![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রক্তিমঃ শুভ্রতা............ তুমি কোথায় শুভ্রতা? সামনে এসো প্লিজ......!!!!
শুভ্রতাঃ এই তো।...!! আমি এখানেই আছি রক্তিম। তোমার খুব কাছে...!!
রক্তিমঃ তাহলে তোমাকে দেখতে পাই না কেন? কেন তোমাকে ছুঁতে পারি না আমি? এভাবে, এভাবে আর কতো কষ্ট দেবে আমাকে?? আমি যে আর পারছি না শুভ্রতা, আর পারছিনা রে !!!!!!!
শুভ্রতাঃজানো রক্তিম, আমারও যে খুব কষ্ট হয় রে। একা একা থাকতে আমার একটুও ভাল লাগে না...কিন্তু তুমি তো আমাকে একদমই সময় দাও না, বলওও, দাওও ......!!!
রক্তিমঃ আমি মানছি, আমার থেকে অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেছে...আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও এবারের মতো.........প্লিজ, এভাবে আর দূরে থেকো না। তুমি ঠিক যেভাবে বলবে, আমি সেভাবেই চলব... তবুও তুমি দূরে যেওনা প্লিজ.........
শুভ্রতাঃ বড্ড বেশি দেরি করে ফেলেছ যে...!!! এখন আমার কিছুই করার নেই... তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও রক্তিম...তোমাকে একা ফেলে চলে যেতে আমার খুব কষ্ট হবে কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে......
রক্তিমঃ না...না শুভ্র না... এভাবে বলনা রে...তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না...এতো বড় শাস্তি তুমি আমাকে দিতে পারো না... আমাকে ছেড়ে যেও না তুমি...... আমি মরে যাব তোমাকে ছাড়া......
শুভ্রতাঃ না রক্তিম...এভাবে বলতে নেই...তোমাকে অনেক দুর যেতে হবে...আমার স্বপ্নগুলো তোমাকে পূরন করতেই হবে, অনেক দায়িত্ব এখন তোমার উপর...আমি সব সময় তোমার পাশেই থাকবো...তোমার ছায়া হয়ে...
রক্তিমঃ কেন এমন স্বার্থপরের মতো চলে যাচ্ছ তুমি?? আমার কথাটা একবার চিন্তা করো প্লিজ!!! একটা সুযোগ দাও আমাকে......!!
শুভ্রতাঃ একটু স্বার্থপর না হয় হলামই......!!আমার হাতে আর বেশি সময় নেই...তুমি ভালো থেকো...আর হ্যাঁ... অনেক ভালোবাসি তোমাকে রক্তিম...অনেক অনেক বেশি......!!!!!!!
রক্তিমঃ না.........শুভ্র না......যেও না তুমি প্লিজ......শুভ্রতা.................. (চিৎকার)
লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে পড়ে রক্তিম...ঘেমে নেয়ে একাকার পুরো শরীর। নিজের অজান্তেই খুঁজতে থাকে শুভ্রতাকে। হঠাত মনে পড়ে যায়...শুভ্রতা এখানে কোত্থেকে আসবে!!! তার মানে আবারও সেই দুঃস্বপ্ন!!!!! কিন্তু কেন এমনটা?? রক্তিম খুব ভালোমতই জানে যে সে অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছে। যে মানুষটা তাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসেছে, তাকে সে একটা মূহুর্তের জন্যও গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। অনেক বড় অন্যায় করেছে সে...কিন্তু তাই বলে একটা সুযোগ ও কী দিতে পারতো না শুভ্রতা ওকে??? এভাবে কেন ওকে একা করে রেখে চলে গেল সে?? কোন উত্তর খুঁজে পায় না সে!! শুধু হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে... তবে এখন আর আগের মতো চোখ দিয়ে পানি পড়ে না...কাঁদতে চাইলেও কান্না আসে না...আজ প্রায় তিন বছর হলো শুভ্রতা নেই...তবু মনে হয় যেন এই তো সেইদিনের ঘটনা............
প্রায় চার বছর আগের কথা............
