অবাধ্য ছেলে

১০ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৯

আমি জানি আমাকে নিয়ে ভাবতে হয় তোমায় আজো !
টিভি পর্দায় সহিংসতার কোন খবর দেখতে পেলেই,
আজো তোমার বুকের ভেতর এক অজানা ভয় আতঙ্ক ছড়ায় !
তাই তো তুমি আঁতকে উঠো আমাকে মোবাইল করে বল,
বাবা ভার্সিটি আর রুমের বাইরে কোথাও যাসনে কিন্তু !
নরপশুদের তাণ্ডবে আজো এতো এতো প্রাণ গেলো ঝরে,
তুই কিন্তু বাবা ক্লাস শেষে সোজা রুমে আসবি ফিরে ।

‘মা’ আমি জানি তুমি বুঝতে পারো আমি তোমার বাধ্যগত নয়,
তবুও বারবার ফোন করে তুমি নিশ্চিত হও শুধু-
তোমার বুকের মানিক অক্ষত এবং সুস্থ আছে কি না ।
ধ্বসে পরা ভবনের ভেতরে বা আশপাশে আমি ছিলাম কিনা,
আগুন লাগা কারখানার ভেতরে বা আশপাশে আমি ছিলাম কিনা ।
কিংবা প্রকাশ্য দিবালোকে ভয়াবহ ব্যাংক ডাকাতির সময় আমি কোথায় ছিলাম ?

কোন দুর্ঘটনায়, সহিংসতায় তোমার শান্তিতে একটুও ঘুম হয় না জানি ।
দেশে যখন-যাই ঘটুক তোমার ছেলে ভালো আছে কিনা-
এই একটি জিঘাংসা তোমায় ক্ষতবিক্ষত করে আজো !

এখনো তুমি খেতে বসে ভাবো- এ দিকে আমি খেলাম কিনা,
পাশের বাড়ির কোন মামী-চাচী যখন তার ছেলেকে আদর করে খাইয়ে দেয়,
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় আয়াতুলকুর্সি পড়ে ছেলের বুকে যখন ফু দেয়,
বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে এসে ছেলেটি যখন তার মাকে ‘মা’ বলে ডাক দেয়,
সে মা যখন দৌড়ে এসে পরম স্নেহে বাঁধভাঙ্গা আবেগে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নেয়,
তখন যে তুমি এক অব্যাক্ত আবেগে আমায় ভেবে চোখের পানি মুছো আঁচলে ।
সেটা আমি অনুভব করতে পারি ‘মা’ !

আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে কখনো-কখনো আমার পথ পানে চেয়ে থাকা,
তোমার সেই চোখ দুটি, যে চোখের প্রতিটি স্বপ্ন শুধুই আমায় ঘিরে !
আমি বুঝতে পারি,
যে রাতে আমাকে নিয়ে কোন দুঃস্বপ্ন দেখো সে রাতে আর ঘুম হয় না তোমার,
তবু আমার ঘুম ভাঙবে বলে কান্নায় কান্নায় রাত কর পার,
আর ভোর না হতেই মোবাইলে জানতে চাও খবর কি আমার !
আমি বুঝতে পারি,
মাসের খরচা দ্রুত পেতে আমি যদি মিথ্যাও বলি- আমার খাবার নেই মা,
তবুও সত্যিই আমার খরচা না পাঠিয়ে এক লোকমা দানাও মুখে দাও না,
বাবার কাছে তোমার কোন চাওয়া নেই- যা আছে তার সবই আমার বাইনা !
আমি জানি,
আমার জন্য তোমার যে কত অশ্রু ঝরে,
বুকটা তোমার এক শুন্যতা যে গ্রাস করে,
বড্ড একলা লাগে জানি তখনো তোমার,
যখন আমায় দেখতে পাওনা সবার ভীরে !
আমি জানি,
আমার চরম অবাধ্যতায় কখনো কখনো বোকা হয়ে যাও তুমি,
তবুও তোমার ঐ বুকই আমার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় ভূমি,
পৃথিবীর যে কোন মুল্যের চেয়ে আমার আবদার সবচেয়ে দামি,
বুঝি না কি সুকঠিন ধৈর্যে গড়েছে তোমায়- তোমার অন্তর্যামী !

আমাকে তুমি ক্ষমা কর ‘মা’-
তোমার অবাধ্যতা আমার জন্মগত অধিকার,
তোমার অন্ধবিশ্বাসে নেই কো বিশ্বাস আমার !

আমার কাছে এক এবং অদ্বিতীয় কেবল তুমি,
তোমাকে আমার স্রষ্টা হিসেবে জানি আমি !
তোমার বুকেই আমার স্বর্গ,
তোমার বুক বঞ্চিত পৃথিবী আমার নরক !

০ টি +০/-০