![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেঘ স্বপ্ন ( পর্ব ২ )
আমার মোবাইলে ফোন আসে মাত্র ২ জায়গা থেকে মা আর মাহি । আজ ছুটির দিন এই সক্কাল সক্কাল ঘুমের ভেতরে ভাইব্রেশান এর কারণ মোবাইল অপেরেটরদের ফোন অফার কিংবা মাহি । প্রথম কারণকে উপেক্ষা করে কারণ হিসাবে মাহির ফোন এলো। যারা এতক্ষণ মাহিকে ছেলে ভেবে ভুল করেছেন তাদের জন্য মাহি আমার এখনকার জীবনের এক মাত্র বান্ধুবী। এক মাত্র ডায়েরী যাকে সব কিছু খুলে বলা যায় যাকে সব কিছু বলে নিজে হালকা হওয়া যায়, যার কাধে মাথা রেখে একটু শান্তি পাওয়া যায়। যার সমস্থ পাগলামি আমি একভাবে মেনে নিতে পারি যার সব আবদার আমি একবারেই পূরণ করতে পারি ।
- এত সকালে কি ?
- এত সকাল কই ৯ টা বাজে ।
- ছুটির দিনে এটা আমার কাছে এত সকাল।
- মানুষ তো ফোন ধরে প্রথমে ভদ্রতা করে হ্যালো বলে না কি ?
- সাত সকালের ফোন এর কারণ বল , এর পরে চিন্তা করব বলা যায় কিনা
- মুন ,প্লিজ আজ একটু ঘুরতে বের হই চল।
- ঢাকা শহরে কই বের হবি তুই ?
- জায়গা বের হবে তুই চিন্তা করিস না ।আমি বের করে নিব।
- আজ না অন্যদিন , আজ ইচ্ছা নাই
- আজ আমার ইচ্ছা দেখ, আজ কিচ্ছু ভাল্লাগেনা দিন
- ঠিক আছে বাসায় এসে আমাকে নিয়ে যা ।
আমি না হয় ভদ্রতা করে হ্যালো বলিনি কিন্তু মাহি আনন্দে বাই টাটা কিছু না বলেই ফোন কেটে দিল । আমিও পারিনা শক্ত ভাবে না করতে এই মেয়েটাকে। পরিচয় এই ভার্সিটি তে উঠে ৩-৪ বছরের । কিন্তু মনে হয় কত দিনের আপন ।
মাহি আমার সামনে গম্ভীর হয়ে বসে আছে যেন কত ইম্পরট্যান্ট একটা যায়গায় ঘুরেতে যাবার কথা বলেছে।
- নিজেকে কত বছর এর বাচ্চা ভাবিস ?
মাহিকে প্রশ্ন করলাম
- তুই যত নিজেকে ভাবিস ততই ।
- তুই চিড়িয়াখানায় গিয়ে কি করবি ?
- শিশু পার্ক তো বলিনি ,আর কোথাও তো বলা নেই যে চিড়িয়াখানায় কোন ভার্সিটি এর মেয়ে যেতে পারবে না
- সেটা তো বুঝলাম ।
- দেখ মুন , তুই রেস্তোরায় বসা থেকে বাইরে ঘুরতে পছন্দ করিস আর ঢাকা শহরে এ ছাড়া তো আছে রেস্তোরাই না? আর এটা বাদে বাকি জায়গা আমাদের ঘুরা।
মাহি এর সাথে আর কথা না বাড়ায় বের হলাম। মিরপুর ১ এর উদ্দেশে ।আমাদের জেনারেশন এর একটা বড় সমস্যা হল ভাল্লাগেনা। আমি নিজেও এই সমস্যা এর রুগি। কোন কাজ নেই ভাল্লাগেনা , অনেক কাজ সেটাও ভালো লাগে না। মাঝে মাঝেই যেন কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। যেন কিছুই নাই ।
পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরতে আমাদের ৩ ঘন্টা লাগল, আমরা কোন একটা যায়গাও বাদ দেই নাই। মাহি এত লাফালাফি করে দেখছিল সব যেন সেই শিশু একটা। আর আমি সেই শিশুকে দেখে শুনে রাখার জন্য এসেছি। মাহির এই হাসি খুশি চঞ্চলতার পিছনেই লুকিয়ে আছে কত বড় কষ্ট ।
আমার সাথে মাহির তখন কিছু দিনের বন্ধুত্ব। মাহির অনেক দিনের ভালোবাসা রাশেদ ভাইয়া গত ২ বছর আগে আজকের দিনে রাজশাহী থেকে ফেরার পথে রোড একসিডেন্ট এ মারা যায়। মাহি শেষ বারের মত মুখটাও দেখেনি । সেই বিকৃত মুখ সে দেখতেও চায়নি। এরপরে আমি দেখেছি একটা ভেঙ্গে পড়া মানুষকে নতুন করে উঠে দাড়াতে । এখনো রাস্তায় রাজশাহী গামী বাস দেখলে চোখ মুছতে ।
সকালের ফোনের পড়ে আমি অবাক হইনি শুধু অভিনয় করে গেছি । সেই দিন এর পর থেকে মাহি নিজের মুখে কিছুই বলেনা আমি বুঝেনেই ।
- আজকে বৃষ্টি হলে অনেক ভালো হত না বল মুন ?
