নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Understanding the Glorious Quran

তাহান

Understanding the Glorious Quran

তাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্থ না বুঝে কুরআন পড়া সাওয়াব না গুনাহ?

১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:০০



অর্থ না বুঝে কুরআন পড়া সাওয়াব না গুনাহ?

-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস)



ভূমিকা

অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি-কথাটা প্রায় ‎সকল মুসলমান জানে এবং মানে। যারা অর্থসহ বা বুঝে কুরআন পড়ে তাদেরও ‎প্রায় সবাই এটা বিশ্বাস করে যে, কুরআন না বুঝে পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি ‎হয়। ‎

না বুঝে কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি-কথাটা কুরআনকে শুধুমাত্র ‎অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়ার অনুমতিই দেয় না বরং তা, না বুঝে কুরআন পড়াকে ‎উৎসাহিত করে। আর এই কথাটার প্রভাবে বর্তমানে সারা বিশ্বে কোটি কোটি ‎মুসলমান অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়ছে। আর তারা তা করছে এটা ভেবে ‎‎যে-‎

‎১.‎ অর্থ ছাড়া পড়লেই যখন প্রতি অরে দশ নেকি পাওয়া যায়, তখন আর ‎কষ্ট করে অর্থ বুঝতে যাওয়ার দরকার কি ? ‎

‎২.‎ অর্থ পড়তে বা বুঝে পড়তে গেলে, না বুঝে পড়ার তুলনায় একই সময়ে ‎কম অর পড়া হবে। ফলে সওয়াবও কম পাওয়া যাবে। ‎

আল-কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সকল মুমিন বা মুসলমানের ১ নং আমল বা ‎কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা এবং শয়তানের ১ নং কাজ হচ্ছে কুরআনের ‎জ্ঞান থেকে মুমিন বা মুসলমানকে দূরে রাখা। অর্থাৎ ইসলামী জীবন বিধানে সকল ‎মুমিন বা মুসলমানের জন্যে সব চেয়ে বড় সওয়াবের কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান ‎অর্জন করা এবং সব চেয়ে বড় গুনাহের কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন না করা ‎বা কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকা। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‎’পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মুমিনের ১ নং কাজ কোনটি এবং ‎শয়তানের ১ নং কাজ কোনটি’ নামক বইটিতে।‎

না বুঝে কুরআন পড়ার অর্থ হচ্ছে, কুরআন পড়া কিন্তু তার জ্ঞান থেকে দূরে ‎‎থাকা। তাই এ কথা বুঝা মোটেই কঠিন নয় যে, অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন ‎পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি কথাটা ইবলিস শয়তানের ১ নং কাজকে ‎‎দারুণভাবে সাহায্য করছে। সুতরাং কথাটি সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রতিটি ‎মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করি। ‎

বিষয়টি নিয়ে কুরআন ও হাদীস অনুসন্ধান করে যে তথ্য পেয়েছি, সেগুলো ‎মুসলমান জাতির নিকট উপস্থাপন করাই এ পুস্তিকা লেখার উদ্দেশ্য। আশা করি ‎তথ্যগুলো জানার পর সকল পাঠক জানতে পারবেন, অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন ‎পড়ার বিপে বা পে কী কী তথ্য কুরআন ও হাদীসে আছে। ফলে তারা অতি ‎সহজে বুঝতে পারবেন, অর্থ তথা জ্ঞান অর্জনের ল্য ছাড়া কুরআন পড়লে গুনাহ ‎হবে, না সওয়াব হবে। আর এর ফলে একজন পাঠকও যদি অর্থ ছাড়া কুরআন ‎পড়া ছেড়ে দিয়ে অর্থসহ বা বুঝে কুরআন পড়া আরম্ভ করে তবে আমার এ চেষ্টা ‎সার্থক হয়েছে বলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করব। ‎

ইসলামী জীবন বিধানে করণীয় কোন কাজের ব্যাপারে গুনাহ ‎হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ ও শর্ত ‎



ইসলামী জীবন বিধানে করণীয় কোন কাজের ব্যাপারে গুনাহ হওয়ার কয়েকটি ‎প্রধান কারণ ও শর্ত হচ্ছে-‎

কারণ -‎

‎১.‎ কাজটি না করা। ‎

‎২.‎ কাজটির বিপরীত কাজ করা। ‎

‎৩.‎ আল্লাহ এবং রাসূল (স.) যে পদ্ধতিতে করতে বলেছেন, তাতে ‎‎গুরুত্বপূর্ণ ক্রটি রেখে কাজটি করা। কারণ, পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ বা ‎‎মৌলিক ত্র“টি থাকলে যে কোন কাজ ব্যর্থ হতে বাধ্য। ‎

শর্ত ‎

‎১.‎ ইচ্ছাকৃতভাবে উপরের তিনটি কারণ সংঘটিত হতে হবে।‎

‎২.‎ ওজরের জন্যে তথা অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন আমল ছেড়ে দিলে বা তার ‎বিপরীত কাজ করলে গুনাহ হয় না যদি নিম্নের শর্তগুলো পূরণ হয়- ‎

ক. ওজরের গুরুত্ব ছেড়ে দেয়া আমলটির গুরুত্বের সমান হলে। ‎অর্থাৎ মৌলিক আমল ছাড়তে হলে অত্যন্ত বড় বা মারাত্মক ‎ওজর থাকতে হবে। আর অমৌলিক আমল ছাড়ার ব্যাপারে ‎‎ছোট-খাট ওজরও গ্রহণযোগ্য হবে।‎

খ. মনে অনুশোচনা, অশান্তি, দুঃখ ইত্যাদি থাকতে হবে এবং ‎তার পরিমাণ ছেড়ে দেয়া আমলটির গুরুত্বের সমান হতে ‎হবে। এই অনুশোচনা, অশান্তি, দুঃখই প্রমাণ করে যে ব্যক্তি ‎ইচ্ছাকৃতভাবে বা খুশি মনে আমলটি ছাড়ছে না। ‎

গ. যে অবস্থার জন্যে আমলটি ছাড়তে হচ্ছে বা পালন করতে ‎পারা যাচ্ছে না তা থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টার পরিমাণ ‎‎ছেড়ে দেয়া আমলটির গুরুত্বের সমান হতে হবে। আর ‎‎চেষ্টাই প্রমাণ দিবে যে ব্যক্তি খুশী মনে বা ইচ্ছাকৃভাবে ‎আমলটি ছাড়ছে না, ওজরের কারণে অনিচ্ছকৃতভাবে ‎ছাড়ছে। কারণ, কোন বিষয়ের জন্যে ব্যক্তির মনে ‎অনুশোচনা, অশান্তি, দুঃখ ইত্যাদি থাকলে তা থেকে উদ্ধার ‎পাওয়ার চেষ্টা সে অবশ্যই করবে। ‎

এই তিনটি শর্ত যথাযথভাবে পূরণ না করে এক বা একাধিক আমল যে ‎ব্যক্তি ছেড়ে দিবে ইসলামী জীবন বিধানে তাকে গুনাহ্গার বলা হয়। আর যে ‎ব্যক্তি জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে, খুশি মনে ইসলামের কোন একটি আমলে ‎সালেহ ছেড়ে দিবে, সে কাফির বা মুনাফিক হিসেবে গণ্য হবে। বিষয়টি নিয়ে ‎বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ’পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি ‎অনুযায়ী মু’মিন ও কাফিরের সংজ্ঞা ও শ্রেণী বিভাগ’ নামক বইটিতে। ‎



না জানতে পারার কারণে কোন আমল না করলে গুনাহ্ হবে কিনা‎



ইসলামের করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ কোনগুলো, তা যেন কারো অজানা না থাকতে ‎পারে সে জন্যে-‎

‎১.‎ কুরআন ও সুন্নাহ ঘোষণা করেছে, সকলের জন্যে সব চেয়ে বড় ‎সওয়াবের কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা এবং সব চেয়ে বড় ‎‎গুনাহের কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকা। ‎

‎২.‎ যাদের কুরআন ও সুন্নাহের জ্ঞান আছে তাদের জন্যে-‎

ক. সে জ্ঞান অন্যের নিকট পৌঁছানোকে একটা বড় সওয়াবের ‎কাজ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহ বারবার ঘোষণা করেছে। ‎

খ. গুরুতর কোন কারণ ছাড়া সে জ্ঞান অন্যকে না পৌঁছালে বা ‎‎গোপন করলে কঠিন শাস্তির ঘোষণাও কুরআন ও সুন্নাহ ‎বারবার দিয়েছে। ‎

তাই অজানা অবস্থায় ইসলামের করণীয় কোন কাজ না করলে বা নিষিদ্ধ ‎‎কোন কাজ করলে প্রত্যভাবে গুনাহ না হলেও পরোভাবে গুনাহ হয়। কারণ ‎ইসলামে কুরআনের জ্ঞান অর্জন না করাই সব চেয়ে বড় গুনাহের কাজ। এই ‎পরো গুনাহ যাতে না হতে পারে সে জন্যেই- ‎

‎১.‎ পৃথিবীর প্রথম মানুষটিকে নবী করে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ কোনটা ‎করণীয় এবং কোনটা নিষিদ্ধ, তা তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।‎

‎২.‎ পৃথিবীর প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিকট আল্লাহ নবী বা রাসূল পাঠিয়েছেন ‎

‎ (নহল:৩৬)‎

‎৩.‎ ‎কোনটা করণীয় আর কোনটা নিষিদ্ধ, তা জানিয়ে কিতাব ও সহিফা ‎পাঠানো হয়েছে।‎

তবে যে ব্যক্তি সুযোগের অভাবে লেখাপড়াই শিখতে পারেননি, তিনি যে ‎এই পরো গুনাহ্ থেকে বেঁচে যেতে পারেন, আর যিনি বড় বড় বই পড়ে নানা ‎বিষয়ে শিতি হয়েছেন কিন্তু কুরআনের জ্ঞান অর্জন করেননি, তিনি যে ‎‎কোনভাবেই এই পরো (তবে মারাত্মক) গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবেন না। ‎তা সহজেই বুঝা যায়। ‎

‎ আল-কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা ইসলামের সবচেয়ে বড় আমল বা ‎কাজ। তাই আল-কুরআনের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারেও উপরোক্ত কারণ ও শর্ত ‎অনুযায়ী গুনাহ হবে বা হয়।‎

ইসলামের বিভিন্ন কাজ থেকে বিপথে নেয়ার শয়তানের ‎কর্মপদ্ধতি

উপরের আলোচনার পর এ কথা অতি সহজে বলা ও বুঝা যায় যে, ‎ইসলামের করণীয় কাজ থেকে মুসলমানদের বিপথে নেয়ার জন্যে শয়তানের ‎ষড়যন্ত্রের প্রধান কৌশলগুলো হবে-‎

‎১.‎ মুসলমানরা কাজটা যাতে না করে বা তার বিপরীত কাজ করে সে ‎জন্যে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা। ‎

এই পদ্ধতিতে মুসলমানদের বিপথে নেয়া একটু কঠিন। কারণ, আল্লাহ ‎ও রাসূল (স.) যে কাজটি করতে বলেছেন, সেটা সরাসরি না করতে ‎বললে বা তার বিপরীত কাজ করতে বললে, তা গ্রহণ করতে ‎মুসলমানরা সাধারণত দ্বিধায় পড়ে যায়। তবুও শয়তান খুব সূক্ষ্মভাবে ‎পদ্ধতিটা প্রয়োগ করেছে এবং অনেকাংশে সফলকামও হয়েছে। তাই ‎‎তো দেখা যায়, আজ অনেক মুসলমান ইসলামের অনেক মৌলিক ‎কাজও করা থেকে বিরত আছে বা অনেক মৌলিক কাজের বিপরীত ‎কাজ করছে।‎

‎২.‎ কাজটা আল্লাহ্ যে নিয়মে বা পদ্ধতিতে করতে বলেছেন এবং রাসূল ‎সা. যেভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন, তা থেকে ভিন্নভাবে করানোর জন্যে ‎সব ধরনের ষড়যন্ত্র করা। ‎

শয়তানের প্রথম ষড়যন্ত্রের কৌশল উপো করে যে সকল মুসলমান ‎ইসলামের কোনো কাজ করতে এগিয়ে যায়, এই দ্বিতীয় কৌশল খাটিয়ে সে ‎তাদের বিপথে নেয়ার চেষ্টা করে। এ পদ্ধতিটা খুব কার্যকর হয়। কারণ, ‎মুসলমানরা কাজটা করছে বলে খুশি থাকে। আর পদ্ধতিটা এমন সূক্ষ্মভাবে ‎ঘুরিয়ে দেয়া হয় যে, ভালো জ্ঞান না থাকলে তা ধরাও যায় না। যে কোনো ‎কাজের ফল (জবংঁষঃ) নির্ভর করে কাজটি করার পদ্ধতির উপর। কাজটি ‎‎যেহেতু আল্লাহর পদ্ধতি অনুযায়ী হয় না, তাই ঐ কাজের দ্বারা আল্লাহ যে ফল ‎দিতে চেয়েছিলেন তাও ফলে না বরং শয়তান যে ফল চেয়েছিল, তাই ফলে।‎

শয়তানের এই সূক্ষ্ম পদ্ধতির শিকার হয়ে বিশ্ব মুসলমানদের অধিকাংশই ‎বর্তমানে ইসলামের অনেক মৌলিক কাজও এমনভাবে করছে যেটা আল্লাহর বলা ‎ও রাসূল সা. প্রদর্শিত পদ্ধতি নয়। তাই, তারা ঐ কাজগুলোর ইহকালীন অপূর্ব ‎কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এর ফলে মানব সভ্যতাও ধীরে ধীরে ধ্বংসের ‎দিকে এগুচ্ছে। ঐ কাজগুলোর পরকালীন কল্যাণ থেকেও যে তারা বঞ্চিত ‎হবে,তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ‎

কুরআনের জ্ঞান থেকে মানুষকে দূরে নেয়া হচ্ছে শয়তানের এক নম্বর ‎কাজ। তাই এ কাজে সফল হওয়ার জন্যে সে তার ধোঁকাবাজির সকল পদ্ধতি ‎খাটাবে, সেটাইতো স্বাভাবিক। আর এখানেও সে অবিশ্বাস্যভাবে সফলকাম ‎হয়েছে, সেটাও তো অতি সহজে বুঝা যায়। ‎

বিপথে নেয়ার পদ্ধতিগুলো সহজে গ্রহণ করানোর জন্যে ‎শয়তানের সাধারণ কর্মকৌশল



মুসলমানরা যাতে বিভিন্ন ধোঁকাবাজি সহজে গ্রহণ করে তার জন্যে শয়তান এক ‎অপূর্ব সাধারণ কৌশল প্রয়োগ করেছে। কৌশলটা কী তা সহজে বুঝতে হলে ‎কুরআন থেকে সৃষ্টির গোড়ার কিছু কথা জানতে হবে।‎

আদম আ.কে সৃষ্টি করে আল্লাহ্ সকল ফেরেশতা ও জিন ইবলিসকে ডেকে ‎আদম আ.কে সিজদা করতে বললেন। সমস্ত ফেরেশতা সিজদা করল কিন্তু ‎ইবলিস নিজে আগুনের তৈরি তাই আদম আ. থেকে শ্রেষ্ঠ ভেবে অহংকার করে, ‎সিজদা করল না। আদেশ অমান্য করার জন্যে ইবলিসের প্রতি আল্লাহ্ রাগান্বিত ‎হলেন এবং তাকে অভিশপ্ত করে শয়তান হিসাবে ঘোষণা দিলেন। ইলিসের ‎সমস্ত রাগ তখন যেয়ে পড়ল আদম আ. এর তথা মানুষের উপর। কারণ ‎মানুষের কারণেই তাকে অভিশপ্ত হতে হল। তাই মানুষকেও বিপথে নিয়ে ‎অভিশপ্ত করার সব ধরনের চেষ্টা সে করবে বলে ঠিক করল। শয়তানের এই ‎কথাটা কুরআনে এভাবে বলা হয়েছে- ‎

অর্থ: সে (ইবলিস) বলল, হে আমার রব, তুমি (আদমের মাধ্যমে) আমার যে ‎সর্বনাশ করলে, তার শপথ করে বলছি, পৃথিবীতে পাপ কর্মকে আমি মানুষের ‎জন্য আকর্ষণীয় করে তুলব এবং তাদের সকলকে অভিশপ্ত করে ছাড়ব।‎

