নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এইসব দিনরাত্রি

প্রজাপতির মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় আমার ভাবনা গুলো, মাঝে মাঝে ওদের ছুঁতে পারি, মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি...

সানফ্লাওয়ার

লিখতে ভাল লাগে বলে লিখি। আমার সব লেখা নিজের জন্য।

সানফ্লাওয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের মুখের হাসি

১০ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮



মার্চ মাসের এক রৌদ্রজ্জল দুপুরে বাসার সামনের ছোট্ট একটুখানি জায়গায় ছোট একটা গাছ লাগাচ্ছিল মিতু। তার আব্বু আম্মু ঘুমাচ্ছে। তাকে ঘুমাতে বলা হয়েছে কিন্তু এ রকম দুপুরে কি ঘুম আসে? বৃষ্টিও ঢাকা থেকে আসছে না। ও থাকলে খুব ভাল হতো, দুজনে মিলে খেলতে পারতো। মিতুর একটাই বন্ধু, সে ঢাকায় থাকে। মাঝে মাঝে যখন সে তার খালামনির বাসায় বেড়াতে আসে, তখন মিতুর সাথে গল্প করে, খেলা করে।



হঠাৎ সাইকেলে করে মন্টু স্যারকে তাদের বাসার সামনে এসে নামতে দেখে মিতু। সে খুব অবাক হয়। স্যার তো দুপুরে আসেন না, তিনি মিতুকে পড়ান সন্ধ্যাবেলায়। সাইকেল স্ট্যান্ডে তুলেই মন্টু স্যার মিতুকে দেখতে পান। তার মুখে হাসি ফুটে উঠে। হাত তুলে ডাকেন মিতুকে, “এই মিতু, মিষ্টি খাওয়াও। তুমি বৃত্তি পেয়েছো”।

মিতু আনন্দে ক্ষণিকের জন্য বাকহারা হয়ে যায়। সে আজ স্কুলে গিয়েছে, কিন্তু বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্টের কথা কিছু শোনেনি। চোখে পানি নিয়ে স্যারকে সালাম করে। বাসায় ঢুকেই তার আব্বু আম্মুকে চিৎকার দিয়ে খবরটা জানায়।



কিছুক্ষন পর স্যার মিতুর আব্বুকে হাসিমুখে জানালেন, “আজ দুপুরে ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট ডি.সি অফিসে এসেছে। আগামীকাল সব স্কুলে রেজাল্ট জানানো হবে। ওদের স্কুল থেকে শুধু একজন বৃত্তি পেয়েছে এবং সেই মেয়েটা মিতু। ডি.সি অফিসের এক ভদ্রলোক এসে আমাকে এইমাত্র খবরটা জানালো। আমি সাথে সাথে এসেছি আপনাদের খবরটা জানানোর জন্য”।

মিতুর আব্বু আর স্যার আরো অনেক কথা বলছেন, কোন কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। সে যেন ঘোরের মাঝে আছে। বাসায় তখন আনন্দের জোয়ার। মিতু দৌড়ে তার দাদুর রুমে যায়। দাদু তাকে জড়িয়ে ধরে একমনে দোয়া পড়ে ফুঁ দেন।



মাগরিবের নামাজের পর সবাই হালকা নাস্তা করছে, গল্প করছে। এমন সময়ে মিতুর আম্মু বলে, “আজ মিতুর জন্য দু’রাকআত নফল নামাজ পড়েছি”।

কথাটি শোনার সাথে সাথে প্রচণ্ড ভাললাগায় মিতুর চোখে পানি এসে পরে। ওর আম্মু একটু গম্ভীর ধরনের মানুষ। তিনি ভাবেন কঠিন শাসনে ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে হয়। আদর করলে ছেলেমেয়েরা উচ্ছন্নে যায়। এ কারনেই মিতু ভাবে তার আম্মু তাকে একটুও আদর করেনা, শুধু বকে, শাসন করে, ভালবাসে না। সেই আম্মু তার জন্য নামাজ পড়েছে, এ যে অকল্পনীয়। সেদিন সে তার আম্মুর চেহারায় দেখেছে প্রাপ্তির চিহ্ন, একজন সুখি মায়ের মুখে হাসি।



মিতু এখন একটি সরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সে মাঝে মাঝে তার ছাত্রছাত্রীদের বলেন, “আমার সেই বৃত্তি পাওয়া উপলক্ষে সবার কাছ থেকেই মোটামুটি অনেক উপহার পেয়েছিলাম। সব উপহারই এখন হারিয়ে গেছে, শুধু আমার মায়ের সেইদিনের মুখের হাসি এখনো আমার হৃদয়ে আঁকা আছে”।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:৪২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
আমার মায়ের সেইদিনের মুখের হাসি এখনো আমার হৃদয়ে আঁকা আছে।

১৩ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:২৩

সানফ্লাওয়ার বলেছেন: :)

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:১৯

ডরোথী সুমী বলেছেন: সন্তানের সাফল্যে সবচেয়ে আনন্দিত হন মা-বাবা। এই সাফল্যে তাদের অবদানও তো কম নয়।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:০৬

সানফ্লাওয়ার বলেছেন: সহমত :)

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:২০

নিশি মানব বলেছেন: , “আমার সেই বৃত্তি পাওয়া উপলক্ষে সবার কাছ থেকেই মোটামুটি অনেক উপহার পেয়েছিলাম। সব উপহারই এখন হারিয়ে গেছে, শুধু আমার মায়ের সেইদিনের মুখের হাসি এখনো আমার হৃদয়ে আঁকা আছে”।

কাউকে কিছু দেওয়ার সময় তার চোখেমুখে যে অভিব্যাক্তি ফুটে উঠে,সেটাই স্মরনীয়।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০১

সানফ্লাওয়ার বলেছেন: হুম, ঠিক তাই। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.