![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রংধনু
বেশ কয়টি বছর পেরিয়ে গেছে।কিন্তু নোবেল-নওরীন’র ঘরে নতুন অতিথি’র দেখা নাই।কবিরাজী-বনাজী সব ধরণের চেষ্টা করে তারা বিফল।কিন্তু তারা যে,নতুন অতিথিকে নিয়ে স্বপ্ন বুনছে।তাই নওরীন’র বোনের মেয়ে রংধনুকে তারা পালতে শুরু করে।রংধনুও তখন বুঝার মত।সব কিছু বুঝে সে খালা-খালুকে মা-বাবা ডাকতে শুরু করে।এবং খালাদের বাড়ি চলে আসে।রংধনু’র কাছে খালাদের বাড়ি নিজের বাড়ির মত হয়ে যায়।এখানে সে বড় হয়।খালা-খালুও তাকে নিজের মেয়ে থেকে বেশী করে।
শিশির নামে রংধনু’র আরেকটি বোন আছে।বড় তবে বেশ অভাগা।কিছুদিন আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
রংধনু তখন একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।খালাদের বাড়িতে নীল ও শুভ্র নামের দুটি ছেলে আছে।নীল সামনে এইসএসসি পরীক্ষা দেবে।দেখতে-শুনতে খুব সুন্দর।কলেজে ভদ্র ও ভাল ছেলে বলে পরিচিতি আছে।এ যেমন, ঘাড় নিচু করে কলেজে ডুকে ঘাড় নিচু করে কলেজ থেকে বের হয়।আর শুভ্র বিদেশ যাওয়ার অপেক্ষায়।দেখতে-শুনতে মোটামুটি।সেও বাড়িতে ভাল ছেলে বলে পরিচিত।সেদিন কি একটা বিষয় নিয়ে নীল’র সাথে রংধনু’র তর্ক হয়।সে থেকে জেদ চেপেছে রংধনু’র মনে।উল্লেখ্য,রংধনু ছিল এক ফলকে পাগল হওয়ার মত মেয়ে।
শিশির ও রংধনু একদিন দুষ্টুমির ছলে শুভ্র ও নীল’র মোবাইল নাম্বার নেয়।ওরা ভাল ছেলে বলে পরিচিত।কেমন ভাল এবার ওরা দেখবে।তাছাড়া মনে মনে রংধনু’র সে জেদ তো আছেই।
এদিকে শুভ্র’র ছোট একটি বোন আছে।নাম রশ্নি।ভীষণ হিসেবী।ভাইয়ার মোবাইলে মিস্ড কলস,ডায়েল্ড কলস ও রিসিভড কলস অপশানে কোন আননোন নাম্বার দেখলে সে জেরা শুরু করে দেয়।ঠিক বড় বোনের মত।শুভ্রও হেঁসে হেঁসে ছোট বোনের শাসন মেনে নেয়।
শিশির ও রংধনু তাদের অভিযান শুরু করে।শুভ্র’র মোবাইলে শিশির’র কল-
শিশিরঃহ্যালো।
শুভ্রঃহ্যালো।
শিশিরঃভালো?
শুভ্রঃহুমম।কে?
শিশিরঃজানবেন।জানবেন।এত অস্থির হচ্ছেন কেন?
শুভ্রঃহুমম।অস্থির হতে যাব কেন?
শিশিরঃএতো কে নিয়ে লাগলেন যে?
শুভ্র সদুত্তর না পেয়ে অনুতসুক হয়ে কথা বলতে লাগল শুভ্র।শিশির জমাতে না পেরে মোবাইল রেখে দিল।
দু’দিন পরে আবার শিশির’র কল-
শিশিরঃহ্যালো।
শুভ্রঃহ্যালো।কে?
শিশিরঃজানবেন!
শুভ্রঃও।
শিশিরঃআমি কিন্তু আপনাকে চিনি।
শুভ্রঃহুমম।কিভাবে?
শিশিরঃতা বলা যাবে না।
শুভ্রঃবলা না গেলে রাখেন।
এ বলে শুভ্র মোবাইল কেটে দিল।কিছুক্ষণ সে এ মেয়ে কে হতে পারে তা ধারণা করার চেষ্টা করল।অতঃপর সে শিশিরকে সন্দেহ করে রশ্নিকে ডাকল।এবং ঘটনাটা বলে সে নোরাকে শিশির’র নাম্বারটা জিজ্ঞেস করতে বলল।ওহো!নোরা হচ্ছে রংধনু’র ছোট বোন।রংধনুকে আনার কিছুদিন পর নোরার জন্ম।
এদিকে শিশির ব্যর্থতা মেনে নিয়ে দমে গেল।তবে শুভ্র’র সতর্কতা ও রশ্নি’র বিচক্ষণতা-ই এর জন্যে দায়ী।শিশির’র কথাবলার বাচন-ভঙ্গি নয়।অন্যদিকে রংধনু কিন্তু শ্তভাগ সফল।সে নীলকে পটায় ফেলছে।এবং অবিরাম প্রেমের অভিনয় করে যাচ্ছে।
রশ্নি নামে যেমন কাজেও তেমন।সে যেখানে গেছে সেখানে আঁধার থাকার কোন সুযোগ নেই।সে নোরা থেকে কৌশলে শিশির’র নাম্বারটা নিয়ে তার দ্বায়িত্ব পালন করল।এবং ভাই-বোন দু’জন মিলে শিশির অধ্যায়ের সফল সমাপ্তি টানল।
কেউ হয়ত অভিনয়ে মত্ত,কেউবা গভীর ঘুমে নিমঘ্ন,কেউবা হয়ত নিজ কর্ম হতে বিচ্যুত।কিন্তু সময় তো নয়।সময়ের ধাবমানতায় নীল’র এইসএসসি পরীক্ষা সন্নিকটে।কিন্তু নীল’র সাথে বইয়ের কোন সম্পর্ক নাই।নীল ব্যস্ত মোবাইল নামক বাক্সে রংধনু’র ভেসে আসা কথামালার উত্তর দেয়াতে।আর সকালে রংধনু’র প্রাইভেটে যাওয়ার পথের সাথী হতে।গ্রামের আকা-বাঁকা মেঠোপথে কুয়াশা ভেজা সকালে লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে তারা দু’জন অভিসারে বের হত।
যায় হোক,কাল নীল’র কেমিস্ট্রি পরীক্ষা।কিন্তু রংধনু’র সেদিন থেকে একটা ব্রত।যে করে হোক,নীল’র রেজাল্ট চায় শূন্য।তাই সারারাত সে নীলকে ব্যস্ত রাখে মোবাইলে কথা বলাতে।
সময়ের পরিক্রমায় নীল’র রেজাল্ট খারাপ হয় এবং রংধনু’র বিয়ে হয়।রংধনু এখন একজন আদর্শ বউ,মা এবং নারী।আর নীল ভবিষ্যতহারা রংধনু’র প্রেমে কাঙ্গাল এক ভিখারী।
রংধনু মাঝেমধ্যে আসে খালাদের বাড়িতে।এখনো অবচেতন মনে অভিনয় করে যায় নীল’র সাথে।ভাল লাগে তাই কথা বলে।কিন্তু নীল যে,সে থেকে একটু গভীরতা খুঁজে,স্বপ্ন কুঁড়ে,স্বপ্ন দেখে।রংধনু কি তা বুঝে?
©somewhere in net ltd.