‏ ‏‎(আল হিজর:৩৯)‎

ইবলিসের এ কথার জবাবে আল্লাহ তাকে বলে দিলেন, তুই কেবল ধোঁকা ‎দিয়ে মানুষকে বিপথে নেয়ার চেষ্টা করতে পারবি। শক্তি খাটিয়ে তাদের বিপথে ‎নিতে পারবি না। ইবলিস তখন নিশ্চিত হল যে, ‘ধোঁকাবাজির মাধ্যমে’ তাকে ‎সকল কাজ করতে হবে। আর এই ‘ধোঁকাবাজি’ মানুষ যাতে সহজে গ্রহণ করে ‎তার জন্যে একটা সাধারণ কর্মপন্থাও তাকে বের করতে হবে। ইবলিসের সেই ‎সাধারণ পন্থা (ঈড়সসড়হ ংঃৎধঃবমু) হচ্ছে, কল্যাণ, লাভ বা সওয়াবের লোভ ‎‎দেখিয়ে ধোঁকা দেয়া। কুরআন পড়ার ব্যাপারেও ইবলিস মুসলমানদের ‎সওয়াবের কথা বলে নানাভাবে ধোঁকা দিয়েছে।‎



শয়তানের ধোঁকা নামক কৌশলের প্রথম প্রয়োগ



ইবলিস তার ধোঁকার কৌশলের অর্থাৎ সওয়াব বা কল্যাণের কথা বলে ‎‎ধোঁকা দেয়া কৌশলের, প্রথম প্রয়োগ করে বেহেশতে, হযরত আদম আ. এর ‎উপর। পবিত্র কুরআনে বর্ণনাকৃত সে ঘটনাটি নিম্নরূপ-‎

আল্লাহ আদম আ. ও বিবি হাওয়াকে বেহেশতে থাকতে দিলেন এবং ‎‎যেখানে ইচ্ছা যেতে ও যা ইচ্ছা খেতে বললেন। তবে একটা বিশেষ গাছের ফল ‎‎খেতে এমনকি তার ধারে কাছে যেতেও তাঁদের নিষেধ করে দিলেন। শয়তান ‎তখন বুঝতে পারলো, আদম আ. কে যদি তি করতে হয় তবে তাকে যে ‎‎কোনোভাবে ঐ নিষিদ্ধ গাছের কাছে নিতে বা তার ফল খাওয়াতে হবে। সে ‎তখন তার সাধারণ কৌশল অর্থাৎ কল্যাণের কথা বলে ধোঁকা দেয়ার কৌশল ‎প্রয়োগ করল। আদম আ. কে সে বলল, তুমি তো জানো না, আল্লাহ কেন ‎‎তোমাদের ঐ গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন। ঐ গাছের ফল খেলে তোমরা ‎‎ফেরেশ্তা হয়ে যাবে এবং চিরকাল বেহেশতে থাকতে পারবে। তাই আল্লাহ্ ‎‎তোমাদের ঐ গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন। আদম আ. ও বিবি হাওয়া ‎কল্যাণ বা লাভের কথা শুনে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গেলেন। তাঁরা নিষিদ্ধ ‎গাছের ফল খেয়ে ফেললেন। ধোঁকায় পড়ে হলেও এতে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য ‎করা হয়। তাই আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে বেহেশতের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে ‎বঞ্চিত করে তাদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন। এভাবে শয়তান তার কল্যাণের ‎কথা বলে ধোঁকা দেয়ার সাধারণ কৌশলের প্রথমপ্রয়োগ করে এবং তাতে সে ‎কৃতকার্যও হয়। ‎

উপরের তথ্যগুলো জানার পর চলুন এখন কুরআনকে, অর্থসহ বা অর্থ ছাড়া ‎পড়ার ব্যাপারে বা জ্ঞান অর্জনের ল্যসহ বা ছাড়া পড়ার ব্যাপারে বিবেক-বুদ্ধি, ‎কুরআন ও হাদীসের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা যাক। ‎



মূল বিষয়

বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া ‎‎গুনাহ্ না সওয়াব

তথ্য-১‎

আল-কুরআন, কোনো গল্প, কবিতা বা গজলের কিতাব নয়। আল-‎কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত একখানা ব্যবহারিক (অঢ়ঢ়ষরবফ) কিতাব। আর ‎সওয়াব কথাটার অর্থ হচ্ছে কল্যাণ। কোনো ব্যবহারিক কিতাব পড়ার স্বতঃসিদ্ধ ‎উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার জ্ঞান অর্জন করা এবং সে জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করে নিজে ‎কল্যাণপ্রাপ্ত হওয়া এবং অপরকে কল্যাণপ্রাপ্ত করা। কেউ যদি কোনো ব্যবহারিক ‎কিতাব এমনভাবে পড়ে, যাতে ঐ কিতাবের জ্ঞান অর্জন হয় না (অর্থাৎ অর্থ ‎ছাড়া বা না বুঝে পড়ে) এবং তারপর ঐ কিতাবের বক্তব্যকে বাস্তবে প্রয়োগ ‎করতে যায়, তবে অবধারিতভাবে সে মারাত্মক মারাত্মক ভুল করবে। নিজের ‎ওপর ঐ জ্ঞান প্রয়োগ করলে সে নিজে তিগ্রস্ত হবে। আর অন্যদের উপর তা ‎প্রয়োগ করলে অন্যরা তিগ্রস্ত হয়ে তাকে পুরস্কার দেয়াতো দূরের কথা শাস্তি ‎দিবে। তাহলে বিবেক-বুদ্ধির চিরসত্য (টহরাবৎংধষ ঃৎঁঃয) রায় হচ্ছে, জ্ঞান ‎অর্জন হয় না এমনভাবে বা জ্ঞান অর্জনের ল্য ছাড়া কোনো ব্যবহারিক কিতাব ‎পড়লে কোনো কল্যাণ বা সওয়াব হয় না। বরং তি বা গুনাহ হয়। আল-‎কুরআন যেহেতু একখানা ব্যবহারিক কিতাব, তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী এ ‎কিতাবও ইচ্ছাকৃতভাবে, অর্থ বা জ্ঞান অর্জনের ল্য ছাড়া পড়লে, সওয়াব না ‎হয়ে গুনাহ হওয়ার কথা।‎



‎ তথ্য-২‎

‎কোন কাজ যদি এমনভাবে করা হয় যে, তাতে তার উদ্দেশ্যটি ‎‎কোনভাবেই সাধিত হবে না, তবে যে সময়টুকু কোন ব্যক্তি ঐ কাজে ব্যয় ‎করবে, সে সময়টা অবশ্যই নষ্ট হবে অর্থাৎ তার অন্তত সময় অপচয়ের তি ‎হবে। ‎

আল-কুরআন পড়ার প্রথম স্তরের উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞান অর্জন করা এবং ‎দ্বিতীয় স্তরের উদ্দেশ্য হচ্ছে সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা। অর্থ ছাড়া কুরআন ‎পড়লে কুরআন পড়ার প্রথম স্তরের উদ্দেশ্যই সাধিত হয় না। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ‎অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া ব্যক্তির সময় অপচয়ের তি যে হবে, তা দৃঢ়ভাবে বলা ‎যায়। ‎



আল-কুরআন অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া ‎‎গুনাহ্ না সওয়াব



কুরআন থেকে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‎‎দুটো নিয়ম-‎

‎১.‎ ঐ বিষয়ে কুরআনে যতোগুলো আয়াত বা বক্তব্য আছে, সে সকল ‎বক্তব্যকে পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা। ‎কারণ, একটি আয়াতে বিষয়টির একটি দিক এবং অন্য আয়াতে তার ‎আর একটি দিক বা একটি আয়াতে বিষয়টি সংপ্তিভাবে আর অন্য ‎আয়াতে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এ জন্য ইবনে কাছির, ‎ইবনে তাইমিয়াসহ সকল মনীষীই বলেছেন, কুরআনের শ্রেষ্ঠ তাফসীর ‎‎(ব্যাখ্যা) হচ্ছে, কুরআন। ‎

‎২.‎ একটি বিষয়ে কুরআনের কোনো আয়াতের বক্তব্যের যদি অস্পষ্টতা ‎‎থাকে এবং ঐ বিষয়ে যদি অন্য কোনো স্পষ্ট আয়াত থাকে, তবে ‎অস্পষ্ট আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা স্পষ্ট আয়াতটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‎করতে হবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, (পরে আসছে) কুরআনে ‎বিপরীতধর্মী কোনো কথা নেই। ‎

চলুন এখন কুরআন অর্থসহ বা ছাড়া অর্থাৎ বুঝে বা না বুঝে পড়ায় ‎সওয়াব বা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে আল-কুরআনের তথ্যসমূহ আলোচনা করা ‎যাক-‎



তথ্য-১‎

কুরআন পড়ার কথাটি বলতে বা বুঝাতে যেয়ে মহান আল্লাহ আল-কুরআনে মাত্র ‎তিনটি শব্দ উল্লেখ করেছেন। শব্দ তিনটি হচ্ছে-‎

এ শব্দ তিনটির প্রত্যেকটির আরবী অভিধান অনুযায়ী একটি মাত্র অর্থ ‎হয়। সে অর্থটি হচ্ছে, অর্থ বুঝে পড়া বা বুঝে বুঝে অধ্যয়ন করা। আরবী ‎অভিধানে এ শব্দ তিনটির অর্থ, না বুঝে বা অর্থ ছাড়া পড়া অতীতে কখনই ছিল ‎না, বর্তমানে নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না। ‎

কুরআনের আয়াতের তরজমা করার সর্বসম্মত নিয়ম হচ্ছে একটি শব্দের ‎যদি একটি মাত্র অর্থ আরবী ভাষায় হয়, তবে ঐ আয়াতের তরজমা ও ব্যাখ্যা ‎করার সময় সে অর্থটিই গ্রহণ করতে হবে। অন্য কোন রকম অর্থ গ্রহণ করা ‎যাবে না। ‎

এ সর্বসম্মত ও ১০০% বিবেক-সিদ্ধ রায় অনুযায়ী তাহলে কুরআনের যে ‎সকল আয়াতে শব্দ তিনটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে অর্থসহ বুঝে বুঝে পড়া ‎বা অধ্যয়ন করা ধরে তরজমা ও ব্যাখ্যা করতে হবে। অন্য কথায় সেখানে অর্থ ‎ছাড়া বা না বুঝে পড়া ধরে তরজমা বা ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগই উসুলে ‎তাফসীরে নেই।‎

‎ ‎

তথ্য-২‎

অর্থ: পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। ‎

ব্যাখ্যা: আয়াতে কারীমায় ব্যাখ্যা হিসেবে বুঝে বুঝে পড় তোমার রবের নামে ‎যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন অথবা না বুঝে বুঝে পড় তোমার রবের নামে যিনি ‎সৃষ্টি করেছেন, এ দুটি কথা উপস্থান করে পৃথিবীর মানুষকে যদি কোনটি সঠিক ‎ও কোনটি ভুল তা জিজ্ঞাসা করা হয়, তবে পৃথিবীর সকল বিবেকবান মানুষ ‎বলবেন, প্রথমটি সঠিক এবং দ্বিতীয়টি ভুল। শুধুমাত্র ১০০% পাগল ব্যক্তি ‎বলতে পারে দ্বিতীয়টি সঠিক এবং প্রথমটি ভুল। তাই নিশ্চয়তা সহকারেই বলা ‎যায় আল-কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে দেয়া মহান আল্লাহর প্রথম নির্দেশটি ‎হচ্ছে, ‘বুঝে বুঝে পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন’।‎

আয়াতে কারীমার বক্তব্যটি আদেশমূলক। তাই যারা ইচ্ছাকৃভাবে অর্থ ছাড়া ‎বা না বুঝে কুরআন পড়ছেন, তারা মহান আল্লাহর নাযিলকৃত প্রথম ও সরাসরি ‎‎(উরৎপবঃ) আদেশটিই অগ্রাহ্য করছেন অর্থাৎ তারা বড় গুনাহের কাজ করছেন ‎এটি নিশ্চয়তা সহকারেই বলা যায়। ‎

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কুরআন নাযিল হওয়ার ১৪০০ বছর পর আজ ‎সহজ একটা বাক্যের অত্যন্ত সহজ একটা ব্যাখ্যা আবার নতুন করে বিশ্ব ‎মুসলমানদের জানাতে ও বুঝাতে হচ্ছে। আরো অবাক ব্যাপার, কুরআন যারা ‎অর্থ ছাড়া পড়েন তারা কিন্তু অন্য কোন বই অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়েন না। ‎শয়তানের ধোঁকার কাছে কী বিস্ময়করভাবে তারা হেরে গেছেন, তাই না?‎



তথ্য-৩‎

الَّذِيْنَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلاَوَتِهِ أُوْلَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِط

অর্থ: আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি (তাদের মধ্য থেকে) যারা তা ‘হক’ আদায় ‎করে তেলাওয়াত করে, তারাই ঐ কিতাবকে বিশ্বাস করে। (বাকারা : ১২১)‎

ব্যাখ্যা: এই গুরুত্বপূর্ণ আয়াতটি থেকে সঠিক শিা নিতে হলে বা এর সঠিক ‎ব্যাখ্যা বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে, ‘তেলাওয়াতের হক’ কী কী? অত্যন্ত ‎সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝা যায়, কোন গ্রন্থ, বিশেষ করে আল্লাহর কিতাবের ন্যায় ‎ব্যবহারিক (অঢ়ঢ়ষরবফ) গ্রন্থ পড়ার প্রধান চারটি হক হচ্ছে-‎

ক. শুদ্ধ করে পড়া,‎

খ. অর্থ বুঝা অর্থাৎ তার জ্ঞান অর্জন করা,‎

গ. সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল বা কাজ করা,‎

ঘ. সে জ্ঞান অন্যকে জানানো তথা দাওয়াত দেয়া। ‎

বাস্তবে দেখা যায়, কিতাবধারীদের অনেকেই ঐ হকসমূহ আদায় করে ‎তাদের উপর নাযিল হওয়া কিতাব তেলাওয়াত করেন না। অর্থাৎ কেউ ‎‎তেলাওয়াতের হক আদায় করে, আর কেউ কেউ তা না করে তাদের কিতাব ‎‎তেলাওয়াত করেন। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই মহান আল্লাহ্ এ গুরুত্বপূর্ণ ‎আয়াতটিতে বলেছেন, যারা তেলাওয়াতের হক আদায় করে তাদের উপর নাযিল ‎হওয়া কিতাব তেলাওয়াত করে, তারাই ঐ কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছে অর্থাৎ ‎তারাই মু’মিন। তাহলে যে সকল শর্ত অনুযায়ী কুরআনের কোন বক্তব্য আমান্য ‎করলে গুনাহ হয় (১৭নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে), সেগুলোকে সামনে রাখলে ‎নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে তেল্ওয়াতের হক আদায় না করে, ‎কিতাব তেলাওয়াত করে, তারা ঐ কিতাবের প্রতি ঈমান আনে নাই। অর্থাৎ ‎তারা কুফরীর গুনাহে গুনাহগার। সুতরাং আল্লাহ এখানে স্পষ্টভাবে বলে ‎দিয়েছেন, কিতাবধারীদের মধ্যে যারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) উপরে উল্লেখিত চারটি ‎হকের একটিও আদায় না করে, কিতাব তেলাওয়াত করে বা করবে, তারা ‎কুফরীর গুনাহে গুনাহগার হবে। ‎

এবার চলুন উল্লেখিত চারটি হকের পারস্পরিক গুরুত্বটা বিবেচনা করা ‎যাক। সহজেই বুঝা যায় ঐ চারটি হকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণটি হচ্ছে ‎অর্থ বুঝা বা জ্ঞান অর্জন করা। কারণ ভুল করে পড়লে অর্থ পাল্টে যায় বলেই ‎শুদ্ধ করে পড়তে হয়। আর অর্থ না বুঝলে কোন গ্রন্থ তেলাওয়াত করে সে ‎অনুযায়ী আমল করা বা তার দাওয়াত দেয়া কখনই সম্ভব নয়। ‎

এখন চলুন দেখা যাক, আল্লাহর কিতাব আল-কুরআনধারী মুসলমানরা এই ‎‎গুরুত্বপূর্ণ আয়াতটির বক্তব্যকে কীভাবে বা কতটুকু মানে বা অনুসরণ করে। ‎আল্লাহ এখানে বলেছেন, যারা উল্লেখিত চারটি হকের একটিও ইচ্ছা করে ‎আদায় না করে কুরআন তেলাওয়াত করে বা করবে, তারা কুরআনের প্রতি ‎ঈমান আনেনি অর্থাৎ কুফরীর গুনাহে গুনাহগার। আর এ ব্যাপারে মুসলমানদের ‎বিশ্বাস হচ্ছে-‎

