নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি রবে নীরবে...

শাশ্বত শুভ্র

নিজেকে চেনার চেস্টা করছি....

শাশ্বত শুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদৃশ্য দেয়াল (কল্পনার জগৎ)

৩০ শে মে, ২০০৮ দুপুর ১:১৮





প্রতিদিনের মতই বিকেলে মাঠে বসে আছি সবাই, তুমুল আড্ডা চলছে রোজকার মত, আড্ডার কোনো বিষয় নেই, নিছক গল্প, কার ছাত্রী বেশী সুন্দরী, কার টিউশনীতে ৪ দিন গেলেও পুরো মাসের বেতন দিয়ে দেয়, কার স্টুডেন্ট কি কি পাগলামি করে, এসব খোশগল্প। কিন্তু এসব কিছুর মধ্যেও শুভ্র এর দিকে আমার বার বার চোখ পড়ছে , এমন নয় যে শুভ্র অনেক গল্প করে, হইচই করে , ওর উপস্থিতি সবসময়ই নিরব, কিন্তু আজকে শুভ্র কেনো যেন আনমনা হয়ে বসে আছে , আমাদের গল্প শুনছে, কিন্তু ওর মন এখানে নেই, যেনো অন্যকোথাও। চুপ চাপ বসে বসে ঘাসের ডগা ছিড়ছে।



শুভ্র এর পরিচিতি দেয়া হয়নি। শুভ্র আমার রুমমেট , গত ৪ বছর ধরে একই রুমে থাকি, সবসময়ের সাথী বলা চলে। ওর সাথে এতোদিন ধরে আছি যে, এখন আমরা মোটামুটি একে অপরের মন-মানসিকতা বুঝতে পারি। শুভ্রকে বলা চলে একজন আদর্শ ভদ্র ছেলে, পড়াশোনা আর বন্ধু ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে জড়িত ছিলো না কখনোই, বন্ধুদের সাথে হাসিঠাট্টা, খেলাধুলাতে ছিলো প্রচন্ড আগ্রহ, কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা কোনো কাজে ওকে পাওয়া যেতো, সেই ছেলের আজ এমন হাল।



আমার আগ্রহেই আমরা দুজন ভর্তি হলাম আবৃতিতে, আমার আগ্রহই ছিলো পুরোদমে, ওকে নিয়ে যাওয়া আমার নিঃসংগতা কাটানোর জন্য, কারণ শুভ্র কোনোকালেই কবিতা পড়া বা আবৃতি কোনো কিছুতেই উৎসাহি ছিলো না।



প্রথম দিন গেলাম, প্রথমেই সবার পরিচিতি পর্ব। কেনো যেনো আর সবাইকে ছেড়ে শুভ্রকেই আমাদের স্যার প্রশ্ন করলেন ওর প্রিয় কবিতা কোনটি?

শুভ্র থতমত খেয়ে গেলো, শেষে বললো, সোনার তরী।

তারপর অন্যদের পরিচিতি শেষ হলো, ধীরে ধীরে প্রথম দিনের ক্লাসও শেষ হল, আমরা বের হওয়ার সময় শুভ্র বারবার বলছিলো এই তার শেষ। এমন সময় স্যার আবার ডাক দিলেন, প্রত্যেকের একজন সাথী ঠিক করা হলো, একজন ছেলে একজন মেয়ে হিসেবে প্রতিটি জোড়া করা হলো। এরপর নিজেদের মধ্যে পরিচিতি পালা শেষ হলে হলে চলে এলাম।



পরের সপ্তাহে ক্লাসের শুরুর একটু আগেই গেলাম আমরা, যথারীতি শুভ্রকে জোড়াজুড়ি করে নিয়ে যেতে হলো।

শুভ্র এর সাথে যে মেয়েটি ছিলো তার নাম ছিলো চৈতী, কথার এক ফাঁকে সে শুভ্রকে বললো,



"আপনি আসলে কবিতা খুব একটা পছন্দ করেন না, তাই না?"



