নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখি আমার দুটি পাখা হোক,

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো...

কামরুল হাসান ভুঞা

জ্বলে পুড়ে মরে ছাড়খার তবুও মাথা নোয়াবার নয়......

কামরুল হাসান ভুঞা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্লিজ এ মৃত্যু ঠেকান!

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:২৬

ভোরের কাগজ : শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৩

Click This Link

দিনে দিনে কতো শোক যে আমাদের বহন করতে হয়। কিন্তু শোক শেষে আর নিজেরা যেন নিজেদের শোকেই আজ অবগাহিত। দলবেঁধে মরে যাওয়ার একটা ব্যাপার থাকে হয়তো। একসঙ্গে কাজ করেছে বছরের পর বছর একসঙ্গে না মরলে কি হয়। শোকের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আজ শোকসন্তপ্ত পুরো জাতি। আর কতো লাশ আমাদের বহন করতে হবে। কতো লাশ পেলে গার্মেন্ট মালিকরা সচেতন হবে বলতে পারেন। গার্মেন্ট সেক্টরকে উদীয়মান খাত ধরে সরকারের রয়েছে বিশেষ ইনসেনটিভ। ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল সাভারে স্পেকট্রাম গার্মেন্ট ধসে মারা গেলো ৮০ জন। সেইবার হাইকোর্ট থেকে রুল জারি করা হলো কিন্তু গত ৮ বছরেও রুলের জবাব দেয়নি স্পেকট্রামের মালিক। সাভারের আশুলিয়ায় হামিম গ্রুপের কারখানায় আগুন লেগে মারা গেছে ২০০ জন। মহাখালীর ফিনিক্স ভবন ধসে মারা গেছে ৫০। এবার সাভারের রানা গার্মেন্ট ধসে মারা গেলো একশর বেশি। এই যে এতো এতো মৃত্যু তবুও গার্মেন্ট মালিকদের হুঁশ হচ্ছে না; কিন্তু কেন। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দায়িত্বটা কি তাও সন্দেহাতীতভাবে জানতে চায় জাতি। রানা প্লাজার মালিক সরকারদলীয় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ৯তলা পর্যন্ত করেছে এবং পরে তা পৌরসভা বৈধ্যতা দিয়েছে। আর বহুতল এ ভবনটি গড়ে উঠেছে ডোবার ওপর। এ ভবনটি করতেও সয়েল টেস্ট করতে হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিং গুণাবলীর মানদ- যাচাই-বাছাই করতে হয়েছে, তারও পর একজন স্থাপত্যবিদ দিয়ে প্রফেশনাল নকশা প্রস্তুত করে তারপর পৌরসভার কাছে দেয়া হয়েছে যাতে ব্যবসায়িক স্বার্থে পৌরসভা অনুমোদন দেয়। হয়েছেও তাই। সয়েল টেস্ট থেকে শুরু করে সব ফরমালিটিজ সম্পন্ন করে পৌরসভা থেকে মোটা অঙ্কের কমিশনের মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন নিয়েছে। পৌরসভার নিজস্ব প্রতিনিধিও আবেদনকৃত এলাকা সরজমিন পরিদর্শন করেই ঠিকই পরিকল্পনার সব আক্ষরিক ছাপার অক্ষর গিলে খেয়ে একটা নষ্ট পচা ডোবার ওপর অনুমোদনের সুপারিশ করেছে। তারপর পৌরসভার নাকের ডগায় ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে ৯তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তাতেও পৌরসভা ছিল চুপ, কার্যত কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি কিন্তু কেন?