ক. ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন ভুল পড়লে গুনাহ হয়। এ বিষয়ে সবাই ‎একমত। ‎

খ. ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন অনুযায়ী আমল না করলে গুনাহ হয়। এ ‎ব্যাপারেও কারো দ্বিমত নেই। ‎

গ. ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআনের জ্ঞান অন্যকে না পৌঁছালে গুনাহ হয়। এ ‎ব্যাপারেও সকলে একমত।‎

ঘ. ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া বা জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া কুরআন ‎পড়লে গুনাহ নয় বরং সওয়াব হয়। এ বিষয়টি বর্তমান বিশ্বের ‎অধিকাংশ মুসলমান বিশ্বাস করেন এবং সে অনুযায়ী আমলও ‎করেন। ‎

সুধী পাঠক, চিন্তা করে দেখুন, কুরআন তেল্ওয়াতের সময় হক ইচ্ছাকৃতভাবে ‎আদায় না করলে, গুনাহ্ হবে না সওয়াব হবে, এ বিষয়ে অপোকৃত কম ‎‎গুরুত্বপূর্ণ হকের ব্যাপারে আল্লাহর দেয়া রায়কে সকল মুসলমান মেনে নিয়েছেন ‎কিন্তু সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হকটির ব্যাপারে, অধিকাংশ মুসলমান আল্লাহর ‎রায়ের বিপরীতটা মেনে নিয়েছে এবং সে অনুযায়ী আমলও করছেন। কী অবাক ‎কান্ড, তাই না?‎



তথ্য-৪‎

অর্থ: কুরআন ‘রতল’ কর নিয়ম-কানুন মেনে, স্পষ্ট করে ধীরে ধীরে।‎

‎ (মুয্যাম্মিল:৪)‎

ব্যাখ্যা: এ আয়াতটি বহুলপ্রচারিত। যারা কুরআন-হাদীস কিছু জানেন তাদের ‎কুরআন পড়ার পদ্ধতির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে প্রায় সবাই এ আয়াতটিই উল্লেখ ‎করবেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ আয়াতখানিরও ‎رَتَلَ‎ শব্দের অর্থ না ‎বুঝে পড়া বলে বহুলভাবে প্রচারিত হয়েছে এবং তার উপর ব্যাপকভাবে আমলও ‎হচ্ছে। পূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি ‎رَتَلَ‎ শব্দের আরবী আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‎অর্থসহ বুঝে পড়া। তাই ‎رَتَلَ‎ শব্দের সঠিক অর্থ ধরে এই আয়াতের সঠিক ‎ব্যাখ্যা হচ্ছে- কুরআন পড়তে হবে সঠিক (তাজবীদের নিয়ম অনুযায়ী) উচ্চারণ ‎করে, অর্থ বুঝে যেখানে যে ভাব প্রকাশ করতে চাওয়া হয়েছে সেখানে সে ভাব ‎প্রকাশ করে। কারণ পড়ার নিয়ম-কানুনের মধ্যে এ তিনটি বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত।‎

তাহলে এ আয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকেও ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া ‎হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করা অর্থাৎ বড় গুনাহের কাজ।‎



তথ্য-৫‎

সূরা ছোয়াদের ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন-‎

অর্থ: (হে মুহাম্মদ,) এই যে কিতাব (কুরআন) আমি তোমার উপর নাজিল ‎করেছি, তা একটি বরকতময় কিতাব। মানুষেরা যেন এর আয়াতগুলো নিয়ে ‎চিন্তা-গবেষণা করে। ‎

ব্যাখ্যা: আল্লাহ্ এই আয়াতে মানুষকে আল-কুরআনের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-‎গবেষণা করতে বলেছেন। কোনো বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা আর তা না ‎বুঝে পড়া, সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী কাজ। তাই যারা অর্থছাড়া বা না বুঝে কুরআন ‎পড়ছেন তারা এ আয়াতের বক্তব্যেরও বিপরীত কাজ করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ‎আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতধর্মী কাজ করা গুনাহ না সওয়াব এটি বোঝা কি ‎কঠিন?‎



তথ্য-৬‎

সূরা বাকারার ২১৯ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন-‎‏.‏

অর্থ: তারা তোমাকে মদ ও জুয়ার ব্যাপারে (আল্লাহর নির্দেশ সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা ‎করে। তাদের বলে দাও, এই দুটো জিনিসে রয়েছে কিছু উপকার ও অনেক ‎‎তি এবং এদের তির দিকটা উপকারের দিক থেকে অনেক অনেক বেশি। ‎‎(নেক কাজে) কী কী খরচ করবে এ ব্যাপারেও তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। ‎বলে দাও, দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের পর অতিরিক্ত যা থাকবে তাই খরচ ‎করবে। এইভাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নির্দেশসমূহ কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে ‎‎স্পষ্টভাবে বলে দেন, যাতে তা নিয়ে তোমরা চিন্তা-গবেষণা কর বা করতে ‎পার। ‎

ব্যাখ্যা: ল্য করুন, আয়াতটির প্রথম দিকে আল্লাহ্ মদ ও জুয়ার অপকারিতা ও ‎উপকারিতা সম্বন্ধে কিছু মূল তথ্য উল্লেখ করার মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, ঐ ‎‎দুটোয় সামান্য কিছু উপকার আছে এবং অনেক অনেক তি বা অপকার আছে। ‎এরপর আয়াতটির শেষাংশে তিনি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে কুরআনের আয়াতের ‎মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের নীতি এবং ঐ বিষয়ে মানুষের কী কর্তব্য হবে, ‎তা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে তিনি ‎পরিষ্কারভাবে কোনো একটি বিষয় সম্বন্ধে চিরসত্য মৌলিক তথ্যগুলো জানিয়ে ‎‎দেন। এরপর মানুষের কর্তব্য হচ্ছে, ঐ তথ্যকে মূল ধরে চিন্তা-গবেষণা করে ঐ ‎বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য বের করে নেয়া।‎

আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ মদ ও জুয়ার দোষ-গুণ সম্বন্ধে চিরসত্য ‎মূল তথ্যটা (ইধংরপ রহভড়ৎসধঃরড়হ) মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‎মদ ও জুয়ার মধ্যে সামান্য কিছু উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু তার চাইতে অনেক ‎অনেক বেশি রয়েছে অপকারিতা। এখন মানুষের কর্তব্য হচ্ছে মদ ও জুয়ার ‎‎দোষ-গুণের ব্যাপারে ঐ তথ্যটাকে মূল ধরে আরো চিন্তা-গবেষণা করা অর্থাৎ ঐ ‎‎দুটো জিনিসের দোষ-গুণ সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানা এবং তা মানুষকে ‎জানানো। যাতে মানুষেরা ঐ দুটো জিনিসের মহাতিকর দিকগুলো থেকে বেঁচে ‎‎থাকতে পারে এবং তার গুণটুকু শরীয়ত মত ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারে। ‎মদ ও জুয়ার বেশ কিছু অপকারিতা আমরা এখন জানি। তবে এই আয়াতের ‎তথ্য থেকে আমার মনে হয়, মদ ও জুয়া সম্বন্ধে আরো চিন্তা-গবেষণা হওয়া ‎‎দরকার। আর তা হলে ঐ দুটো জিনিসের আরো অনেক তিকর দিক মানুষ ‎জানতে পারবে এবং তা থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম বাঁচতে পারবে। ‎

সুধী পাঠক, চিন্তা করে দেখুন, কতো স্পষ্ট করে আল্লাহ্ এখানে কুরআনের ‎আয়াত নিয়ে কী করতে হবে এবং কেন করতে হবে, তা বলে দিয়েছেন। তিনি ‎বলেছেন, কুরআনের আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে হবে। কারণ তাতে ‎মানুষের কল্যাণ হবে। ‎

না বুঝে পড়া হচ্ছে চিন্তা-গবেষণার সম্পূর্ণ উল্টো কাজ। এই আয়াতের দৃষ্টিতেও ‎তাই কুরআনকে অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়া হল কুরআন পড়ার ব্যাপারে ‎আল্লাহর নির্দেশের ১০০% উল্টো কাজ। অর্থাৎ তা বড় গুনাহের কাজ।‎

‎ ‎

তথ্য-৭‎

অর্থ: তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না? (নিসা : ৮২)‎

ব্যাখ্যা: আল্লাহ্ এখানে কুরআনের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করার জন্যে ‎তিরস্কার করেছেন। কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করা যদি আল্লাহর তিরস্কার ‎পাওয়ার উপযুক্ত কাজ হয় তবে চিন্তা-গবেষণার উল্টো কাজ অর্থাৎ ‎উচ্ছাকৃতভাবে না বুঝে পড়া, অবশ্যই আল্লাহর আরো কঠিন তিরস্কার পাওয়ার ‎উপযুক্ত কাজ হবে। আল্লাহর কঠিন তিরস্কার পাওয়ার যোগ্য কাজ সওয়াবের ‎কাজ, না বড় গুনাহের কাজ? প্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন।‎



তথ্য-৮‎

অর্থ: বল, অন্ধ ও চুষ্মান কি কখনও সমান হতে পারে? তোমরা কি ‎‎(কুরআনের বক্তব্য নিয়ে) চিন্তা-গবেষণা কর না? ‎ ‎ (আন-আম : ৫০)‎

ব্যাখ্যা: এ আয়াতটিতেও মহান আল্লাহ্ কুরআনের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না ‎করার জন্য তিরস্কার করেছেন। অর্থাৎ এই আয়াতটির দৃষ্টিকোণ থেকেও অর্থ ‎ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়লে আল্লাহর তিরস্কারের সম্মুখীন হতে হবে অর্থাৎ ‎বড় গুনাহ্গার হতে হবে।‎



তথ্য-৯‎

সূরা মুহাম্মদের ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন: ‎‏.‏

অর্থ: তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না? না তাদের অন্তরে তালা ‎পড়ে গিয়েছে? ‎

ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ্ অন্তরে তালা পড়ে গিয়েছে বলার মাধ্যমে কুরআনের ‎বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করার জন্যে আরো কঠোর ভাষায় তিরস্কার ‎করেছেন। তাহলে এ আয়াতটির দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন ‎পড়া আল্লাহর নিকট আরো কঠোরভাবে তিরস্কৃত হওয়ার যোগ্য একটি কাজ। ‎আল্লাহর নিকট কঠোরভাবে তিরস্কৃত হওয়ার যোগ্য কোন কাজ কখনও ‎সওয়াবের কাজ হতে পারে না। তা অতি বড় গুনাহের কাজ হবে। ‎



তথ্য-১০‎

সূরা আল ইমরানের ৭নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন-‎

অর্থ: তিনিই আল্লাহ্ যিনি তোমার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন। এই ‎কিতাবে আছে মুহকামাত আয়াত। ঐগুলোই কুরআনের ‘মা’। বাকিগুলো হচ্ছে ‎‘মুতাশাবিহাত’ আয়াত। যাদের মনে কুটিলতা আছে তারা ফেতনা সৃষ্টির ‎উদ্দেশ্যে ‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতের পেছনে লেগে থাকে এবং তার প্রকৃত অর্থ ‎‎বের করার চেষ্টা করে। অথচ তার প্রকৃত অর্থ আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানে না। ‎

ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে রাসূলকে সা. উদ্দেশ্য করে নিম্নোক্ত ‎কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন। ‎

প্রথমে আল্লাহ্ পাক বলেছেন, এই কিতাব অর্থাৎ আল-কুরআন নাযিল হয়েছে ‎তাঁর নিকট থেকে। ‎

এরপর তিনি বলেছেন, আল-কুরআনে আছে দু’ধরনের আয়াত- ‎‘মুহকামাত’ ও ‘মুতাশাবিহাত’। এর মধ্যে মুহকামাত আয়াতগুলো হচ্ছে ‎কুরআনের ‘মা’ অর্থাৎ আসল আয়াত। আল-কুরআনে মূল মুহকামাত আয়াত ‎আছে প্রায় পাঁচ শত। মূল মুহকামাত আয়াতের বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করার ‎জন্যে বা তার বক্তব্য বুঝানোর জন্যে বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করা বা উদাহরণ ‎‎দেয়া হয়েছে। এই আয়াতগুলোকে বলা হয়, কেচ্ছা অর্থাৎ কাহিনীর আয়াত ‎এবং আমছাল অর্থাৎ উদাহরণের আয়াত। এ আয়াতগুলো হল মুহাকামাত ‎আয়াতের সাহায্যকারী আয়াত। আল-কুরআনে এ ধরনের আয়াতের সংখ্যা ‎সবচেয়ে বেশী। মুহকামাত আয়াতগুলোর বক্তব্য অত্যন্ত সহজ ও স্পষ্ট আরবী ‎শব্দের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। মূল মুহকামাত আয়াতে বর্ণনা করা ‎হয়েছে ইসলামের আকিদা (বিশ্বাস), উপাসনা, ফারয়েজ, চরিত্রগত বিষয় এবং ‎আদেশ-নিষেধসমূহ। ‎

‎শেষে আল্লাহ্ বলেছেন, যাদের মানে কুটিলতা বা শয়তানি আছে তারাই শুধু ‎বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতের পেছনে লেগে থাকে এবং ‎তার প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য বের করার চেষ্টা করে। কারণ ‘মুতাশাবিহাত’ ‎আয়াতের প্রকৃত অর্থ তিনি (আল্লাহ্) ছাড়া আর কেউই জানে না।‎

‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতগুলোকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-‎

‎১.‎ ঐ সকল আয়াত যার বক্তব্য বিষয়টি মানুষ কখনও দেখেনি, স্পর্শ ‎করেনি বা আস্বাদ করেনি (অর্থাৎ মানুষের ইন্দ্রিয়ের অতীত ‎বিষয়সমূহ)। যেমন আল্লাহর আরশ, ফেরেশতা, বেহেশত, দোযখ, ‎সিদরাতুল মুনতাহা ইত্যাদি। এগুলোর প্রকৃত অর্থ বা অবস্থা মানুষের ‎পে বুঝা সম্ভব নয়। ‎

‎২.‎ কিছু কিছু সূরার শুরুতে কয়েকটি অরবিশিষ্ট যে শব্দটি ব্যবহার করা ‎হয়েছে, সে শব্দগুলো। যথা- ‎الم، المص، يس‎ ইত্যাদি। এগুলোর ‎‎কোন অর্থ হয় না। ‎

উপরের তথ্যগুলো জানার পর এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যে, ‘মুতাশাবিহাত’ ‎আয়াত সম্বন্ধে আল-কুরআনের প্রত্য বক্তব্য হচ্ছে-‎

‎১.‎ এর প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য শুধু আল্লাহই জানেন। মানুষের পে তা ‎বুঝা সম্ভব নয়। ‎

‎২.‎ ‎যে সকল মুতাশাবিহাত আয়াতের অর্থ হয়, সেগুলোতে আল্লাহ্ যে ‎তথ্যটা, যেভাবে এবং যতটুকু বলেছেন, সে তথ্য সেভাবে এবং ততটুকু ‎‎জেনে এবং বিশ্বাস করে নিয়েই ান্ত থাকতে হবে।‎

