নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা-তরী

সন্ধ্যা-তরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ব - ৪

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

পর্ব- ৪

শৈশব - কৈশোর পেরিয়ে রবি এখন কিছুটা বুঝতে শিখেছে। শিখেছে ডানা মেলে উড়তে। বাতাসের মৃদু ধাক্কায় যেমন নিস্পন্দন কিশলয় স্পন্দন হয়ে ওঠে। শান্ত সাগরের জল অশান্ত হয়ে ওঠে, তেমনি রবির মনের জানালায় উঁকি দেয় ভিন্ন কিছৃু প্রাপ্তি। নতুনের ছোয়া লাগে রবির তরুন জীবনে। ইদানীং রবি কেমন যেন পাল্টে গেছে। অনেক রাত করে ঘরে ফিরে। স্কুলের বেতন, কোচিং এর টাকা, মাসিক ফি, অনুষ্ঠানের চাদা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মায়ের কাছ থেকে অনেক টাকা চায়। পড়াশুনায়ও বেশ অমনোয়োগী। মমিনার কেমন যেন একটা সন্দেহ জাগে। একদিন অনেক রাত হল রবি এখনো ঘরে ফিরছেনা। অলি মিয়া চিন্তিত হয়ে পড়ে। মা মমিনা ভাবল: হয়ত বন্ধু বান্ধবদের সাথে কোথাও বেড়াতে গেছে। এখনি চলে আসবে। কিন্তু না, অনেক রাত ফুরিয়ে গেল। রবির ঘরে ফেরার কোন নামও নেই্। সারারাত ছটফট করেই কাটল। পরদিন দুপরে কোত্থেকে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। প্রায় সারা দিন ঘুমাল। বিকেলে মা মমিনা ছেলের অবস্থা জিজ্ঞেস করলে বললঃ আল আমীনের বাসায় ছিলাম। মমিনা এবার আরো ঘাবড়ে গেলেন। কারন: আল আমীন, কারুক, রমিজ, এরা রবির ক্লাসমেট হলেও স্বভাব চরিত্র ভাল না। প্রায় সময় মদ, জোয়া ও সিগারেটের আড্ডায় সময় কাটায়। না, আমার রবি এমন হবেনা, হতে পারেনা। কখনো না। অতি সহজ মনেই কথাগুলো ভাবে মমিনা।

কেন ছিলি ওদের বাসায় ?

মমিনার জিজ্ঞাসা।

একটা নোট আনতে গিয়েছিয়াম কিন্তু, সে বলল: নোটটা আমারও তো পড়তে হবে, তো এখানেই পড়। তাই পড়তে পড়তে এক সময় সেখানে ঘুমিয়ে পড়লাম।

শান্তভাবে জবাব দেয় রবি।

মা মমিনার সন্দেহ কাটেনি। এভাবে বেশ কয়েকদিন গেল।

এখান থেকে শুরু হয় অলি মিয়ার ঝীর্ণ জীবনের আরেকটি মর্মান্তিক অধ্যায়।

হঠাৎ আরেক দিন রবি উধাও। স্কুলে খোঁজ নিলেন। নাহ। আজ রবি স্কুলেও আসেনি। রাত ১১ টায় ছুটে গেলেন আল আমীনের বাসায়। আল আমীনের মা বললঃ ওরা কোথায় যেন ঘুরতে গেছে। মা মমিনা ক্লান্ত মনে ফিরে আসলেন। চোখজোড়া অশ্র“তে ভিজে ওঠে। তাহলে কাল যে ভর্তির ১৫০০ টাকা নিয়েছিল ভর্তি না হয়েই বুঝি ঘুরতে গেছে ?

মমিনার জিজ্ঞাসিত ভাবনা।

অলি মিয়ার মনটাও কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। তাদের স্বপ্ন ছিল রবি আগামীতে পরীক্ষা দিয়ে ভাল একটা রেজাল্ট করলে,এয়ারপোর্টে উচ্চ পদে চাকুরীতে জয়েন করাব। আমাদের অভাবÑঅনটন অনেকটাই মিটে যাবে। আবার নতুন করে সাজাব এ ভাঙ্গা সংসার। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে অলি মিয়ার পিছু ছাড়েনি। যেন তার নিত্য দিনের সঙ্গী। এত ঝড় Ñঝাপটার মাঝেও যে প্রদীপটি মিটিমিটি জ্বলছিল, যে প্রদীপটির আলোয়ে পথ চলার স্বপ্ন দেখেছিল, সে আশার আলো এখন নিভু নিভু। যে আশাতে একদিন অলি মিয়া সাধের স্বপ্নটা দেখেছিলেন। সে আশার ছাই দিয়ে স্বপ্নটা ঢেকে দিয়েছে। যার জন্য এত কষ্ট, শ্রম আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলা, সে বুঝি এভাবে বরফের মত গবে যাবে। এভাবেই পুড়িয়ে দেবে সেই আশার বাসাটা ? তাহলে কষ্টের সাগরেই ভাসবে আমার সংসার ? দুঃখের আগুনেই জ্বলবে চিরদিন। সুখের দেখা কী পাবনা কোনদিন ? এ জীবনে কী আসবেনা আর কোন নতুন প্রভাত?

