![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের সম্পর্কে কিছু বলা বরাবরের মতই কঠিন কাজ । কেননা আমি তো আমার দোষ গুনের বিচার ভালভাবে করতে পারব না । আমি যদি নিজ সম্পর্কে বলতে চাই তাহলে হয়ত আমার দোষ গুলো এড়িয়ে এবং গুন গুলো বাড়িয়ে বলতে পারি,আরে এটাই চরম সত্য ও বাস্তবতা । যাহোক, তবুও যদি এক কথায় নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে যাই তাহলে শতভাগ সত্য একটা কথাই বলব যে, আমি কোন ধোঁয়া তুলসী পাতা নই , আর দশজনের মত দোষ-ত্রুটি, গুন সবই আমার মাঝে আছে। আমি খুবই বন্ধু প্রিয়, বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে আমার খুবই ভাল লাগে ।আমার শিক্ষাজীবনে স্কুল,কলেজ ও ইউনিভার্সিটির অনেক বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে,আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের অনেক সুখ-দুঃখের সৃতিতে জড়িয়ে আছে ওরা।তোদেরকে কখনই ভুলতে পারব না । নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালবাসি,অন্যকে যে কোন তথ্য জানাতে বা পড়াতে ভালবাসি ও এতে আমি আনন্দ অনুভব করি । ভ্রমণ আমার খুব প্রিয় , আমি নতুন কোন জানতে কিছু বা নতুন কোন স্থান ঘুরে দেখতে এবং এই গুলো সম্পর্কে অন্যকে জানাতে ও দেখাতে ছবি ও ভিডিও সহ আর্টিক্যাল লিখতে ভালবাসি ।
১৯৮৪ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাজকে আরও বেগবান করার লক্ষে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা বিভক্ত হয়ে পাঁচটি জেলার সৃষ্টি হয়। যার একটি হল আমাদের কিশোরগঞ্জ । কিশোরগঞ্জ,করিমগঞ্জ,ভৈরব,নিকলী,মিঠামইন,ইটনা,অষ্টগ্রাম,তাড়াইল,কটিয়াদি,কুলিয়াচর,বাজিতপুর, পাকুন্দিয়া,হুসেনপুর এই ১৩ টি উপজেলার নিয়ে গঠিত আমাদের কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ আছে । তার মধ্যে একটি মতবাদ হল এই, কলকাতা থেকে প্রকাশিত জ্ঞানের সন্ধানে নামক একটি বইয়ে ( ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে) কিশোরগঞ্জ নামের উৎপত্তি এবং নামকরণ বিষয়ে প্রথম আলোচনা হয়। এতে নন্দ কিশোরের নামে কিশোরগঞ্জের নামকরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর কিশোরগঞ্জ ’৭৭ প্রদর্শনী স্মরণিকায় বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহাম্মদ সাইদুরের লেখায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ‘কিশোরগঞ্জের ইতিহাস’ গ্রন্থে মোহাম্মদ সাইদুর ও মোহাম্মদ আলী খান কিশোরগঞ্জের নামাকরণ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেন। তাঁদের বর্ণনা এরূপ, ‘…নামকরণের উৎস সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে বিজ্ঞজনদের ধারণা ও জনশ্রুতি থেকে অনুমান করা যায় যে, বর্তমান ধ্বংশপ্রাপ্ত বত্রিশ প্রামাণিক পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ষষ্ঠ ছেলে এবং প্রামাণিকদের কীর্তি একুশ রত্নের স্রষ্টা নন্দকিশোর এর ‘কিশোর’ ও তাঁরই প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় হাট বা গঞ্জের ‘গঞ্জ’ যোগ হয়ে কিশোরগঞ্জ নামকরণ হয়েছে’।
ঊনিবিংশ শতাব্দীর দিকে বর্তমান কিশোরগঞ্জ শহরের আরো একটি স্থানের নামের কথা জানা যায়, তা হচ্ছে ‘মেলাবাজার’। বর্তমান বত্রিশ এলাকার প্রামাণিকের বসতবাড়ির সম্মুখের পুকুর পাড়ের সংলগ্ন এলাকাটি মেলাবাজার নামে খ্যাত। ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দের পর হয়বতনগর এবং জঙ্গলবাড়ির দেওয়ানদের নিয়ন্ত্রণাধীন পরগণাগুলোকে নবাব সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে বন্দোবস্ত করার কারণে বেশ কিছু সংখ্যক নতুন জমিদার শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল। তাদের মধ্যে বত্রিশের প্রামাণিকরা অন্যতম। শ্রী কেদারনাথ মজুমদার প্রামাণিকের আবাসস্থল এলাকাটিকে ‘কাটাখালি’ বলে উল্লেখ করেছেন’। ‘বিষয়টি আলোচনার যোগ্য যে, কোনো একটি প্রভাবশালী পরিবার যখন কোথাও বসতি স্থাপন করতেন তখন ওই প্রভাবশালী পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা অথবা পূর্বপুরুষের নামে স্থানটির নামকরণ হতো। যেমন হয়বত দাদ খানের নামে হয়বতনগর, নান্নু খানের নামে নানশ্রী, করিম খানের নামে করিমগঞ্জ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
নামকরণের এই বিষয়টি নির্দেশ করে যে, কিশোরগঞ্জের নাম “নন্দ কিশোর” থেকেই হয়েছে ।
কিশোরগঞ্জের কিছু উল্লেখযোগ্য স্থানঃ
১। এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ হিসেবে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ সর্বজন বিদিত। এ ঈদগাহে ঈদের জামায়েতে প্রায় দু’লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীগণ পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন । এটি কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বপ্রান্তে প্রায় ৬.৬১ একর জমিতে অবস্থিত।
