ফের যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। সালমা কিছুতেই রাজি হয়না। তুই কী টাকা আনবি না ? সালমা বলে আর কত খেতে চাও ? তোমাদের পেট পুরেনা ? শামীম চট করে গালে কয়েকটা থাপ্পর মারে। রাতে বাসায় ফেরার পথে সঙ্গে নিয়ে আসে এক গ্যালন কেরোসিন। রাত প্রায় ১১Ñটা। দরজা বন্ধ। সালমার গায়ে ঢেলে দেয় এক গ্যালন কেরোসিন। একটা জলন্ত দিয়াশলাইর কাঠি সালমার আঁচলের এক প্রান্তে লাগিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে আগুন জ্বলতে থাকে সালমার গায়ে। শামীম বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যায়। নিরবে শুয়ে পড়ে অন্য রুমে। সালমার মুখে কাপড় ঠাসা তাই কারো কর্ণে পৌঁছতে পারেনা সালমার বুকফাটা আহাজারী। শামীমের ছোট ভাই শাহীন বাথরুমে যাওয়ার পথে হঠাৎ লক্ষ্য করে রুমে আগুন জ্বলছে। সালমা তখন কাপড় প্রায় অর্ধেকটা খুলে ফেলেছে। আগুন এখনো গা স্পর্শ করতে পারেনি । দ্রুত দরজা খুলে শাহীন ভিতরে প্রবেশ করে। নিদারুণ এ দৃশ্য দেখে শাহীনের হৃদয় কেঁপে উঠে। এক সাগর দয়া উথলে উঠে শাহীনের বুকে। সাথে সাথে কয়েক বালতি পানি ঢেলে আগুন নেভায়। পরিবারের সবাই নির্দয় হলেও শাহীন ছিল কিছুটা দয়া পরবশ। তাই শাহীনের দয়ায় সেদিনের মত প্রাণে বেঁচে যায় সালমা। রাত প্রায় ২Ñটারও বেশি। শামীম চিন্তায় বিভোর। সালমা ভাবতে থাকে আঁধার জীবনের কথা। সালমা বুঝতে পারেনা তার এ জীবনে কষ্টের এত ঝড় কেন ? সবাই থেকেও যেন সালমার কেউ নেই। কোথাও আশ্রয় নেওয়ার কোন ঠাই মিলেনা। রাত ফুরিয়ে যায়। সূয্যীমামা উকি দেয় পৃথিবীর জানালায়। সূচনা হয় আরো একটি নতুন দিনের । সালমা জীবনের মায়ায় কম্পিত হৃদয় নিয়ে সকালের নাস্তা তৈরী করে। ভয়ে ভয়ে শামীমের রুমের দিকে পা বাড়ায়। শামীম শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সালমার মৃত্যুর কথা।

একলা মনে ভাবে একটি নিরপরাধ জীবনকে এভাবে মেরে ফেলা কী ঠিক হল ? পরক্ষণে দয়াদ্র হৃদয় আবার পাথর হয়ে যায়। বলে : যা করেছি বেশ করেছি। তবে চিন্তা হল লাশটাকে কীভাবে গুম করা যায় ? শামীম সাত পাঁচ ভাবছিল। ঠিক তখনি সালমা শামীমের রুমে ঢুকে। শামীম বিহবল হয়ে পড়ে। হঠাৎ চমকে উঠে। সালমা বেঁচে গেছে!

নির্বাক দৃষ্টিতে সালমার দিকে তাকিয়ে থাকে শামীম। সালমাও নরপশু শামীমের দিকে তাকিয়ে থাকে। একরাশ কষ্টের হাসি ফুটে ওঠে সালমার উষ্ণ ঠোটে। বলে: জনাব নাস্তা রেড়ি। আসুন। শামীম অভিনয়ের ছলে সালমার পায়ে পড়ে বলে: প্লীজ সালমা, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ইনিয়ে বিনিয়ে বেশ চমৎকার একটা অভিনয় করে সালমার সাথে। সরলমনা সালমা তখনো বুঝতে পারেনি এটা শামীমের কৌশল। শামীমের গোপন তথ্য যেন ফাস না হয়ে যায়, তাই সালমার সাথে এ প্রহসন। সালমা শামীমকে ক্ষমা করে দেয়। ভাবে মানুষ এক সময় খারাপ থাকে। থাকতে পারে। এবার বুঝি শামীম সত্যি সত্যি ভাল হয়ে গেছে। এরপর থেকে শামীম সালমার সাথে খুব ভাল আচরণ করতে থাকে। সালমা ভাবে: তাহলে এতো দিন পর শামীমের মন জয় করতে পারলাম। কষ্টের প্রহর বুঝি শেষ। সুখের সীমানায় বুঝি আবার ভেসে বেড়াব। সালমা স্বপ্ন দেখে একটি সুন্দর জীবনের। কল্পনা করতে থাকে একটি প্রসন্ন প্রহরের। শামীম খুঁজতে থাকে সালমাকে শেষ করার নতুন কৌশল। কিভাবে সালমাকে দুরে সরানো যায়?