রক্তিম আর শুভ্রতার পরিচয় হয় ভার্সিটিতে। একই ডিপার্টমেন্টে যখন শুভ্রতা ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়, রক্তিম তখন থার্ড ইয়ারের ছাত্র। খুব ভালো গান গাইতে পারে রক্তিম। পড়াশুনার দিকে মোটেও খেয়াল ছিল না তার। উরাধুরা আর অগোছালো ছেলে ছিল সে। তবে ভার্সিটিতে তার বেশ সুনাম গানের জন্য। নবীন বরণ অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পুরো দায়িত্ব ছিল রক্তিমদের গ্রুপের উপর। তাই আপাতত তারা এসব নিয়েই ব্যস্ত ছিল। অন্য দিকে মন দেওয়ার কোন সুযোগই ছিল না.........
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের দিন খুব সুন্দর করে সেজেছিল শুভ্রতা। চোখে টানা কাজল, খোলা চুল আর নীল শাড়িতে দারুন মানিয়েছিল ওকে। একদম প্রথম সারিতেই বসেছে শুভ্রতা আর তার বান্ধবিরা। ওদিকে স্টেজে তখন রক্তিম এর গান গাওয়ার পালা। কয়েক মুহুর্তের জন্য অন্ধকার হয়ে যাওয়া স্টেজে রক্তিমের আগমনের সাথে সাথে যখন চারিদিকে রঙ্গিন আলো খেলে যায়, তখন হঠাৎ ই শুভ্রতার দিকে চোখ পড়ে যায় রক্তিমের। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে শুভ্রতাকে নীল পরির মতই লাগছিল। অর্ণবের গান দিয়েই শুরু করে রক্তিম......
“তোমার জন্য নীল সে তারার
একটু খানি আলো”
এক মূহুর্তের জন্য রক্তিমের মনে হয়েছিল গানটা যেন নীল শাড়ি পড়ে সামনের সারিতে বসে থাকা ওই মেয়েটার জন্যই লেখা। শুভ্রতা ও মুগ্ধ হয়ে গান শোনে রক্তিমের। অবাক হয়ে যায় সে...একতা মানুষ এত ভালো গাইতে পারে কীভাবে??? মনের অজান্তেই একটা অদ্ভুত ভালো লাগা তৈরি হয়ে যায়। ব্যস......!!! এরপর থেকে রাস্তাঘাটে দেখা হলে শুধু মাত্র তাকিয়ে থাকা হতো দুজন দুজনের দিকে...কিন্তু এভাবে আর কত দিন??? অথচ কেউ কারো নাম পর্যন্ত জানত না। শুভ্রতাই আগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে ওরা একই ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট। তারপর একদিন নোট নেয়ার জন্য শুভ্রতাই আগে গিয়ে কথা বলে রক্তিমের সাথে। আসল উদ্দেশ্য ছিল পরিচিত হওয়া, নোট নেয়া তো শুধু একটা বাহানা মাত্র...
শুভ্রতাঃ এক্সকিউজ মি......!!!
রক্তিমঃ আমাকে বলছ???
শুভ্রতাঃ (আশেপাশে তাকিয়ে) আশেপাশে তো আপনি ছাড়া আর কাউকে দেখছি না ভাইয়া!!!!
রক্তিমঃ হুম্ম...বল কী বলবে...!!
শুভ্রতাঃ ভাইয়া...আমি শুভ্রতা...এবার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি। আপনি রক্তিম, নবীন বরণে গান গেয়েছিলেন... কী ঠিক বলছি তো??
রক্তিমঃ হুম্মম...একদম ঠিক। তোমার কী আর কিছু বলার আছে??
শুভ্রতাঃ হুম্মম......আছে তো!!! আসলে ভাইয়া আমি তো নতুন...পড়াশুনা কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি যদি আমাকে একটু সাহায্য করতেন.........
রক্তিমঃ ওওওও...ওকে...কিন্তু এখন তো সম্ভব না। আমার একটু কাজ আছে।
শুভ্রতাঃ ইটস ওকে ভাইয়া। আপনি আমাকে আপনার ফোন নাম্বারটা দিন। আমি পরে আপনার সাথে কথা বলে সময় ঠিক করে নেব...যদি আপনার কোন সমস্যা না থাকে......
রক্তিমঃ হুম্মম...সিউর...০১৭.....................
শুভ্রতাঃ ধন্যবাদ ভাইয়া......আসি তাহলে...পরে কথা হবে...
রক্তিমঃ ওকে......
