নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান

আমার পরিচয় খুঁজচ্ছি জন্মের পর থেকেই। কেউ পেলে জানাবেন কিন্তু....

সৈয়দ মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এখনো কি পুলিশ দেখলে গালি আসে?

২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৯



গোটা দুনিয়া হতবাক! পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধ আর অসংখ্য আঞ্চলিক যুদ্ধের ক্ষত যে পৃথিবীর বুকে ফেনিয়ে তুলেছিল রক্ত; সেই বিশ্বযুদ্ধ, সেই সংঘাত পার হলেও এত মৃত্যু, এত স্বজনহারা মানুষ কখনো দেখেনি দুনিয়া। বাংলাদেশও করোনা সংক্রমণের ৩য় ধাপে ঢুকে পড়েছে। আইইডিসিআর জানিয়েছে, সামাজিকভাবে সংক্রমিত হতে শুরু করেছে কভিড-১৯। বিশ্ব নেতারা যখন কভিড-১৯ এর উৎস সন্ধানে জড়িয়ে পড়েছেন নতুন রাজনীতিতে, মাস্ক ছিনতাই করছে যুক্তরাষ্ট্র তখন বাংলাদেশে সকল নির্দেশনা-গণবিজ্ঞপ্তি উপেক্ষা করে বলতে শোনা যায় ‘আল্লাহ ভরসা’। খোদ আরবীয় সম্প্রদায়ের রাষ্ট্রে মসজিদ বন্ধ করা হলেও দেশে সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়নি পোশাক কারখানার মালিকদের কথা শোনাতে। যে কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের দাস ভেবে টাকা উৎপাদনের মেশিনের মত মহামারিতেও আয়ের পথে অটল তাদের দেশে সম্ভব কি কভিড-১৯ এর প্রলঙ্কারী আঘাত মোকাবেলা করা? যে আঘাত সামলাতে পারেনি চীন, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রেরমত মোড়লরা! সেখানে মৃত্যুর মিছিল চলছে। এত কিছু দেখার পরও আমরা সম্মুখ উপস্থিতিকে আহ্লাদে বুকে টেনে নেই। মোসাহবিদা করি।



কিন্তু করোনা মোকাবেলায় প্রথম ও প্রধান যে নির্দেশনা শারীরীক দূরত্ব বজায় রাখা যখন কেউ মানছি না তখনই লাঠি হাতে তুলে নিতে হয় বাংলাদেশ পুলিশকে।

গরিবদের জন্য সরকারের বরাদ্দের চাল চুরিতে যখন প্রতিনিধিরা মত্ত ঠিক তখন রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে অজপাড়া গায়ের প্রায় ১৭ কোটি মানুষকে সামাজিক দূরত্ব শিখাতে ব্যস্ত এই পুলিশ। ক্রান্তিকালে বিপদগ্রস্থ মানুষের শিক্ষক, ঘরের বাজার করার ছেলে, ওষুধ কিনে দেওয়ার লোক, লাশ দাফনের মোতয়াল্লী, ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পরও কি মনে হয় পুলিশ শুধু পুলিশ আছে? এখনো কি পুলিশ দেখলে আপনার গালি আসে?

তাহলে আরেকটু খোলাসা করে বলতেই হয়। রাষ্ট্রের প্রয়োগিত স্তম্ভ হচ্ছে শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব বাহিনীর মধ্যে নৌ, স্থল ও আকাশ পথ প্রতিরক্ষায় আলাদা আলাদা ইউনিট রয়েছে। আর কোটি কোটি মানুষের হ-য-ব-র-ল সিস্টেমটাকে আয়ত্বে রেখে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অভিপ্সা আইন বাস্তবায়নে কাজ করে পুলিশ। ফলে পুলিশ সর্বত্র-সামগ্রিক শৃঙ্খল। কোটি মানুষের সাথে চব্বিশ ঘন্টা কাজ করায় ভুল-ত্রুটিও ব্যাক্তিবিশেষে ধরা পরে। আর তা নিয়ে বাকচিৎও কম হয়না। যেহেতু বিয়ে, খৎনা, চেহলাম, অন্নপ্রাসন, মিলাদ, ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি কমাতে, প্রটোকল ম্যানটেইনের মত সকল কাজে, সকল ভাজে পুলিশকে পাওয়া যায়; তাই আমাদের চোখে পুলিশের ‘মূল্যও’ একটু কম। অন্য বাহিনী দেখলে যেভাবে চোখ খাড়া হয়ে ওঠে, সতর্ক হই; সামগ্রিক পুলিশ দেখলে আমরা ভাবলেশ; গত্যান্তরহীন। তাইতো পান থেকে চুন খসলে পুলিশকে গালি দিতে কেউ পিছপা হই না। কিন্তু পুলিশ কাজ করে কার জন্য? এই চিন্তাটা কি কখনো আপনার মাথায় এসেছে? না হলে আর ভাবতে হবে না।



