| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব-৩
কিন্তু একটা বিপদের গন্ধ বাতাসের সাথে মিলিয়ে যেতে না যেতেই আরেকটা বিপদ এসে দরজায় হাজির। মাস শেষ হতে না হতেই আবারো কষ্টের ঝড়। স্কুলের মাসিক বেতনের জন্য আবারো ভীষণ চাপ দেয়। এ মাসের বেতনের তিন হাজার টাকা থেকে রবিও খাদিজার বেতনের আংশিক আদায় করে। খাদিজা এখন ৩য় শ্রেণীতে। বেশ সফলতার সাথেই প্রতিটি ক্লাস অতিক্রম করে এসেছে। প্রতিটি পরীক্ষা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ১ম স্থানটি ছিল তার জন্য নির্ধারিত। তাই সকল শিক্ষকবৃন্দের আলাদা একটা দৃষ্টি পড়ে খাদিজার উপর। মা মমিনার আশা বড় একজন শিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। কিন্তু সময় ও বাস্তবতার কষাঘাতে মমিনার সে স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। অর্থের অভাবে এখন খাদিজার প্রাইভেট বন্ধ। তবুও খাদিজার সাধনা থেমে নেই। নিজের থেকেই পড়াশুনার গতি ধরে রাখে খাদিজা। প্রাইভেট খরচ কিছুটা বাঁচল বলে মমিনার দগ্ধ মনে শান্তির হালকা পরশ লাগে। কিন্তু পরক্ষনে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আবার অশান্তির আগুনে পুড়তে থাকে। সামনে খাদিজার পরীক্ষা। তাহলে এবার খাদিজা ভাল রেজাল্ট করতে পারবেনা। মমিনা ব্যথিত মনে ভাবে। খাদিজার পরীক্ষা শুরু হল। তিনটা পরীক্ষা দেওয়ার পর জ্বরে ভূগতে থাকে খাদিজা। এ জ্বর নিয়েই পরীক্ষা সমাপ্ত করে। এক সপ্তাহ পর যখন খাদিজার রেজাল্ট বের হল, তখন সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ল বিস্মযের এক মৃদু গুঞ্জন। ১ম স্থা্েনই খাদিজার আসন। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অন্যান্ন অভিবাবকবৃন্দ খাদিজার এ অবিশ্বাস্য সফলতা দেখে চমকে ওঠে। তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে খাদিজা ১ম হয়েছে। কারন যার কোন প্রাইভেট টিচার নেই। তার উপর সে অসুস্থ ছিল। তারপরও কিভাবে এত ভাল ফলাফল করল ? মা মমিনা স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানায়। মেয়ের এ সফলতার জন্য প্রাণ ভরে দু’আ করে। ‘তাকে বড় শিক্ষিত করে গড়ে তুলব’ পুরনো সেই স্বপ্নটা ফের নতুন করে জেগে ওঠে। কিন্তু রবির স্কুল ও কোচিংয়ের খরচ দিতে গেলে খাদিজার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তিনদিন পর গত মাসের বাকি ৫০০ টাকা হাতে নিয়ে মা মমিনা খাদিজার স্কুলে যায়। প্রধান শিক্ষকের হাতে টাকাটা দিয়ে নিজের সমস্যার কথা জানায়। শিক্ষক কিছুক্ষণ চুপ করে নিরর মনে ভাবলেন: একটা প্রতিভাকে এভাবে হাত ছাড়া করা যায়না। তাছাড়া অর্থের অভাবে একটা জ্বলন্ত প্রতিভা শুরু পথেই ঝরে পড়বে ? তা কি করে হয়। মা মমিনা চলে যেতে উদ্যত হলে শিক্ষক বললেন: ঠিক আছে আপনি আংশিক বেতন দিলে হবে। না, আমার দ্বারা তা ও সম্ভব না। কান্নাভেজা কন্ঠে বলে মমিনা।
ঠিক আছে কাল থেকে তাকে স্কুলে পাঠিয়ে দিন।
শান্ত সুরে বলেলন শিক্ষক।
মমিনা কিছুটা সংকোচবোধ করলেও মনে মনে বেশ খুশি হল। অসাধারণ প্রতিভার গুণে এখনো থামেনি খাদিজার পড়াশুনার গতি। ফের আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে মমিনা। এবার অলি মিয়ার মেঘলা মনে যেন চমকে ওঠল সূর্যের সোনালী কিরণ। এখন শুধু সাংসারিক আর শফিক ও রবির পড়াশুনার খরচ মোটামোটি চলে যায় অলি মিয়ার দৈন্য সংসার।
©somewhere in net ltd.