‎৩.‎ ‘মুতা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:১৮

তাহান বলেছেন: তথ্য-১০‎
সূরা আল ইমরানের ৭নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন-‎
অর্থ: তিনিই আল্লাহ্ যিনি তোমার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন। এই ‎কিতাবে আছে মুহকামাত আয়াত। ঐগুলোই কুরআনের ‘মা’। বাকিগুলো হচ্ছে ‎‘মুতাশাবিহাত’ আয়াত। যাদের মনে কুটিলতা আছে তারা ফেতনা সৃষ্টির ‎উদ্দেশ্যে ‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতের পেছনে লেগে থাকে এবং তার প্রকৃত অর্থ ‎‎বের করার চেষ্টা করে। অথচ তার প্রকৃত অর্থ আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানে না। ‎
ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে রাসূলকে সা. উদ্দেশ্য করে নিম্নোক্ত ‎কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন। ‎
প্রথমে আল্লাহ্ পাক বলেছেন, এই কিতাব অর্থাৎ আল-কুরআন নাযিল হয়েছে ‎তাঁর নিকট থেকে। ‎
এরপর তিনি বলেছেন, আল-কুরআনে আছে দু’ধরনের আয়াত- ‎‘মুহকামাত’ ও ‘মুতাশাবিহাত’। এর মধ্যে মুহকামাত আয়াতগুলো হচ্ছে ‎কুরআনের ‘মা’ অর্থাৎ আসল আয়াত। আল-কুরআনে মূল মুহকামাত আয়াত ‎আছে প্রায় পাঁচ শত। মূল মুহকামাত আয়াতের বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় করার ‎জন্যে বা তার বক্তব্য বুঝানোর জন্যে বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করা বা উদাহরণ ‎‎দেয়া হয়েছে। এই আয়াতগুলোকে বলা হয়, কেচ্ছা অর্থাৎ কাহিনীর আয়াত ‎এবং আমছাল অর্থাৎ উদাহরণের আয়াত। এ আয়াতগুলো হল মুহাকামাত ‎আয়াতের সাহায্যকারী আয়াত। আল-কুরআনে এ ধরনের আয়াতের সংখ্যা ‎সবচেয়ে বেশী। মুহকামাত আয়াতগুলোর বক্তব্য অত্যন্ত সহজ ও স্পষ্ট আরবী ‎শব্দের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। মূল মুহকামাত আয়াতে বর্ণনা করা ‎হয়েছে ইসলামের আকিদা (বিশ্বাস), উপাসনা, ফারয়েজ, চরিত্রগত বিষয় এবং ‎আদেশ-নিষেধসমূহ। ‎
‎শেষে আল্লাহ্ বলেছেন, যাদের মানে কুটিলতা বা শয়তানি আছে তারাই শুধু ‎বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে ‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতের পেছনে লেগে থাকে এবং ‎তার প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য বের করার চেষ্টা করে। কারণ ‘মুতাশাবিহাত’ ‎আয়াতের প্রকৃত অর্থ তিনি (আল্লাহ্) ছাড়া আর কেউই জানে না।‎
‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতগুলোকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-‎
‎১.‎ ঐ সকল আয়াত যার বক্তব্য বিষয়টি মানুষ কখনও দেখেনি, স্পর্শ ‎করেনি বা আস্বাদ করেনি (অর্থাৎ মানুষের ইন্দ্রিয়ের অতীত ‎বিষয়সমূহ)। যেমন আল্লাহর আরশ, ফেরেশতা, বেহেশত, দোযখ, ‎সিদরাতুল মুনতাহা ইত্যাদি। এগুলোর প্রকৃত অর্থ বা অবস্থা মানুষের ‎পে বুঝা সম্ভব নয়। ‎
‎২.‎ কিছু কিছু সূরার শুরুতে কয়েকটি অরবিশিষ্ট যে শব্দটি ব্যবহার করা ‎হয়েছে, সে শব্দগুলো। যথা- ‎الم، المص، يس‎ ইত্যাদি। এগুলোর ‎‎কোন অর্থ হয় না। ‎
উপরের তথ্যগুলো জানার পর এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যে, ‘মুতাশাবিহাত’ ‎আয়াত সম্বন্ধে আল-কুরআনের প্রত্য বক্তব্য হচ্ছে-‎
‎১.‎ এর প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য শুধু আল্লাহই জানেন। মানুষের পে তা ‎বুঝা সম্ভব নয়। ‎
‎২.‎ ‎যে সকল মুতাশাবিহাত আয়াতের অর্থ হয়, সেগুলোতে আল্লাহ্ যে ‎তথ্যটা, যেভাবে এবং যতটুকু বলেছেন, সে তথ্য সেভাবে এবং ততটুকু ‎‎জেনে এবং বিশ্বাস করে নিয়েই ান্ত থাকতে হবে।‎
‎৩.‎ ‘মুতাশাবিহাত’ আয়াতের প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য বের করার জন্যে তার ‎পিছনে লেগে থাকা অর্থাৎ তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা একটি কুটিল, ‎শয়তানি বা ফেতনা সৃষ্টির কাজ অর্থাৎ গুনাহের কাজ।‎
আল্লাহ্ এই আয়াতে বলেছেন, আল-কুরআনে ‘মুহকামাত’ ও মুতাশাবিহাত’ ‎নামের দুই ধরনের আয়াত আছে। তাই এ আয়াতের তথ্য থেকে মুহকামাত ‎আয়াত সন্বন্ধে যে পরো তথ্যগুলো বের হয়ে আসে তা হচ্ছে-‎
‎১.‎ মুহকামাত আয়াতের প্রকৃত অর্থ আল্লাহ তো জানেনই। মানুষের পে ‎তা বুঝা বা বের করাও সম্ভব। ‎
‎২.‎ মুহকামাত আয়াতে আল্লাহ্ যে তথ্যটা যেভাবে এবং যতটুকু বলেছেন, ‎সব সময় সে তথ্য ঐভাবে এবং অতটুকু জেনে নিয়েই ান্ত দিলে ‎চলবে না। দরকার হলে ঐ তথ্যটার পেছনে লেগে থেকে অর্থাৎ চিন্তা-‎গবেষণা করে তার প্রকৃত অর্থ বা তাৎপর্য বের করার চেষ্টা করতে ‎হবে। এ কথাটিই আল্লাহ্ সরাসরি বলেছেন সূরা বাকারার ২১৯ নং ‎আয়াতে ও সূরা ছোয়াদের ২৯ নং আয়াতে এবং তা না করার জন্যে ‎তিরস্কার করেছেন সূরা মুহাম্মাদের ২৪ ও সূরা নিসার ৮২ নং আয়াতে ‎যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।‎
‎৩.‎ ইচ্ছাকৃতভাবে মুহকামাত আয়াতের প্রকৃত অর্থ, ব্যাখ্যা বা তাফসীর ‎জানা বা বের করার চেষ্টা না করা একটা কুটিল বা শয়তানি কাজ ‎অর্থাৎ গুনাহের কাজ। ‎
‎৪.‎ ইচ্ছাকৃতভাবে মুহাকামাত আয়াতের সাধারণ অর্থও না বুঝে পড়া ‎আরো বড় গুনাহের কাজ। ‎
‎ ‎
তথ্য-১১‎

অর্থ: যে সকল ব্যক্তিকে তাওরাত বহন করতে দেয়া হয়েছিল কিন্তু তারা তা ‎‎(প্রকৃতভাবে) বহন করে নাই। তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সেই গাধার ন্যায় যে কিতাব ‎বহন করে। ‎ ‏ ‏‎ ‎‏ ‏‎ (জুম’আ : ৫) ‎
ব্যাখ্যা: তাওরাত হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। তাই আল্লাহ্ এখানে তাওরাতের ‎উদাহরণ দিয়ে ঐ সকল মানুষের অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন যাদেরকে ‎আল্লাহর কিতাব বহন করতে দেয়া হয়েছিল বা হয়েছে কিন্তু তারা সে বহনের ‎মর্যাদা রাখেনি বা রাখছে না। আল্লাহ বলছেন, ঐ সকল মানুষের উদাহরণ হচ্ছে ‎‎সেই গাধা, যে পিঠে কিতাব বহন করে চলেছিল বা চলেছে। গাধা পিঠে কিতাব ‎বহন করে কিন্তু জানে না, ঐ কিতাবে কী কথা লেখা আছে। কোন কিতাব বা ‎কিতাবের অংশ মুখস্থ থাকার অর্থ হচ্ছে ঐ কিতাব বা তার অংশ বহন করে নিয়ে ‎‎বেড়ান। তাহলে মহান আল্লাহ এখানে, যারা আল্লাহর কিতাব মুখস্থ রাখে কিন্তু ‎তার বক্তব্য তথা অর্থ জানে না, তাদের গাধা বলে গালি দিয়েছেন। আল্লাহ্ যে ‎কাজকে গাধার কাজ বলে গালি দিয়েছেন সে কাজ কি সওয়াবের কাজ? না ‎‎গুনাহের কাজ? অবশ্যই তা গুনাহের কাজ। ‎
তাহলে পাঠকই বলুন, ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া বা মুখস্থ রাখা ‎কিন্তু তার অর্থ না জানা, সওয়াব না গুনাহ? আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সবাই বলবেন, ‎অবশ্যই গুনাহ।‎
‎ ‎
তথ্য-১২ ‎
অর্থ: মহাকাশ ও পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তার কোনটিই আমি ‎বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি, তৈরি বা রচনা করি নাই। এটা সেই লোকদের ধারণা, যারা ‎কুফরী করে। আর ঐ ধরনের কাফের লোকদের দোযখের আগুনে ধ্বংস হওয়া ‎অনিবার্য। (ছোয়াদ : ২৭) ‎
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ বলছেন, মহাকাশ ও পৃথিবী এবং এ উভয়ের মধ্যকার ‎‎কোন কিছুই তিনি বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি, তৈরি বা রচনা করেননি। অর্থাৎ আল্লাহ্ ‎বলছেন মহাকাশ, পৃথিবী মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, নামাজ, রোজা, আল-‎কুরআন ইত্যাদি তিনি কোন না কোন উদ্দেশ্য সাধনের ল্যসহ তৈরি বা রচনা ‎করেছেন। এখান থেকে সহজেই বুঝা যায়, কথাটা বলার পেছনে আল্লাহর ‎উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষেরা যখন তাদের জীবন পরিচালনা, কোনো জিনিস ব্যবহার ‎বা কোন আমল করবে তখন তারা যেন খেয়াল রাখে, ঐ জিনিস সৃষ্টি, তৈরি বা ‎রচনা করার পেছনে আল্লাহর কাঙ্খিত উদ্দেশ্যটা সাধন হচ্ছে কিনা বা হবে ‎কিনা। ‎
এরপর আল্লাহ্ বলেছেন, কোন কিছু তিনি বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি, তৈরি বা ‎রচনা করেছেন-এটি কাফের লোকদের ধারণা এবং যারা ঐ রকম ধারণা করবে, ‎পরকালে তাদের ঠিকানা হবে দোযখ। অর্থাৎ ঐ রকম ধারণা করা কুফরীর ন্যায় ‎অতি বড় গুনাহের কাজ হবে। ‎
‎কোন কিছু আল্লাহ্ বিনা উদ্দেশ্যে তৈরি বা রচনা করেছেন, এটা কেউ ধারণা ‎করে কিনা তা দু’ভাবে বুঝা যায়। যথা-‎
ক. সে সত্যসত্যই বিশ্বাস করে, আল্লাহ্ উদ্দেশ্য ছাড়াই জিনিসটি তৈরি বা ‎রচনা করেছেন। ‎
খ. সে ইচ্ছাকরে বা খুশী মনে কোনকিছু এমনভাবে ব্যবহার বা আমল করে ‎‎যে ঐ জিনিসটা তৈরি বা রচনা করার পেছনে আল্লাহর যে উদ্দেশ্য ‎ছিল, তা কখনই সাধিত হবে না।‎
তাহলে এখান থেকে বুঝা যায়, ইচ্ছা করে কোন জিনিসের ব্যবহার বা ‎‎কোন আমল এমনভাবে করা, যাতে ঐ জিনিস তৈরি বা ঐ আমল রচনা করার ‎‎পেছনে আল্লাহর যে উদ্দেশ্য, তা কখনই সাধিত হবে না, তবে তা কুফরীর ‎‎গুনাহের ন্যায় একটা অতি বড় গুনাহের কাজ হবে। ‎
মহান আল্লাহর আল-কুরআন রচনা করার উদ্দেশ্য হল, মানুষ তা পড়ে ‎জ্ঞানার্জন করবে এবং সেই জ্ঞান অনুযায়ী তার পুরো জীবনটা পরিচালনা করবে। ‎‎যে পড়ায় জ্ঞানার্জন হয় না, সে পড়া দ্বারা আল্লাহর কুরআন রচনার উদ্দেশ্য ‎কখনই সাধিত হতে পারে না। তাই এই আয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকেও ‎ইচ্ছাকৃতভাবে সেভাবে, অর্থাৎ অর্থ ছাড়া বা জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া কুরআন ‎পড়া অতি বড় গুনাহের কাজ হবে।‎

তথ্য-১৩‎
কুরআনের কয়েকটি জায়গায় কুরআন পড়া নিয়ে রাসূলকে সা. প্রায় একই ‎রকম কথা বলা হয়েছে। যেহেতু বক্তব্যটা প্রায় একই রকম, তাই দুটি সূরার ‎বক্তব্য পর পর উল্লেখ এবং ব্যাখ্যাটা এক সাথে আলোচনা করা হল।‎
সূরা কিয়ামাহ-এর ১৬ থেকে ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন-‎
অর্থ: (হে নবী, কুরআনের আয়াতকে) তাড়াতাড়ি মুখস্থ করে নেয়ার জন্যে ‎আপনার জিহ্বাকে বারবার নাড়াবেন না। এটা মুখস্থ করিয়ে দেয়া ও পড়িয়ে ‎‎দেয়া আমার দায়িত্ব। কাজেই যখন পড়তে থাকা হয়, তখন আপনি তার পাঠকে ‎মনোযোগসহকারে শুনতে থাকবেন। পরে তার ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেয়াও আমার ‎‎দায়িত্ব রয়েছে।‎
সূরা তোয়াহার ১১৪নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন-‎
অর্থ: আর (হে নবী,) কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করবেন না, যতণ না আপনার ‎নিকট এর ওহী পূর্ণতায় পৌঁছে যায় এবং দোয়া করতে থাকবেন, হে রব, আমার ‎জ্ঞানকে আরো বাড়িয়ে দিন। ‎
ব্যাখ্যা: আয়াত দুটোর কথাগুলো বলা হয়েছে রাসূল সা. কে উদ্দেশ্য করে। ‎তাহলে কি সাধারণ মুসলমানদের জন্যে এর থেকে শিা নেই? অবশ্যই আছে। ‎কারণ তা না থাকলে পবিত্র কুরআনের কয়েক জায়গায় ঐ ধরনের বক্তব্য, ‎কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের পড়া ও লিখার ব্যবস্থা রেখে আল্লাহ্ তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির ‎অপরিসীম সময় ও সম্পদ নষ্ট করতেন না। আয়াত দুটোয় রাসূল সা. কে কী ‎বলা হয়েছে এবং তা থেকে সাধারণ মুসলমানদের কী শিা দিতে চাওয়া ‎হয়েছে, তা বুঝতে হলে নিম্নের তথ্যগুলো আগে বুঝতে বা জানতে হবে-‎
‎ ‘ওহী’ বলতে বুঝায় কুরআনের আয়াত, সাধারণ শিা বা গোপন ‎ইঙ্গিত।‎
‎ আয়াত দুটো নাযিল হয়েছে ওহী নাযিল শুরু হওয়ার প্রথম দিকে যখন ‎রাসূল সা. ওহী গ্রহণ করার ব্যাপারে দতা অর্জন করে উঠতে ‎পারেননি।‎
‎ ভুলে যাওয়ার ভয়ে প্রথম দিকে রাসূল সা. এর স্বাভাবিক চেষ্টা ছিল ‎জিব্রাইল আ. এর মুখ থেকে একটা আয়াত বের হওয়ার সাথে সাথে ‎বারবার পড়ে তা মুখস্থ করে নেয়া। ‎
‎ রাসূল সা. এর মাতৃভাষা আরবী হওয়াতে নাযিল হওয়া অধিকাংশ ‎আয়াতের অর্থ তিনি বুঝতে পারতেন কিন্তু যে সকল শব্দ আগে কখনও ‎শুনেননি, সেগুলো জিব্রাইল আ. এর মুখ থেকে বের হওয়ার সাথে ‎সাথে তার অর্থ ও ব্যাখ্যা জানার জন্যে তিনি স্বাভাবিকভাবে ব্যস্ত হয়ে ‎পড়তেন। ‎
উপরের তথ্যগুলো সামনে রাখলে এটা বুঝা মোটেই কঠিন নয় যে, আয়াত ‎‎দুটোতে জিব্রাইল আ., রাসূল সা.কে নিম্নের কথাগুলো বলেছেন। জিব্রাইল আ. ‎বলেছেন, হে রাসূল সা., আপনার নিকট কুরআন পৌঁছানোর ব্যাপারে আমাকে ‎তিনটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যথা-‎
‎১.‎ সঠিক পঠন পদ্ধতি অনুযায়ী কুরআনকে পড়িয়ে দেয়া,‎
‎২.‎ কুরআনকে মুখস্থ করিয়ে দেয়া এবং‎
‎৩.‎ কুরআনকে প্রয়োজন মত ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়া।‎
তাই কুরআনের কোন আয়াত যখন আমি আপনাকে প্রথম শুনাতে থাকি, ‎তখন আপনি সেটা মুখস্থ করার জন্যে বা তার ব্যাখ্যা জানার জন্যে ব্যস্ত হয়ে ‎পড়বেন না। আপনি নিরর হওয়া সত্ত্বেও মাতৃভাষা আরবী হওয়ার করণে, ‎আয়াতের যতটুকু আপনার বুঝে আসে, তাতেই সন্তুষ্ট থেকে প্রথমে খেয়াল ‎করবেন কিভাবে আমি পড়ছি (অর্থাৎ কুরআনের পঠন পদ্ধতির দিকে)। কারণ ‎সঠিক পদ্ধতিতে না পড়তে পারলে একটি আয়াতের সঠিক অর্থ ও ভাব মনে ‎আসবে না। পরে আমি ঐ আয়াত আপনাকে মুখস্থ করিয়ে এবং প্রয়োজন মতো ‎ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেব। তারপরেও আল্লাহর নিকট দোয়া করবেন আপনার ‎জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দেয়ার জন্যে। ‎
এবার চলুন, সাধারণ মুসলমানদের এই আয়াত দুটো থেকে কী শিা দিতে ‎চাওয়া হয়েছে, তা দেখা যাক। সাধারণ মুসলমানদের কুরআন মুখস্থ করিয়ে ‎‎দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহ্ নেননি। তাই কুরআনের আয়াত মুখস্থ করার জন্যে ব্যস্ত ‎হওয়ার দরকার নেই, এ কথা তাদের বেলায় প্রযোজ্য হবে না। আবার সাধারণ ‎মুসলমানদের কুরআনের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্বও আল্লাহ্ নেননি। তাছাড়া ‎যাদের মাতৃভাষা আরবী নয়, তারা তো রাসূল সা.‎‏ ‏এর মত একটি আয়াত পড়লে ‎তার সাধারণ বা মোটামুটি অর্থও বুঝতে পারবে না। ব্যাখ্যাতো দূরের কথা। ‎তাই সাধারণ মুসলমানদের জন্যে কুরআন পড়ার সময় তার অর্থ ও ব্যাখ্যা ‎জানার জন্যে ব্যস্ত হয়ো না-এ কথাটাও প্রযোজ্য হবে না। ‎
সাধারণ মুসলমানদের এই আয়াত দুটোর মাধ্যমে আল্লাহ্ বলেছেন, তোমরা ‎কুরআন পড়ার সময় না বুঝে সওয়াব কামাইয়ের ল্েয তাড়াতাড়ি খতম দেয়ার ‎জন্যে ব্যস্ত হয়ো না। একটি আয়াত পড়ার সময় প্রথমে সঠিক পঠন পদ্ধতি ‎অনুযায়ী তা পড়বে। তারপর তার অর্থ ও প্রয়োজন মত ব্যাখ্যা জেনে নেবে, ‎তারপর দ্বিতীয় আয়াতে যাবে। এরপরেও তোমাদের জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দেয়ার ‎জন্যে আমার নিকট দোয়া করবে। এই আয়াতগুলোর এরূপ ব্যাখ্যার ‎সমর্থনকারী হাদীস পরে আসছে। তাহলে এ আয়াত অনুযায়ীও অর্থ ছাড়া ‎কুরআন পড়া হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করা অর্থাৎ গুনাহের কাজ। ‎
সুধী পাঠক, না বুঝে কুরআন খতম দেয়ার আগ্রহ মুসলমানদের মধ্যে আজ ‎ব্যাপক। তাদের অধিকাংশের কাছে আজ কুরআনের অর্থ জানার চেয়ে, না বুঝে ‎পড়া বা খতম দেয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তারাবিহ নামাজে তাড়াতাড়ি ‎খতম দেয়ার জন্যে হাফেজ সাহেব কী পড়েন একজন ভাল আরবী জানা ‎‎লোকও তা বুঝতে পারবেন না। সওয়াবের আশায় কুরআন, হাদীস ও বিবেক-‎বুদ্ধির উল্টো কাজ করার কী দারুণ প্রবণতা, তাই না?‎