৮ মার্চ যখন বাংলাদেশ করোনাক্রান্ত হলো সেদিন থেকে মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। কি জানি কি হয়? সরকার ঘোষণা দিলো সকল মানুষকে ঘরে ফেরার জন্য। লোকালয় ত্যাগ করে ঘরে থাকতে শুরু হলো কাউন্সেলিং। মানুষ কিন্তু তখনও তামাশা ভেবে নির্দেশনাগুলো উড়িয়ে দিচ্ছিল।

একটি রাষ্ট্রের হাতেগোনা যেকয়টি নিয়ামক বিপদগ্রস্থ অবস্থায় সবোর্চ্চ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে থাকে সেই স্তম্ভগুলো কিন্তু সেই দুর্দিনে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ডাক্তার, পুলিশ এবং সাংবাদিক। ডাক্তার এবং পুলিশ রাষ্ট্রের প্রথম স্তম্ভের অংশ। তার সাথে জুড়ে বসে তৃতীয় চোখ গণমাধ্যম। করোনা যুদ্ধেও কিন্তু দ্বিতীয় চোখ অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের পিছপায়ের নিদর্শন পূর্বের মহাক্রান্তির মতই। ফলে সমন্বয় করতে হচ্ছে উপকারইচ্ছুদের নিয়েই। তবে তর্ক আছে আমাদের ডাক্তারদের মনোবাসনা নিয়েও। কভিড-১৯ দেশে আমদানী হওয়ার পর মানব শরীরঘেটে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা ডিপোজিটকারীদের কেউ কেউ আনাগ্রহ করে বসলেন চিকিৎসা দিতে। কেউ কেউ দিলেন চাকরী ছাড়ার আবেদন। কর্মবিরতি পালন অতঃপর ব্যাক্তিগত বা বেসরকারী চেম্বার থেকে উধাও ডাক্তার। সরকারী হাসপাতাল থেকেও হয়তো ক্রমে ক্রমে ‘নাই’ হয়ে বাসায় ঘাপ্টি মেরে থাকতেন যদি প্রধানমন্ত্রী তল্পিতল্পা গুছাতে না বলতেন। শেষতক দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো উঠে দাড়িয়েছে করোনা প্রতিরোধে। ভারতে যে ডাক্তারকে করোনা যুদ্ধে ‘স্বাক্ষাৎ ইশ্বর’ বলে অভিহিত করছে; বাংলাদেশে তা কি আমরা পাড়ছি? সংশয় থেকে যায়।



কিন্তু এই করোনা মোকাবেলার ঘোষণা দেওয়ার পর টানা একমাস অতিক্রম করলো দেশ। এরমধ্যে কতজন পুলিশ চাকরী ছাড়ার আবেদন করেছে?

কেন তাদের কি মৃত্যুর ভয় নেই? তাদের কি সন্তান-সন্তদি ঘরে নেই। পুলিশ কি মাটিতে তৈরী যে তাকে করোনা আক্রান্ত করবে না? এসবই মিথ্যে। কভিড-১৯ এর সংস্পর্শে এলে পুলিশ আক্রান্ত হবে। ছেড়ে দিবে না। তারও হৃদয় কাঁদে মা, স্ত্রী, সন্তান, স্বজনদের জন্য। পুলিশও নিরাপত্তাহীনতায় শতভাগ। তারপরও সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আপনাকে-আমাকে, আমাদের পরিবারকে বাচাতে তারা করোনার সাম্রাজ্যে নেমেই কাজ করছে। এটাকে চাকরী বলে না; বলে দেশপ্রেম।

পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়ে পায়নি এমন দৃষ্টান্ত নেহাৎ নেই বললেই চলে। বাপ মারা যাওয়ার পর ছেলে পালিয়ে গেলেও সেই লাশ কাঁধে নিয়ে ধর্মীয় রীতি মেনে শেষ বিদায় জানাচ্ছে পুলিশ।