উপরন্তু ঘটনা ঘটার (২৪ এপ্রিল ২০১৩) ঠিক আগের দিন ভবনের বিভিন্ন অংশে এমনকি কয়েকটি পিলারে ফাটল দেখা দেয়। এ অবস্থায় ভবন খালি না করে পরদিন গার্মেন্টের ৪টি ফ্লোরে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিককে কাজে যোগদানে বাধ্য করা হয়েছে। যদিও একই ভবনে ব্রাক ব্যাংকের একটি ব্রাঞ্চ ছিল। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনের ফাটলের দিনই তাদের পুরো অফিস খালি করে ফেলে। এবং পরদিন তারা কেউই ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নামে ভবনে প্রবেশ করেনি। কিন্তু গার্মেন্টের মালিকপক্ষ থেকে তার শ্রমিকদের জানানো হয়েছে যদি শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে তাহলে তারা চলতি মাসের বেতন পাবে না। শুধুমাত্র মাস শেষে বেতনের আশায় শ্রমিকগুলো কাজে যোগ দিয়েছিল। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রানা প্লাজার ফাটল পরিদর্শনে যায় দুর্ঘটনার ঘটার আগের দিন মঙ্গলবার। এবং দুর্যোগ সম্পর্কিত অনভিজ্ঞ এ কর্মকর্তা ফাটল দেখে মন্তব্য করেছিল চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, এ ফাটলগুলো আসলে প্লাস্টার ড্যাম হওয়ায় দেখা দিয়েছে। তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এবং ফাটল দেখে ইউএনও নিশ্চিত হয়েছে যে কিছুটা মেরামত করলেই হবে। এতে ভবন ধসে যাওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। তারপরই ভবন মালিক তার কর্মচারীদের অনেকটা জোর করে কাজে নিয়ে আসে। এ মৃত্যুর পেছনে ইউএনওর অপরিপক্ব মন্তব্যও যথেষ্ট দায়ী বলে মেনে নিতে হবে। এখন এর দায়ভার কে নেবে? সরকার না ভবন মালিক? এতো এতো লাশ স্বজনরা বহন করবে কেমনে?



রানা প্লাজার অনুমোদনের ইতিহাস : রানা প্লাজার নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয় ২০০৬ সালে। তৎকালীন শহর পরিকল্পনাবিদ ও একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইট ভিজিট করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। মেয়র এ কাজে শহর পরিকল্পনাবিদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে রানা প্লাজার প্ল্যান অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানায়। মেয়র যেদিন প্ল্যান পাসে অস্বীকৃতি জানায় এর পরের দিন রানা প্লাজার মালিক রানা ও তার বাবা মেয়র অফিসে আসে এবং পৌরসভার অনানুমোদনের ব্যাপারে জানতে চায়। সেই সময় শহর পরিকল্পনাবিদ রানা ও তার বাবাকে প্ল্যান ও কেন প্ল্যান পৌরসভা ও রাজউক থেকে পাস করাতে হবে তার বিশদ বর্ণনা দেয় বলে জানা গেছে। এরপরও তারা প্ল্যান অনুমোদনের জন্য পৌরসভায় আবারো প্ল্যান জমা দেয় এবং সেবারও তা পৌরসভা সরাসরি রিজেক্ট করে দেয়। পরবর্তীতে রানা তার রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে প্ল্যান পাসে মরিয়া হয়ে ওঠে কারণ প্ল্যান পাস ছাড়া গ্যাস সংযোগ পাওয়া অসম্ভব। পরবর্তী দুই বছরে পর পর চারবার বিল্ডিংকোড অনুসরণ করতে গিয়ে তারা তাদের প্রস্তাবিত প্ল্যান পরিবর্তন করে। তারা নিত্যনতুন প্ল্যান পৌরসভায় দাখিল করে আর পৌরসভা নাকচ করে দেয়। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রানা সাভারে যুবলীগের নেতৃত্বে লাইমলাইটে চলে আসে। এবং তার প্ল্যান অনুমোদনের জন্য রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে মেয়রকে নানামুখী চাপে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে মেয়র অনেকটা বাধ্য হয়ে প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টকে বিল্ডিংকোড অনুসরণে রানা প্লাজার ৬ তলার অনুমোদনের সুপারিশ করে। অতঃপর স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের দায়দায়িত্ব না রেখে রানা প্লাজার ৬তলার লে-আউট প্ল্যান মেয়র অনুমোদন করে (সূত্র : তৎকালীন কর্মরত পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ)।



এখন রানা প্লাজার ক্ষমতাধর রানার কি বিচার হবে? নাকি আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের সামনের কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে কারণ অতীতে গার্মেন্টের দুর্ঘটনাগুলোর এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষকে জেল-জরিমানার মুখোমুখি করা যায়নি। কারণ মালিক মালিকই আর কর্মচারীরা ছোট জাত। মরে গেলে তার স্বজনদের কাছে কিছু টাকাপয়সা ধরিয়ে দিলেই হবে। এখন বিজিএমইএও টাকার বান্ডেল প্রস্তুত করছে জনগণের ক্ষোভকে প্রশমিত করার জন্য। কিন্তু যে করেই হোক এ মৃত্যু ঠেকান। নইলে এ সেক্টর ধসে যাবে, কেউ রক্ষা করতে পারবে না।



হাসান কামরুল: কলাম লেখক।



যশমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.