তথ্য-১৪‎
অর্থ: হে ঈমানদারগণ, নেশাগ্রস্ত থাকা অবস্থায় তোমরা ততণ নামাজের ধারে-‎কাছে যাবে না, যতণ না বুঝতে পার, তোমারা কী বলছ ... ... ... (নিসা: ৪৩)‎
ব্যাখ্যা: পর্যায়ক্রমে মদ হারাম হওয়ার দ্বিতীয় হুকুমটা আল্লাহ্ এই আয়াতটির ‎মাধ্যমে জানিয়েছেন। আল্লাহ্ এখানে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একজন ঈমানদার কখন ‎নামাজে দাঁড়াতে পারবে, তার মাপকাঠিটা বলে দিয়েছেন। সে মাপকাঠিটা হচ্ছে, ‎নামাজে দাঁড়িয়ে কী পড়া বা বলা হচ্ছে তা বুঝতে পারা। কথাটা নেশাগ্রস্তদের ‎উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। তবে একজন অপ্রকৃতিস্থ মানুষের জন্যে যদি তা ‎প্রযোজ্য হয়, তবে একজন প্রকৃতিস্থ মানুষের জন্যে তা আরো বেশি করে ‎প্রযোজ্য হওয়ারই কথা। একজন নামাজী নামাজে দাঁড়িয়ে যা বলছেন বা ‎পড়ছেন, তা বুঝতে না পারার তিনটি অর্থ হতে পারে। যথা-‎
ক. কবিতা পড়ছে না কুরআন পড়ছে, তা বুঝতে না পারা,‎
খ. শুদ্ধ পড়ছে না অশুদ্ধ পড়ছে, তা বুঝতে না পারা, এবং ‎
গ. যা পড়ছে তার অর্থ বুঝতে না পারা। ‎
প্রথম দুটো অবস্থায় সুস্থ-অসুস্থ সকলেরই নামাজে দাঁড়ানো নিষেধ, এটা ‎নিয়ে বর্তমান মুসলমান জাতির মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই। কিন্তু ৩নং অবস্থায় ‎সুস্থ মানুষের নামাজে দাঁড়ানো নিষেধ নেই, এটা তারা (প্রায়) সবাই মনে ‎করেন। এটা যে তারা মনে করেন, তাদের বাস্তব আমলই তার প্রমাণ। কারণ ‎অধিকাংশ মুসলমান নামাজে কী পড়ছেন, তা বুঝেন না। কিন্তু কুরআন বুঝে ‎পড়ার ব্যাপারে পূর্ব উল্লেখিত সকল আয়াতের তথ্যগুলো জানার পর মনে হয়, ‎‎৩নং অবস্থাটাও অর্থাৎ নামাজে যা পড়া হচ্ছে তার অর্থ বুঝতে পারার বিষয়টাও ‎সুস্থ মানুষের নামাজে দাঁড়ানোর নিয়ম-কানুনের (আরকান-আহকাম) মধ্যে ‎অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ অর্থ না বুঝলে নামাজে কালাম, তাসবীহ ও দোয়া ‎পড়ানোর আল্লাহর উদ্দেশ্যগুলোই ব্যর্থ হয়ে যাবে। সে উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে-‎
ক. কালাম অর্থাৎ কুরআন পড়ানোর মাধ্যমে শয়তানের ১নং কাজকে ব্যর্থ করে ‎‎দেয়া। শয়তানের ১নং কাজ হচ্ছে, মানুষকে কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে ‎সরিয়ে নেয়া। নামাজে বারবার কালাম পড়ানোর মাধ্যমে আল্লাহ চেয়েছেন ‎মুসলমানরা কুরআনের জ্ঞানকে অর্থাৎ ইসলামের সকল প্রথম স্তরের ‎‎মৌলিক, অনেক দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক এবং কিছু অমৌলিক বিষয় যেন ‎‎কোনভাবে ভুলে না যায় বা ভুলে যেতে না পারে। বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত ‎আলোচনা করেছি‘ পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী নামাজ ‎‎কেন আজ ব্যর্থ হচ্ছে’ নামক বইটিতে।‎
খ. তাসবীহ ও কালাম পড়ানের মাধ্যমে, তাঁর (আল্লাহর) সামনে দাঁড় করিয়ে ‎নামাজীর মুখ দিয়ে কিছু কথা স্বীকার বা অঙ্গীকার করিয়ে নেয়া। যেন ‎নামাজী সে স্বীকার বা অঙ্গীকার অনুযায়ী নামাজের বাইরেও চলে। ‎
নামাজে যা পড়া হচ্ছে, তা না বুঝার আগে নামাজে দাঁড়ানো নিষেধ হওয়া ‎শর্তটার প্রয়োগ এরকম হবে না যে, পুরো অর্থ না বুঝার আগ পর্যন্ত নামাজে ‎‎দাঁড়ানো যাবে না। বরং তা হবে এরকম যে, এ তথ্যটা জানার পর থেকেই ‎নামাজে যা কিছু পড়া হচ্ছে, তার অর্থ জানা ও বুঝার চেষ্টা শুরু করে দেয়া ‎এবং সাথে সাথে নামাজ পড়াও চালু রাখা। ‎

সুধী পাঠক,‎ আশা করি, আপনারা সবাই একমত হবেন, উপরে উল্লেখিত ‎‎১৪টি তথ্যের আলোকে নিঃসন্দেহে বলা যায়, মহান আল্লাহ আল-কুরআনের ‎মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কুরআনকে অর্থসহ বুঝে বুঝে পড়তে ‎হবে। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া বা খতম দেয়া একটা বড় ‎‎গুনাহের কাজ। আর কুরআন ঐ ধরনের কাজকে কুফরী কাজ বলেও উল্লেখ ‎করেছে।‎
‎ ‎
‘অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি’ কথাটা ‎আল-কুরআনে থাকা সম্ভব কিনা

উপরে আল-কুরআন থেকে যে ১৪টি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, তা থেকে ‎বুঝা যায়, ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া বা জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া কুরআন পড়ার ‎অর্থ হচ্ছে, কুরআন পড়ার ব্যাপারে আল্লাহর প্রত্য (উরৎবপঃ) এবং পরো ‎‎(ওহফরৎবপঃ) নির্দেশের বিপরীত কাজ করা বা অমান্য করা। প্রশ্ন আসতে পারে, ‎ঐ ১৪টি তথ্যের বাইরেও কুরআনে আর কোন তথ্য আছে কিনা, যা থেকে বুঝা ‎যায় অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লেও সওয়াব হবে। তাই চলুন এখন আলোচনা করা ‎যাক, কুরআন অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়লেও সওয়াব হবে- এমন কথা আল-‎কুরআনে থাকা সম্ভব কিনা-‎

তথ্য-১ ‎
‎ পরস্পর বিরোধী কথার দৃষ্টিকোণ ‎
‘অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লে প্রতি অরে দশ নেকি’ কথাটা অর্থ ছাড়া বা না ‎বুঝে কুরআন পড়াকে শুধু অনুমতিই দেয় না বরং তা ভীষণভাবে উৎসাহিতও ‎করে। তাই কথাটা পূর্বোল্লেখিত কুরআনের তথ্যগুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ-‎
‎ কুরআন বলছে, বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে বুঝে বুঝে কুরআনকে পড়তে ‎হবে। আর ‘কথাটা’ বলছে না বুঝেও কুরআন পড়া যাবে। ‎
‎ কুরআন বলছে, কুরআনের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে। আর ‎‘কথাটা’ বলছে, চিন্তা-গবেষণা তো দূরের কথা, না বুঝে কুরআন ‎পড়ালেও সওয়াব। ‎
‎ কুরআন তার বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করার জন্যে কঠিন ভাষায় ‎তিরস্কার করেছে, আর ‘কথাটা’ না বুঝে কুরআন পড়াকে উৎসাহিত ‎করেছে। ‎
‎ কুরআন বলেছে, যেভাবে কুরআন পড়লে কুরআন পড়ার হক আদায় ‎হয় না (যেমন না বুঝে পড়া), ইচ্ছাকৃতভাবে সেভাবে যারা কুরআন ‎পড়বে, তারা কুফরীর গুনাহে গুনাহগার। আর ‘কথাটা’ বলছে, না বুঝে ‎কুরআন পড়া সওয়াবের কাজ। ‎
‎ কুরআন বলছে, যেভাবে কুরআন পড়লে কুরআন নাযিলের বা কুরআন ‎পড়ার উদ্দেশ্য (অর্থাৎ কুরআনের জ্ঞানার্জন এবং সে অনুযায়ী আমল ‎করা) সাধিত হয় না, ইচ্ছাকৃতভাবে সেভাবে (যেমন না বুঝে) কুরআন ‎পড়া কুফরী কাজ এবং যারা তা করবে, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। আর ‎‘কথাটা’ বলছে, না বুঝে কুরআন পড়া দশ গুণ সওয়াবের কাজ। ‎
সাধারণ বিবেক বলে কুরআনে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য থাকার কথা নয়। ‎কারণ, তা থাকলে মানুষ কোনটার ওপর আমল করবে, সে ব্যাপারে ভীষণ দ্বন্দ্বে ‎পড়ে যাবে। আর এ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য হচ্ছে-‎
অর্থ: এটা (আল-কুরআন) যদি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন সত্তার নিকট থেকে ‎আসত, তবে এতে বহু পরস্পরবিরোধী কথা থাকত।‎‏ ‏‎(নিসা : ৮২)‎
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ্ এখানে বলেছেন, আল-কুরআন তিনি ছাড়া অন্য কোন ‎সত্তার নিকট থেকে আসলে এতে অসংখ্য পরস্পর বিরোধী কথা থাকত। অর্থাৎ ‎আল্লাহ্ জানিয়ে দিলেন, যেহেতু আল-কুরআন তাঁর নিকট থেকে আসা কিতাব, ‎তাই এতে পরস্পর বিরোধী কোন কথা বা বক্তব্য নেই। আল-কুরআন, ‎কুরআনকে বুঝে পড়তে বা তার বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে বলেছে ‎অথবা তার বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করার জন্যে তিরস্কার করছে অথবা ‎ইচ্ছা করে অর্থ ছাড়া কুরআন পড়াকে বড় গুনাহের কাজ বলেছে। তাই ঐ ‎ধরনের বক্তব্যের উল্টো বক্তব্য তথা অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়ার ‎অনুমতি বা অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লে প্রতি অরে দশ নেকি, আল-কুরআন ‎তথা ইসলামী জীবন বিধানে থাকতে পারে না বা থাকা অসম্ভব।‎

তথ্য-২‎
‎ শয়তানের ১নং কাজকে দারুনভাবে সহায়তার দৃষ্টিকোণ
ইবলিস শয়তানের ১নং কাজ হচ্ছে ‘মানুষকে কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে ‎রাখা’। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করেছি ‘পবিত্র কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি ‎অনুযায়ী মুমিনের ১নং কাজ কোন্টি এবং শয়তানের ১নং কাজ কোন্টি’ নামক ‎বইটিতে। ‎
‘অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি’ কথাটার ‎প্রভাবে অসংখ্য মুসলমান নেকির আশায় অর্থ ছাড়া কুরআন পড়ছে বা তাড়াতাড়ি ‎কুরআন খতম দেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু তারা কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে ‎‎থাকছে। অর্থাৎ তারা কুরআন পড়েও কুরআনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকছে। ‎কথাটা অত্যন্ত কৌশলে, কুরআনপ্রিয় অসংখ্য মানুষকে কুরআন পাঠের প্রধানতম ‎উদ্দেশ্য ও হকের (কুরআনের জ্ঞান অর্জন) থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। অতএব ‎এটা অতি সহজে বুঝা যায়, কথাটা শয়তানের ১নং কাজকে দারুণভাবে সাহায্য ‎করছে। এমন একটি কথা তাই কুরআনে তথা ইসলামী জীবন বিধানে থাকা ‎সম্ভব নয়। ‎

