নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুরেশ কুমার দাশ

সুরেশ কুমার দাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজ্ঞানী জেএন ইসলামের শেষ যাত্রা রাষ্ট্রীয় কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই

১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪০







বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ বাসা থেকে বের হলাম। সেই বিখ্যাত মানুষটির নামাজে জানাজা চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ-মাঠে। অপেক্ষা করতে থাকি স্যারকে শেষবার দেখার জন্য। প্রায় ২০ মিনিট পর জমিতুল ফালাহ মসজিদ গেট দিয়ে একটা এম্বুলেন্স প্রবেশ করল। এ এম্বুলেন্সে যিনি শায়িত আছেন তিনিই বিখ্যাত মানুষটি। বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম।

মসজিদের দক্ষিণ পাশে এম্বুলেন্সটি রাখার পর তাকে শেষ দেখার পালা। তখনও ভীড় বাড়েনি। দ্রুত কয়েকবার তাকিয়ে দেখলাম এম্বুলেন্সের আয়না দিয়ে। তার সদা হাস্যময় মুখটি দেখার জন্য তর সইছিল না। যেন স্বর্গের শিশুর মত অমলিন মুখটি। ঠিক যেন ঘুমিয়ে আছেন তখনও। হয়তো একটু পরে ঘুম থেকে জাগলে সেই হাসি মাখা মুখটিই দেখব।

এসব লিখছি বটে যখন ওনাকে দেখছিলাম তখন আমার বুকের ভেতর কান্না পাক দিয়ে উঠছে বার বার। ভেতরে তুমুল এক শূন্যতা। তবু পরক্ষণেই চেনা -জানাদের ভিড়ে মিলিয়ে যেতে থাকি। শুরু হয় শেষ আনুষ্ঠানিকতা।

শুরুতে জানাজায় জনা বিশেক মানুষ দেখা গেলেও ধীরে ধীরে মানুষ বাড়তে থাকে। একে একে এলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র , শিল্পপতি খলিলুর রহমান, সুফী মিজানুর রহমান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ। সব মিলে ৫ শতাধিক মানুষ তার নামাজে জানাজায় শরিক হন।

জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব জালালুদ্দিন আল কাদেরীর নামাজ পরিচালনা করেন। তারপরের ঠিকানা নগরীর দামপাড়ার গরিবউল্লাহ শাহ’র মাজার সংলগ্ন কবরস্থান। যেখানে তিনি ঘুমিয়ে থাকবেন চির প্রশান্তিতে। যেখানে হয়ত কখনও আর তার প্রিয় মাতৃভূমির কথা চিন্তা করে মন ভারাক্রান্ত করবেন না।

তার মন ভারাক্রান্ত না হলেও আমাদের হবে। কারণ শেষ যাত্রার দৃশ্যটুকু ভাবতে ভাবতে আমার মধ্যে বার বার নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। এটুকুন কি পাওনা ছিল তার। শুধু এটুকুন। একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্যই কি সব রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। গার্ড অব অনার। অথবা মুক্তিযোদ্ধারা যখন থাকবেন না কারা পাবেন এ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। এরপরও জামাল নজরুল ইসলাম স্যার তো বিদেশে থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য সে দেশের সরকারকে আবেদন করেছিলেন। যুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগঠিত করেছিলেন। তারপরও কেন তিনি মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পাবেননা। রাষ্ট্রকে কেন সবকিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে হয়। কে মুক্তিযোদ্ধা। কে নন। কে দেশপ্রেমিক। কে দেশদ্রোহী। রাষ্ট্রের কি কিছুই চেয়ে-চিনে নেয়ার যোগ্যতা নেই।

বর্তমান সরকারের লোকেরা বলেন, তারা গুণীর কদর করেন। গুণীকে সম্মান দেন। কিন্তু বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম যদি গুণী না হন তা হলে কারা গুণী। কি ধরনের গুণ থাকলে তাদের কাছে গুণী বলে প্রতিভাত হন।

