![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখন আমি কলেজে পড়তাম। সে পড়ত ক্লাশ এইটে। তবে বয়সের তুলনায় সে একটু বেশিই পেকে গেছে বলে আমার কাছে মনে হলো। মেয়েটির নাম তিথি। তবুও তার পাকামী তার চঞ্চলতা আমার কাছে খুব বেশি খারাপ লাগত বলে মনে হয়না বরং ভালই লাগত। কলেজের বয়স মানেইতো ভাললাগার বয়স। আমারও মেয়েটিকে ভাল লেগে গেল। পাখির ছানা ধরার বয়স আর গোল্লাছুট খেলার বয়স পেরিয়ে আমি সবেমাত্র ফুটবল আর ক্রিকেট নিয়ে মেতে উঠতে শুরু করলাম। এভাবে বোধহয় পৃথিবীর সকল মানুষই বয়সের ধাপগুলো অতিক্রম করে। আমিও সময়কে অতিক্রম করে আমার বয়স অতিক্রম করলাম। বর্ষাকালে কইমাছ যে রকমভাবে কানে মাটি আটকিয়ে পানির উল্টো দিকে অজানা এক মোহে হেঁটে চলে চলে ঠিক সেরকমভাবে আমি আমার জীবনকে অতিবাহিত করতে শুরু করলাম। সাপের মতো করে খোলস বদলালাম। মানে একটু আধটু সেয়ানা হয়ে উঠতে লাগলাম। কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলে বারবার তার দিকে চেয়ে থাকতাম। একদিনের ঘটনা, এক ফকির বেটির সাথে একটি মেয়ে এলো। মেয়েটির বয়স বড়জোর বারো কি তেরো হবে। আমি বারবার মেয়েটির দিকে তাঁকিয়ে থাকলাম। ফকির বেটি আমার মাকে মশকরা করে বললো, ‘বুজান আমার নাতনিকে আপনার ছেলেকে বিয়ে করান।’ আমার মা বললো বাজে কথা বাদ দিয়ে কাজে মন দাও। তাই ফকির বেটি সেদিন আর কেনো কথা বলেনি। মেয়েটির চেহারা এখনো আমার মনে আছে। তার পরণে ছিল নীল রঙের ধুলোমাখা জামা। জামাটি ছিল হাতকাটা। তার হাতদুটি কদলির মতো দেখতে। মুখটি ছিল মায়ায় ভরা। চোখটি ছিল কোয়েলের ডিমের মতো। সবুজ পাতার মতো কচি ঠোঁট দুটি ছিল মধুতে ভরা। যাক সে কথা তা কেবল অতীত দিনের স্মৃতি। ফিরে আসা যাক বর্তমানে। আমার এখন যে বয়স চলছে সে বয়সে মানুষ প্রেমে পড়ে। আমি ভাবিনি কখনো প্রেমে পড়ব কিন্তু সে আমিও প্রেমে পড়লাম। তবে আমার প্রেম ছিল অন্যান্যদের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন রকমের। ভিন্ন স্বাদের। অন্যান্য মানুষরা মোবাইলে কথা বলার মাধ্যমে প্রেম করলেও আমার প্রেম শুরু হলো এসএসএসের মাধ্যমে। আমিই তাকে এসএমএস দিই। এরপর সে আমাকে এসএমএস পাঠায়। এভাবে তার সাথে আমি এসএমএস-এসএমএস খেলা খেলি। আমাদের এরকম এসএমএস খেলা এক সময় বেশ জমে উঠে। এক সময় আমি তাকে প্রপোজ করলাম। প্রপোজ করা ছাড়া আমার সামনে যে আর কোনো রাস্তা খোলা ছিলনা। কারণ এতদিনে সে আমার হৃদয়ের সমস্তটাই দখল করে নিয়েছে। তাকে যেদিন প্রথম দেখলাম, সেদিনের কথা এখন খুব করে মনে পড়ছে । তার বড়ভাই আর আমি একই সাথে কলেজে পড়তাম। একদিন তার ভাই আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো। যেদিন প্রথম তাদের বাড়িতে গেলাম