তথ্য-৩ ‎
‎ চিরন্তনভাবে বিবেক-বিরুদ্ধ মুহকামাত আয়াতের দৃষ্টিকোণ
বিবেক-বুদ্ধি সম্বন্ধীয় যত বক্তব্য কুরআনে আছে, তা একত্রে করলে যে তথ্য ‎‎বের হয়ে আসে তা হচ্ছে- আল-কুরআনের মুহকামাত আয়াতে (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ‎বক্তব্য সম্বলিত আয়াতে) এমন কোন বক্তব্য নেই, যা চিরন্তনভাবে মানুষের ‎বিবেক-বুদ্ধির বাইরে থাকবে অর্থাৎ মানুষ কখনই বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে তা বুঝতে ‎পারবে না। চিরন্তনভাবে মানুষের বিবেক-বুদ্ধির বাইরে থাকবে শুধু মুতাশাবিহাত ‎আয়াতের বক্তব্যসমূহ। অর্থাৎ অতীন্দ্রিয় বিষয়সমূহ। বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত ‎আলোচনা করেছি ‘পবিত্র কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী বিবেক-বুদ্ধির গুরুত্ব ‎কতটুকু এবং কেন’ নামক বইটিতে। ‎
‎কোন গ্রন্থ অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়লে কল্যাণ বা সওয়াব হয়, এটা চরম ‎বিবেক-বিরুদ্ধ মুহকামাত কথা। তাই এমন কথা কুরআনে থাকার কথা নয়।‎
‎ ‎
আল-হাদীস অনুযায়ী অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া গুনাহ না সওয়াব

চলুন এখন, আলোচ্য বিষয়ে হাদীসে কী বক্তব্য আছে তা দেখা যাক। ‎হাদীসের তথ্য পর্যালোচনার আগে হাদীস সম্বন্ধে কিছু তথ্য জেনে নেয়া ‎‎দরকার। ‎
রাসূল সা.-এর প্রধান কাজ ছিল, কুরআনের বক্তব্যকে কথা, কাজ ও সমর্থনের ‎মাধ্যমে মানুষকে বুঝিয়ে দেয়া। আর সূরা বাকারার ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ ‎বলেছেন, কুরআনের একটি কথাও যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে না মানে বা না ‎করে, তবে দুনিয়ায় তার হবে লাঞ্ছনা আর আখেরাতে হবে কঠিন শাস্তি। তাই-‎
ক. কুরআন পড়ার ব্যাপারে পূর্ববর্ণিত তথ্যগুলো রাসূল সা. বলেননি বা ব্যাখ্যা ‎করেননি বা সে অনুযায়ী আমল করেননি, তা হতে পারে না। অর্থাৎ হাদীস ‎গ্রন্থে উপরের বক্তব্য সমর্থনকারী বা ব্যাখ্যাকারী হাদীস অবশ্যই থাকবে বা ‎আছে। ‎
খ. কুরআনের স্পষ্ট বক্তব্যের উল্টো কোন কথা বা কাজ রাসূল সা. কখনই ‎বলতে বা করতে পারেন না। অর্থাৎ কুরআনের স্পষ্ট বক্তব্যের উল্টো কোন ‎কথা রাসূল সা. এর বক্তব্য হতে পারে না। তাই রাসূল সা. নিজেই ‎বলেছেন, ‘তোমাদের নিকট আমার নামে কোন কথা বলা হলে তা ‎কুরআনের সঙ্গে মিলাবে। যদি তা কুরআনের কোন বক্তব্যের উল্টো হয়, ‎তবে তা প্রত্যাখ্যান করবে। তাই কুরআনের স্পষ্ট বক্তব্যের উল্টো কোন ‎কথা হাদীসের কথা হতে পারে না। সে কথা হবে-‎
‎ হাদীসের নামে মিথ্যা বা বানানো কথা বা
‎ কোন হাদীসের অসতর্ক ব্যাখ্যা।‎
সুতরাং অর্থসহ বা অর্থ ছাড়া কুরআন পড়ার ব্যাপারে কুরআনের স্পষ্ট বক্তব্যের ‎উল্টো কোন বক্তব্য হাদীসের বক্তব্য হতে পারে না। সেটা হবে, হাদীসের নামে ‎মিথ্যা কথা অথবা কোন হাদীসের অসতর্ক ব্যাখ্যা। ‎
হাদীস সম্বন্ধে উপরের তথ্যগুলো বুঝে নেয়ার পর চলুন এখন, হাদীসের ‎তথ্যগুলো সরাসরি জানা যাক-‎

তথ্য-১‎
অর্থ: হযরত হুজাইফা (রা.) বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, কুরআন পড় আরবদের ‎‎স্বরে ও সুরে এবং দূরে থাক আহলে এশক ও আহলে কিতাবদের স্বর হতে। ‎শীঘ্রই আমার পর এমন লোকেরা আসবে, যারা কুরআনে গান ও বিলাপের সুর ‎ধরবে। কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তাদের অন্তর হবে ‎‎দুনিয়ার মোহগ্রস্ত এবং তাদের অন্তরও, যারা ঐ পদ্ধতি পছন্দ করবে। ‎
‎(বায়হাকী, রজীন)‎
ব্যাখ্যা: রাসূল সা. এখানে প্রথমে বলেছেন, কুরআনকে আরবদের পড়ার ‎‎স্বাভাবিক স্বর ও সুরে পড়তে। এরপর তিনি নিষেধ করেছেন, কুরআনকে ‎আহলে এশক ‎‏)‏যারা সুরের মাধ্যমে মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলতে চায়) এবং ‎আহলে কিতাবদের স্বরে পড়তে। ‎
তারপর রাসূল সা. বলেছেন, তিনি দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর শীঘ্রই ‎এমন লোকদের উদয় হবে যারা কুরআনকে বিলাপের ও গানের সুরে পড়বে ‎কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। অর্থাৎ তারা কুরআনের অর্থ, ‎মর্ম বা ভাব কিছুই জানবে না বা বুঝবে না অথবা জানতে বা বুঝতে চেষ্টা ‎করবে না।‎
তারপর রাসূল সা. বলেছেন, যারা উপরের পদ্ধতি অনুযায়ী কুরআন পড়বে ‎এবং যারা ঐ পদ্ধতি পছন্দ করবে, তারা উভয়েই দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত। ‎‎দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্তরা অবশ্যই গুনাহগার। তাই রাসূল সা. এ হাদীসখানির ‎মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যারা কুরআন পড়বে কিন্তু তার অর্থ ‎বুঝবে না বা বুঝার চেষ্টা করবে না, তারা গুনাহগার। অর্থাৎ (ইচ্ছাকৃতভাবে) ‎অর্থ ছাড়া কুরআন পড়া গুনাহের কাজ। ‎

তথ্য-২‎

অর্থ: হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম ‎নর-নারীর জন্যে জ্ঞান অর্জন বা অন্বেষণ করা ফরজ। (ইবনে মাজাহ)‎
ব্যাখ্যা: হাদীসখানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুলপ্রচারিত। জ্ঞান অর্জনের ‎উপায়গুলো হচ্ছে- পড়া, শুনা এবং দেখা। এর মধ্যে পড়াটা হচ্ছে সব চেয়ে ‎‎বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল সা. এখানে পড়াকে ফরজ বলেননি। জ্ঞান অর্জনকে ‎ফরজ বলেছেন। তাহলে যে পড়ায় জ্ঞান অর্জন হয় না বা যে পড়ার ল্য জ্ঞান ‎অর্জন নয়, সে পড়ায়, পড়া আমলের ফরজ রুকন আদায় হয় না। ‎ইসলামীজীবন বিধানে কোন আমলের ফরজ তরক হয়ে গেলে সে আমল করা ‎হয়নি ধরা হয়। যেমন নামাজের কোন ফরজ তরক হয়ে গেলে, সে নামাজ হয় ‎না। অর্থাৎ সে নামাজ পড়া হয়নি ধরা হয়। তাই ঐভাবে নামাজ পড়লে গুনাহ ‎হয়। এই হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন পড়া আমলটির ফরজ দিকটি হচ্ছে ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা। তাই যে কুরআন পড়ায় জ্ঞান অর্জন হয় না, সে ‎কুরআন পড়ায় ফরজ তরক হয়ে যায়। সুতরাং হাদীসখানির দৃষ্টিকোণ থেকে ‎ইচ্ছাকৃতভাবে ঐভাবে কুরআন পড়লে সওয়াব না হয়ে গুনাহ হবে।‎
‎ ‎
তথ্য-৩‎‏)‏
অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল বলেছেন,যে ব্যক্তি তিন দিনের ‎কমে কুরআন পড়েছে সে কুরআন বোঝেনি। (তিরমিযি, আবু দাউদ,‎‏ ‏‎দারেমী)‎
ব্যাখ্যা: তিন দিনের কম সময়ের মধ্যে কুরআনের কিছু অংশ অবশ্যই বুঝে পড়া ‎যায়। কিন্তু পুরো কুরআন ভালভাবে বুঝে তিন দিনের মধ্যে শেষ করা বা খতম ‎‎দেয়া কারো পে সম্ভব নয়। তাই সহজেই বুঝা যায়, হাদীসখানিতে রাসূল সা. ‎বলেছেন- যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ের মধ্যে কুরআন খতম দেয় সে ‎কুরআন বোঝে নাই। অর্থাৎ সে না বুঝে কুরআন খতম দিয়েছে। আর ‎হাদীসখানির বক্তব্যের ধরন থেকে বুঝা যায়, এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে তিনি নিষেধ ‎করেছেন। অর্থাৎ না বুঝে কুরআন খতম দেয়াকে রাসূল সা. নিষেধ করেছেন। ‎সুতরাং তা গুনাহের কাজ।‎
পূর্বে (৩৩ নং পৃষ্ঠা) কুরআনের ১৩ নং তথ্যের ব্যাখ্যায় যা বলা হয়েছে এটি ‎হচ্ছে তার সমর্থনকারী হাদীস।‎

তথ্য-৪‎
যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের গলার নিচে নামবে না, তারা দীন ‎হতে বের হয়ে যাবে এমনভাবে যেমন তীর ধনুক হতে ছিটকে পড়ে।‎‏ ‏‎ ‎
‎ ‎‏ ‏‎(বুখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা)‎
ব্যাখ্যা: এখানে রাসূল সা. বলেছেন, যারা অর্থছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়বে, ‎তারা দীন হতে অর্থাৎ ইসলাম হতে তীরের বেগে বের হয়ে যাবে। কারণ, তারা ‎জানবে না কুরআন কোন্টা করতে আদেশ দিয়েছে এবং কোন্টা করতে নিষেধ ‎করেছে। তাই কাজ করার সময় তারা এমন কাজ করবে, যেটা কুরআন ‎‎স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছে। ফলে তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। ইসলাম ‎‎থেকে তীরের মত বের হয়ে যাওয়া কি সওয়াবের কাজ? না গুনাহের কাজ? ‎পাঠকই বলুন।‎
‎ ‎
তথ্য-৫‎
জ্ঞান দু’প্রকারের। একপ্রকারের জ্ঞান হলো-যা মুখ অতিক্রম করে অন্তরে ‎গিয়ে স্থান নেয়। এ জ্ঞানই কিয়ামতের দিন কাজে আসবে। আর একপ্রকার জ্ঞান ‎আছে, যা মুখ পর্যন্তই থাকে অন্তরে পৌঁছে না। এই জ্ঞান আল্লাহর দরবারে ‎মানুষের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে দাঁড়াবে। ‎ ‎ (দারমী)‎
ব্যাখ্যা: এখানে বলা হয়েছে, অর্থসহ বা বুঝে বুঝে কুরআন পড়লে সে পড়া ‎কিয়ামতের দিন কাজে আসবে। অন্যদিকে না বুঝে শুধু মুখে উচ্চারণ করে ‎কুরআন পড়লে ঐ পড়া কিয়ামতের দিন পাঠকের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। যে কাজের ‎জন্যে কুরআন বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, সে কাজ অবশ্যই গুনাহের কাজ।‎
‎ উপরের ১,৪,ও ৫নং তথ্যের হাদীস তিনটিতে কুরআন তাদের ‘কন্ঠনালী ‎অতিক্রম করবে না’, কুরআন তাদের ‘গলার নিচে নামবে না’, কুরআন তাদের ‎‘অন্তরে পৌঁছবে না’-কথাগুলো দিয়ে রাসূল সা. কী বলতে চেয়েছেন, তা নিয়ে ‎মুসলমানদের মধ্যে বিস্ময়কর বিভ্রান্তি আছে। অনেকে বলেন যে, ঐ কথাগুলো ‎দিয়ে রাসূল সা. আমলের কথা বলেছেন। অর্থাৎ তিনি বলেছেন, কুরআন পড়বে ‎কিন্তু সে অনুযায়ী আমল করবে না। তাই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা দরকার। ‎
‎কোন কিছু পড়ে সে অনুযায়ী আমল বা কাজ করতে গেলে প্রথমে বিষয়টি ‎বুঝতে হবে, এ কথাটা বুঝা কি কোন কঠিন ব্যাপার? বিষয়টা না বুঝলে আমল ‎করা যাবে কী ভাবে? পড়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের। আর ‎পড়ার সঙ্গে আমলের বা কাজের সম্পর্ক হচ্ছে তার পরের স্তরে। তাই আল ‎কুরআনেও আল্লাহ্ পড়া ‎‏(اِقْرَأ)‏‎ বা বই ‎‏(كِتَابٌ)‏‎ শব্দ দুটো উল্লেখ করার পরপরই ‎এমন সব কথা বলেছেন, যে গুলো সরাসরি জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, আমলের ‎সঙ্গে নয়। আল-কুরআনে ঈমান শব্দটা উল্লেখ করার পরপরই ন্যায় কাজের কথা ‎অর্থাৎ আমলের কথা বলা হয়েছে। কারণ জানা (জ্ঞান) ও বিশ্বাসকে এক সঙ্গে ‎বলা হয় ঈমান। জ্ঞান ছাড়া যেমন ঈমান হয় না, তেমন বিশ্বাস ছাড়াও ঈমান ‎হয় না। উপরের তথ্যগুলো জানার পর আমার তো মনে হয়, কারো মনে সন্দেহ ‎‎থাকার কথা নয় যে, উল্লেখিত তিনটা হাদীসে রাসূল সা. ‘কন্ঠনালী অতিক্রম ‎করবে না’,‘গলার নিচে নামবে না’, ‘অন্তরে পৌঁছবে না’- কথাগুলো দ্বারা বুঝাতে ‎‎চেয়েছেন, কুরআন তারা পড়বে কিন্তু তা বুঝবে না বা বুঝার চেষ্টা করবে না। ‎চার নং তাথ্যের হাদীসটাতে রাসূল সা. বিষয়টা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ‎‎সেখানে তিনি বলেছেন, যারা কুরআন পড়বে কিন্তু পড়ার সঙ্গে সরাসরি তথা ‎প্রথম স্তরের সম্পর্কযুক্ত কাজটি করবে না অর্থাৎ বুঝবে না (গলার নিচে নামাবে ‎না), তারা যখন পড়ার সঙ্গে ২য় স্তরের সম্পর্কযুক্ত কাজটি করতে যাবে অর্থাৎ ‎তা বাস্তবায়ন বা আমল করতে যাবে, তখন তারা ইসলাম থেকে তীরের বেগে ‎‎বের হয়ে যাবে। কারণ তারা তো পড়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত কাজটি অর্থাৎ ‎তা বুঝার কাজটি করেনি। তাই আমল করার সময় তাদের আমল সঠিক হবে না।