২।কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিঃ মিঃ পূর্বে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ী গ্রামে অবস্থিত বাংলার বার ভূঁইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূঁইয়া খ্যাত ঈশা খাঁ’র “ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ী” । হাজরাদী পরগনা নামে খ্যাত জঙ্গলবাড়ীতে ঈশা খাঁ তাঁর দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন। মধ্যযুগীয় অনুপম মুসলিম স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ, দরবার গৃহ এবং লক্ষণ হাজরা নির্মিত পরিখা বেস্টিত দূর্গের ধ্বংসাবশেষ উজ্জ্বল অতীতের স্মৃতি বহন করে।
৩। ঐতিহাসিক এগারসিন্ধুর দূর্গ, মোগল সেনাপতি মানসিংহের সাথে ১৫৯৫ খ্রীষ্টাব্দে সংঘটিত ঈশা-খাঁর ঐতিহাসিক যুদ্ধের স্মৃতিবাহী যুদ্ধক্ষেত্র। বর্তমানে উক্ত দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও নিরগীন শাহ্, শাহ্ গরীবুল্লাহর সমাধি, শাহ্ মাহমুদের মসজিদ ভিটা ও বালাখানা অবস্থিত যা আজও কালের সাক্ষ্য বহন করে। এই এলাকাটি ষোড়শ শতাব্দীতে প্রসিদ্ধ নৌ-বন্দর হিসেবে খ্যাত ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁকে অবস্থিত এই নৌ-বন্দরে দেশ-দেশান্তর হতে বড় বড় বাণিজ্য তরী নিয়মিত নোঙর করত। আমির-ওমরাহ আর বণিকদের প্রসাদোপম আবাস ভবনের নয়নভিরাম সৌন্দর্যে এগারসিন্দুর একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠে। এটি শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নে অবস্থিত । আমার কাছে কোন ছবি না থাকায় দিতে পারিনি । ৪। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি হিসেবে খ্যাত কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির, ষোড়শ শতকের মনসা মঙ্গলের বিখ্যাত কবি দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা চন্দ্রাবতীর বহু কাহিনী সমৃদ্ধ এ মন্দিরটি খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত। এটি শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে করিমগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ।
৫।মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে প্রতিষ্ঠিত মোগল স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন সমবলিত “দিল্লীর আখড়া”। রামকৃষ্ণ গোঁসাইয়ের মতাবলমবী বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের এই আখড়াটিতে স্থাপিত প্রাচীন দেয়াল ও অট্রালিকা আজও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
৬। কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া নামক এলাকায় অবস্থিত আধূনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি নানা ধরণের ঐতিহাসিক নিদর্শন যুগ যুগ ধরে বহন করে চলছে ।
৭। ভৈরব বাজারের দক্ষিণপাশে অবস্থিত ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগকে সংযোগকারী “সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু”। দৃষ্টিকাড়া নান্দনিক সৌন্দর্য এবং আধুনিক স্থাপত্যকলার কারণে সেতুটি এ জেলার একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯.৬০ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতীক। মূল সেতুর উভয় দিকে সংযোগ সড়ক, অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড টোল পস্নাজা, সেতুর নীচে উভয় দিকে সংযোগ সড়ক, সেতু সংলগ্ন সুরম্য বাংলোগুলো পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই সেতুর উপর দাঁড়িয়ে প্রমত্তা মেঘনার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এই সেতুর পাশেই রয়েছে ১৯৩৭ সালে নির্মিত ঐতিহাসিক ৬ষ্ঠ জর্জ রেলসেতু ।
৮।জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার হাওড় অঞ্চলের দৃশ্য বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে হাওড়ের দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর। হাওড় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ বৈচিত্রের এক অপূর্ব লীলাভূমি দেখে সবাই আকৃষ্ট হয়।
৯। বাজিতপুর উপজেলায় অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রথম বেসরকারী মেডিকেল কলেজ “জহরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ”। বাংলাদেশের ধনাঢ্য শিল্পপতি, দানবীর ও প্রখ্যাত সমাজসেবক মরহুম জহুররুল ইসলাম তাঁর জন্মস্থান ভাগলপুর গ্রামে ১৯৮৯ সালে ৩৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আধুনিক হাসপাতাল, নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসহ ১৯৯২ সালে গড়ে তোলেন।
©somewhere in net ltd.