মাহির কথায় আমি ভাবনা থেকে ফিরে আসি ।
- কেন ?
- বৃষ্টির পানির ভেতরে কাঁদলে সে কান্না বোঝা যায় না ।
- এখনো এত দিন পরএ কান্না লুকানোর চেষ্টা কেন মাহি ?
- কান্না লুকানোর চেষ্টা করিনা , এখনও কেন চোখের পানি শুকায় যায় না সেই জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করি ।
আমি কিছু বলিনা ।একটা হুহু করে কান্নারত মেয়ের মাথা আমার কাঁধে রাখি । আকাশের কাছে আমাদের অনেক আপন মানুষ চলে গেছে , জীবনকে তাদের ছাড়াই চালাতে হবে। আমাদের সব কিছুই চলবে আমাদের মত কষ্ট হালকা হয়ে আসে ,অনুভূতি হালকা হয়ে আসে কিন্তু শূন্যস্থান কোনদিন পূরণ হয় না।
বিকালবেলা একটা টিউশনি থাকে । টিউশনিতে থাকার সময়ই একটু বৃষ্টি ছিল । হেটে ফেরার পথে পায়ের ভেতরে ময়লা পানি লাগল । বরাবরি একটা আমার মেজাজ খারাপ হবার জন্য যথেষ্ট। বৃষ্টি আমার অনেক ভালো লাগে কিন্তু সেটা ঘরে বসে । তার শব্দ অনেক ভাল লাগে । এমন যদি হত বৃষ্টি হবে কিন্তু ময়লা পানি জমবে না । রাস্তায় হাঁটতে কষ্ট হবে না । পায়ে সুন্দর টলমল পানি লাগবে । আবার বৃষ্টি তে ভিজব কিন্তু কোন ঠান্ডা লাগবে না । আমার আবার সারা বছর ঠাণ্ডা লাগার রোগ । ছোটবেলা থেকেই এই সমস্যা । একটু গায়ে পানি লাগে তো ঠাণ্ডা সর্দি কাশি লাগবেই । এই জন্যই বৃষ্টি বাদলা এর সাথে আড়ি অনেক দিনের । নিজেকে সুস্থ রাখার জন্যও অনেক কিছুকে টাটা বাই বাই । এত কিছু ভাবতে ভাবতে বাসার ঠিক সামনে চলে আসলাম ।
আমি এই টিউশনিটা করি শখের বসে । মা এমনিতে করতে দিতে চায় না । মা এর স্কুলের এক ম্যাডাম এর জোরাজুরিতে করা । কয়েকদিন হল শুরু করলাম ।দোতালা এর বারান্দায় বুড়ো দাদু বসে আছে। মানুষটা করে অনেক দিন দেখতে যাই না। আসলে সময়ও হয় না।দাদু দেখে হা নাড়ালো।আগে দাদুকে পান পিষে দিতাম আর তার গল্প শুনতাম। মহিলা বুড়ি হলে কি হবে এত কিছু জানে যা অনেকেই জানে না ।
- কি দাদু আসো না যে ?
- দাদু মা একটু ব্যস্ত আছি, একটু ছুটি পড়লেই আসব ।
- ছাদেও তো আসোনা?
- দেখি আসব একদিন।
- তারাতারি এসো কিন্তু এই দাদু মা চলে যাবার আগে ।
- কই যাবে ? তোমার মেয়ের বাসায় ?
- না দাদু উপরের ডাক আসবে তখন যাব না ?
দাদু মায়ের কথাতে মনটা খারাপ হয়ে গেল ।
কেমন করে যেন বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল । আসলে এই পৃথিবীতে আমাদের এত হিংসা এত রাগা রাগি , মারামারি কিন্তু কয় দিনের জন্য ? একদিন তো সবাইকেই চলে যেতে হবে । দিন শেষে সবাই একা ।
(চলবে )
©somewhere in net ltd.