সেদিনই তাকে আমি দেখলাম। সেদিন তার পরনে ছিল সাদা সেলোয়ার আর গায়ে ছিল লাল জামা। যেন এক লালপরী। কপালে লাল টিপ। মুখে ভূবণ মোহিনী হাসি। তার নখ! তার পাতলা ঠোঁট! পায়ের পাতা! মুখ! চোখ! সবই আমাকে আকৃষ্ট করল। তাকে দেখার পর থেকে আমার বুকের ভেতর উথাল পাতাল ঢেউ খেলা শুরু হলো। আমার দেহের প্রতিটি রক্তকণিকা ফুটন্ত লাভার মত ফুটতে লাগল। শরীরের উপর বয়ে গেল সুনামি। আমি শিহরিত! পুলকিত! স্পন্দিত হলাম। বৈশাখের মাতাল হাওয়ায় প্রকৃতিকে যে রকমভাবে ওলট পালট করে দেয় সেরকমভাবে আমার ভিতরটাও লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। এখন আমার সারা সত্ত্বা জুড়ে কেবলই তার অবস্থান। চোখের সামনে সে এসে দাঁড়ায়। রাতে ঘুমাতে গেলে তার কথা ভাবি। স্বপ্নে তার চাঁদমুখটি দেখি। এভাবে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। এরপর থেকে তাকে এক নজর দেখার জন্য আমি মনে অপেক্ষা করতাম। কারণে অকারণে আমি তাদের বাড়িতে যেতাম। আমি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতাম। প্রাণভরে দেখতাম। তত দেখতাম তত যেন আমার দেখার তৃষ্ণা বেড়ে যেত।
এক সময় পড়ালেখার জন্য আমি ঢাকায় চলে এলাম। তার সাথে আর দেখা হয়না। ওদের বাসার নাম্বার আমার কাছে ছিল। তার সমস্যার কথা ভেবে আমিও তাকে আর এসএমএস করিনা। কিন্তু একদিন সাহস করে একটি এসএমএস পাঠিয়ে দিলাম। প্রেমে পড়লে মানুষের সাহস নাকি বেড়ে যায়। আমারও তাই হলো। অনেকে আবার বোকাও হয়ে যায়। আমার বেলায় তা হলো না। সে তারিখটি ছিল ১২/১২/১২ রাত ১২টা। সে আমার এসএমএসয়ের রিফ্লাই পাঠায় ১২/১২/১২ইং। দুপুর ১২টা ১২মিনিট ১২সেকেন্ডে। আর সেই দিন থেকেই তার সাথে যোগাযোগ শুরু হয়। আমি তাকে এসএমএস পাঠাতাম আর তার এসএমএস এর জন্য আপেক্ষার প্রহর গুনতাম।
যখন ও আমাকে এসএমএস করত না, তখন অভিমানি মন নিয়ে ভাবতাম। আর মনে মনে বলতাম, ও আমাকে এসএমএস করবে কেন! ও তো আমাকে ভালোই বাসেনা। আবার ভাবি, ভালো না বাসলে সে আমাকে এসএমএস করে কেন। এইভাবেই নানা উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার ভেতর আমার জীবন অতিবাহিত হয়। কেটে যেতো এসএমএস বিহীন রাতগুলো।
দেখতে দেখতে কয়েকদিন কেটে গেল। মনটা খুবই খারাপ থাকত। তবে হ্যাঁ তার পুরোনো এসএমএস গুলো দেখে মন ভালো করতে চেষ্টা করতাম। ভাবলাম, ওতো বাড়িতে নেই কিভাবে আমাকে এসএমএস করবে। একথা ভেবেই মনকে সান্ত¡না দিতাম।
