![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদরের সন্তানের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন বাবা-মা! ভড়কে যাওয়ার মতো শোনালেও এরকম পরিণতিই ঘটছে পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর-স্বপ্নার ভাগ্যে। সোমবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে তেমনটাই বলেছেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান। বাবা-মাকে বিভৎসভাবে হত্যার দৃশ্যগুলো বর্ণনা করেছেন তিনি|
ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান জন্মেছেন সোনার চামচ মুখে নিয়েই। ছোট্টবেলা থেকেই বাবা-মা দুজনই তার সব আবদার পূরণ করেছেন। অনুসন্ধান করে জানা যায়, বেপরোয়া জীবন-যাপন আর ইয়াবার নেশায় মত্ত হয়ে ও-লেভেল পড়ুয়া ১৭ বছরের ঐশীই শেষ পর্যন্ত বনে যান বাবা-মায়ের হন্তারক।
শেষ দুই মাস ঐশী মাঝেমাঝে বাইরে সময় কাটাতেন। নানা কৌশলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির ফাঁকে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন ইয়াবার রঙিন জগতে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন বাবা-মা। যদিও তাদের এই বোধোদয়ে অনেক দেরী হয়ে গেছে। মেয়ের উজ্জ্বল ভবিৎষতের কথা চিন্তা করে একটু কঠোর হলেন পুলিশ দম্পতি। জব্দ করলেন হাতের মোবাইলটি, নেট কানেকশন, ফেসবুক-স্কাইপি সবকিছুতেই বাড়তি নজরদারিতে।তার খেসারতই দিতে হল মাহফুজ রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে। মেয়ের কাজে 'বাঁধা' হয়ে মায়ের ভাগ্যে জুটলো ১১টি কোপ আর বাবার ভাগ্যে ৩টি।
হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা :
ঐশীর বর্ণনায় বুধবার, রাত ২টায় হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী চেতনানাশক ও ছুরি কেনা ছিল আগেই। রাতে কফির সাথে চেতনানাশক মিশিয় রাখে ঐশী। রাত ২টার দিকে গভীর ঘুমে যখন বাবা-মা আচ্ছন্ন, তখন বাবা-মায়ের রুমে হত্যার উদ্দেশ্যে যায় ঐশী। তখনকি একবারও ঐশীর স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠেনি মায়ের হাসিভরা মুখখানি, কিংবা জন্মদিনে বাজার থেকে কিনে আনা বাবার সবচেয়ে দামি উপহারটির কথা। মাদকাচ্ছন্ন ঐশী প্রথমে ছুরি চালায় বাবার গলায়। ছুরির 'কৌশলি' আঘাতে শ্বাসনালি কেটে যায় বাবার। এরপর কোনো ছুরিকাঘাত করেনি ঐশী।
জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী জানায়, মায়ের ওপর তার প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল। তাই মাকে হত্যার সময় আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠে ঐশী। মা স্বপ্নার শরীরে উপর্যুপরি ১১টি ছুরিকাঘাত করে। গলায়, ডান পাঁজরে, বুকে, পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত করে স্নেহময়ী মাকে।
বাবা-মাকে খুনের পরও মাথা ঠান্ডা রাখে ১৭ বছর বয়সী ঐশী। বুদ্ধি করে ধারালো ছুরিটি নিজেই পরিষ্কার করে রেখে দেন ড্রয়ারে।
'তুই আমার মেয়ে না !' :
বাবা মাহফুজুর রহমান রাত ১২টার দিকে বাসায় এসে দেখেন তার স্ত্রী ঘুমিয়ে আছেন। পরে তিনি আর না ডেকে নিজেই খেয়ে নেন। এরপর ঐশীর দেয়া নেশা জাতীয় ট্যাবলেট মেশানো কফি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন বাবা মাহফুজ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রাত ২টার দিকে ঐশী প্রথমে তার বাবাকে গলা ও পেটের মাঝামাঝি জায়গাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এসময় বাবা কিছুক্ষণ গোঙান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঐশী যখন তার মা স্বপ্না রহমানকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করছিল তখন অচেনতন অবস্থা থেকে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে ওঠেন মা স্বপ্না। ঘুম ভেঙে মা দেখতে পান মেয়ের হাতে রক্তাক্ত ছুরি! ‘তুই আমার মেয়ে না' বলতেই ঐশী আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মায়ের প্রতি। ১১টি কোপের পর আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন স্বপ্না রহমান।
কাজের মেয়েকে বসে আনা :
খুনের সময় জেগে যায় কাজের মেয়ে সুমি। তদন্ত সূত্র জানায়, খুনের ব্যাপরটি সর্বপ্রথম বুঝতে পারে সুমি। এসময় চতুরতার সাথে সুমিকে কসম কাটিয়ে নেয় ঐশী। ঐশী লোভ দেখিয়ে সুমিকে বলে তোকে অনেক টাকা পয়সা দেব। ‘কিন্তু তুই এ কথা কোথাও বলবি না। তোর মায়ের কসম বল।' ঐশীর মন ভুলানো কথা সুমি কসম কাটলেও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে সব তথ্যই বলে দেয়।
ভাই ওহিকে মিথ্যা বলেছিলেন ঐশী :
মাকে খুন করার সময় পাশেই ঘুমিয়ে ছিল ওহি। সুমির সহায়তায় বাবার লাশ টেনে নিজ রুমে নেয়ার পর ওহি ঘুম থেকে জেগে ওঠে। মায়ের শরীর রক্তাক্ত দেখে কাঁদতে থাকে ওহি। এ সময় ঐশী বলে, আব্বু আম্মুকে মেরেছে। তারপর অন্যরুমে নিয়ে যাওয়া হয় ওহিকে। সকালেও ওহি মিথ্যা বলে বাসা থেকে সরিয়ে নেয় ঐশী।