তখন শামীমের মুখোসটা ছিল দয়ায়Ñমায়ায় ভরা। আর ভেতরটা ছিল হিংস্রপ্রাণীর চেয়েও ভয়ংকর। এভাবে সালমার দিনগুলো কাটতে থাকে। শামীম গবেষণা করে একটা ফন্দি বের করল। একদিন সালমাকে বলল: চলো ঢাকায় যেতে হবে। খালার বাসায় অনুষ্ঠান আছে। তোমাকে সবাই দেখতে চায়। সরল সালমাতো ভীষণ খুশি। অনেক দিন পর দূরে কোথাও বেড়াতে যাব। এ বন্দি জীবন থেকে একটু মুক্ত পবনে ঘুরে বেড়াব। তা ছাড়া বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত স্বামীর সোহাগ পরিপূর্ণভাবে পাইনি। প্রিয়জনের সাথে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটাই তো আলাদা। সুখের এ মিশ্র অনুভূতি সালমাকে আরো ফ্রফুল্ল করে তোলে। তাই সালমা কোন আপত্তি করেনি বরং যারপর নাই খুব খুশি। নির্দিষ্ট দিনে শামীম সালমাকে নিয়ে ঢাকার পথে পা বাড়ায়।

পূর্ব পরিকল্পিত সূচি অনুযায়ী শামীম তার এক বন্ধুর বাসায় উঠে। সালমার কেন জানি ভয় ভয় লাগছে। শুনশান নিরবতা। কারো কোন সাড়া শব্দ নেই। সালমা শামীমকে বলে: অনুষ্ঠানের লোকজনতো দেখছিনা! শামীম সজোরে একটা থাপ্পর মেরে বলে এখনি দেখবি। পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসে আরো কয়েকজন যুবক। অকথ্য একটা শব্দ বলে সম্ভোধন করে সালমাকে। রাত প্রায় ১০Ñটা। ক্ষুধার্ত সালমা বুঝতে পারে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এ মুহুর্তে সালমার ভীষণ মনে পড়ল তার মাÑবাবাকে। কেন জানি তাদের প্রতি খুব মায়া অনুভূত হচ্ছে। নিজের অপরাধের কথা ভেবে অনুশোচনার আগুন জ্বলে উঠে তার বুকে। পৃথিবীর প্রতি এক সিন্ধু মায়া উথলে উঠে। ধীরে ধীরে রাত গভীর হতে থাকে। সালমা একটা রুমে বসে, ফেলে আসা জীবনের কথা ভাবছিল। হঠাৎ রুমে প্রবেশ করল কয়েকজন হিংস্র যুবক। হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ল সালমার সতিত্বের উপর। সালমা অপ্রস্তুত হয়ে চিৎকার করার চেষ্টা করে। কিন্তু আর পারলনা। পালাক্রমে সবার কামভাব পুর্ণ করে ধারালো একটি অস্ত্র সালমার গলার সামনে ধরল। সালমা পাষন্ড স্বামী শামীমের দিকে একবুক ঘৃণা বিতরণ করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। কপোল বেয়ে শুধু অশ্র“ কণাগুলো গড়িয়ে পড়ল। জীবন রক্ষার জন্য সালমার সবধরনের চেষ্টাই ব্যর্থ হলো। পাষন্ড শামীমসহ কয়েকজন নরপশু হত্যা করে দিল একটি তরতাজা জীবন্ত প্রাণ। হৃদয়ের অব্যক্ত কথা গুলো আর কাউকে বলা হলোনা। ক্ষমা চাওয়া হলো না মা-বাবার কাছেও। অদৃশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে সালমা বলে গেল মা ও বাবা তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমরা ভাল থেকো। আমি চলে গেলাম না ফেরার দেশে...।







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.