আমার ক্লাস, পড়ালেখা সব কিছুই ঠিকঠাক মত চলছে। কিন্তু সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই আমার পাগলামিটা বেড়ে যায়। তখন আমার বুকের ভেতর গোধূলির রক্তিম রেখার মতো রক্তক্ষরণ শুরু হয়। বারবার মোবাইল দেখি, যে রুমেই যাই মেবাইলটা সাথে রাখি, শুয়ে শুয়ে তার এসএমএস গুলো পড়ি। মনের পর্দায় তার ছবি আঁকি। তার চোখ! তার হাসি! তার কথা! তার হাঁটাচলা অনুভব করি। আকাশের সাদা মেঘের ভেলার মতো আমি তখন অনুভবের ভেলায় ভাসতে থাকি। কৃষ্ণের মতো করে। বিরহী কোকিলের মতো করে। শীতের চাদরে মতো জাপটে ধরে আমি তাকে অনুভব করি।
৮ মার্চ ২০১৩। আন্যান্য দিনের মত সেদিনও রাত ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। শুধুমাত্র একটি এসএমএস এর জন্য। বারবার মোবাইল হাতে নিচ্ছি আর ভাবছি কখন যে ১২টা বাজবে! কেননা সে ১২টা বাজলে এসএমএস করে।
এই যে গত কাল ১২টার দিকে ২টি এসএমএস আসল। মনে মনে ভাবছি এসএমএস গুলো জিপি অফিস থেকে আসতে পারে। কিন্তু মনের গহিনে লুকিয়ে আছে অন্য একটি ভাবনা। যা সবসময় থাকে। আবার ভাবছি এত রাতে জিপি অফিস থেকে এসএমএস আসারতো কথা না। তবে এসএমএস নিয়ে আমার ভেতর বড় একটা কৌতূহল ছিল। সেই কৌতূহল থেকেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইনবক্স এ গেলাম। তখন যা দেখলামÑ দেখে মনটা সত্যি খুব খারাপ হয়ে গেল। দেখলাম এসএমএস গুলো সত্যি সত্যিই জিপি অফিস থেকে আসলো। মনের গহিনে যে ভাবনা আর কৌতুল লুকিয়ে ছিল তা খনিকেই ভেঙে গেল।
কিছুদিন আগের কথা, সে আমাকে দু’এক দিন পরপরই এসএমএস করত। রাত ১২টার পরই বেশি এসএমএস করত। আমিও তার এসএমএস এর উত্তর দিতাম। আবার আমিও তাকে এসএমএস করতাম। সে ভোর ৬টার আগেই এসএমএস এর উত্তর দিত। মাঝে মাঝে অনেকদিন সে এসএমএস করত না। তখন আমার কাছে খুব খারাপ লাগত। আমার সময় কিভাবে কাটত একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
মজার ব্যাপার হলো কিছুদিন থেকে সে আমাকে আপনি থেকে তুমি বলা শুরু করল। এখন আবার সাহেব বলা শুরু করেছে। আমি মহা চিন্তায় পড়ে গেলাম। সে এমন করছে কেনো? সে কি আমাকে সত্যিই ভালবাসে। এইভাবে এসএমএস এর মাধ্যমেই তার সাথে আমার কথা হত। তার এসএমএসের ভাষা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যেত। আমি তাকে একথা অনেক ভাবে বুঝাতে চেষ্টা করতাম যে আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। কিন্তু সে এখনো পর্যন্ত কখনো আমাকে আই লাভ ইউ বলেনি। আবার মনে মনে ভাবলাম, আই লাভ ইউ বলার জন্য তো ভালবাসা থেকে থাকেনা। আমাদের কার্যকলাপে একথা বুঝতে বাকি থাকেনা যে, সে আমাকে ভালবাসে কিনা। কিন্তু তার এসএমএস এর ভাষা বলে দিচ্ছে যে সে আমাকে ভালোবাসে। আমাকে অনুভব করে। আমাকে নিয়ে চিন্তা করে। তার বান্ধবীদের সাথে আমার কথা বলে। স্বপ্নের জাল বুনে। রচনা করে ভালবাসার প্রেমকাব্য। বেদনার নীলকাব্য। আসলে মেয়েদের মন বুঝা বড় দায়। সনাতনী ধর্মে আছে ‘মেয়েছেলেদের মন দেবতারাও জানেনা; মানুষতো কোন ছার।’