অত্যন্ত ব্যথিত মনে ভাবে অলি মিয়া।

তিনদিন পর রবি ঘরে ফিরে। অলি মিয়া কোন কৈফিয়ত ছাড়াই কয়েক দফা প্রহার করে। রবি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মা মামিনার দরদী অন্তর কেঁপে উঠে। ও গো আর মেরনা বলে, রবিকে বুকে জড়িয়ে নেয় পরম মমতায়। যে ছেলে মা বাবার কষ্ট বুঝবেনা, সে ছেলে আমার দরকার নেই। অলি মিয়ার রুক্ষ কন্ঠ।

দু একদিন রবি আবার ভাল হয়ে চলে। কিন্তু প্রথম বার গিয়ে যে নেশা ধরেছে তা আর সহজে ছাড়তে পারছেনা। সে নেশার টানে হঠাৎ আরেকদিন মোবাইলটা নিয়ে বেরিয়ে যায় রবি। আবারো মা মামির অন্তরাতœা কেঁপে ওঠে। ছেলের জন্য দিন রাত সারাক্ষণ কাঁদে। অলি মিয়া মমিনাকে ধমক দেয় , তোর এমন ছেলের জন্য আর দরদ দেখাতে হবেনা। চুপ র্ক।

অলি মিয়ার কড়া কন্ঠ।

মা মমিনা আল্লাহর দরবারে দু‘ হাত তোলে ছেলের সুস্থতার জন্য দুআ করে। আর দু চোখের নহর থেকে কপোল বেয়ে নামে আষাঢের ঢল। এখানে সেখানে খোঁজ নেয় মমিনা। মায়ের মনতো আর মানেনা। এভাবে চোখের সামনে ছেলের ধ্বংস দেখে কোন মা বাবা কী ঠিক থাকতে পারে? এত কষ্টের ভীড়ে ছেলের অযাচিত এ অবস্থা মমিনাকে বিচলিত করে তোলে। এক দিকে সংসারের টানাটানি, এর উপর ছেলের করুণ দশা। এ কীভাবে মেনে নেবে মমিনা? কিছুই ভাবতে পারেনা সে। আজ দু দিন হল ছেলের কোন খবর নেই। মোবাইলে ট্রাই করে কিন্তু বন্ধ। চারদিন পর আলÑ আমীনের বাসায় ওঠে রবি। মা মমিনা নিজেই গিয়ে ছেলেকে ঘরে আনেন। ছেলেকে দেখে মমিনা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। চেহারার একি অবস্থা! চোখজোড়া কত গভীরে ঢুকে গেছে। হাড্ডিসার শরীর। চুলগুলো এলোমেলো। ময়লাভরা হাত পায়ের বড় বড় নখ। এটাই যে তার রবি, কলিজার টুকরা! মমিনা ভাবতেই পারছেনা। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে এটাই তার রবি। কী বিভৎস অবস্থা। নিজ হাতে ছেলেকে খাওয়ালেন। মোবাইলের কথা জিজ্ঞেস করার পূর্বেই মমিনার মন বলল: মোবাইলটা হয়ত রবির কাছে নেই। তবুও জিজ্ঞেস করলেন।

বাবা মোবাইলটা কই ?

আমার এক বন্ধু নিয়ে বাড়ি গেছে , এসেই দিয়ে দিবে।

রবির সহজ জবাব।

মমিনা আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কারণ বুঝতে পেরেছেন মোবাইল বিক্রি করে দিয়েছে। মা অনেক বুঝালেন কেঁদে কেঁদে বলেলন: দেখ্ বাবা, আমাদের সংসারের কী অবস্থা। তোর বাবা কত কষ্ট করে তোদের লেখাপড়ার খরচ চালান। তোরা যাতে কষ্ট না পাস্ এজন্য কত পরিশ্রম করে। তোর বাবার অনেক বড় আশা পরীক্ষার পর এয়ারপোর্টে একটা ভাল পদে চাকুরী দিবে। কিন্তু তুই যদি এ অবস্থা করছ তাহলে তোর বাবা যে অনেক কষ্ট পাবে। আর আমিও কী সুস্থ থাকব ? দীর্ঘক্ষণ বুঝানোর পর রবি বলে: ঠিক আছে মা এবার থেকে ভাল হয়ে চলব। নিয়মিত স্কুলে যাব। মা মমিনা কিছুটা আস্বস্ত হন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:৫৫

বটের ফল বলেছেন: ভালো লেগেছে। প্লাস।++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.