| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিঝুম নিস্তদ্ধ চারপাশ। বিহঙ্গের গুঞ্জন ধ্বনিও থেমে গেছে বেশ আগে। অবিরাম বর্ষিত শিশিরে সিক্ত হচ্ছে বৃক্ষরাজির পত্রÑপল্লব। আঁধারের চাদরে আবৃত রাতের প্রকৃতি। কনকনে শীতের রাতে যে যার নীড়ে পরম সুখে বিশ্র্রাম নিচ্ছে। কেউ বা কাথা কম্বলের নিচে নাক ডাকা ঘুমে বিভোর। আঁধার জড়ানো কুয়াশা ঘেরা নিস্পন্দন রাতের স্তব্ধতা ভেদ করে এক সময় ভেসে আসে ফজরের আযান ধ্বনি। রফিক চৌধুরীর ঘুম ভেঙ্গে যায় তাতে। প্রতিদিনের নিয়মে অজু করে মসজিদের দিকে পা বাড়ান তিনি। নামাজ শেষে পাশের সরু রাস্তা দিয়ে শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে হেটে চলছেন। কিছু দুর এগোতেই আম গাছের নিচে একটি ছায়ামূর্তি দেখে থমকে দাঁড়ান তিনি। কাছে গিয়ে দেখেন, এই হাঁড় কাপানো শীতে এক নবজাতককে কোলে নিয়ে থরথর কাঁপছে কুশাঙ্গ এক তরুণী। টলটলায়মান যৌবন এখনো ফুরায়নি। চেহারায় দারিদ্রের ছাপ থাকেলও ভঙ্গিমায় এর বিপরীত চিহ্ন। ভাগ্যচক্রে আজ নীড়হারা। অসহায় চাতকের ন্যায় নির্জন পথের এক নিঃসঙ্গ আশ্রিতা। বুঝা যায় কষ্টের ঝড়ে সে বিধ্বস্ত। এলামেলো কেশগুচ্ছ। মায়াবিনী চোখ দুটি তলিয়ে গেছে কোটরের গভীরে। অশরণ মেয়েটির করুণ অবস্থা দেখে নিমেষেই রফিক চৌধুরীর চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে উঠে। মন কেঁদে উঠে বিপন্না এক হতভাগীর জন্য। নিজের গায়ে জড়ানো চাদরটা খুলে দিয়ে আহত সুরে নাম জিজ্ঞেস করতে বলল: শিউলী।
মা তোমার এ অবস্থা কেন?
রফিক চৌধুরীর দয়াদ্র কন্ঠ ।
শিউলীর নয়নযুগল থেকে কপোল বেয়ে কয়েক ফোটা তপ্ত অশ্র“ গড়িয়ে পড়ে। কান্না মিশ্রিত সুরে বলতে থাকে:আমার স্বামী একজন নেশাখোর। সারাদিন কোথায় থাকে তার ঠিক নেই। গভীর রাত করে ঘরে এসে আমার সাথে তেমনটা মিশেনা। এই নেশার টাকার জন্য একে একে ঘরের সবকিছু বিক্রি করে সে। এমন কি আমার মায়ের দেয়া সোনার বালা দুটি জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রি করে ফেলে। দিন দিন মদ আর ইয়াবার মরণ নেশায় আরো উম্মাদ হয়ে উঠে। বিক্রি করার মত ঘরে আর কিছু না পেয়ে অবশেষে এই বাচ্চার দোলনাটা বিক্রি করতে উদ্যত হলে আমি বাধা দেই। দোলনাটা আমার হাত থেকে কেড়ে নিতে না পেরে আমাকে সজোরে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। বেদম প্রহারে জর্জরিত করে ফেলে আমার সারাটা দেহ। আঘাতে আঘাতে বিষিয়ে তুলেও ক্ষ্যান্ত হয়না। পাষাণ সুরে বলে দেয় , তোর এখানে আর ঠাই নেই। যেখানে ইচ্ছা চলে যা। এই বলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় আমাকে।
ধীরে ধীরে শিউলীর কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। চোখ থেকে বেদনার অশ্র“ ঝরতে থাকে। কলিজা ছিড়ে যেতে চায়। আর বলতে পারেনা। এতক্ষণে রফিক চৌধুরীরও নির্জল আঁখি দু‘টি অশ্র“সজল হয়ে উঠে।
তোমার শশুর বাড়ীর কেউ কিছু বলেনি ? এবার শিউলীর হৃদয়াকাশে অবসন্নতার ঝড় আরো তীব্র বেগে বইতে থাকে। কান্না চেপে বলতে থাকে: আমরা এক সময় একে অপরকে ভালোবাসতাম। সেই সুবাদে পরিবারের অমতে দুজনে গোপনে বিয়ে করি। বিয়ের পর এক ভাড়া বাসায় সে আমাকে উঠায়। এবং সেখানেই এই বাচ্চাটির জন্ম। কিন্তু সে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়নি এবং তার বাড়ির ঠিকানাও দেয়নি। রফিক চৌধুরীর মনটা ততোধিক অশান্ত হয়ে ওঠে। অসহায় মনে ভাবতে থাকেন: আজ না জানি এমন কত শিউলীর অসহায় জীবনের উপর চলছে পাশবিক নির্যাতন। এক বুক ব্যথা নিয়ে দিনাতিপাত করছে খোলা আকাশের নিচে। ভেঙ্গে যাচ্ছে সুখের সংসার কেবল এই নিষিদ্ধ মাদকের বিষাক্ত ছোবলে। এর কি কোন শেষ নেই?
আচ্ছা তুমি এখন কি করতে চাও?
রফিক চৌধুরীর কোমল কন্ঠ।
শিউলী বলল: আমি চাই সেই স্বামীর ঘরেই আবার ফিরে যাব। শত শত লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, দুঃখÑকষ্ট সয়েও সুন্দর আচরণ আর উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে প্রানান্তকর চেষ্টা করব। তার কলুষিত জীবনের কালো অধ্যায় মুছে দিয়ে উপহার দিব একটি সুন্দর জীবন। স্বর্গীয় পথে ফিরিয়ে আনব আপ্রাণ সাধনায়। আবার যেন হারিয়ে যাওয়া সুখÑস্বপ্ন ফিরে আসে আমাদের মাঝে। এর জন্য আরো দুঃখÑবিষাদ সহ্য করতে হলেও একে একে নিরবে সব সয়ে যাব। এবং মনে করব এটাই আমার জীবনের চাওয়াÑপাওয়া।
শিউলীর কান্না বিজড়িত কথাগুলো রফিক চৌধুরীর অন্তরে প্রচন্ড ভাবে দাগ কাটে। আপন মনে তিনি ভাবতে থাকেন: সত্যি এ যুগে এমন মেয়ে সত্যই বিরল। এমন সুন্দর স্বভাবের মেয়েটার ভাগ্যে আজ কি দুর্ভোগ। অথচ শান্ত ও সুবোধ মেয়ে যে কোন দুঃখÑকষ্টকে নিজের জীবনের চির সঙ্গী করে অদৃষ্টকে নিদ্বির্ধায় মেনে নিতে কতই না অকপট।
রফিক চৌধুরী তার হাতে পাঁচশত টাকার একটি নোট গুজে দিয়ে বলেলন: আল্লাহ তোমাকে সর্বোতভাবে সফল করুণ।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯
সন্ধ্যা-তরী বলেছেন: ধন্যবাদ , আপনি আমার ব্লগে প্রথম মন্তব্যকারী
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৯
ফয়সাল হুদা বলেছেন:
ভালো লাগল সন্ধ্যা-তরী।
শুভ ব্লগিং..