নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদ্ভুত মুগ্ধমানব

তার ছেড়া

Vagabond

তার ছেড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা লিথোগ্রাফিক লাইমস্টোন

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪

চেয়ারে খুব অস্বস্তিতে বসে আছেন জাবেদ ইসলাম । আরাম পাচ্ছেন না একদম । চেয়ার ঠিকই আছে , অটবি থেকে কেনা হয়েছে দিন পনের হল । দামটাও নিয়েছে গুণে গুণে । তাছাড়াও এই সদর জেলার SI কে খারাপ চেয়ার দেয়ার সাহস হবে না । সমস্যাটা অন্য জায়গায় । গত কয়েকদিন ধরে একটা সুইসাইড কেইস নিয়ে বড্ড অস্বস্তিতে আছেন । সোজা সাপটা ভাবে বললে এটা সুইসাইড কেইস তাতে কোন সন্দেহ নেই । লোকটা পাগল কিসিমের ছিল , আর্টিস্ট মানুষ । আর্টিস্টরা পাগল হবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু এটা একটু বেশি বেশি । কোথাও কিছু একটা লেগে আছে সেটা ধরা যাচ্ছেনা ! বাম নিতম্ব থেকে দেহের ভার ডান নিতম্ব নিয়ে জাবেদ সাহেব চামড়ার একটা ডায়েরী হাতে নিলেন । এটা ঐ পাগল আর্টিস্টের । ডায়রিটা পড়লেই বোঝা যায় লোকটা বদ্ধ উন্মাদ ছিলেন ।

"জ্বী স্যার , আমরা ভালো করে খুঁজেই দেখেছি । আমাদের একজন প্রত্নতাত্তিক দরকার > আমার খটকা দূর করতে চাই নাথিং এলস স্যার > থ্যাংকিউ স্যার ।" পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা শেষ করে ডায়রিটা খুললেন জাবেদ সাহেব । এই নিয়ে চতুর্থ বার পড়া শুরু করার সময় মনে একটু আশা হয়ত কিছু একটা চোখে পড়বে যেটা গত তিনবার চোখ এড়িয়ে গেছে । যদিও খুব বেশিকিছু লেখা নেই ।

৩ মার্চঃ জীবনে কোন শখ ছিলনা । একটা শখই ছিল আর্ট করব । কিন্তু যখন তিনমাস ধরে আর্টিস্ট ব্লকে থাকতে হয় তখন সবকিছুই অর্থহীন লাগে । জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছে ।

১১ মার্চঃ আমি সম্পূর্ণ হতাশ ! তুলি হাতে সামান্য একটা মার্জিনও দিতে পারছি না । এমনকি রং মেশাতেও অনুপাত ভুল করছি ।

২৩ মার্চঃ কাজের সময় কোনকিছু পাওয়া যায় না । এক টুকরো মোটা রশিও নেই । ফাঁসিতে ঝুলে মরতে চাই ।

২৪ মার্চঃ অদ্ভুত কান্ড হয়েছে আজ । ফাঁসটা যখন গলায় পড়েছি ঠিক তখনই মেয়েটা আসল । ওর নাকি একটা পোট্রেট আঁকাতে হবে । আমি না করে দিয়েছি । আমার দ্বারা আর হবে না । তবে মেয়েটা কেমন জানি !

২ এপ্রিলঃ প্রতিটা রাতেই মেয়েটা আমার ঘরে আসে । মেয়ে বললে ভুল হবে , বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হলেও দেখে তা মনে হয় না । মাঝখানে সিঁথি করা । দেখতে একদমই সাধারণ , তবে চোখদুটো খুবই কঠিন , শীতল । আমাকে শেষ পর্যন্ত পোট্রেট আঁকতে রাজি করিয়ে ছাড়ল মেয়েটা ।

৬ মেঃ ও একটা অদ্ভুত কাজ করল ! একটা একফুট লম্বা পাথরের খন্ড দিয়ে বলল , এই পাথরে তার ছবি আঁকতে হবে । কারণ পাথরে আঁকা ছবি নাকি তার অনেক ভালো লাগে । মেয়েটির একটা বৈশিষ্ট্য হল , ও কখনই কথা বলে না । কিন্তু ওর খুনি চোখের দিকে তাকালে আমি কেমন করে জানি বুঝে উঠি ও কি বলতে চায় !

১৪ মেঃ মেরী আমার সাথে আর কথা বলে না । রাগ করে আছে । করারই কথা , আমি ওর চোখ আঁকতে পারছি না । সবটুকুই এঁকেছি কিন্তু খুনি চোখদুটো তুলিতে আসছে । ও বলে দিয়েছে , আজ যদি না আঁকতে পারি তবে ও ওর বাপের বাড়ী county durham এ চলে যাবে । এই জায়গাটা কোথায় জিজ্ঞাসা করেও কোন উত্তর পেলাম না !