এদেশে আমরা হাজার হাজার বিখ্যাত চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, প্রফেসর, সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের নাম শুনেছি। তাদের বিখ্যাত বলে মর্যাদা দিয়েছি। দিচ্ছি। কিন্তু এদেশে যখন বিজ্ঞানী বলে কোন বিখ্যাত মানুষকে পায়নি অথবা আমাদের অনেকের কাছে অভূতপূর্ব ছিল তখন জামাল নজরুল ইসলামের মত একজন বিজ্ঞানীর নাম আমরা শুনেছি। যখন আমরা ভাবলাম আমাদের দেশেও বিজ্ঞানী আছে। শুধু লন্ডন আমেরিকা বা ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে নয়। তাকে পেয়ে একজন বিজ্ঞানীকে দেখার বিস্ময়বোধ আমাদের কেটে গেছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে সেই বিস্ময় জাগানিয়া মানুষটির শেষ যাত্রায় রাষ্ট্র কোন ভূমিকা রাখল না কেন? আর তার আবিস্কার-উদ্ভাবন ও সৃষ্টির স্বীকৃতি পাওয়ার দায়টুকু কি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পালন করবে কোন ধরনের অজ্ঞতা বা উদাসীনতার পরিচয় না দিয়ে।







মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

হুদাই আল-খুচাই বলেছেন: দুঃখ হল তার মত একজন বিজ্ঞানী চলে যাওয়ার পর আমরা জানতে পারলাম আমাদের মাঝে এমন একজন রত্ন ছিলেন।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০২

জাহাজ ব্যাপারী বলেছেন: দেশ একজন মহান বিজ্ঞানীকে হারালো যার স্থান পূরণ হবার নয়। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসীব করুন।
উনি ছিলেন প্রচারবিমুখ নিরলস বিজ্ঞানসাধক। উনি তো আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না তাই কূপমণ্ডূক রাষ্ট্রযন্ত্র তাঁর অন্তিম সম্মানটুকু জানাতে কার্পণ্য করল।

যে দেশে জ্ঞানীর কদর নেই সে দেশে জ্ঞানী জন্মাতে পারে না।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৫

ভাবুক আমি বলেছেন: "দুঃখ হল তার মত একজন বিজ্ঞানী চলে যাওয়ার পর আমরা জানতে পারলাম আমাদের মাঝে এমন একজন রত্ন ছিলেন।". সহমত

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:২৮

কোডব্লকার বলেছেন: আমরা শুধু সম্মান দেই চোর বাটপারদের (মন থেকে না, ভয়ে), মহান মানুষদের কখনও সম্মান দিয়েছি বলে মনে পরেনা।
এটা আমাদেরই লজ্জা।

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:০৫

এম.এস. রানা বলেছেন: স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। দোয়া করছি স্যারের জান্নাত নসিব হোক।
এটাই আমাদের দেশের খালেদা হাসিনার রাজনীতি। ওদের পা না চাটেনি জামাল নজরুল ইসলাম স্যার তাই ওনার মত বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী চলে যাবার পরেও রাষ্ট্রীয় কোন সম্মান পায় না। স্যারের অভাব পুরন হবার মত না। স্যারের মত নিরহংকার আর সাধারন মনের মানুষ যে এত বড় বিজ্ঞানী তা কাছে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। স্যারের লেখা বই আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না, পড়ানো হয় কেমব্রিজে , অক্সফোর্ডে।

আমরা গুণীজনের সম্মান করতে জানিনা, জানি পা চাটা রাজনৈতিক কুকুর বেড়ালের সম্মান করতে। কুকুর বিড়ালগুলোর কোন কালেই বোধদয় হবে না।

আল্লাহ স্যারকে বেহেস্ত নসিব করুক এই দোয়া করছি।

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৫৬

সাদা রং- বলেছেন: আমরা দাত থাকতে দাতের মর্যদা বুঝি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.