শুভ্র অনেক লজ্জা পেলেও চুপ করে ছিলো, চৈতী শুভ্রকে জীবনানন্দ দাসের একটা বই দিয়ে বলেছিলো ওই বইয়ের কবিতাগুলি যেনো পড়ে আসে। তারপর ওরা নিজেরা কথা বলতে লাগলো, আমি নিজেও ব্যস্ত হয়ে যাই।



দিন যেতে থাকে, আমার আগ্রহ হারাতে থাকে। কারন আমি বুঝতে পারি যে আবৃতিও আসলে আমার অনেক গুলো ঝোঁকের মধ্যে একটু। কিন্তু শুভ্র যেনো দিনে দিনে পালটে যেতে থাকে, ওর পড়ার টেবিলের এক অংশ দখল করে কবিতার বিভিন্ন বই, বিকেলের খেলার বদলে শুরু করে আবৃতি, আর ওর নিজের চেহারার মধ্যে কেমন ঊজ্জল্য চলে আসে, কেমন একটা অপার্থিব খুশি ঝলমল করতো সবসময় অর মুখে।



এক সময় আবৃতির ক্লাস শেষ হয়, কিন্তু যে ছেলে কখনও সন্ধায় পড়া ছাড়া কিছু বুঝতো না, তাকে দেখা যেতে লাগলো টিএসসি তে, শুভ্র নিজেও কবিতা লিখত অল্প অল্প, প্রতিদিন বিকেলে ফিরে এসে আমি যেনো প্রতিদিন এক নতুন শুভ্রকে দেখতে পেতাম।



একদিন আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি?

ও যা বললো তার সারমর্ম ছিলো এমন, চৈতীর সাথে তার বন্ধুত্ব, তারা অনেক ভাল বন্ধু, তাই সে প্রতিদিন তার সাথে দেখা করতে যায়, তাদের মধ্যে শুধুমাত্র বন্ধুত্বই এবং আর কিছুই নয়।



যা হোক, ফিরে আসি মাঠে ......

আড্ডা চলছিলো, এরমাঝে শুভ্র হঠাৎ বললো যে ও এখন বাইরে বেরুবে , আড্ডা থেকে উঠে গেলে আমি ওর কাছে গেলাম।



"শুভ্র, তুই কি যা করছিস , বুঝে করছিস? "

"কেন ও, আমি আবার কি করলাম?"

"আজকাল তোকে পাওয়া যায় না, কেমন যেনো হয়ে থাকিস সবসময়, কোনো কিছুতে মনোযোগ নেই, সামনে তো টার্ম ফাইনাল, পড়াশোনা তো করতে হবে, আর চৈতীর সাথে সম্পর্কটাও কেমন যেনো লাগছে আমার কাছে । সাবধানে থাকিস । "

" আরে না, তুই যা মনে করছিস তা নয়, আর যাই হোক আমাকে দিয়ে প্রেম-ভালবাসা কোনো দিন হবে না , বুঝলেন বস।"

বলে শুভ্র আর দাড়ালো না। আমিও চলে গেলাম আড্ডায়।





অভ্যেসমত রাতে ছাদে বসে আছি, আকাশ দেখার জন্য, আগে নিয়মিত সাথী ছিলো শুভ্র, এখন আর আসে না, ঘুরে আসেই পড়তে বসে , এসাইনমেন্ট তৈরী করে, নতুন অভ্যেস হয়েছে এখন, ফোনে কথা বলা , আমি তাই একাই থাকি। বসে আছি ছাদে, হঠাৎ মনে হলো কে যেন পাশে এসে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র।



"কিরে তুই? সময় পেলি তাহলে। নাকি ভুল করে ছাদে এসেছিস।"



আমার কথার কোনো উত্তর দিলো না শুভ্র। অনেকক্ষণ চুপ থাকলো, এরপর বললো,



"আসলে মানুষের সব ইচ্ছা পূরন হতে নেই, তাই না রে, কিছু ইচ্ছা অপূর্ন রাখতে হয় , বিধাতা মনে হয় কিছু ইচ্ছা অপুর্ণ রাখেন শুধু মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে আমার অতি সাধারন মানুষ, যার নিজের ভাগ্যের উপর কোনো হাত নেই।"



খুব অবাক হলাম। যে ছেলে কোনো দিন ভাগ্য বলতে কিছু বিশ্বাস করতো না সে আজ এসব কি বলছে?