আর কিছু না লেখা থাকায় ডায়েরীর মাঝে একটা কলম রেখে বন্ধ করে টেবিলে রেখে দিলেন এসআই জাবেদ সাহেব । কনস্টেবলকে ডেকে সুইসাইড কেসের এলিমেন্টসগুলো চাইলেন । ডান নিতম্ব থেকে শরীরের ভার বাম নিতম্বে নিয়ে এই কেইসের ফাইলটা খুললেন ।

নাম আতাউল্ল্যাহ হাসান , বয়স ৫১ প্রায় । পেশা বাড়ীর ভাড়া দেয়া এবং পিতা মাতা মৃত । কনস্টেবল এলিমেন্টস এনে দিলে তিনি তরুণ এএসআই সাইফ কে ডেকে পাঠালেন । বয়স কম হলেও মেধাবী বলে তাকে জাবেদ সাহেব স্নেহ করেন । তাকে দ্বায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যায় ।

একফুট লম্বা একটা পাথরে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা । মাঝখানে সিঁথি করা । পোশাক , চুলের রং দেখে বোঝা যাচ্ছে সে বিদেশী । ফাঁসির দড়িতে ঝুলন্ত একদম বাস্তব একটি চিত্রকর্ম হলেও সেটি অসম্পূর্ণ হয়ে আছে । কারণ চোখ আঁকার আগেই আর্টিস্ট সুইসাইড করেন ।

"কি বুঝলে সাইফ ?" জাবেদ সাহেবের প্রশ্নে সাইফ একটু জড়সড় হয়ে বসল । গলা খাঁকারি দিয়ে শুরু করল , "স্যার আমার মনে হয় আতাউল্ল্যাহ সাহেব আর্টিস্ট ব্লকে ছিলেন যার প্রমাণ আমরা ওনার লেখা ডায়েরী এবং এই চোখছাড়া লিথোগ্রাফি(পাথরে আঁকা চিত্র) থেকে বুঝতে পারি । এর কারণেই হয়ত হতাশাগ্রস্থ হযে সুইসাইড করেন ।" জাবেদ সাহেব চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালেন । সামনে গুণে গুণে দশ পা পায়চারী করে বলতে শুরু করলেন , "পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে তার রক্তে আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে । ইঞ্জেকশন পুশ করে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে ভিক্টিমেরই হাতের ছাপ ছিল । আধঘন্টার মাঝেই মারা যান তিনি । কিন্তু কয়েকটা প্রশ্ন থেকে যায় । ঘরে তো ফাঁসীর রশিটা টাঙ্গানোই ছিল , হ্যাং না হয়ে আর্সেনিক কেন নিলেন ? আর এই আর্সেনিকই বা পেল কোথায় সে ? কারণ গত চার মাস সে ঘর থেকে বের হয়ে পাশের মুদি দোকান ছাড়া কোথাও যান নি ।" জাবেদ সাহেব একটু বিরতি নিয়ে সাইফের দিকে তাকালেন । সাইফ বলল , "হয়ত আগে কোন একদিন কিনেছিলেন । আরেকটা জিনিস স্যার আমার বে খাপ্পা লাগছে । যতদূর তথ্য পেয়েছি তিনি ঘরকুনো মানুষ সেই ছেলেবেলা থেকেই । রাজধানী শহরটাও দেখেন নি একবার । তবে ইনি হ্যাংগিং বিদেশী মহিলার ছবি আঁকলেন কেন ? আর এই লিথোগ্রাফিক লাইমস্টোন টা একটু ব্যতিক্রম । আমি আগে কখনও এরকম পাথর দেখি নাই ।" জাবেদ সাহেব কোন কথা বললেন না । এএসপি সাইফের কাঁধে হাত রেখে খুব ধীরে ধীরে খুব ঠান্ডা গলায় বললেন , "ডায়রীতে বিদেশী মহিলাটির নাম মেরী এবং বাড়ী county durham । আতাউল্ল্যা হাসান না জানলেও আমি জানি এটা ইংল্যান্ডে !"

জুনের ছয় তারিখ , বাইশদিন চলে গেছে ঘটনার । খটকা এবং রহস্য এখনও দূর হয়নি । একটু আগেই জাবেদ সাহেব প্রত্নতাত্তিকের চিঠি হাতে পেয়েছেন । চিঠি খুলে ফর্মালিটির লেখা বাদ দিয়ে মূল জায়গা থেকে পড়া শুরু করলেন ,

"i checked that lithography and the lithographic limestone . the portrait was a victorian lady named Mary Ann Cotton, lived in County Durham , England . She was hanged 24th march , 1873 because of murdering 21 people by injecting ARSENIC poison on victims' body .

And the lithographic limestone's name Carboniferous Limestone , which found only in England and Ireland . It was collected from stonemine about a months ago !"

হতভম্ব জাবেদ সাহেব স্থির বসে রইলেন !!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.