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:১৯

তাহান বলেছেন: তথ্য-৬‎
ক. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ‎‎কেউ সূরা তীন পড়ার সময় এ পর্যন্ত পড়ে, ‘আল্লাহ্ কি আহকামুল হাকীমিন ‎নন?’ তখন সে যেন বলে, নিশ্চয়ই, আমিও এর স্যা প্রদানকারীদের মধ্যে ‎আছি। আবার যখন সে সূরা কিয়ামাহের এ পর্যন্ত পৌঁছে, ‘তিনি কি মৃতকে ‎জীবিত করতে সম নন?’ তখন সে যেন বলে, নিশ্চয়ই। আবার যখন সে ‎সূরা মুরছালাত-এর এ পর্যন্ত পড়ে, ‘এই কালামের (কুরআন) পরে আর ‎‎কোন্ কালাম থাকতে পারে, যার প্রতি তারা ঈমান আনবে?’ তখন সে যেন ‎বলে, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। (আবু দাউদ ও তিরমিযি)‎
খ. হযরত হুজাইফা রা. বলেন, তিনি নবী করিম সা.-এর সঙ্গে নামাজ ‎পড়েছেন। যখন তিনি আল্লাহর রহমতসূচক কোন আয়াতে পৌঁছতেন, ‎তখনই অগ্রসর হওয়া বন্ধ করে রহমত প্রার্থনা করতেন। এরূপে যখনই ‎তিনি আযাবের আয়াতে পৌঁছতেন, তখন পড়া বন্ধ করে আযাব থেকে ‎পানাহ চাইতেন। (তিরিমিযি, আবু দাউদ, দারেমী, নাসায়ী)‎
গ. হযরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামন রা. বলেছেন, একবার আমি রাত্রিকালীন ‎সালাতে রাসূল স. এর সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন দেখলাম তিনি কুরআন ‎পড়ছেন এভাবে- যেখানে তাসবীহ করতে বলা হয়েছে সেখানে তাসবীহ ‎করছেন, যেখানে দোয়া করার সুযোগ আছে সেখানে দোয়া করছেন, ‎‎যেখানে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণের ব্যাপার এসেছে সেখানে তিনে আল্লাহর ‎নিকট আশ্রয় চাচ্ছেন। (মুসলিম, নাসায়ী)‎
ব্যাখ্যা: এই তিনটা হাদীসের প্রথমটিতে রাসূল সা. কুরআন পড়ার সময় কী ‎করতে হবে তা মুখে বলেছেন (কাওলী হাদীস) । আর পরের দুটোতে তিনি তা ‎বাস্তবে করে দেখিয়ে দিয়েছেন (ফেয়লী হাদীস)। হাদীস তিনটা (এ রকম আরো ‎হাদীস আছে) থেকে অতি সহজে বুঝা যায়, রাসূল সা. কুরআন শুধু বুঝে বুঝে ‎পড়তে বলেন নাই, একটি আয়াতে যে প্রশ্ন করা হয়েছে বা ভাব প্রকাশ করা ‎হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে বা সে ভাবের উত্তরমূলক ভাব প্রকাশ ‎করার আগে, পরবর্তী আয়াতে না যাওয়ার জন্যে তিনি উপদেশ দিয়েছেন এবং ‎তা বাস্তবে করেও দেখিয়ে দিয়েছেন। ‎
নামাজের মধ্যে কুরআন পড়ার সময় ঐ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে কিনা, ‎এ ব্যাপারে মনীষীদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও, নামাজের বাইরে তা করা যে ‎রাসূল সা. এর সুন্নাহ- এ ব্যাপারে সকল ইমামই একমত। আর অর্থ না বুঝলে ‎এ সুন্নাহের অনুসরণ করা যে সম্ভব নয়, সেটাতো দিবালোকের মতই সত্য। ‎একটি আমল যেভাবে করলে, ঐ আমলের ব্যাপারে রাসূল সা. এর সুন্নাহের ‎অনুসরণ কোনভাবেই সম্ভব নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে সেভাবে ঐ আমল করা, কি ‎সওয়াব? পাঠকের বিবেকের নিকট প্রশ্ন। ‎
সুধী পাঠক, উপরের হাদীসগুলো থেকে নিঃসন্দেহে বুঝা যায় যে, রাসূল সা. ‎কুরআন অর্থসহ বুঝে বুঝে পড়তে বলেছেন এবং তা নিজে করেও দেখিয়ে ‎দিয়েছেন এবং যারা অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়বে, তারা দুনিয়ার মোহে ‎‎মোহগ্রস্ত বা কেয়ামতে কুরআন তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে বা তারা ইসলাম থেকে ‎তীরের মত বের হয়ে যাবে, এসব কথা বলেছেন। এ হাদীসগুলো কুরআন বুঝে ‎বা না বুঝে পড়ার ব্যাপারে কুরআনের বক্তব্যগুলোর হয় সমর্থবোধক, না হয় ‎ব্যাখ্যা। তাই হাদীসগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। কুরআন পড়া সম্পর্কে রাসূল সা. ‎এর বক্তব্য এরকম হওয়ারই কথা। কারণ তিনি তো কুরআনের বিপরীত কথা ‎‎কোনক্রমেই বলতে পারেন না। ‎

তথ্য-৭‎
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যে ‎আল্লাহর কিতাবের একটি অর পড়েছে তার নেকি মিলবে আর নেকি হচ্ছে ‎আমলের দশগুণ। আমি বলছি না যে (‎الم‎) একটি অর। বরং আলিফ একটি, ‎মিম্ একটি ও লাম একটি অর। (তিরমিযী ও দারেমী; তিরমিযি হাদীসটিকে ‎সহীহ কিন্তু সনদের দিক থেকে গরীব বলেছেন)‎
ব্যাখ্যা: কুরআন ‘অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি‘ ‎কথাটির উৎপত্তি এই হাদীসখানির ব্যাখ্যা থেকে। আর এই ব্যাখ্যাটি ‎অবিশ্বাস্যরকম ব্যাপক প্রচারও পেয়েছে। যার ফলে আজ প্রায় সকল মুসলমানই ‎এই ব্যাখ্যাটি জানে। আর এর উপর আমল করতে যেয়ে অধিকাংশ মুসলমানই ‎আজ যা করছে, তা হচ্ছে-‎
‎১.‎ অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়ছে, ‎
‎২.‎ ‎বেশি ছওয়াব কামাই করার জন্যে না বুঝে দ্রুত খতম দেয়ার চেষ্টা ‎করছে, কারণ যত অর পড়তে পারবে তার দশগুণ ছওয়াব পাবে, ‎
‎৩.‎ কুরআন পড়ছে কিন্তু তার বক্তব্য জানার ব্যাপারে রয়ে যাচ্ছে, যে ‎কুরআন পড়ছে না তার স্তরে। ফলে শয়তান অতি সহজে ধোঁকা ‎দিয়ে, কুরআনের যে বক্তব্যটা একটু আগেই সে পড়েছে, তার উল্টো ‎কাজ তাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে।‎
চলুন, এবার হাদীসটির ব্যাখ্যা নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। ‎বিশ্ব মুসলমানদের অপূরণীয় তি থেকে বাঁচানোর জন্যে তা আজ বিশেষভাবে ‎‎দরকার। ‎
রাসূল সা. এখানে কুরআনের একটি অর বলতে আসলে বুঝিয়েছেন ‎কুরআনের একটি শব্দ বা বাক্য (আয়াত)। কারণ কুরআনের শুধু একটি অর ‎‎কেউ কখনো পড়ে না। এখন পড়া ‎‏(اِقْرَأ)‏‎ শব্দটির অর্থ বুঝে বা না বুঝে পড়া ‎ধরে হাদীসটির দু‘রকম ব্যাখ্যা করা যায়। যথা-‎
‎১.‎ কুরআনের একটি শব্দ বুঝে বুঝে পড়লে প্রতি অরে দশ নেকি, ‎
‎২.‎ কুরআনের একটি শব্দ না বুঝে পড়লে প্রতি অরে দশ নেকি।‎
পড়া ‎‏(اِقْرَأ)‏‎ শব্দটির অর্থ ‘না বুঝে পড়া‘- এটা পৃথিবীর কোনও বিবেক-‎বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই গ্রহণ করবে না এবং আরবী অভিধানেও নেই। অন্যদিকে ‎তার অর্থ ‘বুঝে পড়া‘- এটা পৃথিবীর সকল বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এক বাক্যে ‎গ্রহণ করবে এবং আরবী অভিধানও তাই বলে। ‎
এখন পড়া শব্দটির অর্থ না বুঝে পড়া ধরে হাদীসটির ব্যাখ্যা করলে যে ‎তথ্যটি (কুরআনের একটি শব্দ না বুঝে পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি) বের ‎হয়ে আসে এবং যেটা বর্তমানে প্রায় সকল মুসলমান গ্রহণ করে নিয়েছে এবং সে ‎অনুযায়ী তাদের অধিকাংশ আমলও করছে, সেটি গ্রহণ করতে হলে-‎
‎১.‎ কুরআন পড়া সম্পর্কে (পূর্বে আলোচনাকৃত) কুরআনের সমস্ত প্রত্য ‎ও পরো বক্তব্যকে অস্বীকার করতে হবে।‎
‎২.‎ একটা দুর্বল সহীহ (গরীব) হাদীসের ‘অসতর্ক ব্যাখ্যাকে‘ গ্রহণ করতে ‎‎যেয়ে অন্যান্য শক্তিশালী হাদীসের বক্তব্যকে অস্বীকার করতে হবে। ‎‎(যে হাদীসের কোন এক যুগে বর্ণনাকারী মাত্র একজন, তাকে গরীব ‎হাদীস বলে। আর যে সকল হাদীসের বর্ণনাকারীর সংখ্যা সব যুগেই ‎অনেক ছিল, তাকে শক্তিশালী হাদীস বলে। আলোচ্য হাদীসটি ইমাম ‎মুসলিমের মতে গরীব)‎
‎৩.‎ ‎১০০% বিবেক-বুদ্ধি বিরোধী একটি কথাকে গ্রহণ করতে হবে। ‎
তাই পৃথিবী উল্টে গেলেও হাদীসখানির এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করা যেতে পারে না। ‎
পান্তরে পড়া শব্দটির অর্থ বুঝে পড়া ধরে হাদীসটির ব্যাখ্যা করলে যে তথ্যটি ‎‎(কুরআনের একটি শব্দ বুঝে পড়লে প্রতি অরে দশ নেকি) বের হয়ে আসে, ‎‎সেটি গ্রহণ করলে-‎
‎১.‎ কুরআনের বক্তব্যের সমর্থনকারী ব্যাখ্যা হয়।‎
‎২.‎ অন্যান্য শক্তিশালী হাদীসের বক্তব্যের সমর্থনকারী তথ্য হয়। ‎
‎৩.‎ ‎১০০% বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যাখ্যা হয়। ‎
তাই ইসলামী জীবন বিধানে হাদীসখানির এ ব্যাখ্যাটিই গ্রহণযোগ্য হবে। ‎‎কেউ কেউ বলতে চান যে, হাদীসটিতে রাসূল সা. উদাহরণস্বরূপ যে শব্দটা ‎ব্যবহার করেছেন (‎الم‎) তার তো কোন অর্থ হয় না। কিন্তু তবুও রাসূল সা. ‎বলেছেন, ‎الم‎ পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি হবে। এ থেকে বুঝা যায়, না ‎বুঝে পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি হবে। এ কথার উত্তর হচ্ছে,‎الم ‏‎ একটা ‎‘মুতাশাবিহাত’ শব্দ। এর কোন অর্থ হয় না। তাই এটা অর্থ ছাড়া পড়লে ‎সওয়াব হবে এবং এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে চেষ্টা করতে গেলে গুনাহ হবে। কিন্তু ‎মুহকামাত আয়াতের ব্যাপারে এর উল্টো হবে। বিষয়টি কুরআনের ১৩ নং তথ্যে ‎বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ‎

আলোচ্য বিষয়টির ব্যাপারে কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির ‎তথ্যের সারসংপে
কুরআনের তথ্যসমূহের সারসংপে
‎১.‎ সকল মুহকামাত এবং অর্থ হয় এমন মুতাশাবিহাত আয়াতকে অর্থসহ ‎বা বুঝে পড়তে সকল মুমিনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বা বলা হয়েছে।‎
‎২.‎ মুতাশাবিহাত আয়াতের বক্তব্যগুলোর প্রকৃত অর্থ বের করার জন্যে ‎তার পেছনে লেগে থাকাকে অর্থাৎ তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করাকে ‎শয়তানি বা ফেতনা সৃষ্টির কাজ অর্থাৎ গুনাহের কাজ বলা হয়েছে। ‎
‎৩.‎ মুহকামাত আয়াতের বক্তব্য নিয়ে সবাইকে সাধ্যানুযায়ী চিন্তা-গবেষণা ‎করতে বলা হয়েছে।‎
‎৪.‎ মুহকামাত আয়াতের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করার জন্যে কঠিন ‎ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে।‎
‎৫.‎ ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ না বুঝে কুরআন তেলাওয়াতকে, অর্থাৎ হক আদায় ‎না করে কুরআন তেলাওয়াতকে, কুরআনকে অস্বীকার করার মতো ‎‎গুনাহের কাজ বলা হয়েছে। ‎
‎৬.‎ কুরআন নাযিলের বা পড়ার উদ্দেশ্য সাধন হয় না এমনভাবে কুরআন ‎পড়াকে (অর্থাৎ অর্থ না বুঝে বা জ্ঞান অর্জনের ল্য ছাড়া কুরআন ‎পড়াকে) কুফরী কাজ বলা হয়েছে এবং যারা তা করবে তাদের ঠিকানা ‎জাহান্নাম বলা হয়েছে। ‎
‎৭.‎ না বুঝে তাড়াতাড়ি কুরআন পড়াকে বা না বুঝে তাড়াতাড়ি খতম ‎‎দেয়ার চেষ্টা করাকে নিষেধ করা হয়েছে। ‎
‎৮.‎ না বুঝে কুরআনের আয়াত বা পুরো কুরআন মুখস্থ রাখাকে গাধার ‎কাজ বলে গালি দেয়া হয়েছে। ‎
‎৯.‎ অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লে সওয়াব হয়-এমন বক্তব্য কুরআন তথা ‎ইসলামে থাকা সম্ভব নয়। ‎

হাদীসের তথ্যের সারসংপে ‎
‎১.‎ জ্ঞান অর্জন হয় না, এমন লোকদের দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত লোক ‎বলা হয়েছে। ‎
‎২.‎ ‎যে পড়ায় জ্ঞান অর্জন হয় না, সে পড়া কিয়ামতের দিন বিপে সাী ‎‎দেবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। ‎
‎৩.‎ যারা এমনভাবে কুরআন পড়বে যে কুরআনের জ্ঞান অর্জন হবে না, ‎তারা ইসলাম থেকে তীরের বেগে বের হয়ে যাবে বলা হয়েছে। ‎
‎৪.‎ ‎যে পড়ায় জ্ঞান অর্জন হয় না সে পড়ায়, পড়া অমলটির ফরজ দিকটি ‎অনাদায় রয়ে যায় বলে বলা হয়েছে। ‎
‎৫.‎ না বুঝে খতম দিতে নিষেধ করা হয়েছে। ‎
‎৬.‎ অর্থ বুঝে কুরআনের একটা শব্দ বা আয়াত পড়লে প্রতি অরে দশ ‎‎নেকি বলা হয়েছে। ‎
‎৭.‎ ‘অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি‘- কথাটা হচ্ছে ‎একটি দুর্বল সহীহ হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা।‎
‎ ‎
বিবেক-বুদ্ধির তথ্যের সারসংপে ‎
‎১.‎ অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়ে আমল তথা কাজ করতে গেলে ‎ইসলামের মৌলিক কাজেই নানা ধরনের ভুল হতে বাধ্য। তাই অর্থ ‎ছাড়া কুরআন পড়ায় সওয়াব তথা লাভ হওয়ার প্রশ্নই আসে না বরং ‎তাতে মারাত্মক গুনাহ তথা তি হওয়ার কথা।‎
‎২.‎ অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লে কুরআন পড়ার উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। তাই ‎তাতে সময়ের অপচয়েরও তি হয়।‎
‎ ‎
অর্থ ছাড়া কুরআন পড়ার ব্যাপারে ইসলামের চূড়ান্ত রায়‎

উপরে আলোচনাকৃত সকল তথ্য পর্যালোচনার পর নির্দ্বিধায় বলা যায়, অর্থ ছাড়া ‎কুরআন পড়ার ব্যাপারে কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির চূড়ান্ত রায় হচ্ছে-‎
ক. ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন পড়লে কুফরীর গুনাহ ‎তথা অত্যন্ত বড় গুনাহ হবে।‎
খ. মাত্র দুই অবস্থায় অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লে সওয়াব হবে। যথা-‎
‎১. কুরআন শুদ্ধ করে পড়া শিা করা অবস্থায়, ‎
‎২. হাফিজ হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কুরআন হেফ্জ করা রত অবস্থায়। ‎কারণ, ঐ সময় অর্থ বুঝতে গেলে হেফজ করতে অনেক সময় ‎‎লেগে যাবে।‎