এখন চলছে এপ্রিল মাস। এই মাসের ..তারিখ তার জন্মদিন। ভাবছি কিভাবে তাকে উইশ করা যায়। কিভাবে করলে সে খুুশি হবে। এইভাবেই আমার অবসর সময়গুলো কেটে যাচ্ছে।
৩ এপ্রিল। সন্ধ্যা ৬টা। আমি, সুহৃদ আকবর ভাই আর আমার বন্ধু রিফাতকে নিয়ে হাতিরঝিলে ঘুরতে বের হলাম। হঠাৎ একটি এসএমএস এর শব্দ আমার কানে বেজে উঠল। আমি তেমন গুরুত্ব না দিয়েই এসএমএস টি দেখলাম। ভাবলাম জিপি অফিস থেকে এসেছে বোধহয়। না আমার ভাবনাটি ভুল। এসএমএসটি দেখে একই সাথে আমি অবাক এবং আনন্দিত হলাম। দেখলাম তার এসএমএস। আমার জানের এসএমএস! আমার প্রিয়ার এসএমএস! আমার ময়না পাখির এসএমএস! তার পক্ষ থেকে যা ছিল আমার জন্য প্রেষ্ঠ উপহার। আমার জীবনের স্বর্ণালী অধ্যায়। এসএমএসটি পড়ার পর আমার দেহের প্রতিটি শিরায় বয়ে গেল আনন্দের ঢেউ। ঐদিনের মত আজও সে আমাকে এসএমএস করল। সেদিন সে আমাকে প্রথম এসএমএস করেছিল। যা ছিল আবিশ্বাস্য। তারিখটি ছিল ১২/১২/১২ সালের ১২:১২:১২সেকেন্ড তার প্রথম এসএমএস পেয়ে আমার ভেতর যেমনটি হয়েছিল। আজও তেমনটি হল।
বাসায় এসে কয়েকবার এসএমএসটি পড়লাম। নেড়েচেড়ে দেখলাম। চুমু দিলাম। ১২টার পর তার এসএমএস এর উত্তর দিলাম। ও আবার ভোর ৫:৪৫ মি. আরো একটি এসএমএস করল। আমি চাই ও আমাকে প্রতিদিন এসএমএস করুক। কিন্তু আমার এই চাওয়াটা সে কতটুকু বুঝে তা আমি জানি না। বোঝেনা সে মোটেও বোঝেনা। কিভাবে বোঝাব সে ভাষাও আমার জানা নেই।
ঐদিন আমি তাকে স্বপে¦ দেখলাম। ঠিক তিন কছর আগে যেমনটি তাকে প্রথম দেখেছিলাম। তবে গায়ে গতরে অনেক পরিবর্তন লক্ষ করলাম। দেখলাম, আমি তাদের ঘরে বসে আছি, আমার সামনে দিয়ে তার এক বান্ধবীর সাথে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। মুখে সে পুরণো মায়াবি হাসি, কপালে লাল টিপ, পরনে একটা নীল জামা। সে যেন এক ফুলপরী। এখন সে প্রতিনিয়ত আমার মৌমাছির মতো হুল ফোটায়। সে যেন অমরাবতীর সবুজ কানন ছেড়ে ভুল করে মর্ত্যলোকে এসে পড়েছে। সে প্রতিনিয়ত আমাকে জাগায়, আমাকে ভাবায়, আমাকে কাঁদায়। সে কি আদৌ আমার হবে। আমি কি আমার ভালবাসার সবটুকু মূলধন দিয়ে তাকে অধিকার করতে পারব? এ আশঙ্কার দোলাচলে আমি দুলতে থাকি। আমি তার অপেক্ষায় থাকি। এই ভাবেই আমি প্রতিটা মূহুর্ত তার কথা ভাবি। তার এসএমএস এর জন্য আপেক্ষা করি। আজও আমি হিসেব কষে মিলাতে পারিনা যে সে আমাকে ভালোবাসে কিনা? তবে একথা সত্য সে আমাকে ভাল না বাসলেও আমি সারাজীবন তাকে ভালবেসে যাব। কারণ, সে আমার প্রথম পছন্দের মানবী। তার জন্য আমার ভালবাসা দরজা সব সময় খোলা রইল। সে যদি কখনো সে দরজা দিয়ে আমার মনের ঘরে প্রবেশ করে, তাহলে তাকে আমি খুব যতœ করেই ভালবাসব। এখন আমি খিড়কির ভেতর নির্নিমেষ চোখে তার জন্য অপেক্ষা করছি।
©somewhere in net ltd.