তারপর শুভ্র দেয়ালের কাছে গিয়ে বললো,



"যে দেয়াল দেখা যায়, তা ভাঙ্গা যায়, কিন্তু যে দেয়াল চোখে দেখা যায় না, তা ভাঙ্গাও যায় না, টপকানোও যায় না।"



চৈতীর সাথে তার সম্পর্ক বন্ধুত্বের গন্ডি ছাড়িয়েছে অনেক আগেই, কিন্তু শুভ্র বলতে পারে নি কখনোই সে কথা, শুভ্র শুধু অকে পছন্দ করে গেছে একা। তাদের মাঝে সবসময়ই দাঁড়িয়ে থেকেছে এক অদৃশ্য দেয়াল, যেটা ভাঙ্গার শক্তি শুভ্রের ছিলো না .........



(সারাদিন বসে থাকতে থাকতে গল্প লেখার ইচ্ছে হল , প্লট মাথায় আছে, কিন্তু কেনো যেনো ঠিকমত লিখতে পারলাম না, কতটা বাজে হয়েছে বুঝতে পারছি না, এজন্যই এখানে পোস্ট করছি, দেখা যাক কয়টা মাইনাস পাই।



আর গল্পটা আসলে পুরোটা বানানো নয়, ৭০ ভাগ সত্য, আমার খুব কাছের একজনের ঘটনা ।)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০০৮ দুপুর ১:৫৮

প্রচেত্য বলেছেন: বেশ ভাল লাগল

৩০ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৩:১৭

শাশ্বত শুভ্র বলেছেন: সত্যিই ভালো লেগেছে !!!
মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। :)

২| ৩০ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:০৫

রোডায়া বলেছেন: হুম৷ ভালো লাগলো৷

৩০ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৩:১৮

শাশ্বত শুভ্র বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তবে আপনার লেখার কাছে এগুলি কিছুই নয়।

৩| ৩০ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:৫১

কোলাহল বলেছেন: গল্প মন্দ নয়। তবে এরকম গল্প আগেও অনেক পড়েছি।

৩০ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৩:২০

শাশ্বত শুভ্র বলেছেন: ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্যএবং মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আমার লেখার হাত খুবই কাঁচা, তবে এটা পুরোপুরি গল্প নয়,কিছুটা সত্যঘটনা।

৪| ৩১ শে মে, ২০০৮ রাত ১২:৫১

সঞ্জিব বলেছেন: গল্পটা ভালো লাগলো....

৩১ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৪

শাশ্বত শুভ্র বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ

৫| ৩১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৩

নিশীথ রাতের বাদলধারা বলেছেন: হুম.....ভালো লাগল....:)


আচ্ছা, যার কথা বলছেন, তার নাম কি আসলেই শুভ্র?.......মানে উনি কি নর্দার্ন এর শুভ্র ভাইয়া?

৩১ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৬

শাশ্বত শুভ্র বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য....

তার আসল নাম শুভ্র নয়.. আর আমি নর্দান এর শুভ্র ভাইয়া এর কথা বলিনি... :)

৬| ৩১ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৫২

মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: শুভ্রটা কে ? আমার তো তোকে সন্দেহ হয়

৩১ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৮

শাশ্বত শুভ্র বলেছেন: তাই নাকি...? তুই ই তাহলে খুজে বের কর শুভ্র কে? :)

৭| ০১ লা জুন, ২০০৮ রাত ১০:৩৫

(অ)গাণিতিক বলেছেন: ঐ তোর নামই তো শুভ্র!!
খুব সুন্দর লিখেছিস। +
পাকা হাতে লেখা। তবে কোলাহলের সাথে আমি একমত।
বেশি রগ রগে প্রেমের কাহিনী কেন যেন আমার ভাল লাগে না।

আমার মত হালকা পঠকের জন্যলিখবি হালকা গল্প !! :)

১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩১

শাশ্বত শুভ্র বলেছেন: এইটা রগরগে :O !!!!!!!!!!!

আরে এইটা তো প্রেমের কাহিনী না, সত্য কাহিনী....
আর এইটা সুন্দর হল কিভাবে????

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.