ঘরবন্দী মানুষ যখন টিভিতে একই ঘটনার সংবাদ, একই সিরিয়াল, একই আলোচনা শুনে হাপিয়ে উঠছে তখন সাউন্ড বক্স, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মহল্লায় মহল্লায় গান করে, হাস্যরস জুগিয়ে মানুষের ক্লান্তি ঘোচাতে। আর চব্বিশ ঘন্টা সড়কে, মানুষের বাড়ি; আনাচে-কানাছে নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে মানুষ সতর্ক করে বেড়াচ্ছে। এত কিছু কেন তাকে করতে হবে? যে বেতন পান তাতে কি এসব করতে বাধ্য পুলিশ? মোটেই না। বরংছ পুলিশের চেয়ে বহুগুন বেশি বেতনের অনেকেই রয়েছেন যারা এসব পছন্দ করেন না। বস্তুত স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখার পর পুলিশ হয়ে উঠেছে আপদমস্তক মানবিক বাঙালী সত্ত্বা। পুলিশ তার কাছে একটি পেশা; ঘরে মা-বোন-স্ত্রী-সন্তানের মুখে খাবার দেওয়ার মাধ্যম। কিন্তু নিজেকে উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ ও বাঙালীর কল্যানার্থে। তাইতো পুলিশ করোনা যুদ্ধে সর্বাগ্রে সাইরেন বাজিয়ে এগিয়ে চলছে। দেশকে সুরক্ষা করছে। এরপরও কি পুলিশ দেখলে আপনার গালি আসে? বরংছ দৃশ্য তার উল্টো। করোনা থেকে বাঁচতে সবচেয়ে সাহসী যোদ্ধা হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। ভারতে ডাক্তার যদি স্বাক্ষাৎ ইশ্বর হন বাংলাদেশে সমরনায়ক নিঃসন্দেহে পুলিশ। করোনা যুদ্ধে বাহিনীর নামের বৈশিষ্ট্য সবগুলোই পুঙ্খানুপুঙ্খ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সমালোচনা নয়, তাদের উৎসাহিত করি। অনুপ্রেরণা দেই। ১৭ কোটি হাত বাড়িয়ে দেই রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য। অন্তত কিছুদিন মেনে চলি নির্দেশনা। দেখবেন আপনি বেচে যাবেন, দেশটা বেচে যাবে। ঘুরে দাড়াবে বাংলাদেশ।

পুনশ্চঃ করোনায় রাষ্ট্রের তৃতীয় চোখ সাংবাদিকদের অবদানের সর্ম্পকে নতুন করে বলার কিছু নেই। পুলিশের মতই নিরাপত্তাহীনতায় কাজ করে চলছেন তারা। পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার খবর না পাওয়া গেলেও ইতিমধ্যে সংবাদকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং সাংবাদিকদের নিয়ে সাংবাদিকের ‘শির উন্নতকরণ’র কিছু নেই। করোনা যুদ্ধে যে চোখ ছাড়া রাষ্ট্র অন্ধত্ব বরণ করতে পারে তা হলো গণমাধ্যম।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৯

অনল চৌধুরী বলেছেন: কেউ কাউকে দেখলে গালি দেয় না, অপরাধী দেখলে গালি দেয়,সেটা নেতা,শিক্ষক,চিকিৎসক-যেই করুক না কেনো।
পুলিশ যে দুর্নীতি করে- এটা কি মিথ্যা ?
এখন ভালো কাজ করছে ,তাই প্রশংসা পাচ্ছে।

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৮

মীর আবুল আল হাসিব বলেছেন: এখনো কি পুলিশ দেখলে আপনার গালি আসে?--- হ্যাঁ আসে ।
এর মধ্যে কতজন পুলিশ চাকরি ছাড়ার আবেদন করেছে?---- পুলিশ নবাবের ব্যাটা না। ১৮ বছর গ্রামে থেকেছি, জানি কত টাকা লাগে একজন পুলিশ কনস্টেবল হতে হলে। এএসআই আর এসআই তো বাদ দিলাম। বললাম আর চাকরি ছেড়ে দিলাম?
কেন তাদের কি মৃত্যু ভয় নেই?--- আছে কিন্তু করবে কি?
এটাকে চাকরি বলে না; বলে দেশপ্রেম---- রেপ থেকে ছিনতাই পুলিশ করে না কোনটা?

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: া
আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, সারাদেশে ২১৮ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত আর কোয়ারিন্টিনে আছে ৬৫২ জন৷
পুলিশ সদর দপ্তর বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ২১৮ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায়৷ আর কোয়ারিন্টিনে আছে ৬৫২ জন৷
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনোয়ার হাসনাত শুক্রবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সারাদেশে আক্রান্ত আরো বেড়েছে৷ এখন ঢাকায়ই আক্রান্ত ২১৮ জন, যারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আছেন৷ গতকাল(বৃহস্পতিবার) এখানে ছিল ১৮৮ জন৷ বাকিরা দেশের অন্য এলাকায় চিকিৎসাধীন৷’’
পুলিশে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) এলাকার৷ এরপরই গাজীপুরের অবস্থান৷ আক্রান্তের দিক দিয়ে তারপরে রয়েছে গোপালগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ৷ আর আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদমর্যাদার ডিএমপি'র একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনারও (এডিসি) আছেন৷ বাকিরা কনেস্টবল, সহকারি সাব-ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ের৷

৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:৪০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনেক পাপ কিছুটা কমবে। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ে অনেক পুলিশ টাকার পাহাড় গঠেছে।

৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: করোনার সময়ে পুলীশ ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাদের স্যলুট জানাই।

৬| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৭

খাঁজা বাবা বলেছেন: হা, এখনো গালি আসে

৭| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪১

মীর আবুল আল হাসিব বলেছেন: খাঁজা বাবা বলেছেন: হা, এখনো গালি আসে



সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.