পড়াশুনা দিয়েই কথা শুরু হয়......আর এখান থেকেই শুরু হয় ওদের বন্ধুত্ব...সারাক্ষণ কথা বলা, বাইরে ঘুরতে যাওয়া, এক সাথে ফুচকা খেতে গিয়ে প্লেট শেয়ার করা, নিজেদের মনের সব কথা শেয়ার করা......একে অপরের খুব কাছে চলে আসে রক্তিম আর শুভ্রতা। সম্পর্কটা বন্ধুত্বের থেকে হয়ত কিছু বেশি ছিল...এমন একটা সম্পর্ক যার হয়ত কোন নাম ছিল না।
দেখতে দেখতে আট মাস কেটে যায়। এই আট মাসে শুভ্রতা খুব ভালমতোই বুঝতে পারে রক্তিমকে। শুভ্রতার কাছে রক্তিম ছিল ওর সব কিছু। রক্তিমকে পাগলের মতো ভালোবাসে শুভ্রতা। কিন্তু রক্তিম বুঝেও কেন যেন না বোঝার ভান করত। অনেক বার মুখে বলতে চেয়েও পারেনি শুভ্রতা। কিন্তু আচরনে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে। প্রতিটা বারই কোন না কোন ভাবে এড়িয়ে গেছে রক্তিম। আর কোনভাবেই সহ্য করতে পারছিল না শুভ্রতা। তাই বাধ্য হয়েই সে সিদ্ধান্ত নেয়... রক্তিমকে তার মনের কথা বলে দেবে সে। ১ নভেম্বর রক্তিমের জন্মদিন। মনের কথা জানানোর এর থেকে ভালো সময় আর হয় না......
১ নভেম্বর বিকালে বসুন্ধরা সিটিতে দেখা করার কথা থাকে ওদের। রক্তিম ঠিক সময়েই পৌছে যায়। কিন্তু শুভ্রতার আসতে ১০ মিনিট দেরি হয় রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে। অপেক্ষা করাটা মোটেও পছন্দ না রক্তিমের। সব সময় শুভ্রতাই ওর জন্য আগে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। আজ বুঝতে পারছে রক্তিম যে কারো জন্য অপেক্ষা করাটা কতখানি বিরক্তের কাজ। আল্লাহ জানে শুভ্রতা কীভাবে পারত!!! এর মধ্যেই শুভ্রতা চলে আসে।
শুভ্রতাঃ সরি সরি সরি...রিয়ালি সরি......রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল......তুমি কি রাগ করেছ??
রক্তিমঃ তুমি আমাকে এখানে কেন ডেকেছ সেটা আগে বল...বাকি কথা পরে হবে......
শুভ্রতাঃ শুভ জন্মদিন...রক্তিম...
রক্তিমঃ ধন্যবাদ। তোমার কি এটাই বলার ছিল??
শুভ্রতাঃ আ...আ...আসলে আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই আজ...
রক্তিমঃ হুম্মম...বল...এতে এত ভয় পাওয়ার কী আছে??
শুভ্রতাঃ রক্তিম.........আমি তোমাকে ভালোবাসি...
রক্তিমঃ আমিও তোমাকে ভালোবাসি......কারণ তুমি আমার অনেক ভালো একজন বন্ধু।
শুভ্রতাঃ রক্তিম প্লিজ্জজ......তুমি কী বুঝতে পারছ আমি কোন ভালো বাসার কথা বলছি??? আমি তোমাকে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু ভাবি...তুমি আমার জন্য কি এটা আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না রক্তিম। প্লিজ...আমাকে ফিরিয়ে দিও না...
রক্তিমঃ শুভ্রতা প্লিজ...!!! আমি বুঝতে পারছি তুমি কী বলতে চাচ্ছ। কিন্তু আমার পক্ষে সেটা তোমাকে দেয়া সম্ভব না যা তুমি চাও...
শুভ্রতাঃ রক্তিম!!!!!!! কী বলছ তুমি এসব?? তুমি কী এতটুকুও বোঝনি আমাকে?? আমি আর কী করলে তোমার মনে হবে যে আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি...