দুটি লাগেজ নিয়ে সকালে পালিয়ে যায় ঐশী। লাগেজে ছিল বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত অর্থের স্বর্ণালঙ্কার। পরে ঐশীর বন্ধুরা এই স্বর্ণালঙ্কারের প্রতি লোভ দিলে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারেনি। পরে কথিত বন্ধু পারভেজের পরামর্শে ধরা দেয় ঐশী।
ঐশীকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল দুই বন্ধুর :
গোয়েন্দারা জানান, ঐশীকে মেরে ফেলে তার স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল পারভেজ ও রনির। গোয়েন্দার হাতে খবর ছিল ঐশীর ব্যাগে কী পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার বা টাকা আছে। এ গোয়েন্দাদের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত অপর দুই বন্ধুর পরিচয় জানায়নি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।
কথিত বন্ধু 'রনি' ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ডিজে ড্যান্সার :
রনির হাত ধরে ঐশী রহমান অনেক ক্লাব, ডিজে ড্যান্সে অংশ নেয়। শনিবার তাকে শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রনি মূলত ঐশীর ড্যান্স পার্টনার।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর চামেলিবাগে সিআইডি কার্যালয় লাগোয়া ২ চামেলিবাগের চামেলি ম্যানশনের ৬ তলার ৫/বি ফ্ল্যাট থেকে এসবির ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর পলাতক ছিলেন তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী। শনিবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে ঐশী। গোয়েন্দা পুলিশের টানা অভিযানে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৬ জনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ধারণা মিলেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তিনজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপর হয়তোবা বেরিয়ে আসবে আরো নতুন কোন তথ্য।
সূত্র এখানে
২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:২৮
নিষ্কর্মা বলেছেন: দিনের আলো র মত পরিস্কার। একজন খুনি শাহবাগ থেকে ধরা পড়েছে, সুতরাং এই ঘটনায় সব দোষ শাহবগের। ঐশীও শাহবাগ থেকে সব জেনেছে, শিখেছে। না হলে যে মেয়ে এক কালে স্কার্ফ পরতো, সে মানুষ খুনের মত কাজ করতেই পারে না।
৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:১৮
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: মূল ঘটনার পেছনের ঘটনাগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তারপরেও আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা, সে খুনি। কারণ যাইহোক, কাউকে হত্যা করার মতো ধৃষ্ঠতা কারোরই দেখানো উচিত নয় এবং প্রচলিত আইন সেটাকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনা।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের স্বসম্মানে বেঁচে থাকার অধিকারকে শ্রদ্ধা জানাতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। খুনি তা সে সন্তানই হোক আর বাবা, কঠোর শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: ঐশী'র ১২ পৃষ্ঠার সুইসাইডাল নোট পড়ে আমার যা মনে হলো- ঐশী কে সবাই খারাপ বলছেন। কিন্তু আমার কাছে ঐশী কে খারাপ মনে হচ্ছে না। ঐশী একজন ধর্মভীরু মেয়ে। আল্লাহর উপর তার অনেক আস্থা ছিল। ঐশী'র বাবা মার, মেয়ের প্রতি ছিল এক আকাশ উদাসীনতা এবং অবহেলা। ছেলে-মেয়েদের যে পরিমান আদর ভালোবাসা প্রয়োজন বাবা-মার কাছ তা ঐশী জন্মের পর কখনও পায়নি। এই জন্য তার অনেক বন্ধুর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে দুই একজন বন্ধু ছিল খারাপ। তাদের কাছ থেকেই ইয়াবা খাওয়া শিখে। ইয়াবা খাওয়া ছাড়া ঐশী'র বেশ কিছু ভালো দিক আছে। সে প্রচুর পড়া শোনা করতো। সত্যিকার অর্থে ঐশী একটা সহজ সরল মেয়ে। তবে হয়তো প্রেম ভালোবাসা করে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।ঐশী একটা দুঃখী মেয়ে- ছোটবেলা থেকেই তার কোনো স্বপ্ন সত্যি হয়নি। দিনের পর দিন সে সুন্দর সময়ের জন্য অপেক্ষা করেছে। নিজের দুঃখ-কষ্টের কথা কাউকে কখনও বলতে পারেনি।
ঐশী অস্থির এবং চঞ্চল একটি মেয়ে, কিছুটা জিদ্দী। সে চেয়েছিল এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বাবা মা এবং বন্ধুদের নিয়ে সুন্দর একটি জীবন।ঐশী অনেক অভিমানী- তীব্র জ্বর নিয়ে একা একা কষ্ট করেছে কিন্তু সে বাবা মাকে ডাকেনি, ঐশী চেয়েছিল বাবা-মা নিজ থেকে এসেই তার কপালে হাত রাখুক।
আমার ভাবতে ভালো লাগে- ঐশী তার বাবা মায়ের খুনী না। অন্য কোনো ঘটনা আছে। সেই ঘটনা ঐশী ছাড়া অন্য কেউ জানে না।