না জানার দরুন অতীতে যারা অর্থ ছাড়া কুরআন পড়েছে ‎তাদের অবস্থা ও করণীয়
ইসলামে না জানার কারণে কোন আমল না করলে বা কোন আমলের ‎বিরুদ্ধ কাজ করলে প্রত্যভাবে (উরৎবপঃষু) গুনাহ না হলেও পরোভাবে ‎‎(ওহফরৎবপঃষু) গুনাহ হয়। কারণ, কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা সকলের জন্যেই ‎ফরজ। তাই ঐ তথ্য না জানার জন্যে তার গুনাহ হবে। তাই যে ব্যক্তিরা তথ্যটি ‎না জানার জন্যে অতীতে অর্থ ছাড়া বা না বুঝে কুরআন তেলাওয়াত করেছেন ‎তাদের করণীয় হবে-‎
‎১.‎ খালেস নিয়াতে ঐ অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্যে আল্লাহর নিকট‎
মাফ চাওয়া (তওবা করা)। ‎
‎২.‎ জীবনের বাকি সময় অর্থ ছাড়া কুরআনের একটি শব্দও না পড়া। আর ‎এ ল্েয-‎
ক. মাতৃভাষায় লেখা কুরআনের তরজমা ও তাফসীর ক্রয় করে ‎অধ্যয়ন শুরু করা। ‎
খ. কুরআন পড়ে সরাসরি বুঝতে পারার যোগ্যতা অর্জন করার ‎ল্েয আরবী ভাষা শিা শুরু করা। ‎
আর যারা মৃত্যুর যুক্তিসঙ্গত সময় আগে তওবা করে কুরআন পড়ার ‎ব্যাপারে তাদের কর্মপদ্ধতি শুধরিয়ে নিয়ে অর্থসহ বা বুঝে কুরআন পড়ে যেতে ‎পারেননি, তাদের মধ্যে যাদের কোন অরজ্ঞান অর্জন করার সুযোগ হয়নি, ‎তাদের হয়তো আল্লাহ মাফ করে দিবেন। কিন্তু যারা শিতি ছিলেন এবং ‎বিবেক-বুদ্ধির ১০০% বিরুদ্ধ বলে অন্য কোন বই অর্থ ছাড়া পড়েনি, তাদের ‎আল্লাহর মাফ না করারই কথা।‎

কুরআনের জ্ঞান অর্জনের দিকে মুসলমানদের বেশি করে আকৃষ্ট ‎করার জন্যে করণীয়
অনেকে বলে থাকেন, কুরআনকে অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়তে নিরুৎসাহিত ‎করে এমন কথা বললে, কুরআন পড়া লোকের সংখ্যাই কমে যাবে। তাই তা ‎বলা উচিত নয়। কথাটা শুনে মনে হয় কল্যাণকর। কিন্তু আসলেই কি তাই? ‎চলুন, এ বিষয়টাও একটু খতিয়ে দেখা যাক-‎
মাতৃভাষা আরবী হওয়ায় জন্যে রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কিরামগণ কেউই ‎কুরআন না বুঝে পড়তেন না। তাহলে কুরআন অর্থ ছাড়া বা না বুঝে পড়ার ‎পদ্ধতিটা চালু হয়েছে সাহাবায়ে কিরামগণের পরের স্তরে। এ ব্যাপারে কোন ‎সন্দেহ নেই। সাহাবায়ে কিরামগণের পরে এসে কুরআন পড়ার ব্যাপারে যত ‎কথা চালু হয়েছে, তার পেছনে হয়তো উদ্দেশ্য ছিলো-মানুষকে বেশি বেশি ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জন করতে উদ্বুদ্ধ করা। আর ঐ ধরনের যে প্রধান কথাগুলো ‎মুসলমান সমাজে ব্যাপকভাবে চাুল হয়েছে এবং চালু আছে, তা হচ্ছে-‎
‎১.‎ কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা অন্যান্য ফরজ কাজের সমান বা কম ‎‎গুরুত্বপূর্ণ একটা ফরজ কাজ। ‎
‎২.‎ কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা সকলের জন্যে ফরজ নয়। ‎
‎৩.‎ অর্থ ছাড়া কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি।‎
‎৪.‎ অর্থসহ কুরআন পড়লে আরো বেশি নেকি। ‎

আজ ১৪০০ বছর পরে এসে কুরআনের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে উপরের ‎কথাগুলোর ফলাফল যা হয়েছে তা হচ্ছে-‎
‎১.‎ অনেক মুসলমান কুরআন পড়তেই পারেন না,‎
‎২.‎ যারা পড়তে পারেন তাদের অধিকাংশেরই কুরআন পড়া সহীহ হয় না, ‎
‎৩.‎ যারা সহীহ করে পড়তে পারেন তাদের অধিকাংশেরই কুরআনের ‎জ্ঞান নেই। কারণ তারা অর্থছাড়া কুরআন পড়েন।‎
সাহাবায়ে কিরামদের পর চালু হওয়া উপরোক্ত কথাগুলোর ফল এরকম ‎হওয়ারই কথা। কারণ তা কুরআনের জ্ঞান অর্জনে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে কুরআন, ‎হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির তথ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয় বরং বিপরীত। আর ‎এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, কোন আমল বা কাজ আল্লাহ যেভাবে পালন করতে ‎বলেছেন, কল্যাণের কথা ভেবেও যদি সেটা অন্যভাবে পালন করতে বলা হয় বা ‎পালন করা হয়, তবে তাতে যে অকল্যাণসমূহ হবে তা হচ্ছে-‎
ক. অজান্তে আল্লাহর আদেশ অমান্য করাকে উৎসাহ দেয়া হবে,‎
খ. যে কল্যাণমূলক ফলাফলের জন্যে আল্লাহ আদেশটা দিয়েছেন তা ‎
‎ কখনই পাওয়া যাবে না। সে ফলাফল দুনিয়া বা আখিরাতে যেখানেই ‎‎হোক না কেন। ‎
গ. আমলটা যদি মানুষ গঠনমূলক হয় তবে যে মানের জনশক্তি আল্লাহ ‎ঐ আমলের দ্বারা তৈরি করতে চেয়েছেন, সে মানের জনশক্তি কখনও ‎গঠিত হবে না। আর এটাতো স্বতঃসিদ্ধ (টহরাবৎংধষ ঞৎঁঃয) কথা যে, ‎অনেক সংখ্যক পঙ্গু মানুষের চেয়ে একজন সুস্থ-সবল মানুষ সমাজের ‎জন্য বেশি কল্যাণকর। ‎
ঘ. আল্লাহর দেয়া চিরসত্য পথ বা পন্থা পাল্টাতে গেলেই নানা ধরনের ‎
‎ ভ্রান্ত দল-উপদলের সৃষ্টি হবে।‎

তাই কুরআনের জ্ঞান অর্জনের দিকে মুসলমানদের বেশি করে আকৃষ্ট করার ‎জন্যে যা করতে বা বলতে হবে তা হল‎
ক. সকল মুসলমানের জন্যে, কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা এক নাম্বার ‎সওয়াবের কাজ অর্থাৎ নামাজ পড়ার চেয়েও বেশি সওয়াবের কাজ ‎এবং তা না করা সব চেয়ে বড় গুনাহ অর্থাৎ নামাজ না পড়ার চেয়ে ‎অনেক বড় গুনাহের কাজ, ‎
খ. কুরআনের একটি শব্দ বা আয়াত বুঝে পড়লে প্রতি অরে দশ নেকি ‎
গ. কুরআনের বক্তব্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা আরো বড় সওয়াবের ‎কাজ,‎
ঘ. যে সকল মুতাশাবিহাত আয়াতের অর্থ হয় না সেগুলো বাদে অন্য ‎‎কোন আয়াত ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ অর্থ ছাড়া বা জ্ঞান অর্জনের ল্য ছাড়া ‎পড়া, অতিবড় গুনাহের কাজ। ‎
‎(কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধিগ্রাহ্য এই তথ্যগুলো ব্যাাপকভাবে ‎প্রচার করতে হবে। যে কোন কারণেই হোক ইসলামী জীবন ‎বিধানের এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বর্তমান বিশ্ব মুসলমানদের ‎একেবারেই অগোচরে চলে গেছে)‎
ঙ. কুরআনের জ্ঞান অর্জন করলে কী কী লাভ বা কল্যাণ হবে তা ‎মুসলমানদের বেশি বেশি করে জানাতে হবে। আর এই লাভ বা ‎কল্যাণের বর্ণনার সময় দুনিয়ার কল্যাণগুলো পরকালের কল্যাণের ‎আগে বলতে হবে। কারণ মানুষের জন্মগত স্বভাব হচ্ছে, তারা ‎‎দুনিয়ার কল্যাণ বা নগদ কল্যাণটা আগে দেখতে বা পেতে চায়। ‎আর তাই সূরা বাকারার ২০১নং আয়াতে আল্লাহ্ এভাবে দোয়া ‎করতে শিখিয়েছেন‎
‏.‏
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর এবং ‎আখেরাতেও কল্যাণ দান কর। ‎
ব্যাখ্যা: ল্য করুন, এখানে আল্লাহ্ দুনিয়ার কল্যাণ আগে চাইতে ‎বলেছেন। কারণ তিনি তো তাদের সৃষ্টিগত স্বভাবটা সব চেয়ে ‎ভালো জানেন। হাদীস শরীফে আছে, রাসূল সা. এই দোয়াটাই সব ‎‎চেয়ে বেশি করতেন বা সব চেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। ‎
‎দুঃখের বিষয়, বর্তমানে অধিকাংশ ওয়াজকারীগণ এবং ইমাম সাহেবরা ‎ইসলামের কোন আমল বা কাজের, লাভ বা কল্যাণের কথা বলার সময়, ‎মানুষের জন্মগত ঐ স্বভাব এবং তার স্বপে কুরআন ও হাদীসের ঐ ‎উপদেশকে গুরুত্ব দেন না। কোন আমলের লাভ বা কল্যাণের বর্ণনা করতে ‎‎যেয়ে তারা প্রায় সমস্ত সময়টুকু ব্যয় করেন পরকালের কল্যাণ বর্ণনা করতে ‎এবং তারও অধিকাংশ সময় তারা ব্যয় করেন হুর-পরী, ঘুমাবার গদির ‎‎(গধঃৎবংং) উচ্চতা ইত্যাদি বর্ণনা করতে। ‎
‎ কুরআনের জ্ঞান অর্জনের লাভ বা কল্যাণের কথা বর্ণনা করার সময়
প্রধান যে দুটো বিষয় বলতে হবে, তা হচ্ছে-‎
ক. মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক আছে, যথাঃ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ‎অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি। এই সকল ‎দিকের চিরসত্য প্রথম স্তরের সকল মৌলিক বিষয় কুরআনে আল্লাহ্ বর্ণনা ‎করে রেখেছেন। মানব সভ্যতার উন্নতি করতে হলে ঐ সকল দিকের উন্নতি ‎অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সেই উন্নতি করতে হবে কুরআনে বর্ণনা করা ‎‎মৌলিক বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে। তা না হলে সেই উন্নতি আপাতত ‎যতই কল্যাণকর মনে হোক না কেন, একদিন তা অবশ্যই অকল্যাণকর ‎প্রমাণিত হবে বা ভেঙে পড়বে। এর ভূরি ভূরি উদাহরণ মানব সভ্যতার ‎ইতিহাসে আছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থা। ‎‎৭৫ বছর চলার পর তা আজ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আর তাই পবিত্র ‎কুরআনের সূরা নাহল-এর ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন-‎
فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ.‏
অর্থ: অতএব, পৃথিবী ঘুরে ঘুরে দেখ। অমান্যকারীদের পরিণাম কী ‎হয়েছে। ‎
ব্যাখ্যা: আল্লাহ্ এখানে মানুষকে বলছেন, তোমরা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে দেখ ‎কুরআনের মৌলিক তথ্যের উপর ভিত্তি না করে যারা তাদের জীবনের ‎বিভিন্ন দিকের উন্নতি করার চেষ্টা করেছে, তারা কীভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।‎
খ. কুরআনের বক্তব্যগুলো যে জানে শয়তান তাকে ইসলামের প্রথম স্তরের ‎‎মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে অন্তত ধোঁকা দিতে পারবে না। কিন্তু যার ‎কুরআনের জ্ঞান নেই, ছোট শয়তানও তাকে সহজে ধোঁকা দিয়ে, ইসলামের ‎প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় থেকেও বিপথে নিয়ে দোযখে পৌঁছে দেবে। ‎শয়তান যে এটা করছে, সে তা বুঝতেও পারবে না। আর এই ধোঁকা ‎শয়তান দিবে ওলি, পীর, বুজর্গ, মাওলানা, হুজুর, চিন্তাবিদ, ডাক্তার, ‎ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর ইত্যাদির বেশে এসে এবং সওয়াব বা কল্যাণের কথা ‎বলে। ‎
ইসলামের সকল আমল বা কাজের প্রতি মানুষকে অধিক আগ্রহী করার জন্যে ‎উপরের কর্মপদ্ধতিই সকলের গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি। ‎

‎শেষ কথা‎
সুধী পাঠক, আশা করি আপনাদের নিকট এখন পরিষ্কার যে, ‘অর্থ ছাড়া বা না ‎বুঝে কুরআন পড়লেও প্রতি অরে দশ নেকি’ – কথাটার উৎস হচ্ছে একটা ‘দুর্বল’ ‎হাদীসের কুরআন, অন্যান্য শক্তিশালী হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির ঘোর বিরোধী ‘ভুল ‎ব্যাখ্যা’। কুরআনের ব্যাপারে এরকম আরো কিছু অসতর্ক ও মহাতিকর প্রচারণা ‎বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে চালু আছে। সেগুলো শনাক্ত করা সহজ হবে ‎যদি আমরা নিম্নের বিষয়গুলো মনে রাখি-‎
‎১.‎ ‎ শয়তানের এক নম্বর কাজ হচ্ছে কুরআনের জ্ঞান থেকে মানুষকে দূরে রাখা।‎
‎২.‎ শয়তান সব সময় কল্যাণ, সওয়াব বা লাভের লোভ দেখিয়ে ধোঁকা দেয়। ‎আর তার এই পদ্ধতি যে কত মারাত্মক তা বুঝা যায় বেহেশতে আদম আ. ‎এর ধোঁকা খাওয়ার ঘটনা থেকে ‎
‎৩.‎ মুতাশাবিহাত আয়াতে বক্তব্য ও রাসূল সা. এর মুজেজা ব্যতীত, ‎চিরন্তনভাবে ‘সাধারণ’ বিবেক-বুদ্ধির বিরোধী কোন বিষয় কুরআন ও সহীহ ‎হাদীস নেই। দু’একটা মানুষের বর্তমান জ্ঞানে বুঝে না আসলেও পরে তা ‎অবশ্যই বুঝে আসবে। ‎
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আলোচ্য বিষয়ের ব্যাপারে নিজস্ব কোন মতামত ‎আপনাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ‎‎দেয়ার মত কোন অবস্থানেও আমি নেই। আমি ঐ ব্যাপারে কুরআন, হাদীস ও ‎বিবেক-বুদ্ধির তথ্যগুলো শুধু আপনাদের সামনে হাজির করে দিয়েছি। আশা করি, ‎ঐ তথ্যগুলো জানার পর যে কোন বিবেকসম্পন্ন পাঠকের প,ে ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থ ‎ছাড়া বা জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া কুরআন পড়লে, গুনাহ হবে, না সওয়াব হবে-‎‎সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছা মোটেই কঠিন হবে না। ‎
‎যে সকল মহান ব্যক্তি ইসলামের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়ার অবস্থানে আছেন, ‎তাঁদের নিকট আমার আকুল আবেদন, তাঁরা যেন পুস্তিকার উল্লেখিত তথ্যগুলো ‎সামনে রেখে বিষয়টা পর্যালোচনা করে হতভাগ্য মুসলমান জাতিকে এ বিষয়ে দিক-‎নির্দেশনা দেন।‎
আমি সকল মুসলমান, বিশেষ করে যারা কুরআন ও হাদীসের বিশেষজ্ঞ, ‎তাঁদের নিকট আকুল আবেদন করছি, আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে কারো নিকট কোন ‎ভুল ধরা পড়লে বা কারো যদি আর কোন তথ্য জানা থাকে তবে তা আমাকে ‎জানাতে। পরবর্তী সংস্করণে সেগুলো ব্যাখ্যাসহকারে সংযোজন করব ইনশাআল্লাহ।‎
সবশেষে মহান আল্লাহর নিকট কায়মনোবাক্যে দোয়া করি, তিনি যেন ‎আমাদের সকলকে কুরআনের ব্যাপারে সকল অসতর্ক ও তিকর কথা শনাক্ত ‎করার মতা ও সুযোগ দান করেন এবং সে অনুযায়ী আমাদের কর্মপদ্ধতি শুধরিয়ে ‎‎নেয়ার তৌফিকও দান করেন, আমিন! ‎

সমাপ্ত

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:১৮

তাহান বলেছেন: ১. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য

Click This Link


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.