রক্তিমঃ ব্যস......আর একটা কথাও বলবে না তুমি এসব ব্যাপারে। দেখ শুভ্রতা, আমি কোন বাধা ধরা নিয়মের মধ্যে থাকতে চাই না...প্রেম ভালোবাসা এসব আমার সাথে যায় না। আর তুমি আমাকে এসব ফালতু কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছ?? তুমি জানো, তুমি আমার কত সময় নষ্ট করলে?? আগে জানলে আমি কখনোই এখানে আসতাম না......
শুভ্রতাঃ এভাবে কেন বলছ তুমি?? প্লিজ রাগ কর না রক্তিম...আমি তো তোমার কাছে শুধু একটু সময়ই চেয়েছি...
রক্তিমঃ এসব কথা আর কোনদিনও আমার সামনে বলবে না তুমি...তা না হলে আমাদের বন্ধুত্বটা এখানেই শেষ করতে হবে...
শুভ্রতা কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চলে আসে রক্তিম...কিছু দূর যাওয়ার পর বিকট শব্দে থেমে যায় সে... পেছনে ফিরে দেখে রাস্তায় অনেক মানুষের ভিড়...ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যা দেখতে পায় তাতে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে ওর। শুভ্রতা পড়ে আছে রাস্তায়...পুরো রাস্তা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করে শুভ্রতার মাথাটা ওর বুকে তুলে নেয়। চোখ মেলে তাকায় শুভ্রতা...কিছু একটা ছিল ওই চাহনীতে...হয়ত কিছু না পাওয়ার কষ্ট অথবা অভিমান...বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে। সব কিছু এক মুহুর্তে এলোমেলো করে দেয়ার জন্য ওই চাহনীই যথেষ্ট ছিল।
“তু...তুমি আমার উপর রাগ করে থেক না প্লিজ......রক্তিম...আমি আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করতে আসব না...শুধু শেষ বারের মত বলতে চাই...আমি তোমাকে ভালোবাসি”
রক্তিমকে বলা এই কথাগুলোই ছিল শুভ্রতার শেষ কথা। রক্তিমের বুকে মাথা রেখেই চলে যায় শুভ্রতা না ফেরার দেশে। কিন্তু শেষ মুহুর্তের ওই চাহনীর মায়ায় বন্দী হয়ে যায় রক্তিম।
তিন বছর হলো শুভ্রতা নেই। কিন্তু শুভ্রতার মায়া থেকে আজও বের হয়ে আসতে পারেনি রক্তিম। নিজেকে ঠিক সেভাবেই তৈরি করেছে যেভাবে শুভ্রতা ওকে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ দেখার জন্য শুভ্রতা ওর কাছে নেই। শুভ্রতা সব সময় বলত.........
“দেখ...একদিন তুমি অনেক বড় মানুষ হবে...ঠিক যেমনভাবে আমি তোমাকে দেখতে চাই, শুধু পার্থক্য একটাই থাকবে, তখন হয়ত আমি তোমার পাশে থাকব না...হয়ত আমাকে আর তোমার দরকারই পড়বে না...”
তখন এই কথাগুলো হেসেই উড়িয়ে দিত...কিন্তু আজ হারে হারে টের পাচ্ছে রক্তিম যে কথা গুলো কতখানি সত্যি ছিল। গত তিন বছরে প্রতিটা মুহুর্ত শুভ্রতাকে অনুভব করেছে সে। অনেক বার চেয়েছে এসব কিছু থেকে বের হয়ে আসতে...কিন্তু প্রতিবারই একটা দুঃস্বপ্ন ওকে তাড়া করে ফেরে। মাঝে মাঝে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা হয় ওর। কিন্তু পারে না......শুভ্রতা নিজের জীবন দিয়ে রক্তিমকে নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে......এই জীবন তো এভাবে শেষ করে দেয়া যায় না...সময়ের তার মত করে পার হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে মনের কোণে অনেক যত্ন করে জমিয়ে রাখা অনুভূতি গুলোতেও মরিচা ধরে যায়, স্মৃতিগুলো ফিকে হয়ে আসে। হয়ত সময়ের সাথে সাথে ক্ষত হয়ে যাওয়া জায়গাটাও শুকিয়ে আসে...কিন্তু ক্ষতের দাগটা থেকে যায়...হয়ত কোন ঘটনার সাক্ষী হয়ে...যা সারাটা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়.....। এটাই বাস্তবতা.............!!!!!!!
©somewhere in net ltd.